গার্ডেনরিচকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে তৎপর কলকাতা পুর সংস্থা। সংস্থার সব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে চলেছে পুর কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, বেআইনি নির্মাণ আটকাতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, আইনি নোটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পদ্ধতি নিয়ে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
ইতিমধ্যে গার্ডেনরিচে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা নিয়ে শুরু হয়েছে পুরসভা ও আবাসিকদের মধ্যে টানাপোড়েন। ইতিমধ্যে আবাসিকরা দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী সোমবার রয়েছে এই মামলার শুনানি। কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিসের তরফে তৈরি করা হয়েছে, গার্ডেনরিচে গজিয়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের তালিকা। সেই তালিকা ধরেই কলকাতা পুরসভা আগামীদিনে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে পুনর্বাসন নিয়েও ভাবনা রয়েছে কলকাতা পুরসভার।
অন্য়দিকে গার্ডেনরিচকাণ্ডের পর বেআইনি নির্মাণ ভাঙার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রশাসন। এবার গার্ডেনরিচের একটি বেআইনি বহুতল ভাঙার কাজে হাত দিল প্রশাসন। যদিও কোনওরকম নোটিশ ছাড়া বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় গার্ডেনরিচে। যা নিয়ে বেআইনি বহুতলের আবাসিকরা বিক্ষোভও দেখান।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয়ে অকালে বলি হয়েছে বহু প্রাণ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গঠন হয়েছে কলকাতা পুরসংস্থার তদন্ত কমিটি। শুরু হয়েছে তদন্ত।
মঙ্গলবার পুরসভার যুগ্ম কমিশনার জয়ন্ত তাঁতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি আজহার মোল্লা বাগানে সাইট পরিদর্শন করে। তদন্তে ছিলেন, ডিসি পোর্ট, ওসি গার্ডেন রিচ সহ ডিজি সিভিল, সিএমই এসডব্লিউএম, ডিজি রোডস, ডিজি বিল্ডিং, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মৃৎ ও স্থাপত্য বিভাগের ৩ জন বিশেষজ্ঞও।
বিশেষজ্ঞরা বিপর্যয়স্থলের লোহা, কংক্রিটের কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ সহ, ধ্বংসের পিছনে ঠিক কী কারণ, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখেন। চিহ্নিত করা হয়েছে মাটি পরীক্ষার বোরিং স্পটও। নিরাপত্তা পয়েন্টে কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে, সেখানে ধ্বংসের কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। নিরাপত্তার কারণেই ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের ঘটনাস্থলে বা ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে না যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। এছাড়াও প্রোমোটারদের দ্বারা, কোন ধরনের পরিকল্পনা ব্যবহার করা হয়েছিল বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে, তাও অনুসন্ধান করছে পুলিস কর্তৃপক্ষ। পার্শ্ববর্তী কাঁচা বাড়ি এবং সম্পত্তির ক্ষতির মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছে তদন্ত কমিটি। যদিও একারণে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার ফের জমির বিবরণ যাচাই তদন্ত কমিটির। এছাড়াও ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষজ্ঞরা সাইট থেকে কংক্রিটের নমুনা সংগ্রহ করেন বলে সূত্রের খবর। তবে, বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ২দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থল ফের পরিদর্শন করা হতে পারে বলে কলকাতা পুরসংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় একটাই যে, এই তদন্ত কমিটির হাতে ঠিক কী কী তথ্য উঠে আসে? প্রশাসনিক গাফিলতির জেরে ফের অকালে বলি হবেন না তো বাংলার মানুষ? রাজ্যবাসীর নিরাপত্তার দায়ভার নিয়ে ছেলেখেলা চলবে না তো? যদিও প্রশ্নগুলো জানা থাকলেও বরাবরের মতোই অজানা এর উত্তর।