রেশন দুর্নীতিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পর এবার পুর নিয়োগ মামলাতেও তৎপর কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। ২২ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে, এখনও ইডি দফতরে রয়েছেন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা। শুক্রবার সকাল ১১ নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-দফতরে পৌঁছন গোপাল সাহা। তারপর থেকে দফায় দফায় তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে সূত্রের খবর। শনিবার সকালে তাঁকে বেরতে দেখা যায়নি। এর আগেও গোপাল সাহাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বাড়িতে গিয়ে তল্লাশিও চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। গোপাল সাহার কাছ থেকে পুর নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য় পাওয়া যাবে বলেই অনুমান তদন্তকারী অফিসারদের।
এর আগে দুর্গা পুজোর ষষ্ঠীর দিনও তলব করা হয়েছিল গোপাল সাহাকে। সে দিন ১১ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল তাঁকে। গত ৫ অক্টোবর দক্ষিণ দমদম, বরাহনগরের পাশাপাশি কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার বাড়িতেও ইডি তল্লাশি চালায়। যদিও গোপাল সাহা বারবার দাবি করেছেন, পুর দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।
উল্লেখ্য, অয়ন শীল গ্রেফতার হওয়ার পর সামনে আসে পুর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ। আদালত সেই মামলার দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। তদন্তকারীদের অনুমান, উত্তর ২৪ পরগনারই ১২ থেকে ১৪টি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে। অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাস ও রয়েছেন ইডি দফতরে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে তাঁর। শুক্রবার বিকেল নাগাদ হাজিরা দেন অভিজিৎ। প্রায় ১২ ঘন্টার বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার সাঁড়াশি চাপে কামারহাটি পুরসভা। সূত্রের খবর, গতবার ১৮ কর্মীকে তলব করা হলেও এবার ওই পুরসভার ৩৪ জন কর্মীকে তলব করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের তলবের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হয়েছিলেন পুরসভার কর্মীরা। আবার সেই পুরসভার কর্মীদের তলব করা হল।
এ বিষয়ে পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, ‘সিবিআইয়ের নির্দেশ মতো পুরসভার কর্মীরা সিবিআই দফতরে হাজিরা দিচ্ছেন। পাশাপাশি, সিবিআই যে সমস্ত নথি চেয়ে পাঠিয়েছে, সেই সব নথিও পাঠানো হয়েছে। এর পরেও যা যা নির্দেশ আসবে, আমরা মেনে চলব।’ প্রসঙ্গত, কামারহাটি তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের বিধানসভা কেন্দ্র। এর আগে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযানের অভিযোগ তুলে পুরসভায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় ধৃত অয়ন শীলের একটি সংস্থার মাধ্যমে ওই ১৪টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। তাদের দাবি, টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, রাজ্যের ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি চালানোর সময়েই নথি সংগ্রহ এবং আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মূলত ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পুরসভাগুলিতে নিয়োগের পদ্ধতি এবং নির্দেশিকার নথি যাচাই করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০১৭-এ অয়নের সংস্থা বরাহনগর পুরসভায় প্রথম নিয়োগের বরাত পায়। ২০১৮-২০১৯ নাগাদ নিয়োগের পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, তাতে পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশের নিকটাত্মীয়দের চাকরি হয়েছে বিভিন্ন পদে। মজদুর পদে কাজে যোগ দিয়ে কেউ কেউ পুর-প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন বলেও অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, ধৃত অয়নের সূত্রেই তাঁর পরিচিত শ্বেতা চক্রবর্তীর নাম উঠে এসেছিল। সেই শ্বেতা কামারহাটি পুরসভাতেই চাকরি করেন। অয়নের সূত্রে শ্বেতার নাম উঠে আসার পর পুরসভায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন মদন।