সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar) প্রতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee) উপহাস তোলপাড় ফেলেছে সংসদীয় রাজনীতিতে। জগদীপ ধনখড় দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তাই তাঁকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল সাংসদের এহেন আচরণ মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং লোকসভার অধ্যক্ষ। আবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মিমিক্রি করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি জানান 'মিমিক্রি বা নকল করা একটা শিল্প।'
নতুন সংসদ ভবনের মকর দ্বারের সামনে বিরোধী সাংসদদের অবস্থান বিক্ষোভে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অঙ্গভঙ্গি। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে নকল করে উপহাস করেছেন তিনি আর সেই নকল করার ভঙ্গিমাকে ভিডিও করছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এরপরে ক্রমেই নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যম ও জাতীয় রাজনীতিতে। দেশের সংবিধান প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও সামাজিক মাধ্যমে অভিযুক্ত সাংসদকে সাংবিধানিক রীতি-নীতির পাঠ শেখান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জগদীপ ধনখড়কে ফোন করেছেন। গত ২০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এমন আচরণের শিকার বলেও মাননীয় উপরাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। বুধের সকালে সামাজিক মাধ্যমে এহেন পোস্ট করে জগদীপ ধনখড় লেখেন, "আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে কথা হয়েছে। সংসদ চত্বরে মাননীয় সাংসদদের কীর্তিতে উনি বেদনা পেয়েছেন। উনিও গত ২০ বছর ধরে এমন আচরণের শিকার। কিন্তু সাংবিধানিক পদে বসে থাকা এমন একজনের উদ্দেশে এহেন আচরণ তাও সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে দুর্ভাগ্যজনক, এমনটাই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।"
মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের সাংসদের কীর্তি ঘিরে হৈচৈ আর নিন্দার ঝড় উঠতেও আজ অর্থাৎ বুধবার অবস্থান বদল করেননি তৃণমূল সাংসদ। এক মিনিটের ব্যবধানে ধারাবাহিক পোস্ট করেন তিনি। মিমিক্রি বা নকল করা একটা শিল্প দাবি করে সংসদ থেকে শতাধিক বিরোধী সাংসদের সাসপেন্ড হওয়ার প্রসঙ্গকে হাতিয়ার করেন আইনজীবী-সাংসদ। এমনকি, ধনখড়জিকে তিনি শ্রদ্ধা করেন তাঁকে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের সামনে আবার কল্যাণ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীজিও লোকসভায় মিমিক্রি করেন। আমার কাছে সেই প্রমাণও আছে, বিষয়টি সবাই হালকা ভাবে নেয়। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, আমি যেভাবে নকল করেছি, ঠিক সেই আচরণ কি রাজ্যসভায় করেন ধনখড়জি।'
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তৃণমূল সাংসদের যে প্রতিনিধি দল দেখা করে, সেই তালিকায় ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের ভিতর ঢোকেননি। কল্যাণের কর্মে বিতর্ক বাড়তেই কি তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চাইলেন খোদ দলনেত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কি ব্রাত্য থাকলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ, উঠছে প্রশ্ন। বুধবার অবশ্য কল্যাণ প্রশ্নে কৌশলী অবস্থানে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। জগদীপ ধনখড়ের উদ্দেশে করা কল্যাণের মিমিক্রিকেও ছোট্ট ঘটনার মোড়কে হালকা ভাবে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন মমতা। উল্টে তিনি গোটা-কাণ্ডের দায়ভার ঘুরিয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর ঘাড়ে চাপিয়েছেন।
কলকাতায় ফিরেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার দার্জিলিঙে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে এমনটাই দাবি করলেন তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্য সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে বকেয়া নিয়ে আলোচনা করতে খুব দ্রুতই কলকাতা ফিরছেন রাজ্যপাল। কিন্তু এর মধ্যে যদি কোনও রাজনৈতিক বাধা থাকে, তা হলে রাজ্যপাল কিছু করতে পারবেন না বলেও দাবি কল্যাণের।
রাজ্যের বকেয়ার দাবিতে এদিন দার্জিলিং গিয়েছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ মহুলা মৈত্র এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বৈঠক শেষে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলবেন রাজ্যপাল।
এদিকে, বাহাত্তর ঘণ্টা হল রাজভবনের সামনে ধরনায় বসে আছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর পর পাল্টা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এই পরিস্থিতে এদিন ধরনা মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।