সাতসকালে কলকাতায় ফের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। মঙ্গলবার সকালে কাদাপারার একটি জুটমিলের গুদামে আগুন লাগে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে রয়েছে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে আগুন নেভানোর কাজ। দমকল আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আগুন এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দমকল কর্মীদের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। গুদামের নিজস্ব গাড়ি দিয়েই পাটগুলো বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আতঙ্কিত ওই জুটমিলের শ্রমিকরা। কীভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টা নাগাদ আগুন লাগে। দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে গোটা গুদামঘরটিকে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে। এখনও পর্যন্ত কোনওরকম হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই একাধিক তল্লাশি অভিযানে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ডেল্টা জুটমিল প্রাইভেট লিমিটেড এবং ওড়িশা রিয়েলিটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ভুয়ো ডিরেক্টর পদের নিয়োগের তল্লাশিতেই মঙ্গলবার ইডির তল্লাশি অভিযান। ইডির অভিযান চলল জুটমিলের মালিকের বাড়িতেও। এছাড়াও ইডি সূত্রে খবর, এর আগে এখানকার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের প্রায় ২১ কোটি টাকা পিএফ দেওয়া হয়নি বলে একটি জনস্বার্থ মামলার তদন্তের ভিত্তিতেই মঙ্গলবারের এই তল্লাশি অভিযান।
এছাড়াও এদিন ইডির অভিযান চলল জুটমিলের মালিক সুনীল ঝুনঝুনওয়ালা বাড়ি ২/১ ব্রাইট স্ট্রিট, বালিগঞ্জেও। সুনীল ঝুনঝুনওয়ালার বাড়িতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই চলে ইডির অভিযান এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।
প্রসঙ্গত, হাওড়া ডেল্টা জুট মিলে দীর্ঘদিন ধরে পিএফ এর টাকা না পাওয়ার কারণে এসএফআইও-এর পক্ষ থেকে জনস্বার্থে একটি মামলা করা হয়। সেই মামলার তদন্তভার গিয়ে পড়ে ইডির উপর। এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল কোম্পানির পাঁচজন ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সংস্থার আয় ব্যয় কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জানতে হবে। মঙ্গলবার সেই তদন্তে নেমেই চলল ইডির জিজ্ঞাসাবাদ। এখন ইডির তদন্তে এই জট কবে কাটবে এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পিএফ তাঁরা আদৌ পাবেন কি না সে উত্তর সময়ই বলবে।
হাওড়া জুটমিলে বিধ্বংসী আগুন। ধনতেরাসের দিন সাত সকালেই বিপদ চোখ রাঙাচ্ছে হাওড়ার পাটকলে। কালো ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে চেয়ে গিয়েছে গোটা এলাকায়। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। পাশেই পেট্রল পাম্প, যেকোনও সময় বিপদ আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে পেট্রল পাম্প।
ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে দমকলের ১২ টি ইঞ্জিন। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকার্য এবং আগুন নেভানোর কাজ। ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বস্তা তৈরির কারখানা, প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির কারখানা এবং পিচ কারখানায়। দমকল সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টা নাগাদ আগুন লাগে।
ওদিকে হাওড়ার ঘুসুরিতে জুটমিল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এক শ্রমিকের। জানা গিয়েছে সকালে ওই কারখানার একাংশ ভেঙে পড়ে, আর তাতেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কিছু শ্রমিক।
কথায় আছে, গল্পের গরু গাছে চড়ে। আর সেই কথাই ফের প্রমাণিত। সাত সকালেই গুজব ছড়ায় ভাটপাড়াতে (Bhatpara)। আর সেই গুজবের জেরেই বন্ধ হয়ে যায় ভাটপাড়ার রিলায়েন্স জুট মিল (Reliance Jute Mill)। কাজে যোগ দেওয়া শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যান। তবে পরে জানা যায় আদতে ঘটেনি কিছুই। কিন্তু ঘটল কী?
সোমবার সকালে ভাটপাড়া রিলায়েন্স জুটমিলে জোর কদমে উৎপাদন চলছিল, তারই মধ্যে হঠাৎ রটে যায় মিলের প্রাক্তন মালিক পবন কুমার কানোরিয়া মারা গিয়েছেন। খবর পেয়ে সোমবার সকাল থেকে মিলের সমস্ত বিভাগের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। ফলে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ভাটপাড়া রিলায়েন্স জুটমিল। শ্রমিকরা শোকাহত মনে আস্তে আস্তে বাড়ি ফিরে যান। এরপরই শুরু হয় শ্রমিক ইউনিয়নের তরফ থেকে খোঁজখবর নেওয়া। জানা যায়, মিলের প্রাক্তন মালিক পবন কুমার কানরিয়া (Paban Kumar Kanoria) সুস্থ শরীরেই জীবিত আছেন। কোনও ঘটনা ঘটেনি তাঁর সঙ্গে। এরপরই মিলের শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
শ্রমিকদের পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সংগঠনের তরফ থেকে মিলের গেটে নোটিশও দেওয়া হয়। ফের পড়ে রিলায়েন্স জুট মিলে কাজে যোগদান শ্রমিকরা। অন্যদিকে খবর পাওয়ার আগে, শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে দেখেন মিল বন্ধ। অবিলম্বে মিল খোলার দাবিতে মিলের গেটের সামনে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা।ঘটনাস্থলে ভাটপাড়া থানার পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।