সন্দেশখালি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার সঙ্গে মোট চারটি মামলা একত্রে শুনানি করতে চায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু সন্দেশখালিতে এখনও শাহজাহানের ভয় বর্তমান। সেখানে এখনও তার অনেক ছায়ারা ঘোরাফেরা করছে। মানুষের হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘিত হয়েছে। এখনও শান্তি ফেরেনি সন্দেশখালিতে। তাই সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরানো নিয়ে চিন্তিত আদালতের তৈরি করা আদালত বান্ধব এবং মামলার আবেদনকারীরা। তাঁরা আদালতে দাবি করেন, সন্দেশখালিতে দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার। সার্বিক শান্তি ফেরাতে প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানান তাঁরা। প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার বার্তা দেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। আগামী ৪ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।
অন্যদিকে, শেখ শাহজাহানের আইনজীবী দৃষ্টি আকর্ষণ প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের প্রেক্ষিতেই গ্রেফতার হয় শেখ শাহজাহান। তাই তাঁর জামিনের বিষয়ে শুনানি এখানেই করা হোক বলে আদালতে আবেদন করেন শাহজাহানের আইনজীবী। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন শেখ শাজাহানকে জামিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাতে হবে।
সন্দেশখালির ঘটনায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জিও বৃহস্পতিবার জানানো হয় কোর্টে। বিশেষত যারা এলাকায় থাকেন তাদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা প্রয়োজন। যেহেতু সিবিআইয়ের হাতে এখন তদন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। সিবিআইকেই এই মামলায় যারা সাক্ষী হিসাবে কোনও বয়ান দিয়েছে বা কথা বলেছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নির্দিষ্ট আইন ও গাইডলাইন মেনে। এই আবেদনের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন তদন্তকারীদের এই ব্যাপারে আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের।
আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল এদিন আদালতে জানান সন্দেশখালিতে প্রায় ৮০ জন আক্রান্ত রয়েছেন, যাদের অভিযোগ রয়েছে। একথা শোনার পর, আক্রান্তদের বিষয়ে জানাতে প্রধান বিচারপতি একটা আবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন তাঁর বেঞ্চে বিচারাধীন মামলায়। এলাকার মানুষ যারা আক্রান্ত বলে অভিযোগ জানাতে চান তারা তাদের পরিচয় এবং কিভাবে আক্রান্ত ওই আবেদনে স্পষ্ট করে জানাতে হবে।
রবিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে চর্চার শেষ ছিল না। যে বিচারপতির কাছে, সঠিক বিচারের আশায় বুক বাঁধতেন সাধারণ, সেই বিচারপতিই এবার নিতে চলেছেন অবসর। সেদিনই বিচারপতি ঘোষণা করেন, আজ, মঙ্গলবারই বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করবেন তিনি। ঘোষণামতোই কাজ। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠান তিনি।
২০২৪ সালের অগাস্ট মাসেই অবসর গ্রহণের সময়সীমা ছিল বিচারপতির। কিন্তু অবসরের নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র কয়েক মাস আগেই কেন আচমকা অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, এই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শুরু হয়েছিল রাজ্যে দুর্নীতির শিকড় খোঁড়ার অভিযান। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও সবার প্রথম দিয়েছিলেন এই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই। যে মামলা এখনও বিচারাধীন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। সেই বিচারপতি তাই আপামর চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ভগবান, তা বারংবার বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা স্বীকার করেছেন নিজের মুখে। এমন একজন বিচক্ষণ বিচারপতির আচমকা অবসর গ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই ভাবাচ্ছে মানুষকে।
পাশাপাশি বঙ্গের ওয়াকিবহাল মহল প্রশ্ন তুলছে, তবে কি এবার আদালতের ময়দান ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নামতে চলেছেন বিচারপতি? যদিও এই বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আচমকা অবসরের সিদ্ধান্তে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবে একমাত্র সময়ই, তা বলাই যায়।
রবিবার বেলা গড়াতেই উঠে এল বড় খবর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। যে বিচারপতির কাছে, সঠিক বিচারের আশায় বুক বাঁধতেন সাধারণ, সেই বিচারপতিই এবার নিতে চলেছেন অবসর। রবিবারই বিচারপতি ঘোষণা করেন, আগামী মঙ্গলবারই বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করতে চলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০২৪ সালের অগাস্ট মাসেই অবসর গ্রহণের সময়সীমা ছিল বিচারপতির। কিন্তু অবসরের নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র কয়েক মাস আগেই কেন আচমকা অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, এই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শুরু হয়েছিল রাজ্যে দুর্নীতির শিকড় খোঁড়ার অভিযান। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও সবার প্রথম দিয়েছিলেন এই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই। যে মামলা এখনও বিচারাধীন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। সেই বিচারপতি তাই আপামর চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ভগবান, তা বারংবার বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা স্বীকার করেছেন নিজের মুখে। এমন একজন বিচক্ষণ বিচারপতির আচমকা অবসর গ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই ভাবাচ্ছে মানুষকে।
পাশাপাশি বঙ্গের ওয়াকিবহাল মহল প্রশ্ন তুলছে, তবে কি এবার আদালতের ময়দান ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নামতে চলেছেন বিচারপতি? যদিও এই বিষয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আচমকা অবসরের সিদ্ধান্তে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবে একমাত্র সময়ই, তা বলাই যায়।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করার থেকে বিরত থাকার দাবি নিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছেন অভিষেক। এরপরই মুখ খুললেন বিচারপতি। বুধবার কারোর নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, 'আমার কথায়-কাজে একশ্রেণী বিপদে পড়ছে।' নাম না করে ফের কাদের খোঁচা দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি, উঠছে প্রশ্ন। শহরের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দুর্নীতি ইস্যুতেও সরব হয়েছিলেন জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়।
উপযুক্ত সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন তিনি, কাকে ইঙ্গিত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, উঠছে প্রশ্ন। তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কারণ থাকলে নিশ্চয় পদক্ষেপ করবে আদালত।' তাঁর দাবি, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু বিচারপতিদের গায়ে সাংবিধানিক কবচ থাকে, তাই সেই ধরনের মামলা হতে পারে না। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি প্রশ্নেও বুধবার সরব ছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আগে এত চুরি-জোচ্চুরি দেখেছেন, প্রশ্নের সুরে খোঁচা হাইকোর্টের বিচারপতির।
শাহজাহান-কাণ্ডেও বুধবার মুখ খুলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সন্দেশখালি-কাণ্ডে পুলিসের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। বিচারপতির বিস্ফোরক মন্তব্য, ভালো কাজ যাঁরা করতে চেয়েছেন, তাঁদের টেনে নামানোর চেষ্টা হয়েছে। বিধবা বিবাহ প্রচলনের সময় বিদ্যাসাগরকে শারীরিক নিগ্রহও করা হয়েছিল, দাবি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় মামলাকারী রাকেশ মণ্ডলের করা মামলার ভিত্তিতে বড় নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সিবিআই মঙ্গলবার জানায়, নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন ছয় মাসের মধ্যে মামলার ট্রায়াল শেষ করতে হবে। তিনি জানতে চান নিম্ন আদালত কবে থেকে কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে?
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে সিবিআই জানায়, বুধবার থেকে চার্জ ফ্রেম করা হবে। এই তিনজন অভিযুক্তের পক্ষ থেকে আদালতে তাদের বক্তব্য জানালেও তার কাগজ আদালতে জমা পরেনি। ফলে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন নতুন করে এই তিনজন আর কোনও বক্তব্য জানাতে পারবে না। তিনি সিবিআইকে নির্দেশ দেন আগে এই সংক্রান্ত যে আবেদনগুলি জমা পড়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতকে সেগুলির তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করতে হবে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এই তিনজনের বিরুদ্ধে। পার্থ সেন ও কৌশিক মাঝিকে চার্জশিট জমা দিয়ে চার্জ ফ্রেম করে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে হবে বলে সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে মামলা করেন চাকরিপ্রার্থী রাকেশ মণ্ডল। ২০১৪ সালের টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। মামলাকারীর আইনজীবী দিবেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন কোনও অতিরিক্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।নিয়োগ মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। ২১শে ডিসেম্বর সিবিআই রিপোর্ট জমা দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মুখ বন্ধ খামে জমা দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।সিবিআইয়ের পক্ষে জহিরউদ্দিন শেখ, টাইগার হোসেন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় , তাপস কুমার মণ্ডল, নীলাদ্রি ঘোষ ও কুন্তল ঘোষের নামে নিম্ন আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ১৪ই ডিসেম্বর। তবে এখনও পর্যন্ত চার্জ ফ্রেম করা হয়নি নিম্ন আদালতে বলেই এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে জানায় সিবিআই। বিচারপতিকে সিবিআই এও জানায় যে মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছিল তাতে প্রভাব খাটিয়েছিল তাপস কুমার মণ্ডল। এস বসু রায় কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজোশ করে এই দুর্নীতি করা হয়েছিল বলেই অভিযোগ করেছে সিবিআই।
এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে ঠিক কি জানিয়েছিল? সমস্ত কিছু শোনার পর নিম্ন আদালতকে এই মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য কড়া নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি প্রসঙ্গে এবারে সরব বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার বিচারপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি নিয়েচ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিচারপতি।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। এদিন কুণালের সেই চিঠি প্রসঙ্গে কুণালকে নিজের এজলাস থেকে পাল্টা জবাব দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, এসব করে তো আর চুরি আটকানো যাবে না। আর এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে অভিষেকের সম্পত্তির প্রসঙ্গও। সম্পত্তির হিসেব নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি মন্তব্য করেন, 'একের পর এক কোটি কোটি টাকা খরচ করে মামলা হয়, এই মামলার খরচ কে বহন করে তা জানাতে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত সম্পত্তি কোথা থেকে আসে? যদি হলফনামা দিয়ে জানান তাহলে বাকি নেতা মিনাক্ষীর মতো তাদের বলব আপনারাও সম্পত্তির কথা জানান। উনি কি পারবেন? মনে হয় না পারবেন? রাজ্য দুর্নীতি ঢাকতে কত টাকা খরচ করছে। এরপর অফিসিয়ালি জানতে চাইব। বিভিন্ন স্তরের লোকেরা জেলে তাই আমার উপর রাগ। বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীর কন্ঠস্বরের পরীক্ষা কেন? তিনি তো আসামী নন। একটা হাসপাতাল ব্যবহার করল। কী চলছে আমরা সবাই বুঝতে পারছি। দেখি কদিন হয়। দুর্নীতি করে টাকা রাখতে চাই এরপর এই ধরণের মামলা করবে।'
বিচারপতি আরও বলেন, 'সুদীপ রাহাকে আমি চিনি না সুতরাং তার বক্তব্যের কোনও মতামত আমি দেব না। সুদীপ রাহার নাম শুনিনি। আমায় সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। অনেক কাজ করতে পারে। আমার মনে হয় একদল চোর এবার হয়ত সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে আমাদের সম্পত্তি চুরি করে করা। বন্ধ হলে অসুবিধা হবে তাই অবাধে চুরি করার অনুমতি চেয়ে মামলা করবে। যার যেখানে অভিযোগ করার করুক, আমি ন্যায়ের পথেই চলবো।'
রাজ্য ঘটা একাধিক ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এবারে তাঁরই মুখে শোনা গেল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রশংসা। বিচারপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'কুণাল ঘোষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। উনি মানুষটা ভাল।'
সোমবার বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি চলছে। আর সেসময়ই এজলাসে বসেই শাসক দল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রশংসা করলেন বিচারপতি। কুণাল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করলেন। কুণাল ঘোষ সম্পর্কে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'কুণাল ঘোষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। উনি মানুষটা ভাল। অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। উনি একদিন আমার চেম্বারে এসেছিলেন। কথা বলে ভাল লেগেছে। ওনার সঙ্গে আমার এখন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ওনার উপন্যাসের কয়েকটা বই দিয়েছেন। আমি পড়ছি, ভালোই লিখেছেন।
কুণাল ঘোষ যে তাঁকে নিশানা করে কটূক্তিও করেছেন, সে কথাও বলেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, 'উনি আমায় গালাগালি করেন। তাতে অসুবিধা নেই। উনি ওনার জায়গা থেকে ওনার কথা বলেন। কালকেও বলেছেন, আমায় টুল নিয়ে বাইরে বসতে। ওতে আমি কিছুই মনে করি না। আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।' তিনি আরও বলেন, 'কল্যাণ ব্যানার্জিও আমায় পদত্যাগ করতে বলেছেন। ভেবেছিলাম আজ হয়তো সকালে এসে বলবেন তুমি পদত্যাগ কর। তবে উনি আমায় খুব ভালবাসেন আমিও ওনাকে খুব শ্রদ্ধা করি। আমিও কি সব সময় নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলি।'
রেশন দুর্নীতির তদন্তে শুক্রবার সাতসকালে সন্দেশখালিতে বালু ঘনিষ্ঠ নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল সন্দেশখালি। এবারে এই ঘটনা নিয়েই মুখ খুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রশ্ন করেন, 'রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করেছেন না যে এ রাজ্যে সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে?' তিনি আরও বলেন, 'যদি তদন্তকারীরা মার খান তাহলে তদন্ত কিভাবে হবে? সংবাদ মাধ্যমের গায়ে হাত, কোথায় দাঁড়িয়ে আমরা?'
রেশন দুর্নীতির তদন্তে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় এজেন্সি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তিনি। আর সেখানে ইডি-কে রুখতে তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অনুগামীরা। প্রায় প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করেন ইডি অফিসাররা। আর তখনই যাবতীয় রাগ উগরে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের উপর। শুক্রবারের এই ঘটনার উল্লেখ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে করেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত।
এরপরই বিচারপতির মন্তব্য, 'এই ঘটনা আমার জানা ছিল না। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে ইডি আধিকারিকরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই পারে। এখন কেমন আছেন সবাই (যারা মার খেয়েছেন ), ওখানকার প্রশাসন কী করছিল? কোন বিধানসভা? পুলিস কি সেখানে ছিল? রাজ্যপাল কেনও এর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? এই সময় রাজ্যপালের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।' প্রশ্ন করেন, 'রাজ্যপাল কেনও এমার্জেন্সি অবস্থার ঘোষণা করছেন না? রাজ্যপাল কেন ঘোষনা করেছেন না যে এরাজ্যে সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে? যদি তদন্তকারীরা মার খান, তাহলে তদন্ত কীভাবে হবে? সংবাদমাধ্যমের গায়ে হাত কোথায় দাঁড়িয়ে আমরা?'
প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায় বড় নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের ৪২ হাজার ৯৪৯ প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশ করতে হবে পর্ষদকে। বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই শুনানি শেষে এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০১৬ সালের প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত মামলার বুধবার শুনানি ছিল হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। সেখানে আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, ৪২ হাজার ৯৪৯ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। যদি প্যানেল আগেই প্রকাশ হয়ে থাকে, তাহলে সেই প্যানেলের হার্ড কপি ও সফ্ট কপি উভয়ই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৫ জানুয়ারি। ওই দিনই পর্ষদকে আদালতে প্যানেলের হার্ড কপি জমা দিতে হবে।
২০১৪ র টেটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয় তার মাধ্যমে প্রায় ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়। মামলায় অভিযোগ ওঠে যে সংরক্ষণ নীতি না মেনেই নিয়োগ হয়েছিল। এই মামলার প্রেক্ষিতেই অভিযোগ ওঠে যে অ্যাপটিচিউড টেস্ট না নিয়েই ইচ্ছামত নম্বর দেওয়া হয়েছে এবং ইন্টারভিউ নিয়ম মেনে হয়নি। কারও ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি না মেনে নিয়োগ হয়েছে। এই মামলাতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইন্টারভিউয়ার অর্থাৎ যারা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর ৩৬ হাজার চাকরি প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করেন তিনি।
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১৬ এবং ২০২০ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী গত ১২ ডিসেম্বর হলফনামা জমা দেয় পর্ষদ। জানানো হয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্যানেল প্রকাশ করা হয়। তবে সে যুক্তি খারিজ করে দেন বিচারপতি সিনহা। দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল প্রকাশের কথা বলেন। পর্ষদের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। এরপর বুধবার ওই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদকে নির্দেশ দেয়, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ৪২ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ করতে হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।
নিয়োগের দাবিতে এতদিন চাকরিপ্রার্থীদের রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু বুধবার দেখা গেল এক অন্য দৃশ্য। এবারে ২০১৬-এর এসএলএসটি শারীর শিক্ষা কর্মশিক্ষা চাকরিপ্রার্থীরা পৌঁছে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির বাড়িতে। হাতে পোস্টার নিয়ে বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়লেন চাকরিপ্রার্থীরা। পোস্টারে লেখা, 'আমরা ভগবানের দর্শনে এসেছি। ভগবান আমাদের উদ্ধার করুন।' তাঁদের দেখে বিচারপতিও অবশেষে তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন ও পরামর্শ দিলেন।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে সুপারিশপত্র পেয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু সুপার নিউমেরারি পোস্ট ঘিরে আইনি জটিলতা থাকায় চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার তাঁদের নিয়োগ আটকে রেখেছে। সেই কারণেই এদিন বিচারপতির দ্বারস্থ হন তাঁরা। বিচারপতিও তাঁদের দেখতে নীচে নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন ও পরামর্শও দেন। বিচারপতি তাঁদের রাস্তায় বিক্ষোভ না দেখিয়ে আদালতে আসার পরামর্শ দেন।
চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, সোমা দাস চাকরি পেয়েছেন। আর তা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সুপারিশেই। তাদের চাকরিটাও যাতে হয় সে বিষয়ে বিচারপতিকে আবেদন জানান। আর তা শুনেই চাকরিপ্রার্থীদের স্পষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সোমা দাসের চাকরির ব্যবস্থা করেননি। সুপারিশ করেছিলেন। অন্যদিকে ১০০০ দিন ধরে চাকরি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, 'আমিও সমব্যথিত। চাই সবাই চাকরি পান। কিন্তু বসে থেকে কোনও লাভ হবে না। যোগ্য হলে কেন আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন না?'
'যেখান থেকে পারুন হাজির করুন, নেতাজি ইন্দোরে খুজুন আজ, পাবেন তাঁকে।' হাওড়ার এক বেআইনি নির্মাণ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রোমোটারকে হাজিরার নির্দেশ দেয় জাস্টিস গাঙ্গুলি। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জাস্টিস গাঙ্গুলি। বৃহস্পতিবার জাস্টিস গাঙ্গুলি পুলিশকে নির্দেশ দেয় পুলিশ যেন অভিযুক্ত ওই প্রোমোটার পার্থ ঘোষকে বেলা ৩ টের মধ্যে আদালতে এনে হাজির করে। এরপরেই তিনি আরও বলেন, 'একটাও বেআইনি নির্মাণ কোথাও থাকবে না। হাওড়ায় আমার নিজের বাড়ি আছে সেটাও যদি বেআইনি হয় তাহলে সেটাও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিতে হবে।'
সম্প্রতি, হাওড়ার লিলুয়ায় বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেবার নির্দেশ ছিল কলকাতা হাইকোর্টের। অভিযোগ নির্দেশ কার্যকর করেনি বালি পৌরসভা, সেকারণেই ফের কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আবেদন করে মামলাকারী সন্ধ্যা ঘোষ। সেই মামলার শুনানিতেই আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনটের সময় ওই প্রোমোটারকে হাজিরার নির্দেশ দেন জাস্টিস গাঙ্গুলি।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বহুবার সরব হয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।এবার বেআইনি নির্মাণে মামলায় সরব তিনি ।বৃহস্পতিবার একটি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সরব বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিন তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন যে, অভিযুক্ত প্রোমোটারকে যেন নেতাজি ইনডোরে গিয়ে খোঁজে পুলিশ। বিচারপতির এমন মন্তব্যের পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রসঙ্গত আজ নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের মেগা সভা রয়েছে, তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতাদের নিয়ে। সেখানে অভিযুক্ত প্রোমোটারকে খুঁজতে বলায় আপাতত তৃণমূলকেই ইশারা করছেন জাস্টিস গাঙ্গুলি এমনটাই ধারণা অভিজ্ঞ মহলের। পাশাপাশি এদিন তিনি তৃণমলের পাশাপাশি পুলিশকে টার্গেট করে বলেন, 'পুলিশ প্রোমোটারের দালালের কাজ করছে।'
যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজে আর্থিক দুর্নীতি ও নিয়োগ মামলায় অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েনকা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার সেই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ্র। বারংবার তার নির্দেশের ওপরে কখনও স্থগিতাদেশ, আবার কখনও খারিজের নির্দেশ জারি হওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রীতিমত ক্ষোভ উগরে দিলেন হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের বিরুদ্ধেই।
তার মন্তব্য, আমরা কি এখানে আইন বাঁচাতে নেমেছি না কি অভিযুক্তদের বাঁচাতে নেমেছি? আমি অপরাধ মুক্তকরণে নেমেছি আর কিছু বিচারপতি অপরাধীদের বাঁচাতে নেমেছে। তার মধ্যে বিচারপতি কৌশিক চন্দ্র, বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের নাম আসছে। এদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, যোগেশ চন্দ্র কলেজ আর্থিক দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে খারিজ হয়ে গিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েনকা ভট্টাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে তার ঘরে তালা ঝোলানোর নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েনকা ভট্টাচার্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। তারপরেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে খারিজ করে সুনন্দা গোয়েনকা ভট্টাচার্যকে তার পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
ঠিক একই ভাবে পরবর্তী শুনানিতে ওই মামলাতেই অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েনকা ভট্টাচার্যের নিয়োগের তদন্ত সিআইডির হাতে দিয়ে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সোমবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ্র। চলতি বছরের মে মাসেও রাজ্যে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষকেরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সেখানে স্থগিতাদেশ মেলে। সেই নির্দেশ বহাল রাখার নির্দেশ দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিকে যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ, সহ-অধ্যক্ষ নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা নিজেই খারিজ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে মামলাকারী ছাত্রকে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছিলেন তিনি। সেই মামলাকে ফের পুনরায় শুনানির আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ মামলাকারী ছাত্র দানিশ ফারদৌকির আইনজীবী। তিনি আদালতে জানান, এমন নতুন কিছু তথ্য পেয়েছেন যা তিনি আদালতে দেখাতে চান। আবেদনের পর বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কি এমন নতুন তথ্য পেলেন, যাতে মামলার রায় বদলের আবেদন করছেন? মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির সম্ভবনা।
নিজস্ব ফর্মেই রয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুর্নীতি দেখলেই বিচারপতির কড়া নির্দেশ। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এর আগে তাঁর একের পর এক নির্দেশে বিপাকে পড়তে হয়েছে দুর্নীতিগ্রস্তদের। এবার অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।
উল্লেখ্য, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ-এর ১৮১, শান্তিনগরের বাসিন্দা অশীতিপর বৃদ্ধা কুন্তিবালা কল্যে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে আবেদন করেন, তাঁর বাড়ি ও বাড়ি লাগোয়া কিছুটা অংশে ফ্ল্যাট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রোমোটার। ২০১৯ সালে ৫০ শতাংশ অনুপাতে চুক্তি হয়। তারপর নির্মাণ যখন তৈরি হয়, তখন আবেদনকারী বোঝেন, এটা অবৈধ নির্মাণ। বারবার প্রোমোটার ও পরে বিধাননগর পুরনিগমে অভিযোগ করলেও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ।
সোমবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, বন্ধ করে দিতে হবে ওই বিল্ডিং-এর এর জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ। সোমবারই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে। ওই বাড়ির বাসিন্দারা চাইলে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে পুনর্বাসন চাইতে পারেন। সোমবারই আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ কাউন্সিলর চামেলী নস্করকে। বিধাননগর পুরনিগমকে বৈঠক ডেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ। আগামী ২৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। মঙ্গলবার বিধাননগর পুরনিগম বাড়ি ভাঙা নিয়ে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেবে। নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
জাস্টিস সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার পিটিশন দাখিল হতে পারে বলেই খবর। সূত্রের খবর গত সপ্তাহে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত শুনানিতে জাস্টিস সিনহা নির্দেশ দেয় অক্টোবর তিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে ইডির তলবে হাজিরা দিতে হবে। এছাড়া ইডিকে নির্দেশ দেয়, এই তদন্ত যেন কোনও ভাবে ব্যাহত না হয়। এবং সে ক্ষেত্রে যদি ব্যাহত হয় তবে ইডিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, গত ২৮ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠায় ইডি। সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। ঠিক তার পরদিনই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি ছিল। সেদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির অফিসার মিথিলেশকুমার মিশ্রকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারপতি সিনহা মন্তব্য করেন, ৩ অক্টোবর যে সমন পাঠানো হয়েছে, তা যেন কোনওভাবেই নড়চড় না হয়। তা নিয়ে ইডিকে পদক্ষেপ করতে হবে।
মণি ভট্টাচার্যঃ এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। কেবল অভিষেক নয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডিরও যেন ওই একই অবস্থা। রনংদেহী জাস্টিস সিনহার নির্দেশে মহাফাঁপরে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ও ইডি উভয়ই। কিন্তু কেন? সূত্রের খবর, লিপস এন্ড বাউন্ডস নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, ৩রা অক্টোবর ওই সংস্থার সিইও হিসেবে, বিভিন্ন নথি সহ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে তলব করে ইডি। কিন্তু ঘটনাচক্রে ওই দিন দিল্লিতে তৃণমূলের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল, তাও আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, অভিষেকের এই দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ এবং ২৮ অগাস্ট ছাত্র সমাবেশেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এ অবস্থায় দিল্লিতে আন্দোলনের দায় ভার এসে পড়ে অভিষেকের কাঁধেই। কারণ, ঘটনাচক্রে মমতা বন্দোপাধ্যায় স্পেন ও দুবাই সফর সেরে ফেরার পথে তাঁর পায়ে চোট লাগে। সেকারণেই মমতা বন্দোপাধ্যায়কে চিকিৎসকরা ১০ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। এখানেই হয়েছে গেরো, ফলস্বরূপ অভিষেকের কাঁধেই এসে পড়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গুরু দায়িত্ব।
ওদিকে পূর্ব নির্ধারিত আন্দোলনের তারিখেই অর্থাৎ ৩রা অক্টোবর অভিষেককে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় ইডি। সেকথা এক্স হ্যান্ডেলে নিজেই জানান অভিষেক। এর জবাবে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অভিষেক জানান, ইডির ডাকে তিনি যাচ্ছেন না, বরং দিল্লিতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবেন তিনি। এতে রাজ্য রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরী হয়েছিল বটে, কিন্তু আগুনে ঘি পড়ল শুক্রবার সন্ধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার তদন্তের শুনানিতে বিস্ফোরক রূপ ধারণ করেন জাস্টিস সিনহা। শুক্রবার ওই মামলার শুনানিতেই জাস্টিস সিনহা নির্দেশ দেন, এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির আইও মিথিলেশ কুমার সিংকে অপসারিত করতে হবে। এছাড়া জাস্টিস সিনহা নির্দেশ দেন বাংলায় কোনও তদন্তে ওই অফিসারকে রাখা যাবে না। এতেই থামেননি জাস্টিস সিনহা, শুক্রবার ওই মামলার শুনানিতে জাস্টিস সিনহা আরও নির্দেশ দেন, ইডির তলবে অভিষেককে হাজিরা দিতে হবে। এমনকি সেসঙ্গেই তিনি ইডিকে আরও নির্দেশ দেন, কোনওভাবেই ৩ তারিখের এই তদন্তে শিথিলতা আনা যাবে না, আর এতেই অভিষেকের সঙ্গে বিপাকে পড়েছে ইডিও।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাতেই কুন্তল ঘোষের চিঠি প্রসঙ্গে অভিষেককে তদন্তের আওতায় আনার জাস্টিস সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক। সুপ্রিম কোর্ট অবধি এই জল গড়ায়। এরপর সুপ্রিম নির্দেশেই জাস্টিস গাঙ্গুলির এজলাস থেকে সরে জাস্টিস সিনহার এজলাসে যায় ওই মামলা। সম্প্রতি এই মামলার তদন্তে লিপস এন্ড বাউন্ডস নামক একটি সংস্থার নাম উঠে আসে, ওই সংস্থা থেকে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাচারের অভিযোগে কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ইডি। এরপর জড়িয়ে পড়েন অভিষেক, কারণ ওই কোম্পানির সিইও অভিষেক, এমনকি ওই কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে ছিলেন অভিষেকর মা ও বাবা। জাস্টিস সিনহা ইডিকে লিপ্স এন্ড বাউন্ডস কোম্পানির সমস্ত কর্মচারী ও মালিকের সম্পত্তির খতিয়ান জমা দিতে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মত সম্পত্তির খতিয়ান হলফনামা আকারে জমা দিলে, চলতি সপ্তাহেই ওই মামলার শুনানিতে ইডির উপরে ফেটে পড়েন জাস্টিস সিনহা। সূত্রের খবর, ইডির তদন্তে বহু ফাঁক আছে বলে অভিযোগ করেন জাস্টিস সিনহা। তিনি অভিষেকের সম্পত্তির হলফনামা প্রসঙ্গে সন্দিহান প্রকাশ করেন। এছাড়া লিপস এন্ড বাউন্ডেসের আরও নথি জমা দিতে ও তদন্তের গতিবিধি পাল্টাতে নির্দেশ দেন। অভিযোগ ছিল, ইডি ঠিকমত তদন্ত করছে না, ফলস্বরূপ চলতি সপ্তাহেই ওই মামলার আইও-কে সরিয়ে তার জবাব দিলেন জাস্টিস সিনহা।
এখন অভিষেক যদি দিল্লিতে আন্দোলনে না যান, তবে এটা স্পষ্ট যে ওই আন্দোলনের ঝাঁঝ অনেক অংশেই কমে যাবে। পাশাপাশি যদি আন্দোলনে যান এবং শুক্রবার সকালের বার্তা অনুযায়ী তিনি যদি ইডির তলবে হাজিরা না দেন তবে জাস্টিস সিনহার নির্দেশ অনুযায়ী ইডিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ অবস্থায় জাস্টিস সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন অভিষেক। কিন্তু ইতিহাস বলছে অভিষেকের ক্ষেত্রে অধিকাংশই এই ধরনের রায় খারিজ করেনি উচ্চ আদালত। অন্যদিকে ইডির বিরুদ্ধে তদন্তের গতিবিধিতে ফাঁক থাকার অভিযোগ কেবল জাস্টিস সিনহার নয়, জাস্টিস গাঙ্গুলিরও। এই অবস্থায় অভিষেক না এলে ইডি যদি কোনও ভাবে কড়া না হয় সেক্ষত্রে বিপাকে পড়তে পারে ইডি। মোটের উপর জাস্টিস সিনহা যে এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে 'নেহি ছোড়নেওয়ালে' সেটা কিন্তু স্পষ্ট, আর সে জন্যই হয়ত এই মুহূর্তে মহাফাঁপরে ইডি ও অভিষেক।