বৃহস্পতিবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে (CBI Court) পেশ করা হয়েছিল নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Scam) ধৃত তিন অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ,তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি ঘোষকে। ৯ মার্চ পর্যন্ত এঁদের জেল হেফাজতের (Jail Custody) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এদিন শুনানিতে সকলেরই জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার আপত্তি মেনে খারিজ হয় সেই আবেদন।
যদিও শুনানি চলাকালীন বিচারক সিবিআইকে সিডি দেখিয়ে জনৈক মিস্টার হোসেনের নামোল্লেখ করে প্রশ্ন করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'দু'জনের নাম উঠে এসেছে। সেখানে মিস্টার হোসেন নামে একজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। যিনি বেআইনিভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। সিডিতে নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি কেনো?'
এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, উনি (পড়ুন জনৈক হোসেন) আমাদের প্রাইম উইটনেস। ও আমাদের বলছে, সেইমতো আমরা কাজ করছি।' এরপরেই বিচারক প্রশ্ন করেন, 'এই ব্যক্তির জবানবন্দি কোথায়?' সিবিআই আইনজীবী জানান, সেটা রেকর্ড করার কাজ চলছে।' বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, 'যদি পরে রাজি না হয়?'
এদিকে, কুন্তল, নীলাদ্রি এবং তাপসের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানায়,'এদের আইনজীবীরা স্বীকার করছেন যে ওরা এজেন্ট। এঁরা তদন্তে সহযোগিতা করেনি। মুখোমুখি জেরায় বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। যারা এঁদের সঙ্গে সংযুক্ত। এঁরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারে। ষড়যন্ত্র এতটাই বড় যে, আমাদের তদন্তকারীর এতটা কম্পিটেন্ট যে কোনও প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করছে না। পনিরের কথা বলা হচ্ছে, ভ্যারাইটি অফ পনিরটাই খুঁজছে তদন্তকারীরা।'
এদিন কোর্টের বাইরে তাপস-কুন্তলের আইনজীবী জানান, 'বন্ধ দরজার ভিতরে সিবিআই কী করেছে আমরা জানি না। আমার দুই মক্কেলকে মাত্র এক ঘণ্টা জেরা করেছে। কিন্তু কোর্ট বারবার একটাই প্রশ্ন করছে, প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিটা কোথায়?' পাশাপাশি তাপস মণ্ডলের আইনজীবী জানান, 'সিবিআই এফআইআর-এ আমার মক্কেলের নাম নেই। কুন্তল ঘোষের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সিবিআইয়ের নোটিশের জবাবে আমরা তদন্তে সহযোগিতা করতে ছয় বার কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে গিয়েছি।'
গরু পাচার মামলায় (Cow Smuggling) সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের আরও ১৪ দিনের জেল হেফাজত। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের (Jail Custody) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে, গরু পাচার মামলায় আদালতে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে সিবিআই (CBI)। কেন্দ্রীয় সংস্থা শুক্রবার আদালতে আরও ১১৫টি নতুন ভুয়ো অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মাত্র ২ দিনেই এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই দাবি আদালতেও করেছে সিবিআই।
উল্লেখ্য, যাদের নামে এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এই ১৬ জনের মধ্যে আবার ১২ জন টিপ সই করেন, এমনটাই সিবিআই সূত্রে খবর। এদিকে, শুক্রবার আদালতে জামিনের আবেদন করেনি অনুব্রত মণ্ডল। অন্যদিকে গরু পাচার মামলায় ইডি, আসানসোল জেলের মধ্যেই অনুব্রতকে গ্রেফতারের পরে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট তাঁকে দিল্লিতে হাজির করানোর পরোয়ানা জারি করেছিল। ওই পরোয়ানার বিরুদ্ধে এবং রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগেই অনুব্রত দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছেন।
ইডি তাঁকে গ্রেফতারের পরে কারণ জানিয়ে কোনও নথি দেয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে মামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে চারটি মামলায় ইডি-র বক্তব্য জানতে চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অনুপ জয়রাম ভাম্বানি নোটিস জারি করেছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এবিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। তার মধ্যেই অনুব্রতের জেল হেফাজতের মেয়াদ ১৪ দিন বাড়ল।
১৪ দিনের জেল হেফাজত (Jail Custody) শেষে বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতে (Asansol Court) পেশ করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। ফের তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি অবধি তাঁকে আসানসোল জেলেই থাকতে হবে। এমনকি, বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে (Anubrata Mondal) সিবিআই জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবে। এই নির্দেশ দিয়েছে আসানসোল আদালত। এদিন অনুব্রতর পাশাপাশি সায়গল হোসেনকে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয়েছে। সায়গলের তরফে আজকে জামিনের আবেদন করা হয়নি।
যদিও সায়গল বিচারপতির কাছে আবেদন করেন, দিল্লিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তাই ভার্চুয়ালি না করে ফিজিক্যালি পেশ করা হোক। বিচারক সায়গলকে বলেন, 'এভাবে মুখের আবেদন অর্ডার হয় না। আপনার আইনজীবী যদি আবেদন করে, তাঁর ভিত্তিতে শুনানি হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে।'
এদিকে, অনুব্রত মামলাতেও জামিনের আবেদন করা হয়নি। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁকেও জেল হেফাজতের নির্দেশ। এদিন আবার অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে সিবিআই। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। যে কোনওদিন সকাল দশটা-বিকেল পাঁচটার মধ্যে জেলে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
সিবিআইয়ের সওয়াল, 'নতুন কিছু তথ্য এবং নথি হতে এসেছে সিবিআইয়ের। তার ভিত্তিতে অনুব্রতকে জেরা করতে চেয়েছে সিবিআই।' এদিকে এদিন আসানসোল কোর্ট চত্বরে আজ কোনও অনুব্রত অনুগামীর দেখা মেলেনি। এতদিন পর্যন্ত অনুব্রতকে যেদিন আদালতে পেশ করা হয়েছে, সেই দিনই বীরভূম থেকে প্রচুর তৃণমূল নেতা অনুগামীদের জমায়েত হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম বৃহস্পতিবার।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Recruitment Scam) এবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। অর্থাৎ পুজোয় জেলেই কাটাতে হবে তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ইন কমান্ডকে। তবে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে অশোক সাহা, এসপি সিনহা এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি নিয়োগ মামলায় এই চার জনের পুজো কাটবে গারদের পিছনে। বুধবার আলিপুর আদালতে (Alipur Court) তুলে পার্থ- কল্যাণময়ের আর হেফাজত দাবি করেনি সিবিআই (CBI)। তবে জেলে যাতে তাঁদের জেরা করা যায়, কোর্টকে আবেদন করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই আবেদন গ্রাহ্য করে এবং পার্থ-সহ অন্যদের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত।
যদিও এদিন জামিনের আবেদন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, দেশ ছেড়ে যাবেন না আমার মক্কেল। অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার দরকার এবং অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয় কাজ করছে। তাই জামিন দেওয়া হোক। পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবীর সওয়াল, 'মন্ত্রী মানে দফতরের সব কিছুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকবে? রেল লাইনে গণ্ডগোল হলে কি রেলমন্ত্রী যুক্ত হয়? রাস্তায় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কি পরিবহনমন্ত্রী যুক্ত? সিবিআইয়ের আবেদন শিশুসুলভ।
এদিকে, সিবিআই আইনজীবী বলেন, কারও জামিনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৯ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী ছিলেন। অযথা আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক কুমার সাহা মামলায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন। সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে এদিন কিছুক্ষণ নির্দেশ স্থগিত রাখে আদালত। অবশেষে বিকেলের দিকে এই চার জনকেই ৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) হেফজত চাইল সিবিআই (CBI)। এই মর্মে আলিপুর কোর্টে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে শুক্রবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে সশরীরে আলিপুর আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে বুধবার ভার্চুয়ালি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে আদালতে তোলা হয়েছিল। এদিনও জামিনের আবেদন খারিজ করে দু'জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান ইডি-সিবিআই (ED Court) আদালতের বিচারক।
যদিও বুধবারই প্রথমবার কোর্টে জামিনের সওয়াল করেন ইডির হাতে গ্রেফতার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। একইভাবে 'আমি অসুস্থ, আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিন, জামিন দিন', কাঁদতে কাঁদতে এই আবেদন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে কান্নাকাটি বৃথা, ফের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে এই দুই অভিযুক্ত। বুধবার অবশ্য শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিচারকের কাছে বলেন, 'আমার চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। আমাকে জামিন দিন, বাঁচতে দিন। ইডি ৩০ ঘন্টা ছিল আমার বিরুদ্ধে কিছুই সংগ্রহ করতে পারেনি। আমি জানতে চাই কে এটা করেছে? ইডি আমার বাড়িতে আসুন। আমার বিধানসভা কেন্দ্রে আসুন। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। ওর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন।'
ভিডিও কলে হওয়া শুনানিতে পার্থর সওয়াল, 'আমি বৃদ্ধ মানুষ, একজন জনপ্রতিনিধি। অর্থনীতিতে স্নাতক। বহুদিনের রাজনীতিবিদ। আমার শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত ইএসআই জোকার রিপোর্ট জমা আছে দেখে নিতে পারেন।'