ফের শিরোনামে উঠে এলো জগদ্দল। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে। ঘটনার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তড়িঘড়ি ওই তৃণমূল কর্মীকে প্রথমে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই পথেই মৃত্যু হয় ওই কর্মীর। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম ভিকি যাদব (৩৫)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সৌরভ সিংয়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভিকি যাদবের বাড়ির সামনে বাইকে করে তিনজন লোক এসে তাঁর খোঁজ করতে থাকে। এরপর ভিকি তাঁর নিজের পরিচয় দিতেই এলোপাথারি গুলি চালানো হয় তাঁর ওপর। মোট ১১ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তার মধ্যে ৯ টি গুলি গিয়ে লাগে ভিকির শরীরে। গুলির লাগার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ভিকি। তারপর স্থানীয়রা গুলির শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখে ভিকি মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
পুলিসের অনুমান, রাজনৈতিক কোনও কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে যারা গুলি করেছে তারা ভাড়া করা লোক বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এদিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ এন আর এস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিকি যাদবের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। তারপরই তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে মৃতদেহ। ইতিমধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ব্যপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। তবে গোটা এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিস। পাশাপাশি আরও জানা গিয়েছে, গতবছর ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু হয় ভিকির আত্মীয় বিজেপি কর্মী আকাশ যাদবের। সেই কারণে অনেকবারই সিবিআই তদন্তের জন্য ডেকেছে ভিকি যাদবকে। আকাশ যাদব খুনের অন্যতম সাক্ষী এই ভিকি। এখন প্রশ্ন উঠছে আকাশ যাদবের খুনের সঙ্গে কি কোনও ভাবে ভিকির খুনের সংযোগ আছে। নাকি ভিকির খুন কোনও রাজনৈতিক পরিকল্পনা! তা জানতেই তদন্তে নেমেছে পুলিস।
রবিবার সাতসকালে জগদ্দল (Shootout at Jagaddal) থানার ৩০ মিটারের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল (TMC Worker) কর্মীকে গুলি-বোমা ছুড়ে খুনের চেষ্টা। রবিবার সকালে ভাটপাড়া পালঘাট রোডে এক সাইবার কাফে ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তাঁকে প্রাণে মারতেই বোমাও ছোড়ে দুষ্কৃতীরা বলে এমনটাই অভিযোগ। জানা গিয়েছে, সকালবেলা বাজারে বেড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ী অশোক সাউ। পাঁচজন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, বোমাবাজিও করা হয়েছে। যদিও গুলিটি তাঁর পিঠ ঘেষে বেড়িয়ে যায়। অল্পের জন্য রেহাই পায় অশোক। পুলিস ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল এবং কার্তুজ উদ্ধার করেছে।
আক্রান্তর অভিযোগের তির আরমান নামে একজনের দিকে। অশোক সাউ জানান, 'আমি তৃণমুলের ১২ নম্বর ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট। আরমানের লোকজনই আমাকে গুলি করেছে।'
এই ঘটনায় ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, 'অশোক সাউয়ের সঙ্গে তিন বছর ধরে দলের কোনও যোগ নেই। আকাশ নামে এক ক্রিমিনালকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন আশোক সাউ।' তাঁর অভিযোগ, 'ক্রিমিনালদের রাজনীতিতে জায়গা দিলে এরকম বোমা-গুলির ঘটনা আরও ঘটবে!'
স্থানীয় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেছেন, 'যারা করেছেন তাঁরা দুষ্কৃতী। পুলিস প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তদন্ত করে দোষীদের নিশ্চয় সাজা দেওয়া হবে।' এদিন স্থানীয় সাংসদের মন্তব্যকে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করেন বিধায়ক। এই মন্তব্যে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আক্রান্ত অশোক সাউ তৃণমূল কর্মী বলে স্বীকার করেছেন বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তবে এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসকে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। অভিযোগ, 'বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেট। শাসক সাংসদ বনাম শাসক বিধায়কের এলাকা দখলের লড়াই।'
এক স্থানীয় জানান, 'আমাদের এলাকায় এই ঘটনা প্রথম। ভবিষ্যতে এমন না হওয়াই ভালো। যার উপর হামলা হয়েছে তাঁকে চিনি। ও প্রতিদিন তিন-চার জনের সঙ্গে চা খেতে যান।'
আবারও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। এবার জগদ্দলের (Jagaddal) মমিনপারা অঞ্চলে বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানো ঘিরে বচসা। এরপরই চলে বোমাবাজি (bombing)। ঘটনায় আহত (injured) হন ৪ জন। আহতদের হাসপাতালে (hospital) নিয়ে গেলে সেখানে চিকিত্সার পর ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১ জন এখনও চিকিত্সাধীন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মোতায়েন বিশাল পুলিসবাহিনী (police)। আতঙ্কে স্থানীয়রা। দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে, ঘটনার পরই পুলিস তদন্তে নামে এবং ওই বাড়ির আশপাশে তল্লাসি চালায়। এরপরই ওই অনুষ্ঠান বাড়ির ৩০ মিটার দূরে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই ব্যাগের মধ্যেও উদ্ধার হয় বোমা। ঘটনাস্থলে একটি বোমা বিস্ফোরণ হলেও বাকি দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে, এমনই পুলিস সূত্রে খবর।
জানা যায়, জগদ্দল ভাটপাড়া (Bhatpara) পুরসভা ১৭ নম্বর ওয়ার্ড মমিনপারা এলাকায় শনিবার রাতে পরপর তিনটি বোমা মারে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ মাহাতোর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময় দুষ্কৃতীরা এসে বোমা মারে বলে অভিযোগ। ঘটনায় আহত হন ৪ জন। আহতদের নাম সঞ্জয় সিং, মহম্মদ আসিফ, মহম্মদ ওয়াসিম আকরম, রাজা আনসারী। আহতদের মধ্যে ওয়াসিম আকরম গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে আরও খবর, বচসার জেরে দুষ্কৃতীরা এসে পরপর তিনটি বোমা মারে বিয়ে বাড়ি লক্ষ্য করে। একটি বোমা বিয়ে বাড়ির দেওয়ালে ফাটে। পুরনো শত্রুতার জেরে এমন ঘটনা মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যদিও এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জগদ্দল থানার পুলিস এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।