প্রসূন গুপ্ত: সম্প্রতি ৩ রাজ্যের ভোটে কেন্দ্রীয় বিজেপি প্রায় দেড় ডজন সাংসদকে বিধায়ক পদে দাঁড় করিয়েছিল। এদের অনেকেই জিতেছেন কিন্তু হেরেওছেন অনেকেই। ভোটের আসরে এদের নাকি পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী করার ইঙ্গিত দিয়ে। ভোটের ফলের পর দেখা গেল এদের কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি এবং তেমন কোনও বিশেষ দায়িত্বও দেওয়া হয় নি। মুখ্যমন্ত্রী তিন রাজ্যে যাঁদের করা হল তাঁরা তেমন জনপ্রিয় নন কিন্তু নতুন মুখ। কার্যত বার্তা দেওয়া হলো, যাই হোক না কেন পরোক্ষে দিল্লিই কন্ট্রোল করবে রাজ্যগুলিকে। অবশ্য এই ফর্মুলা নতুন কিছু নয়। ইন্দিরা রাজীবদের আমলেও বেশ কিছু রাজ্যে 'yes man'দেরকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যদিও কন্ট্রোল রাখেননি ইন্দিরা বা রাজীব।
বিজেপির বার্তা পরিষ্কার, মোদী যেহেতু দলের এবং দেশের ভোটের একমাত্র মুখ, কাজেই রাজ্য চলবে দিল্লির ফর্মুলাতে। একই সাথে যাঁরা সাংসদ পদ ছেড়ে বিধায়ক হয়েছেন, তাদেরকেও বলা হয়েছে, এবারে রাজ্য নিয়েই থাকো, দিল্লিতে তোমাদের দরকার নেই। যাঁরা হেরেছেন তাঁদের কাউকেই ফের লোকসভার টিকিট দেওয়া হবে না।
এ রাজ্যে কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে। এই নতুন মুখের বেশির ভাগই সঙ্ঘ পরিবারের নন। ছাঁটাইয়ের তালিকাটিও বেশ বড়। অনেক পুরনো সাংসদ টিকিট পাচ্ছেন না। এঁদের অনেকেই সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ আবার নব্যও আছেন অনেক। অমিত বচনে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না করে পথে নেমে, ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করতে হবে। সোশ্যাল নেটকেও মান্যতা দিয়েছেন অমিত শাহ। আরও একটি বিষয় পরিষ্কার যে ২০১৯-এর থেকে বেশি মহিলারা এবারের ভোটে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে চেনা বহু সাংসদ আসন হারাবেন। গুঞ্জনে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহ, রানাঘাট, হুগলি তো রয়েছে সঙ্গে অন্য জেলাও রয়েছে। অমিত টার্গেট দিয়েছেন এক অসম্ভব পরীক্ষার, তা ৩৫টি আসন। ৩২/৩৫ শতাংশ সংখ্যালঘু রাজ্যে এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
লোকসভা নির্বাচনের রুটম্যাপ নির্ধারণে বঙ্গে এসেছিলেন শাহ-নাড্ডা। রবিবার রাতে শহরে পা রাখেন তাঁরা। সোমবার রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ করেন শাহ-নাড্ডা জুটি। নির্ধারণ করে দেন, ৩৫ আসনের লক্ষ্যমাত্রা।
রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ করেন শাহ-নাড্ডা জুটি। নির্ধারণ করে দেন, ৩৫আসনের লক্ষ্যমাত্রা। নির্বাচনী কোর কমিটি গঠনের পর মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারে আইটি সেলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিএএ থেকে বাংলার দুর্নীতি সব প্রসঙ্গেই রাজ্যের শাসকদলকে কড়া আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বাংলার মানুষ যে আশা নিয়ে বাম সরকারের অবসান ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা এখন আশাহত।' এর পরেই রাজ্যের দুর্নীতি ও হিংসা নিয়ে সরব হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কাঠগড়ায় তোলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এছাড়াও অমিত শাহর বৈঠকেও উঠে এসেছে ভাইপো-প্রসঙ্গ। সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার আইটি সেলের বৈঠকে অমিত শাহর ভাষণের সময়, বিজেপি কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন করেন, ভাইপো গ্রেফতার কবে? যার জবাবও দিয়েছেন অমিত শাহ। এছাড়াও সিএএ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, 'দিদি প্রায়ই আমাদের উদ্বাস্তু ভাইদের সিএএ নিয়ে বিভ্রান্ত করেন। আমি এটা পরিষ্কার করে দিতে চাই যে সিএএ হল দেশের আইন, এবং কেউ এর বাস্তবায়ন আটকাতে পারবে না।'
এদিন শাহী টনিকে উজ্জীবিত বঙ্গের বিজেপি নেতারা। শাহ-নাড্ডার দেখানো পথেই নির্বাচনে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিষয়ে প্রত্যয়ী বঙ্গ গেরুয়া ব্রিগেডের নেতারা। একদিকে যখন শাহ-নাড্ডার ভোকাল টনিকে উজ্জীবিত বঙ্গ বিজেপি, সেই মুহূর্তে বড়সড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ থেকে সরানো হয় অনুপম হাজরাকে। সম্প্রতি তাঁর করা একাধিক পোস্টে বিতর্ক তৈরি হয়। সেই বিতর্কের জবনিতা টানতেই এই সিদ্ধান্ত বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।
প্রসূন গুপ্তঃ যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং এই দলের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সে তো খাতায় কলমে আসলে এখনও সংগঠনের অলিখিত চালিকা শক্তি অমিত শাহের হাতেই।
দেড় দিনের কলকাতা সফরে এসেছিলেন নাড্ডা এবং শাহ। বড়দিনের রাতে হাজির হয়েছিলেন দুই প্রধান। অনেক রাত হলেও নিউ টাউনের হোটেলে প্রাথমিক আলোচনা চলে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের সঙ্গে। ১৪ জনের একটি কোর কমিটি ছিল,তাদের মধ্যে মিঠুন চক্রবর্তী ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে এবং হোটেলে। স্বভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে মিঠুন অনুপস্থিত কেন? তিনি বর্তমানে নাকি আমেরিকায়। কিন্তু রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান যে, রবিবার মিঠুনের সঙ্গে তাঁর টেলিফোনে কথা হয়েছে। মিঠুনকে কোর কমিটিতে রাখা এবং বড়দিনের রাতে তাঁর খোঁজ নেওয়ার কারণ অনেকেরই ধারণা যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মিঠুন হয়তো দক্ষিণ কলকাতা থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
অমিত মঙ্গলবার দলের নেতাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন, সামনেই নির্বাচন অতএব দলের অন্দরের গোষ্ঠী কোন্দল এবং দলবাজি বাদ দিতে হবে। শাহের কাছে বার্তা ছিল, এ রাজ্যে সুকান্ত, শুভেন্দু বা পুরাতনীদের মধ্যে বিবাদ আছে। মঙ্গলবার ফের ১৪ জনের নতুন কমিটি তৈরি করে দিলেন শাহ, নাড্ডা। এই নতুন কমিটির মধ্যে সুকান্ত মজুমদার, আমিতাভ চক্রবর্তী বা শুভেন্দু অধিকারীরা যেমন আছেন অথবা কেন্দ্রীয় বিজেপির প্রতিনিধি যেমন আছেন, তেমনই প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও রাখা হলো। শুধু রাখাই নয়, শাহ পরিষ্কার জানিয়েছেন, দিলীপবাবু দীর্ঘদিনের সংঘ করা এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। সুতরাং তাঁর সঙ্গে দলীয় আলোচনা করে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে। দিলীপবাবুকেও পুরাতন বিবাদ ভুলে নতুনদের উপদেশ দিতে অনুরোধ করেন অমিত।
বেশ কয়েক মাস ধরে দিলীপবাবু পর্দার অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। এমনিতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাঁর উপর আদি বনাম নব্যর সংকট যা তৈরি হয়েছিল, শাহ আদেশ দিলেন এসব বন্ধ করতে হবে। এই কমিটি আসন্ন নির্বাচনের প্রচারের দিকে বিশেষ নজর দেবে যদিও পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে করা প্রার্থী হবে তা একেবারেই ঠিক করবে দিল্লির কর্তারা। সূত্রের খবর, শাহী আদেশে কাঁথি লোকসভাতে ভোটে দাঁড়াতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী।
শহরে একসঙ্গে শাহ-নাড্ডা (Amit Shah-JP Nadda)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই মঙ্গলবার কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা। লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যে তৈরি করা হল বিজেপির নতুন নির্বাচনী কোর কমিটি। মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার হস্তক্ষেপে এই কোর কমিটি তৈরি হয়েছে ১৫ জন সদস্যকে নিয়ে। এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন দলের দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা। জানা গিয়েছে, আজকের বৈঠকের মূলত প্রধান এজেন্ডা ছিল 'ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট'। এই বৈঠকেই ঠিক করা হয় যে রাজ্য বিজেপির কোর টিম নয়, অমিত শাহের বেছে নেওয়া কোর টিম ইলেকশন করাবে। আর তাঁদেরকেই বেছে নেন অমিত শাহ।
আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার যে ১৭ জনের বৈঠক চলছে তাঁর মধ্যে অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা বাদে ১৫ জন রয়েছেন। ১৫ জন সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচনী কোর কমিটি নিজে বেছে নিয়েছেন অমিত শাহ। এই কমিটিতে রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, রাহুল সিনহা, অমিতাভ চক্রবর্তী, সতীশ ধন্দ, মঙ্গল পান্ডে, আশা লকরা। এছাড়াও রয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাত, দীপক বর্মন, অমিত মালব্য, সুনীল বনসল। তবে এই নির্বাচনী কোর কমিটিতে জায়গা পাননি চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী- নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর, সুভাষ সরকার ও জন বার্লা। তবে এদিন সকলকে ভোটের লড়াই করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বললেন ও প্রার্থী যে কাউকে করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ।
নতুন বছর শুরুর আগেই বঙ্গ সফরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (J P Nadda)। সোমবার গভীর রাতে দু'জনেই একসঙ্গে শহরে এসেছেন। এই প্রথমবার একদিনের সফরে একসঙ্গে কলকাতায় এসেছেন তাঁরা। লোকসভা ভোটে বাংলায় ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই লোকসভাকেই পাখির চোখ হিসাবে বঙ্গে হাজির অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডা। বঙ্গ বিজেপি কতটা প্রস্তুত, তা খতিয়ে দেখতেই শহরে এসেছেন বিজেপির দুই মহারথী। কলকাতায় আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে দু'জনের। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল হতেই তাঁরা প্রথমেই পৌঁছে গিয়েছেন জোড়াসাঁকোয় একটি গুরুদ্বারে। এরপর তাঁরা এদিন কালীঘাটেও পুজো দিতে পৌঁছে গিয়েছেন। এর পাশাপাশি নিউটনের পাঁচতারা হোটেলেই একাধিক বৈঠক রয়েছে তাঁদের। মঙ্গলবারই দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা তাঁদের দুজনেরই।
জানা গিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এম জি রোডের ধারে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওই গুরুদ্বারে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সকাল থেকেই গুরুদ্বারের চত্বর মুড়ে রাখা হয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। গুরুদ্বার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভিতরে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যে এসে কলকাতার কালীঘাটেও পুজো দিতে এসেছেন অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডা। এদিন কালীঘাট মন্দির চত্বরে কলকাতা পুলিসের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে বিশেষ বিমানে শহরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতিকে স্বাগত জানাতে কলকাতা বিমানবন্দরে আসেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ দিলীপ ঘোষ, বিধায়ক মনোজ টিগ্গা, অগ্নিমিত্রা পল সহ বিজেপি নেতৃত্ব। এদিন ঢাক ঢোল নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে উপস্থিত হয় বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। ঢাক বাজিয়ে চলে নেতৃত্বকে স্বাগত জানানোর পর্ব। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁরা সোজা চলে যান নিউটাউনের একটি পাঁচতারা হোটেলে।
মহাসপ্তমীর দিন বাঙালি সাজে বঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (JP Nadda)। হাওড়া থেকে পুজোর শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বাংলা থেকে অশুভ শক্তি বিনাশের ডাক দিলেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে সুর বেঁধে দিলেন বিজেপির সভাপতি তা বলাই বাহুল্য।
ধুতি পাঞ্জাবি পরে একেবারে বাঙালিয়ানায় ভরপুর বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। মহা সপ্তমীর পবিত্র লগ্নে শারোদৎসবে সামিল হলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি। পরিদর্শন করলেন একাধিক পুজো মণ্ডপ। এদিন সকালে বিমানবন্দরে পদ্মফুল আর উত্তরীয় পরিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে স্বাগত জানালেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাহুল সিনহা সহ একাধিক বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। রামমন্দিরের অনুকরণে তৈরি সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের অভিনব পুজো মণ্ডপ পরিদর্শন করেই সপ্তমী সকালে ঐতিহ্যবাহী শোভাবাজার রাজবাড়িও ঘুরে দেখলেন জেপি নাড্ডা। পরিদর্শন করলেন হাওড়া বেলিলিয়াস রোডে জুগনু এ্যাসোসিয়েশনের পুজো। তাদের ৫৩ বছরের পুজো ভাবনা এবার জি ২০। মণ্ডপ সজ্জা ঘুরে দেখলেন নাড্ডাসহ একঝাঁক বিজেপি মহারথী। তবে রাজনীতির খোলস থেকে বেড়িয়ে একেবারে অন্যরূপে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির বঙ্গসফরের পিছনেও নির্বাচনী কর্মসূচিরই আঁচ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধনের আগেই শহরের মানুষকে উপহার দিয়ে এই পুজো মণ্ডপ মন কেড়েছেন প্রত্যেক বাঙালির। যার উদ্বোধনে এসেছিলেন স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার পরিদর্শনে জেপি নাড্ডা। বাঙালি সাজেই এদিন তিনি মাতৃ আরাধনায় ব্রতী হন। কথা বলেন দর্শনার্থীদের সঙ্গে। এদিন তিনি হাওড়া পুজো মণ্ডপ থেকে চ্যালেঞ্জ ঝুড়ে দেন। বলেন 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ এই শব্দকে সঙ্গ করেই সব অশুভ শক্তির বিনাশ হবে।
জেপি নাড্ডাকে একপ্রকার বলা যেতে পারে বাংলার জামাই। যদিও তাঁর শ্বশুরবাড়ি ঠিক বাংলায় নয়। তাঁর শাশুড়ি জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় সাংসদ ছিলেন বিজেপির। ওখান থেকেই পরিচয় কন্যা মল্লিকার সঙ্গে। আপাতত দুই সন্তান এই দম্পতির। জগৎপ্রকাশ নাড্ডা হিমাচল প্রদেশের মানুষ হলেও তাঁর বাবার কাজের জায়গা ছিল পাটনা। সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র ছিলেন তিনি। পরে হিমাচলে এসে আইন ডিগ্রি নিয়ে এলএলবি পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকেই স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এক সময়ে সংঘের কাজ করেছেন চুটিয়ে। পরবর্তীতে বিজেপি দলের কাজে চলে আসেন।
প্রথমে হিমাচল পরে বিলাসপুর থেকে ভোটে লড়াই করেন। ২০১৪ তে নরেন্দ্র মোদী জিতে আসলে তিনিও রাজ্যসভার সদস্য হন এবং কেন্দ্রের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। আরএসএস ঘনিষ্ঠ নাড্ডার উচ্চপদে যেতে খুব একটা দেরি হয়নি। ২০২০ তে তৎকালীন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে পেলে তিনি দলের সভাপতি হন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এখনও সাংগঠনিক কাজে অমিত শাহের উপর অনেকটা ভরসা করেন। কাজেই নাড্ডা সভাপতি হলেও দলের সাংগঠনিক কাজ পরোক্ষভাবে অমিতই দেখেন। সম্প্রতি দুই রাজ্যের ভোট হয়েছে। অমিত শাহের উপর দায়িত্ব ছিল গুজরাতের। সেখানে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে বিজেপি এবং অনেক আসন বাড়িয়েও নিয়েছে। পক্ষান্তরে নাড্ডার হাতে থাকা হিমাচল প্রদেশ হাতছাড়া হয় বিজেপির।
বছর ঘুরে নতুন বছরে সর্বভারতীয় বিজেপির দিল্লিতে বৈঠকে বসে। বিজেপি সভাপতির মেয়াদ সাধারণত তিন বছরের। নাড্ডাকেই ফের সভাপতি করা হয়, কিন্তু আগামি লোকসভা ভোট অবধি তাঁর মেয়াদ বাড়ে। চলতি বছরে নয় রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং আগামি সাধারণ নির্বাচন নাড্ডার কাছে অ্যাসিড টেস্ট।
দ্বিতীয় পর্বে বিজেপি সভাপতি হয়েই প্রথম প্রচারে তিনি এলেন বাংলায়। বুধবার রাতে কলকাতায় এসে নিউটাউনের এক পাঁচতারা হোটেলে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে যান মায়াপুর এবং সেখান থেকে নদিয়ার আরও এক জনপ্রিয় স্থান বেথুয়াডহরি। পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে জনসভাও করেন তিনি। এভাবেই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন নাড্ডা তাঁর শ্বশুড়বাড়ির রাজ্য থেকেই।
নয় রাজ্যের বিধানসভা ভোট (Assembly Poll 2023) এবং চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে জেপি নাড্ডাতেই (JP Nadda) ভরসা বিজেপির। ২০২৪ পর্যন্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি (BJP President) থাকছেন সেই নাড্ডাই। অর্থাৎ আরও এক বছর তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধিতে সায় মোদী-শাহদের। মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও বিজেপির সংবিধান মেনে পূর্ণ সময়ের সভাপতির মেয়াদ ৩ বছর। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার দলের শীর্ষ পদে তাঁর মেয়াদ বাড়লে ২০২৬ পর্যন্ত তাঁর সভাপতিত্ব থাকার কথা। কিন্তু আপাতত সাধারণ নির্বাচন পর্যন্তই অর্থাৎ ২০২৪ পর্যন্ত তাঁকে কাজ চালাতে বলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
এর আগে ২০১৪ থেকে ২০২০, ছয় বছর মোট দু'দফায় বিজেপি সভাপতি ছিলেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর শাহ জানান, আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বিজেপির সভাপতি হিসাবে থাকবে নড্ডাই।
জানা গিয়েছে ২০২৪-র জুন পর্যন্ত সভাপতি থাকবেন নড্ডা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, চলতি বছর ৯ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তালিকায় আছে মধ্য প্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলো। আবার এই বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই এই মুহূর্তে নাড্ডায় আস্থা রেখে বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ঘুঁটি সাজাতে চাইছে পদ্মশিবির।
প্রসূন গুপ্ত: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরদার লড়াই দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। দলের হাজারো গোষ্ঠীকে পাশে রেখে একসাথে চলার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেটা কীভাবে সফল হবে, পরের কথা কিন্তু ইতিমধ্যে জেপি নাড্ডা একটি কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, এই কমিটির নেতৃত্বে ২০২৩-এ পঞ্চায়েতে ভোট লড়বে রাজ্য বিজেপি। চমৎকার বিষয় এই যে কমিটিতে আদি ও বর্তমানকে সঙ্গে রেখেই ভোট প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীর পরেই জায়গা পেয়েছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষও। রয়েছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, দায়িত্ব বাড়ছে হুগলির সাংসদের। পাশাপাশি আনা হয়েছে রাহুল সিন্হাকেও। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতি বহুদিন ধরে গেরুয়া রাজনীতির মূল স্রোতের বাইরে। অবশ্য এই প্রতিবেদককে রাহুল জানান, পুজোর অষ্টমীর দিন থেকে প্রায়ই তিনি মুরলীধর সেন লেনে যান। বিকেল ৪ টের পর রাজ্য অফিসে আসতে আমন্ত্রণও জানান তিনি। রাহুল ছাড়াও বিভিন্ন সাংসদ-বিধায়করা আছেন কমিটিতে।
তবে চমকপ্রদ খবর, কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে। হঠাৎ মিঠুন কেন, উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রচারে এমন একটা মুখ দরকার যাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা আছে। বিজেপি জানে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত ভোট কার্যত সেমিফাইনাল। এই ভোট প্রমাণ করবে ২০১৯-এর মতো বাংলায় বিজেপি ১৮টি আসন পাওয়ার জায়গায় আছে কিনা? এবার প্রশ্ন হচ্ছে মিঠুন ৮০-র দশকের জনপ্রিয় নায়ক, এখন তাঁর বয়স ৭২। অনেকদিন সিনেমা থেকেও বেশ কিছুটা দূরে।
তাও কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন দেশের একদা সর্বোচ্চ আয়করদাতা মিঠুন এখনও 'মহাগুরু'। গ্রামের ভোট কাজেই মঞ্চে মঞ্চে তাঁর ফিল্মি ডায়লগ মানুষ উপভোগ করবে। এ ছাড়া বাংলায় বিকল্প কিছু নেই বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।
অন্যদিকে ৮ বছর ধরে বিজেপি করা এবং এক সময়ের সাংসদ রূপাকে কমিটিতে রাখা হয়েনি। অন্দরের খবর কয়েক মাস ধরে রূপা নাকি মিডিয়া এবং বিভিন্ন পোর্টালে এমন সব সাক্ষৎকার দিয়েছেন যা দলের পক্ষে শুভ নয়। নিজের বিশ্বাস অনেকটাই হারিয়েছেন রূপা বলেই গুঞ্জন।
মজার বিষয় মিঠুন এবং রূপা বহুদিন আগে 'বুধ্ধুরাম ঢোল দুনিয়া গোল' নামে একটি ছবি করেছিলেন। সেই ছবির হদিস কেউ রাখে না কিন্তু আজ বাস্তবে সেই ঘটনায় ঘটলো।
বাংলায় আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন চলছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। এই অভিযোগ তুলেই বিজপি সভাপতি জেপি নাড্ডাকে রিপোর্ট পাঠালো অনুসন্ধান কমিটি। পাঁচ সদস্যের এই অনুষ্ঠান কমিটি সম্প্রতি কলকাতা এসেছিল। নবান্ন অভিযানে আহত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের কথা বলার পাশাপাশি দেখতে যান দলের কাউন্সিলর মীনদেবী পুরোহিতকে। এরপরেই দিল্লি ফিরে তাঁরা কড়া রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়েছেন জেপি নাড্ডাকে। সেই রিপোর্টে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায় গুলি মারা প্রসঙ্গের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
পাশাপাশি রাজ্যের তিন আইপিএস দময়ন্তী সেন, সিদ্ধিনাথ গুপ্ত এবং প্রবীন ত্রিপাঠিকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটির অভিযোগ, 'এই তিন আইপিএস দায়িত্ব উপেক্ষা করে শাসক দলের হয়ে কাজ করেছে। উচ্চপদস্থ পুলিসকর্তারা শাসকের অঙ্গুলিহেলনে বিজেপি কর্মকর্তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। বিরোধী দলের কোমর ভাঙার জন্য সন্ত্রাস এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে।'
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড উল্লেখ করে রিপোর্টে লেখা, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন অভিযানে পুলিসি বর্বরতাকে সমর্থন করে বলেছেন তিনি ঘটনাস্থলে থাকলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মাথায় গুলি করতেন। এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার বাংলার শাসক দলের ফ্যাসিস্ট মনোভাব। শাসক দলের নেতারাই বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিসি নির্যাতনের অনুমোদন দিয়েছিল।'
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নবান্ন অভিযানের পর যে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি কলকাতায় এসেছিল, সেই কমিটির সদস্য-- ব্রিজলাল (অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, সাংসদ), কর্নেল রাজ্য বর্ধন সিং রাঠৌর (সাংসদ, লোকসভা), অপরাজিতা সারেঙ্গি (সাংসদ, লোকসভা), সুনীল জাখর, সমীর ওঁরাও (সাংসদ)।
শনিবার সকাল থেকেই কলকাতার একাধিক জায়গায় ঘুরে দেখল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাঠানো অনুসন্ধানকারী দল (Fact Finding Committee)। মূলত বিজেপির (BJP) নবান্ন অভিযানকে (Nabanna Abhijan) ঘিরে পুলিসি বর্বরতার অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী। অভিযোগ, দলের একাধিক কর্মী-সমর্থক পুলিসের অতিসক্রিতায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত। বঙ্গ বিজেপির এই অভিযোগের গুরুত্ব খতিয়ে দেখতেই এই অনুসন্ধানকারী দলের চার সদস্যের কলকাতা সফর। শনিবার তাঁরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (calcutta Medical College), মীনাদেবী পুরোহিতের বাড়ি এবং হেয়ার স্ট্রিট থানায় যান। রবিবার তাঁরা বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন। এমনটাই বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর।
মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন বিজেপি কর্মী সৌমিক হালদার দেখে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এই অনুসন্ধান দলের সদস্য সাংসদ ব্রিজ লাল বলেন, 'বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী সৌমিক হালদার নবান্ন অভিযানের পর পুলিসি বর্বরতার শিকার। লাঠি দিয়ে মেরে উনার হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমিও একসময় আইপিএস ছিলাম কিন্তু এরকম পুলিসি গুণ্ডাগিরি দেখিনি। সৌমিক হালদারের অবস্থা এখনও গুরুতর। এখানে বীরভূমে মানুষ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ঘর থেকে নগদ উদ্ধার হয়, শিক্ষায় দুর্নীতি। আর যুবরা কাজের দাবিতে সরব হলে তাঁদের মারধর করা হয়।'
এদিন বিজেপির এই সাংসদ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় সরব ছিলেন। তাঁর মন্তব্য, 'উপর থেকেই পুলিসি এই বর্বরতার নির্দেশ এসেছিল। নয়তো একজন সাংসদ মাথায় গুলি মারার কথা কীভাবে বলে। এখানে জঙ্গলরাজ, নৈরাজ্য চলছে ২০২৪-এ জবাব দিয়ে দেব।'
শনিবার দুপুরে বিজেপির হেস্টিংস দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। এই দলের অন্যতম সদস্য তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর জানান, বামপন্থীদের অত্যাচার আর কংরেসের দুর্নীতি, এই দুই মিলিয়ে রাজ্যে তৃণমূল সরকার চালাচ্ছে। দেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলায় অত্যাচার হচ্ছে। এই দেশে আইনব্যবস্থা রয়েছে আর মানুষই সবার সরকার। সেই মানুষ বাংলার এই নিষ্কর্মা সরকারকে বুঝিয়ে দেবে আসল রাজা কে।
তাঁর মন্তব্য, 'বাংলার পুলিসের মধ্যে তৃণমূল ঢুকে গিয়েছে। কে তৃণমূল, কে পুলিস বোঝা দায়। রাজ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। শাসক দলের কেউ বিরোধিতা করলে তাঁকে ডাণ্ডা খেতে হবে।'
প্রসূন গুপ্ত: ঘোরতর বামপন্থী রাজ্য ছিল ত্রিপুরা। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের আগমনের কয়েক বছর পর সেখানেও কংগ্রেসকে সরিয়ে সিপিএমের নেতৃত্বে বামেরা ক্ষমতায় আসে। মাঝে রাজীব গান্ধীর আমলে একবার ৫ বছরের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল ঠিকই, কিন্তু গোষ্ঠীদন্দ্ব ইত্যাদিতে জড়িয়ে সেই ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি হাত শিবির। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও ত্রিপুরার সমস্যা অনেক, যা কিনা স্বাধীনতার পর থেকে ৭৫ বছর বাদেও সমাধান হয়নি। স্কুল কলেজে বেড়েছে, ইঞ্জিয়ারিং থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট হয়েছে কিন্তু শিক্ষান্তে চাকরির সুবিধা হয়নি। কারণ সেভাবে শিল্প বিনিয়োগ আসেনি। আসা কঠিনও বটে কারণ বড় শিল্প গড়লে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো প্রথমত খরচসাপেক্ষ, দ্বিতীয়ত সময় নষ্ট। বিজেপির বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এদিকে বিপ্লব আরএসএস করা নেতা। দীর্ঘদিন সংঘের প্রচারক ছিলেন। দলের ধারা অনুযায়ী তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই বোঝা গেলো দলে মন কষাকষি প্রবল। বিভিন্ন সময় দিল্লি থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলো কিন্তু ফিরে গিয়েছিলো উপদেশ দিয়েই। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারল, যে কোথাও দল ত্রিপুরাতে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। উপজাতিরা ক্ষিপ্ত, অতএব বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী করা হল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা মানিক সাহাকে।
মানিক দীর্ঘদিন বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুখ। শোনা গিয়েছিলো যে বিপ্লব দেবকে হয়তো রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লির চরমপত্র এল, যা পাঠালেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অরুন সিং। সেই পত্রে পরিষ্কার বার্তা রয়েছে আজ থেকেই ত্রিপুরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য। এই বার্তা পাঠিয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাই। রাজীব দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। এরই সঙ্গে বিপ্লবের আশাও শেষ হলো।