গোটা গাজা শহরকেই ঘিরে ফেলেছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। এমনই জানাল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, গাজা ভূখন্ডকে মোট দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একটি উত্তর গাজা এবং অন্যটি দক্ষিণ গাজা। হামাসদের পরাস্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। ইজরায়েলি সেনার তরফে জানানো হয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পূর্বে পুরো গাজায় ইন্টারনেট এবং টেলিফোন সংযোগও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবারই ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে ইজরায়েল অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক সফরে গিয়েছিলেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্য়ান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি দেখা করেন প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে।
এদিকে বহু আলোচনা হলেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় নেতানিয়াহু। যুদ্ধ বিরতির কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেশ কয়েকদিন ধরে গাজায় ঢুকে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। হামাসের বেশ কয়েকটি ডেরাও ধ্বংস করেছে তাঁরা। এবার পাল্টা ইজরায়েলের শহরে নতুন করে হামলা চালালো হামাস গোষ্ঠী। সীমান্ত শহর ইরেজে হামলার সেই ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে খোদ হামাস গোষ্ঠী।
আল-কাসাম ব্রিগেডের ফুটেজে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন টানেল থেকে উঠে খানিকটা এগিয়ে গেল। তারপরই শহরকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালাতে দেখা গেল তাঁদের।
এদিকে মঙ্গলবার হামাস নির্মিত বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গে অভিযান চালায় ইজ়রায়েল বাহিনী। একটি সুড়ঙ্গ থেকে যুদ্ধবন্দি এক সেনাকে উদ্ধার করে তারা। উল্লেখ্য, হামাস শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দিলেও, ইজরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুদ্ধবিরতি করা হবে না।
ইজরায়েলি সেনার হানায় বিধ্বস্ত গাজা। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ, ভেসে আসছে আর্তনাদ আর কান্না। প্রাণ হারাতে হচ্ছে কত নিরীহ মানুষকে। এই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে ইজরায়েলকে বিশেষ শর্ত দিল হামাস গোষ্ঠী।
হামাস পরিচালিত চ্যানেল আল-আকসা টিভিতে বিশেষ শর্ত ঘোষণা করা হয়েছে। হামাসের তরফে জানানো হয়েছে, প্যালেস্তাইনীয় বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলে তাঁরাও ইজরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকদের মুক্তি দেবে। বন্দী মুক্তির শর্ত আজ নয়, আগেও দিয়েছিল হামাস গোষ্ঠী। সেই শর্তে আদৌ ইজরায়েল রাজি হয় কি না, তাঁদের সিদ্ধান্ত কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।
উল্লেখ্য, শনিবার হামাসের তরফে জানানো হয়, রাশিয়ান-ইজরায়েলি দ্বৈত নাগরিকত্বের আটজন, যাদের বন্দী করা হয়েছিল,তাদের খোঁজ চলছে। মস্কোর অনুরোধে ওই আট নাগরিককে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছেন তাঁরা। এমনিতেই রাশিয়ার সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক বেশ ভাল। ইজরায়েল-হামাসের যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই প্যালেস্টাইনের পাশে থেকেছে রাশিয়া।
গাজা ভূখণ্ডে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করেছে ইজরায়েল। শুক্রবার ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, এবার স্থলভাগে অভিযান চালাবে ইজরায়েল সেনা। শুক্রবার রাতে ইজরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় গাজার ইন্টারনেট ও ফোন সার্ভিস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জানিয়েছে, প্যালেস্তাইনের টেলিকম ফার্ম।
এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে ইজরায়েল সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি গাজা ভূখণ্ডে সুড়ঙ্গের ডেরা থেকে হামাস যোদ্ধাদের উৎখাত করতে নয়া পরিকল্পনা করেছে ইজরায়েল। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি ভূমধ্যসাগর থেকে বিপুল পরিমাণ জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইজরায়েল সরকারের হিসেব অনুযায়ী, হামাসের সঙ্গে সংঘাতে তাঁদের ১৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হামাসের দাবি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইজরায়েলি বাহিনীর হামলা গাজা ভূখণ্ডে মৃত্যু হয়েছে ৭,৩২৬ জনের। মৃতদের নামের তালিকাও প্রকাশ করে হামাস দাবি করেছে, মৃতদের অধিকাংশ সাধারণ নাগরিক ও শিশু। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় সবথেকে ভয়ঙ্কর হামলা করল ইজরায়েল। সংবাদ সংস্থা এএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজার উত্তর প্রান্তে এয়ারস্ট্রাইক করেছে ইজরায়েল সেনা। গাজা শহরের উত্তর প্রান্তে হামাস জঙ্গিদের ডেরায় সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, প্যালেস্তাইনের ওই এলাকায় আকাশে সারি সারি রকেট দেখা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, হামলার সময় ওই এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যখন গাজায় হামলা চলছে, ইজরায়েলের শহরগুলিতে তখন রকেট ওয়ার্নিং সাইরেন বাজতে শোনা যায়। ইজরায়েলের সেনার মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি টেলিভিশনে জানিয়েছেন, গাজা শহরের ওই এলাকায় তারা হামলা চালিয়ে যাবেন।
শুধু আকাশপথে নয়, স্থলপথেও সেনাবাহিনী গাজার দিকে রওনা দিয়েছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, হামাস অধ্যুষিত অঞ্চলে দীর্ঘদিন পর স্থলপথে আক্রমণ করতে প্রস্তুত ইজরায়েল সেনা।