
রেললাইনের উপরে রাখা বড় পাথর। আর কয়েক মুহূর্ত দেরি হলেই ঘটে যেত বড়সড় দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগেই এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল। শুক্রবারও এমনই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এল। সূত্রের খবর, শুক্রবার মহারাষ্ট্রের পিম্পরি-চিনচওয়াদের রেললাইনের উপরেই পড়ে ছিল বড় বড় পাথর ও বোল্ডার। পরে রেল কর্মীর তৎপরতায় এড়ানো যায় দুর্ঘটনা।
সূত্রের খবর, শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে মহারাষ্ট্রের আকুরদি এবং চিঞ্চওয়াড় স্টেশনের মাঝে। পুণেগামী একটি ট্রেন আপ লাইনে আসছিল। সেই সময়ই হঠাৎ রেলের গার্ড দেখতে পান যে রেললাইনের উপরে বেশ কিছু বোল্ডার পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চিনচওয়াদের স্টেশন মাস্টারকে খবর দেন ও নাগেরকোলি-মুম্বই এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিনচওয়াদের কাছে থামিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সেখানে রেলকর্মীরা পৌঁছে যান ও পাথরগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
যদি রেল গার্ড সঠিক সময়ে সতর্ক না করতেন, তাহলে লাইনচ্য়ুত হতে পারত ট্রেনটি। ফলে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন ট্রেনযাত্রীরা। রেলসূত্রে খবর, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর পিছনে কোনও নাশকতার ছক ছিল কিনা সে নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই রাজস্থানে জয়পুরগামী বন্দে ভারতের যাওয়ার পথে রেললাইনের উপর পাথর, লোহার রড রেখে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি চালকের নজরে আসতেই আপৎকালীন ব্রেক কষে ট্রেন থামানো হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকা ট্রেন দুর্ঘটনার (Coromandel Accident) খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওড়িশার (Odisha) বালেশ্বর যেন 'মৃত্যুপুরী'-তে পরিণত হয়েছে। ২ জুন সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া-চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express)। প্রাথমিক ভাবে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেসের লাইনচ্য়ুত দুটি কামরায় ধাক্কা মেরে উল্টে যায় যাত্রীবোঝাই হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা। এরপর কয়েকটি কামরা ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের মালগাড়ির ওপর। ফলে যত বেলা গড়াচ্ছে, মৃত ও আহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এবারে এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউড-টলিউড তারকারা। বলিউডের পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী থেকে অভিনেতা সলমন খান, করিনা কাপুর, পরিণীতি চোপড়া সহ বহু তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ট্রেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৮, তবে এই সংখ্যা যে আরও বাড়তে চলেছে তারই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী টুইটারে লিখেছেন, 'দুঃখজনক এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক। কীভাবে ৩টি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়? কে দায় নেবে? সকল পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি। ওম শান্তি।'
অভিনেতা সলমন খান শোকপ্রকাশ করে টুইটে লিখেছেন, 'দুর্ঘটনার কথা শুনে সত্যিই মর্মাহত, ঈশ্বর নিহতদের আত্মাকে শান্তি দিন, এই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করুন এবং আহতদের পরিবারকে শক্তি দিন।'
পরিণীতি চোপড়া লেখেন, 'ওড়িশার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সবার জন্য আমি প্রার্থনা করছি। পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা শক্ত হোন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরোগ্য কামনা করছি। ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।'
চিরঞ্জবী শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, 'ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় হতবাক! আমার হৃদয় শোকাহত পরিবারের সঙ্গে রয়েছে।'
জুনিয়র এনটিআরও টুইটারে এই দুর্ঘটনার জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন।
মোদি সরকারের দৌলতে ভারতবাসী পেয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express)। এই সেমি-হাই স্পিড ট্রেনটি চালু হওয়ায় কতটা যে সুবিধা পেয়েছে ভারতবাসী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতে চালু ট্রেনগুলির মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস একটি প্রিমিয়াম ট্রেন। এটিতে যেমন রয়েছে অত্যাধুনিক ফিচার, তেমনি ট্রেনের সিট অত্যন্ত আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষার দিকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ নজর। কারণ ট্রেনে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা (Cctv Camera)। এছাড়াও রয়েছে স্লাইডিং দরজা-সহ বায়ো টয়লেট। যাত্রীদের রুচি-সম্মত ভালো মানের খাবারও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভারতবাসী কি সত্যি এই ধরণের ট্রেন ডিজার্ভ করে?
কারণ প্রায়ই দেখা গিয়েছে, ট্রেনের জিনিসের অপব্যবহার নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও একাধিকবার দেখা গিয়েছে, বন্দে ভারতে ইট, পাথর-বৃষ্টি হতে। বন্দে ভারত চালু হওয়ার পরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্দে ভারতকে উদ্দেশ্য করে ইট, পাথর ছোঁড়া হয়েছে। ফলে বারবার রেলওয়ের সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাথর হামলা দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানায়। তবে শুধু বন্দে ভারতেই নয়, আরও একাধিক ট্রেন যেমন- রাজধানী, শতাব্দী এক্সপ্রেসেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
ফলে রেলওয়ের সম্পত্তির সুরক্ষা, ট্রেনকে পরিষ্কার রাখার কাজ যে শুধু রেলকর্মীদের, এমনটা কিন্তু নয়, রেলযাত্রীদেরও ট্রেনের বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার সঠিকভাবেই করা উচিত। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে একটি মেয়ে খাবার রাখার ট্রে-এর উপর বসে সিটের উপর পা রেখেছেন। জানা গিয়েছে, ভিডিওটি কাটরা-দিল্লি বন্দে ভারতের। এরপর এই ভিডিও ভাইরাল হতেই রেলওয়ের তরফে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। ট্যুইট করে বলেছে, 'রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা সবারই দায়িত্ব। এটা শুধুমাত্র রেলকর্মীদের জন্য নয়, রেলযাত্রীদেরও এতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত। সুরক্ষার ক্ষেত্রে দু'পক্ষেরই অবদান থাকলে রেল পরিষেবা আরও উচ্চমানের হয়ে উঠবে।' রেলওয়ের তরফে তাই রেলযাত্রীদের অনুরোধও করা হয়েছে যে, সবাই যেন একজন দায়িত্ববান রেলযাত্রী হয়ে ওঠেন।
এসব ঘটনার পর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, সত্যিই কি আমরা এমন প্রিমিয়াম ট্রেনগুলোর জন্য যোগ্য?