
বিরিয়ানি পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! চোখের সামনে মাটন কিংবা চিকেন বিরিয়ানি দেখেও জিভে জল আসে না, এমন মানুষ বড্ড বিরল। এই ছবিটা যে শুধু বাংলার, তা কিন্তু নয়। গোটা ভারতবর্ষের আনাচে কানাচে বিরিয়ানির প্রতি ভালোবাসা ঠিক এমনই। বিরিয়ানির সুগন্ধি আবেদন মলিন হয়নি এতটুকুও। বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলির ভাষায় বলতে হয়, 'একি ভানুমতি! একি ইন্দ্রজাল।' হাজারো ভাষা, বর্ণ, গোত্র, জাতি ও ধর্মে বিভক্ত ভূ-ভারতবাসীকে এক টেবিলে বসাতে পারে বোধহয় দু'টি জিনিস। তার মধ্যে একটি হল ক্রিকেট আর অন্যটি বিরিয়ানি।
এই ঐন্দ্রজালিক বিরিয়ানি প্রথম কীভাবে তৈরি হয়েছিল, জানলে তাজ্জব বনে যাবেন বইকি। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, 'বিরিয়ানি' শব্দের অর্থ কী? বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি ফরাসি 'বিরিয়ান' শব্দ থেকে। ফরাসিতে 'বিরিয়ান' শব্দের অর্থ 'রান্নার আগে চাল ভেজে নেওয়া'। বাস্তবেও বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তাই এই নামকরণ।
বিরিয়ানির উৎপত্তি কবে?
অনেকে বলেন, তৈমুর লঙ্গের হাত ধরে ১৩৯৮ সাল নাগাদ ভারতে এসেছিল বিরিয়ানি। মাটির পাত্রে চাল, মশলা আর মাংস মিশিয়ে এক সঙ্গে রান্না করা হত। তখন প্রধানত সৈন্যদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত বিরিয়ানির এই আদি ‘ভার্সন’। অন্য একটি মতে লঙ্গের বহু আগে ২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরবের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে ভারতে। তামিল সাহিত্যে ‘ওন সরু’ নামে এক ধরনের খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভাত, ঘি, হলুদ, ধনে, মরিচ, তেজপাতা, মাংস দিয়ে তৈরি হত এই খাবার। যার সঙ্গে আধুনিক বিরিয়ানির অনেকটাই মিল পাওয়া যায়।
তবে বিরিয়ানি জনপ্রিয়তা পায় মুঘল সম্রাটদের হাত ধরে। মুমতাজ মহলের রোজকার খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিরিয়ানি খেতে খুবই ভালোবাসতেন শাহজাহানের এই সুন্দরী বেগম। কথিত, একবার নাকি মুঘল সেনাছাউনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুমতাজ। সেখানেই বিরিয়ানি রান্না হতে দেখেন তিনি। রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, সৈন্যদের ‘ব্যালান্স ডায়েট’ দেওয়ার জন্য ভাত ও মাংস মাখানো এই খাবার দেওয়া হয়। নতুন এই খাবারটি চেখে দেখে এর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন মুমতাজ। সেই সূত্রপাত। পরে ভোজনরসিক মুঘলদের খাবার টেবিলে জয়গা পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুস্বাদু বিরিয়ানিকে। মুঘলরাই ভারতে যেখানে যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিরিয়ানির স্বাদ। সেটা আবার স্থানীয়দের হাতে পেয়েছে একেকটি নতুন মাত্রা। আর তাই তো পূর্বে ঢাকা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের! এত বৈচিত্র্য!
শুধু মুঘল রাজপরিবারই নয়, লখনউ-এর নিজাম প্যালাসেও বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা ছিল মারাত্মক। নিজাম পরিবার থেকেই রকমারি বিরিয়ানির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে যত বাহারি রকমেরই হোক না কেন, সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় 'দম পুখত' বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত সমস্ত উপাদান একসঙ্গে দিয়ে দমে বসানো হয়। অল্প আঁচে, ঢাকা দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এই বিরিয়ানি।
কোচবিহার জেলায় ছড়িয়ে আছে রাজাদের ইতিহাস। এই জেলার তুফানগঞ্জ ১ নং ব্লকের অন্তর্গত নাটাবাড়ি ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত। এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দেবোত্তর চারালজানি এবং চাড়ালজানি গ্রাম। গ্রাম দুটির ৫৬ বিঘা জমি ঘিরে রেখেছে বনভূমি। যে বনভূমির পরতে পরতে রাজকাহিনী। গ্রামের মানুষ জানেন তা। সেই সব তথ্য আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে নাটাবাড়িতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুলেছে এলাকার মানুষ। তাঁদের আশা, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদেরও কর্মসংস্থান হবে।
এই এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে নাটাবাড়ির বলরাম মন্দির এবং নাটাবাড়ির হেরিটেজ রোড উল্লেখযোগ্য। নাটাবাড়ির বলরাম মন্দিরের বহুদিনের পুরোহিতের মুখেও শোনা গেল রাজরাজাদের কথা।
কথিত আছে, কোচবিহারের রাজা মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর, জিতেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর, জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভুপ বাহাদুররা এই বনভূমিতেই শিকারে আসতেন। এই এলাকা থেকেই বাঘ, শিয়াল, বন শূকর, বড় খরগোশ, সজারু শিকার করতেন। যা পরবর্তীতে রাজবাড়িতে নিয়ে যেতেন। বনভূমির পুরনো গাছ এখন আর নেই। ১৯৮৩ সালে প্রাচীন শাল গাছগুলি কেটে নতুন গাছ লাগানো হয়। বর্তমানে সেগুন, জারুল, চাপ গাছ লাগানো হয়েছে। ৫৬ বিঘা জমির মধ্যে এখনও প্রায় ১২ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এই বনভূমির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে খাটাজানি নদী। যা আজ মৃতপ্রায়। এক সময় শিকার করতে এসে এই নদীর জলই পান করত রাজার সঙ্গে থাকা হাতিঘোড়া।
এই নদী নিয়েও রয়েছে আলাদা গল্প। এই এলাকাতেই কথিত আছে, খাটাজানি নদী দিয়েই একসময় চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য জাহাজ চলাচল করত। পাশাপাশি যে কোনও পবিত্র অনুষ্ঠানে গঙ্গা নিমন্ত্রণ করতে এলে সোনার চালুনি ভেসে উঠত। অনুষ্ঠান শেষ হলে আবার সেই চালুনি এই নদীতেই ফেরত দিতে হত। এমনই এক সমৃদ্ধ বনাঞ্চলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন নাটাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা চাইছেন, এই ৫৬ বিঘা জমি এবং নদীকে সাজিয়ে তোলা হোক। বনাঞ্চল এবং নদীকে ঘিরে গড়ে উঠুক পার্ক। মৃতপ্রায় নদীটি খনন করে নৌকা বিহার বা বোটের ব্যবস্থা করা হোক। সরকারিভাবে এই প্রকল্প চালু হলে উপকৃত হবে এই এলাকার মানুষ। উপকৃত হবে বেশ কিছু বেকার যুবক-যুবতী।
সুরের জগতে ইন্দ্রপতন। রবিবার সকালে মুম্বইয়ের (Mumbai) হাসপাতেলে প্রয়াত (Death) হয়েছেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীতজগত থেকে শুরু করে সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক মহলেও।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারাঠি ঘরে জন্ম হয় এই স্বনামধন্য গায়িকার। তাঁর বাবা ছিলেন থিয়েটার জগতের প্রথিতযশা এক শিল্পী দীননাথ মঙ্গেশকর। তিনি ছিলেন স্বয়ং শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন মহাগুরু। তাঁর ঘরেই সংগীতের পাঠ দিতেন ছাত্র-ছাত্রীদের। সেসময় লতার প্রতিভা চোখে পড়েছিল তাঁর। তারপর থেকে যখনই তিনি রেওয়াজ করতে বসতেন, সঙ্গে লতাকে নিয়ে বসতেন। সেটাই ছিল লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গীত শিক্ষার প্রথম পাঠ।
যদিও খুব ছোট বয়সে লতাজি তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। যার ফলে বাবা না-থাকাতে সংসারের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। যে সংগীত এতদিন ছিল তাঁর সাধনা, তাকেই উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নেন। শুরু হয় নতুন লড়াই। লড়াই-এ নেমে ইতিহাস রচনা করলেন তিনি।
তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন। তাঁর গাওয়া মোট গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার অন্যতম রেকর্ড তাঁর।
লতা ১৯৪২ সালে কিটি হাসাল নামে একটি মারাঠি চলচ্চিত্রের জন্য তাঁর কেরিয়ারের প্রথম গান "নাচু ইয়া গাদে, খেলু সারি মণি হাউস ভারি" রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, গানটি চলচ্চিত্রের চূড়ান্ত কাট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এমনকি প্রথমদিকে তাঁর গলাকে সরু বলে অনেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই 'গোল্ডেন ভয়েসে' বিশ্ব কাঁপিয়েছেন তিনি।
তবে ১৯৫০-এর দশকটি সম্পূর্ণরূপে মঙ্গেশকরের ছিল। যিনি একাই শঙ্কর জয়কিষাণ, নওশাদ আলি, এস ডি বর্মন, হেমন্ত কুমার এবং মদন মোহনের মতো মহান ব্যক্তিদের সাথে কাজ করেছিলেন। যদিও অনেক ইন্টারভিউতে বলতে শোনা গিয়েছিল লতাজিকে, মদন মোহন তাঁর অন্যতম প্রিয় মিউজিক ডিরেক্টর।
যদিও সেসময় উপার্জন খুব বেশি হয়নি তাঁর। তবে এটি লতা মঙ্গেশকরের জন্য 'গোল্ডেন' বছর ছিল। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি। সে সময়ের প্রখ্যাত অভিনেতারা তাঁদের ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠস্বর চাইতেন। আবার অনেকে এই চুক্তিতেই সিনেমায় সই করতেন, যদি লতা মঙ্গেশ্বকর গান গান, তবেই তাঁরা ওই সিনেমা করবেন।
৬০-এর দশকে, মধুবালা "মুঘল-ই-আজম" ছবিতে মঙ্গেশকরের কণ্ঠস্বরের মুখ হয়ে উঠেছিলেন, যার মধ্যে 'জব প্যায়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া' গানটি অনেক প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম প্রকাশের ভাষা হয়ে উঠেছিল। এমনকি আধুনিক প্রজন্মের প্রেমিক- প্রেমিকাদের গলায়ও শুনতে পাওয়া যায় এই গান।
লতা মঙ্গেশকর একবার বলিউড হাঙ্গামার সাথে কথা বলার সময় বলেছিলেন, তিনি নিজের গান শোনেন না। কারণ তিনি তাঁর গানে শত দোষ খুঁজে পান। ৬০-এর দশকে লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের সঙ্গে মঙ্গেশকর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ৭০০ টিরও বেশি গান গেয়েছিলেন। যাঁর মধ্যে বেশিরভাগই বিশাল হিট হয়েছিল।
লতা মঙ্গেশকর ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল একটি সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সংসদের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছিলেন। গিনেস বুক অফ রেকর্ডস ১৯৭৪ সালের সংস্করণে লতা মঙ্গেশকরকে সর্বাধিক গানের রেকর্ডকৃত শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছিল। তবে এই দাবির বিরোধিতা করেছিলেন মহম্মদ রফি। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই এন্ট্রিটি সরিয়ে ফেলা হয়। সেই স্থানে গিনেসে লতার বোনকে সবচেয়ে বেশি রেকর্ডকৃত শিল্পী হিসাবে রাখা হয়। বর্তমানে, পুলাপাকা সুশীলা এই সম্মানটি ধরে রেখেছেন।
তিনি তাঁর কেরিয়ারে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর মধ্যে ২০০১ সালে 'ভারতরত্ন', ১৯৯৯ সালে 'পদ্মবিভূষণ', ১৯৮৯ সালে 'দাদা সাহেব ফালকে', ১৯৬৯ সালে 'পদ্মভূষণ' আরও কত কী।
লতা মঙ্গেশকর জীবনের শেষ গান 'সৌগান্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি' রেকর্ড করেছিলেন, যা ময়ূরেশ পাই দ্বারা রচিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল। এটি ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ মুক্তি পায়।
বলাই যায়, একটা যুগের অবসান হল। তাঁর সুর অমর হয়েই থেকে যাবে। পঞ্চভূতে বিলীন হবে তাঁর নশ্বর দেহ। তিনি বলে গেলেন......
"লাগ যা গলে কে ফির ইয়ে হাসি রাত..... হো না হো......শায়াদ ফির ইস জনম মে... মুলাকাত হো না হো......"।
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের যে ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জন্য আমজনতা পাগল, তা প্রত্যাখ্যান করেছিল আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। সে অনেকদিন আগের কথা। অমিতাভ তখন গ্র্যাজুয়েশন করার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাঁর এক বন্ধু তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, রেডিওতে ইংরেজি সংবাদ পাঠকের পদের জন্য চেষ্টা করতে। সেইমতো অমিতাভ ইংরেজি ও হিন্দি সংবাদ পাঠকের জন্য অডিশন দেন। কিন্তু বিফল হন। আকাশবাণীর তরফে তাঁর কণ্ঠস্বর প্রত্যাখ্যান করে জানানো হয়, সেটি সংবাদ পাঠের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ঘটনায় হতাশ হন যুবক অমিতাভ। এরপর তিনি কলকাতায় চাকরি পান এবং একটি নামি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ হয়ে বছর সাতেক চাকরি করেন।
অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ অমিতাভের ছোট বয়স থেকেই ছিল। এলাহাবাদের সেন্ট মেরিজ স্কুলের কিন্ডারগার্টেনে পড়াকালীন স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানের নাটকে মুরগির ছানার ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন। এরপর নৈনিতালের শেরউড কলেজে পড়াকালীন শেক্সপিয়র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নাটকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চাকরিসূত্রে কলকাতায় থাকাকালীন অ্যামেচার্স নামে একটি নাটকের গ্রুপে নিয়মিত ইংরেজি নাটকে অভিনয় করতেন অমিতাভ।
ভাই অজিতাভের ইচ্ছাতেই মুম্বইয়ের একটি ফিল্মি ম্যাগাজিনের নতুন অভিনেতা প্রতিভা অন্বেশন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে প্রথম রাউন্ডেই বিফল হয়েছিলেন। তবে এতে দমে না গিয়ে অমিতাভ কলকাতার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় করবার বাসনা নিয়ে মুম্বই পাড়ি দেন। এই বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে বিগ বি রসিকতা করে বলেছেন, এই সময় তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে ফিল্ম জগতে কিছু করতে না পারলে অন্তত মুম্বইতে ট্যাক্সি চালাতে পারেন। সেই সময় নিজের ছবি নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হতো কাজের সন্ধানে।
প্রথম দিকে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে। তখন অমিতাভের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যেভাবেই হোক চলচ্চিত্রে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করানো। তখন বাছবিচার করার কোনও উপায় ছিল না। প্রথম ছবি সাত হিন্দুস্থানিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এরপর তাঁর দ্বিতীয় ছবি সুনীল দত্তর রেশমা ও শেরা ছবিতে পর্দায় অমিতাভের দুই মিনিটের উপস্থিতি ছিল। এইভাবেই অনেক পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে একটু একটু করে চলচ্চিত্র জগতে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সক্ষম হন।
একটা কথা শোনা যায় যে, চলচ্চিত্র জগতে সংগ্রাম করতে আসার সময় নাকি তাঁর কাছে ইন্দিরা গান্ধীর রেকমেন্ডেশন লেটার ছিল। এই প্রসঙ্গে অবশ্য বিগ বি বলেছেন, তিনিও এরকম কথা শুনেছেন, তবে এরকম কিছু ঘটেনি। তিনি একথাও বলেছেন, কারও কাছে যদি এরকম কোনও চিঠি থেকে থাকে, তবে তিনি যেন তাঁকে দেখান। এরপর অমিতাভ বচ্চন বলেন, ঈশ্বরের রেকমেন্ডেশন লেটার থাকলেও চলচ্চিত্র জগতে কেউ কাজ দেবেন না, যদি না সেই ব্যক্তির মধ্যে প্রযোজক, পরিচালকরা কোনও সম্ভাবনা দেখতে পান।
পঃ মেদিনীপুরের দাঁতন ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গা। দাঁতনের প্রতিটি ছত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একাধিক ইতিহাস। বাংলা-ওড়িশা সীমান্তে দাঁতনে রয়েছে জটাধারী বাবা।
দাঁতনের রায়বাড় উত্তর এলাকায় অবস্থিত এই ভগ্নপ্রায় জটাধারী বাবা। কালো পাথরে তৈরি এই ভাঙা মূর্তিটি। মূর্তিটির পেট থেকে মাথা পর্যন্ত রয়েছে। পাশে রয়েছে তার পা যুগল।
কালো পাথরের তৈরি এক সন্ন্যাসীবেশী এই পাথরটি। সম্পূর্ণ কালো এই বিগ্রহ। মাথায় রয়েছে জটাও। পাশেই ধ্বংসপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি খণ্ড রয়েছে।
এলাকার মানুষ এই বিগ্রহকে শিবজ্ঞানে পুজো করেন। অনেকে নিজেদের মানসপূরণে মানতও করেন। তবে ইতিহাস এর সুদূর প্রসারী। প্রথম দিকে গবেষকরা মনে করতেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর এক অবয়ব এটি। পাশে মোগলমারি বৌদ্ধবিহার থাকার জন্য তা মনে করা হত।
পরে ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা জানতে পারেন, এটি বৌদ্ধ ভিক্ষুকের ছবি নয়। এটি শৈবাচার্য। বৌদ্ধধর্মের প্রসার যখন অবলুপ্তির পথে, তখনই শিবপূজার প্রচলন হয়। গৌড়রাজ শশাঙ্কের সময়ে শিবপূজা বা শৈবধর্মের প্রচার শুরু হয় এবং এই মূর্তি তারই প্রমাণ বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন।
জানা গেছে, ওড়িশার শেষ হিন্দু রাজা মুকুন্দদেব যখন পাঠানদের কাছে পরাস্ত হন, তখন পাঠান সেনাপতি কালাপাহাড় ধ্বংস করে। প্রমাণ মেলে, কালাপাহাড়ের ধ্বংসলীলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় জটাধারী বাবাও। কারণ হাত ভাঙা, নাক কাটা এই অবস্থায় পাওয়া যায় এই জটাধারীকে।
অবিলম্বে প্রশাসন এর ইতিহাস উন্মোচিত করুক, এমনই দাবি এলাকার মানুষজনের। শুধু জটাধারী নয়, সমগ্র দাঁতনকে কেন্দ্র করে সার্কিট ট্যুরিজম গড়ে উঠুক। সংরক্ষণ হোক ইতিহাসের। তবে মিশ্র পরিবার বংশ পরম্পরায় তাদের জায়গায় পাওয়া এই জটাধারী বাবাকে শিবজ্ঞানে পূজা করে আসছেন। আরও নানা অভিমত রয়েছে জটাধারী মূর্তিকে কেন্দ্র করে।তবে ইতিহাস উন্মোচিত হোক, সকলের দাবি একটাই।
'আমি যে রিকশাওয়ালা, দিন কি এমন যাবে, বলি কি ও মাধবী, তুমি কি আমার হবে।' এই গান এক সময় ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। মাধবী ধরা দিয়েছে কিনা জানা নেই, তবে আমার আপনার মুশকিল আসানে এঁরাই ভরসা। প্রখর রোদে, ঝমঝমে বৃষ্টিতে, রাতবিরেতে পথে এঁরাই এগলি ওগলি ঘুরে আপনাকে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। এঁরা রিকশাওয়ালা।