
তাপস রায় (উপ-মুখ্যসচেতক/বিধানসভা): মাঝে মাঝে ভুলে যেতে ইচ্ছা করে যে আমিও একজন আইনজীবী এবং কলকাতা হাইকোর্টের। যখন নিয়মিত রাজনীতির ফাঁকে কাজের সূত্রে হাইকোর্টে যেতে হত তখন সওয়াল জবাবের মাঝে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম তৎকালীন মাননীয় বিচারপতিদের অর্ডার। এজলাস গমগম করতো। আজকেও নিয়মিত না হলেও ব্রিফ নিয়ে হাজির হতে হয় আদালতে কিন্তু ওদিনের আকর্ষণ আজ আর টানে না। কত কিছুই হচ্ছে, কত অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা চলেছে এজলাসে। এটা ঠিক মাননীয় বিচারপতিরা অনেক ক্ষেত্রে শুনানিতে পুরাতন প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসাবে নিয়ে আসেন, আনা উচিতও। কিন্তু উদাহরণের সুধাকরণের আস্থা থাকে কি? সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের রেষারেষিতে বারবার পুরাতনী উদাহরণ এসেছে কিন্তু সবটাই তৃণমূলের ত্রুটি খুঁজে।
আমার মনে পরে যায়, ৯০ এর গোড়ায় কলকাতা পুরসভার ভোটে বৌবাজার কেন্দ্রের একটি ওয়ার্ডে আমি প্রার্থী ছিলাম। সারাদিন ধরে শুধু বোমাবাজি এবং এক সময়ে আমাকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিল, স্বাভাবিক ভাবে সিপিএমের জয় হয়েছিল। তারপর ৯১ এর বিধানসভার নির্বাচনে আমি বিদ্যাসাগর কেন্দ্রের প্রার্থী হই, যদিও সেই কেন্দ্রটি আজ বিলীন হয়ে গিয়েছে। দিনভর বোমাবাজি আর ছাপ্পা ভোট চললো। রাত ৯টার পরেও আমার বুথ এজেন্টদের বের করে আনতে পারি নি। পরে অনেক আহতকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে হয়েছিল। পরদিন কাগজে ছাপা হয়েছিল 'কলকাতায় অসময়ের কালী পূজো", এতো বোমাবাজি এর আগে বা পরে কলকাতার মানুষ দেখে নি। কার্যত পরাজয় এবং সিপিএম বাহুবলি লক্ষী দের জয়। কিন্তু কোথায়, আজকের আদালতে তার পুরাতনী উদাহরণ?
শুক্রবার কত অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিলেন তাঁর এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। প্রসঙ্গ ছিল কোনও এক সরকারি কর্মচারী করোনাতে মারা গিয়েছেন তো তাঁর স্ত্রী কি ভাবে সরকারি সাহায্য পাবেন ইত্যাদি। বিচারপতি গাঙ্গুলি বললেন যে, চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু হলে সরকার ২ লক্ষ টাকা দেয় কিন্তু কোভিড মৃতদের কি হবে? প্রথমত যেবারে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে সে সময়ে কিছু মানুষ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ মদ খেয়ে মারা যায়। একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী দোষীদের গ্রেফতার করার আদেশ দেন এবং ওই মৃতদের অসহায় পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ করে টাকা দেন। বেচারা পরিবারের রোজগেরে ব্যক্তি মারা গিয়েছে কাজেই অসহায় পরিবারে যাতে পথে না বসে সেই কারণেই অর্থ সাহায্য কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে নিয়মিত নিয়ম এই টাকা প্রদানের। অথচ বিচারপতি তাই বললেন। এ ছাড়া বললেন, কে একজন ভাইপো আছে, তার চারতলা বাড়ি। কোটি টাকার বাড়ি। এতো টাকা আসে কোথা থেকে। .... কি বলছেন বিচারপতি? এর মধ্যে ভাইপো আসছে কোথা থেকে? তার কোটি টাকার বাড়ি থাকে যদি, তার সঙ্গে কোভিড মৃত্যুর কি সম্পর্ক ? ভাইপো বলতে তিনি কাকে বোঝাচ্ছেন?
এসব কথা তিনি আইনত বলতে পারেন কি? প্রসঙ্গান্তর হওয়ার যুক্তি কোথায়? তিনি এর আগেও মিডিয়ার খবর হয়েছেন ব্যক্তিগত ভাবে। ফের কি মিডিয়ার খবর হওয়ার জন্যই অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছেন বারবার। আর যাই হোক এ সমস্ত বিচারালয়ে বিচারপতির কাছে আশা করা যায় না। আইনজীবী হিসাবে আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি।
(অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত )
এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! বিভিন্ন দফতর থেকে সরকারি আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে (HighCourt) মামলা লড়ছেন বেশ কিছু সংখ্যক আইনজীবী। অথচ তারা কখনই ছিলেন না সরকারি প্যানেলে। আর এই সমস্ত ভুয়ো সরকারি আইনজীবীদের কথা জানেই না রাজ্য। মঙ্গলবার বিষয়টি নজরে আসার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের তলব উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক, অফিস অফ লিগাল রিমেমব্রান্সারের এক গুচ্ছ অফিসারকে। আর বিচারপতির প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্যকেও।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এর আগে বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে, যেখানে এই ভুয়ো আইনজীবীদের বিষয়টি নজরেই আসেনি। এই চক্রে নিশ্চিতভাবে আর্থিক লেনদেন আছে, না হলে বেআইনি ভাবে কেউ যুক্ত থাকলে কেউ মদত দেবে কেন? ডিভিশন বেঞ্চে অন্তত ৩১ টি মামলা রয়েছে, একাধিক মামলা রয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চেও। সব মামলা প্রত্যাহার করে নতুন করে দায়ের করা হোক। তবে রাজ্যের পদক্ষেপের আশ্বাস ও প্রভাবশালী আইনজীবীদের অনুরোধ উপরোধে প্রবল অসন্তোষের কথা জানালেও এই মুহূর্তে কোনও কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটেনি হাইকোর্ট।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ১১ সেপ্টেম্বর যিনি মামলা দায়ের করেন, তিনি প্যানেলেই নেই? তার মানে দাঁড়াচ্ছে জুডিসিয়াল অফিসারও এই প্রতারণায় অভিযুক্ত। এদের সবার হেফাজতে নিয়ে জেরা হওয়া উচিত। এটা কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। অভিযুক্ত আইনজীবী সুবীর পালকে বিচারপতি বলেন, আপনার এই কাজের জন্য ২ জন বিচার বিভাগীয় অফিসারের চাকরির ভবিষ্যত অনিশ্চিত। হাইকোর্ট, জিপি, প্রশাসনিক বিভাগ সবাইকে আপনি বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লিগাল রিমেমব্রান্সার সব আইনজীবীদের প্রচার করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, এই ভাবে মামলা না দায়ের করার জন্য। দফতর থেকে সুশোভন সেনগুপ্তর কাছে বলা হলে তিনি সই করার জন্য সুবীর পালের কথা বলেন। বিচারপতি বলেন, তার মানে সুশোভন ও সুবীর বেআইনি ভাবে এই মামলায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ওই আইনজীবী সহ যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে লিগাল রিমেমব্রান্সার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই সব বিতর্কিত মামলা তুলে নিয়ে নতুন করে মামলা করার জন্য রাজ্যকে অনুমতি দেওয়া হোক। এর পরেই বিচারপতি বলেন, এর আগে এমন বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি করেছি, যেখানে এমন যোগ আছে বলে এখন বোঝা যাচ্ছে। জাতীয় সড়কের পাট্টা মামলাতেও তাহলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন মনে হচ্ছে সেই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত।
এরপরেই উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক, অফিস অফ লিগাল রিমেমব্রান্সারের এক গুচ্ছ অফিসারকে তলব এবং এমন ধরনের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নতুন ভাবে দায়ের করার নির্দেশ দেন। এখন দেখার, হাইকোর্টের ভর্ৎসনার পর প্যানেলে না থাকা ভুয়ো সরকারি আইনজীবীদের হাইকোর্টে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কতটা কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে রাজ্য।
অস্বস্তি বহাল সায়গল হোসেনের। কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের জামিনের আবেদন। বুধবার জামিনের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। শুনানির সময় সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, যেহেতু মূল মামলা দিল্লিতে,তাই এই আদালত এই মামলা শুনতে পারে না। এর পরেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সায়গল হোসেন জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। ২০২২ সালের জুন মাসে গরুপাচার মামলায় বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর মধ্যেই, গত জুন মাসে আসানসোল সিবিআই আদালতে সিজার লিস্ট জমা করে সিবিআই। প্রায় ১ কোটি টাকার নতুন সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। ৩টি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও ৭টি জমির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। ওই সম্পত্তিগুলি সায়গল হোসেনের মা ও স্ত্রীর নামে রয়েছে। ৭টি জমির মধ্যে একটি সিউড়িতে বাকি ৬টি ডোমকলে রয়েছে। জমিগুলির বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। যদিও সিবিআই-এর দাবি, এই মূল্য কম করে দেখানো হয়েছে। জমিগুলি সায়গলের স্ত্রী সোমাইয়া খন্দকার ও সায়গলের মা লতিফা খাতুনের নামে আছে বলে সিজার লিস্টে উল্লেখ করেছে সিবিআই। শুধুমাত্র জমি নয়, সায়গলের স্ত্রীর নামে আরও ৩টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। ওই ৩টি অ্যাকাউন্টে মোট প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই মূল মামলা দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে। জোর কদমে তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই কারণেই সিবিআই-এর আইনজীবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে এদিন তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলের।
অস্বস্তি বহাল সায়গল হোসেনের। কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের জামিনের আবেদন। বুধবার জামিনের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। শুনানির সময় সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, যেহেতু মূল মামলা দিল্লিতে,তাই এই আদালত এই মামলা শুনতে পারে না। এর পরেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সায়গল হোসেন জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন।
২০২২ সালের জুন মাসে গরুপাচার মামলায় বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর মধ্যেই, গত জুন মাসে আসানসোল সিবিআই আদালতে সিজার লিস্ট জমা করে সিবিআই। প্রায় ১ কোটি টাকার নতুন সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। ৩টি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও ৭টি জমির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। ওই সম্পত্তিগুলি সায়গল হোসেনের মা ও স্ত্রীর নামে রয়েছে।
৭টি জমির মধ্যে একটি সিউড়িতে বাকি ৬টি ডোমকলে রয়েছে। জমিগুলির বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। যদিও সিবিআই-এর দাবি, এই মূল্য কম করে দেখানো হয়েছে। জমিগুলি সায়গলের স্ত্রী সোমাইয়া খন্দকার ও সায়গলের মা লতিফা খাতুনের নামে আছে বলে সিজার লিস্টে উল্লেখ করেছে সিবিআই। শুধুমাত্র জমি নয়, সায়গলের স্ত্রীর নামে আরও ৩টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। ওই ৩টি অ্যাকাউন্টে মোট প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই মূল মামলা দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে। জোর কদমে তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই কারণেই সিবিআই-এর আইনজীবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে এদিন তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলের।
মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়ে এবার আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল সিবিআইকে। শুনানিপর্ব চলাকালীন মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সিবিআইয়ের বোঝাপড়া নিয়েও সরাসরি প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুপুর দুটোর মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে আদালতের কাছে সিবিআই জানায়, এর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালীর নাম জড়িত রয়েছে। এরপরেই মানিক ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সিবিআইয়ের রিপোর্টে কেন তাৎপর্যপূর্ণ কিছু থাকছে না সেবিষয়েও জানতে চেয়েছেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
ব্যারাকপুরের চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের রহস্যমৃত্যু ঘটনায় নিম্ন আদালতের বিচার স্থগিত করলো হাইকোর্ট। সূত্রের খবর, সোমবার এ ঘটনায় বিচারপতি আরও নির্দেশ দেয় পরবর্তী শুনানির মধ্যে সিআইডি-কে নিম্ন আদালতে বাড়তি চার্জশিট জমা দিতে হবে। সূত্রের খবর, প্রজ্ঞাদীপা হালদার পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁর সাথে কৌশিক সর্বাধিকারি নামে এই আর্মি হাসপাতালের ডাক্তারের বিবাহ হয়। তারপর চলতি বছরের ২০ জুন প্রজ্ঞাদিপাকে তার স্বামীর ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর মৃতার পরিবার ব্যারাকপুর পুলিস স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। জুন মাসের ২৩ তারিখে তার স্বামীকে গ্রেফতারও করা হয়।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের আইনজীবী আদালতে জানান ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন ওই মৃতা। আত্মঘাতী হওয়ার একটি পত্রও পাওয়া গেছে। তাঁর মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না। তিনি বিষন্নতায় ভুগছিলেন। কিছু প্রমাণ আছে। এর পরিপেক্ষিতে, মামলাকারির আইনজীবী লিটন মৈত্রের বক্তব্য, মৃতা প্রজ্ঞাদিপা হালদারকে খুন করা হয়েছে, অথচ পুলিস খুনের ব্যাপারকে চেপে গিয়ে পুরো ঘটনা টিকে একটি দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাইছেন। ঘটনার দিনের ভিডিওগ্রাফী পুলিশের কাছে আছে, কিন্তু তিনি তা আদালতের সামনে আনতে চাইছেন না। তিনি এও জানান যে অভিযুক্ত হলেন তার স্বামী যিনি একজন আর্মি হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসককে ফোন করে ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রভাবিত করার জন্য বলেছিলেন। সেই তথ্য প্রমাণ রয়েছে মামলাকরীদের কাছে।
অভিযোগ, এসবের পরেও এত সময় পেলেও এ ঘটনায় এখনও চার্জশিট দেয়নি সিআইডি। হাইকোর্টে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার কথা বলে সময় নেওয়া হয়েছে। অথচ নিম্ন আদালতে নতুন চার্জ সিট দেওয়ার কোনো আবেদন করা হয়নি। এটা খুব অদ্ভুত নতুন করে তদন্ত হচ্ছে, অথচ নতুন চার্জশিট দেওয়ার ব্যাপারে আদালতে কোনও আবেদন করে নি। আরও চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা, নিম্ন আদালত হাইকোর্টের নির্দেশ জানানো হল না। এরপরেই মামলাকারীর অভিযোগে ব্যারাকপুরের চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের রহস্যমৃত্যু ঘটনায় নিম্ন আদালতের বিচার স্থগিত করলো হাইকোর্ট। পাশাপাশি পরবর্তী শুনানির মধ্যে সিআইডি কে নিম্ন আদালতে বাড়তি চার্জশিট জমা দিতে হবে এমনই নিদেশ দেয় আদালত। সূত্রের খবর, ১৭ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
কসবা এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের পাঁচ তলা থেকে ‘পড়ে’ মৃত্যু হয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শেখ শানের। গত ৪ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল মৃত ছাত্রের পরিবার। এবার ওই ঘটনায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন মৃত ছাত্রের পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, কসবা থানা ৪ সেপ্টেম্বরে ঘটনার সময়ের সঠিক সিসিটিভি ফুটেজ পরিবারকে দিচ্ছে না। পুলিস মিনিট দশেকের একটা ফুটেজ দিয়েছে, যার মধ্যে যে ঘরে শেষবার ওই ছাত্রকে ঢুকতে দেখা গিয়েছে, সেই ঘরের ফুটেজ নেই।
সূত্রের খবর, মৃত পড়ুয়ার বাবা শেখ পাপ্পু স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ‘প্রজেক্ট জমা দিতে পারেনি বলে ওই ছাত্রকে বকাবকি করা হয়েছিল। কান ধরে দাঁড় করিয়েও রাখা হয়েছিল সবার সামনে। এমনি অভিযোগ তুলেছিল পরিবার।' সেসময় কেবল স্কুল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও এখন পুলিশের গাফিলতিকেও দুষছেন ওই মৃত ছাত্রের পরিবার।
এ ঘটনায় মৃতের বাবা স্কুলের প্রধানশিক্ষক, সহকারী প্রধানশিক্ষক এবং আরও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ এবং ধারা ১২০বি অনুযায়ী খুনের মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু অভিযোগ এখনও অবধি ওই ঘটনায় ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে বারবার বলেও লাভ হচ্ছে না। অথচ ওই রিপোর্ট পাওয়ার অধিকার পরিবারের রয়েছে। এঘটনায় এবার ওই মৃত ছাত্রের পরিবার পুনঃরায় ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই মামলা শুনবেন বলে সূত্রের খবর।
সম্প্রতি মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, দুর্গা পুজো উপলক্ষ্যে ক্লাব প্রতি ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেবে রাজ্য সরকার। এবার এই প্রতিশ্রুতিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার আবেদন করল এক ব্যক্তি। সূত্রের খবর, আবেদনকারীর নতুন আবেদনে সাড়া দিয়ে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিল প্রধান বিচারপতি।
সূত্রের খবর, বিগত বছর গুলিতে রাজ্য সরকার প্রত্যেক ক্লাবকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই সময়ে ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন সৌরভ দত্ত। তার আবেদন ছিল যেখানে রাজ্য সরকার ডিএ দিতে পারছে না। যেখানে সরকারি চাকরি প্রাথীদের যোগ্য নিয়োগ দিতে পারছেন না। সেখানে কেন ক্লাব পিছু এত টাকা দেওয়া হবে? যদিও এ বছরে ওই অনুদান বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হয়েছে।
কেন পূর্বের বছরের মত এ বছরেও অপুজোতে ক্লাব গুলিতে এত অনুদান দেওয়া হচ্ছে! সেই বিষয়কে ফের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পূর্বের মত জনস্বার্থ মামলার আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত হাওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই ব্যক্তি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় এবার স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের বোর্ড গঠনের ব্যপারে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ। নির্দেশ দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই মামলায় সামনে এসেছিল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর কথা উঠে এসেছিল।
পিছনে ভারী কিছু আঘাতের চিহ্ন। ঘাড়ে গভীর ক্ষত। তারপরেও ময়নাতদন্তে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর রিপোর্ট, অথচ ওই মহিলার গলায় কোনো ফাঁসের দাগ নেই, দাবি মামলাকারীর আইনজীবীর। মিথ্যে রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। তা নিয়েই এবার নির্দেশ বিচারপতির।
এদিন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মামলায় যুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে বিবেচনা করবে আদালত। নির্দেশ দেন বিচারপতি। তবে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও কেন নেওয়া হয়নি পদক্ষেপ? সেই প্রশ্ন তুলেই স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে পদক্ষেপের নির্দেশ দেন বিচারপতি। ৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। এখন দেখার পরবর্তী শুনানিতে কোন তথ্য উঠে আসে।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সম্পত্তির খতিয়ান দেখবে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) সাতদিনের মধ্যে সমস্ত হিসেব জমা দিতে হবে আদালতে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে সেরকমই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ইডির কাছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার বেশ কয়েকটি বিষয় জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রথমত, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির খতিয়ান চেয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। মোট ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ওই সংস্থার সব সদস্যদেরই সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে ইডিকে। একইসঙ্গে সংগঠনের স্মারকলিপি, সংস্থার রেজিস্ট্রেশনের তারিখও জানাতে হবে ইডিকে।
বিচারপতি সিনহার আরও নির্দেশ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যে সব টলি অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের নাম উঠে আসছে, তাঁদেরও সম্পত্তির খতিয়ান রিপোর্ট হিসেবে জমা দিতে হবে ইডিকে। বিচারপতি সিনহার এই নির্দেশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তদন্তকারী সংস্থা, তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই ডাকতে পারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁকে কখনোই অভিযুক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এমনকী, কোর্টের এমন কোনও নির্দেশ নেই, যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমন পাঠানো যাবে না। বারবার ইডি থেকে আদালত এই কথা বলছে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের আইনজীবীকে। তাহলে ইডি সমনে এত আপত্তি কেন, তদন্তে সহযোগিতা করতে এত আপত্তি কেন অভিষেকের? এই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। একইভাবে আদালতে ইডিরও প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সংস্থার সমনের বিরোধিতা কেন করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? উল্লেখ্য ১৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার নতুন করে ইডির কলকাতা অফিসে ডাকা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রবিবার এক্স অ্যাকাউন্টে নিজেই সেই তথ্য দেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। একইভাবে সোমবার নবান্নে সুর চড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীরও। তিনি বলেছিলেন, বারবার অভিষেককে হেনস্থা করা হচ্ছে। ওর বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই। এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি।
যদিও মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি সমন পাঠানোয় সমর্থন জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, এমনটাই মঙ্গলবার স্পষ্ট করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়লে অন্য ব্যবস্থা। তাও কেন এত বিচলিত তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড? ইডির সম্মুখীন না হয়ে কি কিছু লুকোতে চাইছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ? তাই কি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি? রাজ্য রাজনীতির অন্দরে কান পাতলে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নগুলো। কিন্তু তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ইডি সমন প্রসঙ্গে আবার আক্রমণাত্মক। দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং পার্থ ভৌমিক মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন বুধবার ইডি তলবে সাড়া দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিরদাড়া সোজা। মন্ত্রী শশী পাঁজার অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডার দেখেই তাঁকে সমন পাঠানো হচ্ছে।
শাসক দল-সহ রাজ্যের দুই জোড়া মন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ব্যাট ধরলেও সুর নরম করতে চাইছে না বিরোধী শিবির। একসঙ্গেই অভিষেককে ইডি তলব প্রসঙ্গে পাল্টা আক্রমণে বাম-আইএসএফ-বিজেপি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর শ্লেষাত্মক মন্তব্য, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অপরাধ করে কোর্টের বেঞ্চিতে বেঞ্চিতে ঘুরে বেড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির আবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, টি-টুয়েন্টি না হোক পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট খেলুক ইডি। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিরও সুর চড়া। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য অভিষেককে ইডি তলবে খুব একটা আশা দেখছেন না। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের আবার নাম না করে অভিষেককে খোঁচা, নিজেকে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোনও কারণ নেই।
এভাবেই এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে অভিষেকের দরবার, এক কোর্ট থেকে অপর কোর্টে অভিষেকর আবেদন ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। একইভাবে প্রশ্ন, কেন রক্ষাকবচের জন্য প্রাণপাত করছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। মুখে অভিযোগ প্রমাণ হলে ফাঁসির দড়ি পরে নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও, ইডি সমন পেলেই কোর্টে দৌড়! এটা কি আদতে দ্বিচারিত নয়, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
প্রসূন গুপ্ত: আজকাল যে কোনও খবর বাজারে আসে এমন সমস্ত পোশাকে আবৃত হয়ে যে মানুষ মনে করে কি না জানি হতে চলেছে। ইদানিং তার প্রাবল্য বেড়েছে। বাজারে বড় খবর দুটি ছিল, একটি সিবিআই বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির এজলাসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সম দুর্নীতি প্রকাশ করতে চলেছে ১১ সেপ্টেম্বর। অপরটি বিচারপতি অমৃতা সিনহার ভর্ৎসনাতে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ইডি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছে। ভর্ৎসনা এই কারণে বলা হচ্ছে কারণ সম্প্রতি ইডির কৌসুলিকে বিচারপতি সিনহা প্রশ্ন করেছিলেন যে, অভিষেককে কেন ডাকা হচ্ছে না। দুটি ঘটনাতেই কি হয় এমন ভাবনা ছিল রাজ্যের আম জনতার।
ইডি অভিষেককে দেখা করতে বলেছে ১৩ সেপ্টেম্বর, যে দিনটিতে নব্য জোট "ইন্ডিয়া'র প্রথম সমন্বয় কমিটির বৈঠক, যেখানে অভিষেক অন্যতম সদস্য। রবিবার এই খবর অভিষেক নিজেই প্রকাশ করেন নিজের টুইট হ্যান্ডেলে| তিনি দাবি করেছেন যে, জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠক যে ১৩ সেপ্টেম্বর তা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। অথচ ওই দিনেই ইচ্ছাকৃত ভাবেই কেন্দ্রীয় এজেন্সী ডেকে পাঠিয়েছে। এবারে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ফের বিচারপতি সিনহার এজলাসে আসছে ইডির কৌঁসুলি, কাজেই তার আগের দিনেই অভিষেককে ডাকা হচ্ছে। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই বলেই দাবি। এবারে অভিষেক ইডির সাথে কথা বলবেন নাকি জোটের বৈঠকে যাবেন তা নিয়ে উঠেছে জল্পনা। তবে তিনি যে বেশ মেজাজেই আছেন তা দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে সিবিআই, বিচারপতি গাঙ্গুলির এজলাসে আগের দিন জানিয়েছিল যে শিক্ষা দুর্নীতিতে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করবে যা নাকি ওয়ার্ল্ড ট্রেডের সেন্টারের মতো সুউচ্চ। সোমবার সেই মোতাবেক সিবিআইয়ের কৌঁসুলি হাইকোর্টে এসেছিলেন। কিন্তু কোনও এক আইনজীবীর মৃত্যুতে কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে সিবিআই কৌঁসুলি জানিয়েছেন যে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যর সরাসরি যোগাযোগ আছে তার তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। এতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো বিশাল ঘটনার কি আছে ? এমন কি বড় চমকদার খবর? জানা যায় নি। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মানুষ। অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর যে বিশাল কিছু হতে চলেছে এমন দাবি ছিল চারিদিকে তার আপাতত কোনও লক্ষণ নেই।
কুন্তল ঘোষের চিঠি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জাস্টিস সিনহার বেঞ্চে সিবিআই। সম্প্রতি এই মামলার একটি শুনানিতে বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশ ছিল, কলকাতা পুলিশ ও সিবিআইকে যুগ্ম তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে। সিবিআই-এর বক্তব্য, হাইকোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। তাহলে কেন সিবিআই বিশেষ আদালত কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যুগ্ম তদন্তের রিপোর্ট তলব করল? সূত্রের খবর, আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হুগলির বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের লেখা একটি চিঠি সমান্তরালভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তাঁর নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃতদের মুখ থেকে বলানোর চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ঠিক তার পরদিনই কুন্তল ঘোষ দাবি করেন, তাঁর মুখ থেকে অভিষেকের নাম বলানোর জন্য দিচ্ছেন তদন্তকারীরা। এই মর্মে তিনি একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠি সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও সিবিআইকে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালত। সেই শুনানি সিবিআই আদালতে ভর্ৎসিতও হয়। উল্লেখ্য, এর মধ্যে কুন্তলকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি সিবিআই।
আলিপুর বিশেষ আদালতের নির্দেশ ছিল, কলকাতা পুলিশ ও সিবিআই যুগ্মভাবে তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করবে। সিবিআই এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো জঙ্গি হামলা। আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ সোমবার উঠে এল কলকাতা হাইকোর্টে। নেপথ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। কিন্তু সোমবার হল না। তবে মঙ্গলেই দুর্নীতির 'অমঙ্গল' ঘটাবে সিবিআই! হাইকোর্টে তেমনই ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো দুর্নীতি ফাঁস হবে মঙ্গলবার। সোমবার আদালতে জানাল সিবিআই।
উল্লেখ্য, সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই-এর আইনজীবীর ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো' সুবিশাল নিয়োগ দুর্নীতির পর্দাফাঁসের কথা ছিল। আবার কি নতুন কারোর নাম প্রকাশ্যে আনতে চলেছে সিবিআই? তা নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। তবে সন্দীপ কুমার ভট্টাচার্য নামে এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে এদিন মামলা শুনলেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে কোন তথ্য ফাঁস করতে চলেছে সিবিআই, তার কিছুটা ইঙ্গিত এদিন দিয়ে রেখেছেন সিবিআই-এর আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, ৯/১১ বা ১১ সেপ্টেম্বর এমন একটা দিন, যে দিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়েছিল। আবার ওই একই দিনে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে ভাষণ দিয়েছিলেন। মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতেই আগামীকাল সিবিআই ফাঁস করবে নতুন ও জোরালো তথ্য। জানাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের মধ্যে সম্পর্কের নতুন ইতিকথা। মন্ত্রী, সচিব কীভাবে তথ্য ডিলিট করেছেন? গোপন তথ্য কোথায় রাখতেন তাঁরা? মন্ত্রীর অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মানিক ভট্টাচার্যের। নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থর বৃহত্তর যোগের হদিস দেবে সিবিআই। দুর্নীতির গোপন তথ্য ফাঁস করবই। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সিবিআই।
কংগ্রেসের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাণীনগরে স্থায়ী বোর্ড গঠনে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ সোমবার সকালে কংগ্রেসের করা একটি মামলায় এমন নির্দেশ দেয় বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের সভাপতি সহ- মোট ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে মামলা করে কংগ্রেস। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ই সেপ্টেম্বর।
পঞ্চায়েতের স্থায়ী সমিতির ভোটাভুটি ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রানিনগর। গত ৮ সেপ্টেম্বর রানিনগরে একটি সমাবেশ করার কথা ছিল কংগ্রেসের। অভিযোগ, সমাবেশে আসা কংগ্রেস কর্মীদের বাধা দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। প্রতিরোধ গড়ে তুললেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। থানায় চলে তাণ্ডব, তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন ধরানোরও অভিযোগ ওঠে। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বেই কংগ্রেস সমর্থকরা রানিনগর থানায় হামলা চালানো হয় বলে পাল্টা অভিযোগ তোলে তৃণমূল।
সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি ভোটাভুটির প্রক্রিয়া শুরু হবার কথা। উপস্থিত থাকবেন রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন, জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুল রাজ্জাক, সাংসদ আবু তাহের খান। রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ২৭ জন সদস্য, ৯ জন পঞ্চায়েত প্রধান, ৩ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ২ জন বিধায়ক ও একজন সাংসদের উপস্থিতিতে স্থায়ী সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আদালতের এই নির্দেশের পর কার্যত স্থগিত হয়ে গেল স্থায়ী সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া।
মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বোর্ড গঠন করেছে কংগ্রেস। আর ২৭ আসনবিশিষ্ট রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে বাম-কংগ্রেস জোট জিতেছিল ১৪টি আসনে। তৃণমূলের দখলে ছিল ১৩টি। ৩ কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে বর্তমানে পরিসংখ্যান তৃণমূলের ১৬, বাম কংগ্রেসের ১১। এই পরিস্থিতি পঞ্চায়েত সমিতি ভোটাভুটিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই রানিনগর থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোট করাতে সরকারকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা দিবসের অনুষ্ঠানেই ছাত্র সংসদ ভোট নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার এক মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চের নির্দেশ, যে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রভোট হয়নি, সেখানে সব দিক খতিয়ে দেখে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি কলেজে র্যাগিং-বিরোধী কমিটি তৈরি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিনে মামলায় আদালত জানতে চায়, এই ব্যাপারে রাজ্যের তরফে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়েছে কীনা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে র্যাগিং-বিরোধী কমিটি বা র্যাগিং-বিরোধী স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও জানাতে হয়েছে।