যত দিন যাচ্ছে ততই ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু কলকাতা নয়, জেলাতেও চিত্র অনেকটা একই। ডেঙ্গি নিয়ে ফের নয়া নির্দেশিকা দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসা নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেডে পাঠাতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মনে করা হচ্ছে, শুধু শুধু ডেঙ্গি নয়, ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের কম তাঁরা একাধিকবার আক্রান্ত হচ্ছেন। সেকারণে বিশেষজ্ঞদের মত, কোন প্রজাতির মশায় কামড়াচ্ছে তা বোঝা জরুরি। সেকারণে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসা নমুনা নাইসেডে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মশাবাহিত রোগের দাপট কমাটে কোমর বেঁধে নামছে রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসন। শুক্রবার সব দফতরের সচিব, জেলাশাসক ও বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সূত্রের খবর, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সবরকম পদ্ধতি অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
মণি ভট্টাচার্য: কথায় আছে, গরিবের কথা বাসী হলে ফলে। ছোটবেলায় মা-বাবাকে শুনতাম তাঁরা মশার কামড়, বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের কামড়, ইত্যাদি থেকে বাঁচতে বা এড়াতে মশারি টাঙিয়ে শোবার কথা বলতেন। কিন্তু ইদানিং কালে সেসবের বালাই ছিল না। কার্যত উঠেই গিয়েছিল। শহরতলীর নিতান্ত গ্রাম এলাকা কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা ছাড়া মশারির প্রচলন তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু বর্তমানে শহর থেকে শহরতলী, কম বেশি সবাই ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে লাইন দিয়েছেন মশারির দোকানে। এমনই চিত্র দেখা গেল কলকাতা, সহ উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলীর বহু এলাকায়।
সূত্রের খবর, রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বিপদ সীমাকে ছুঁয়েছে। সেই সঙ্গে বর্ষাকালে ডেঙ্গির প্রকোপে ইতিমধ্যে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য।সেই সঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, এখনও অবধি উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া ও হুগলি জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির স্বাস্থ্য অধিকর্তা সূত্রে খবর, নদিয়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৯৩ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৩ জন ও হুগলি জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ জন। এ অবস্থায় কেবল এই জেলাগুলি নয় সতর্ক করা হয়েছে গোটা রাজ্যকেও। জমা জল, নোংরা-আবর্জনা ইত্যাদি পরিষ্কার করার নির্দেশিকা দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি ডেঙ্গি মশার কামড় এড়াতে মশারির ব্যবহার করতে বলা হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
সেই মতো এদিন দেখা গেল কলকাতার বিভিন্ন মশারির দোকানে লাইন দিয়ে মশারি কিনছেন বহু মানুষ। পাশাপাশি বারাসত দমদম ও বিভিন্ন এলাকায় মশারির দোকানে ভিড় দেখা গেল ।এ বিষয়ে একজন মশারি বিক্রেতা এদিন জানান, অন্যান্য সময় আমাদের মশারি তেমন বিক্রি হয় না, কিন্তু ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তেই এবার বহু মশারির বিক্রি হয়েছে ইতিমধ্যেই।
এ বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক অধিকর্তা জানান, ডেঙ্গি মশার কামড় এড়াতে যেমন মশারি ব্যবহার প্রয়োজন, তেমনই ডেঙ্গির প্রজনন রুখতে, বাড়ির পাশে জলাশয়, কিংবা নোংরা-আবর্জনা, ইত্যাদি পরিষ্কার রাখার দিকেও নজর রাখতে হবে সাধারণ মানুষকে। যদিও ডেঙ্গি রুখতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় পুরসভা গুলি। স্থানীয় পুরসভাগুলির তরফে বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ও নর্দমাগুলিতে ডেঙ্গির লার্ভা নাশ করার জন্য গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। পাশাপাশি স্প্রে ও ধোয়ার মাধ্যমে ডেঙ্গি মশার নিকেশ অভিযান চালাচ্ছে পুরসভাগুলি।
দিন কয়েক আগে রেফার (Patient Refer) নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এবার জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার আটকাতে নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department)। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ, ৩৭০টি বাধ্যতামূলক পরিষেবার তালিকা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের চিকিৎসা পরিষেবায় জেলা হাসপাতাল থেকে কোনওভাবেই রেফার নয়। জানা গিয়েছে, বাধ্যতামূলক তালিকায় থাকা পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত করা যাবে না রোগীর পরিবারকে। রেফার করা যাবে না কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে।
বলা, জেলা হাসপাতালে যে পরিষেবা নেই, সেক্ষেত্রেই শুধুমাত্র রেফার। এছাড়া ওই বিজ্ঞপ্তি তো জানানো হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে রেফার করা যাবে। এমন ৬৭টি পরিষেবার তালিকাও দেওয়া হয়েছে। যেক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও হতে পারে। আবার যদি প্রয়োজন মনে করা হয় রেফার করা যেতে পারে।
রেফার রোগ এড়াতে মূলত দুটি ভাগ করা হয়েছে। ১.বাধ্যতামূলক চিকিৎসা দিতে হবে ৩৭০টি বিভাগে পরিষেবায় ২. যদি সেই পরিষেবা জেলা হাসপাতালে থাকে, চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে অথবা প্রয়োজনের রেফারও করা যেতে পারে
এভাবেই জেলা হাসপাতালে কোন পরিষেবার ক্ষেত্রে রেফার, আর কোন ক্ষেত্রে নয় তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মানুষের হয়রানি দূর করতে রেফার রোগ বন্ধ করতে এই নির্দেশিকা। রাজ্যের প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে নির্দেশিকা দিয়ে অবিলম্বে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেফারের ক্ষেত্রে তারা কী কী করবেন। পাশাপাশি কোন কোন ক্ষেত্রে তারা রেফার করতে পারবেন।
পুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি (dengue) নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফরের অভ্যন্তরের রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে। শেষ দু'সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত (infected) ২২৪০ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ২২৪। গত ৭ দিনে সরকারি হাসপাতালে (hospital) ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৬০০ জন রোগী। এবার স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরের রিপোর্টে উঠে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, সব মিলিয়ে তিনটি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং জলপাইগুড়ি। এই তিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সতর্ক করা হয়েছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে।
অগাস্ট মাসের শেষ ২ সপ্তাহের ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্যে সবথেকে বেশি। মূলত, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে অগাস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে। সেই কারণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তিন জেলার জেলা শাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে।
কোভিড বুস্টার ডোজ (booster dose) নিয়ে কড়া নির্দেশিকা রাজ্যের। পুজোর আগেই রাজ্যের সমস্ত যোগ্য প্রাপককে কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর (Health department) নির্দেশ দিয়েছে। নবান্নে (Nabanna) আজ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব (health secretary) নারায়ণস্বরূপ নিগমের পৌরোহিত্য এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে (meeting) এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব সহ দফতরের অন্যান্য আধিকারিক, সব জেলাশাসক ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ছয় কোটির বেশি মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, যার মধ্যে ১ কোটি ২১ লক্ষ ৬৫ হাজারের মতো মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। বাকি ৫ কোটির বেশি মানুষ এখনও বুস্টার ডোজ নেননি। তাঁরা যাতে পুজোর আগেই বুস্টার ডোজ পান, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বুস্টার ডোজ গ্রহণের কাজ শেষের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যসচিব।
আশাকর্মীদের এই কাজে নিযুক্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন আশাকর্মীদের নিয়োগের প্রক্রিয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শেষ করার পরামর্শ। ডেঙ্গি নিয়ে জোরকদমে প্রচার সচেতনতা চালাতেও নির্দেশিকা দিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব। অন্যদিকে, রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের দেওয়া টাকা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট খাতে খরচ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিমারী পরিস্থিতির পর এ বছরের পুজোতে জনসমাগম আরও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সংক্রমণ মোকাবিলায় বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ যাতে শেষ করা যায়, সেই বিষয়েই শনিবার বিশেষ নির্দেশ দিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, নবান্ন সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুস্টার ডোজ বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এবার জেলাগুলিকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয় বলেই সূত্রের খবর। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে প্রচার কর্মসূচির মাধ্যমে বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এখনও কিছু কিছু জায়গায় দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কাজও যাতে দ্রুত শেষ করা হয়, সেই বিষয়েও এ দিনের বৈঠকে বিশেষ নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যসচিব।