প্রসূন গুপ্ত: মঙ্গলবার ছিল বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। অর্থাৎ কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আয়োজিত বাণিজ্য সম্মেলন। এটি সপ্তম বর্ষ। এই সামিট শেষ হলেই নানান জল্পনা ও সমালোচনা শুরু হয়। বিরোধীদের বক্তব্য, শিল্প কোথায় রাজ্যে? কিন্তু বাস্তব সত্যিটা হলো ব্যবসা বা বাণিজ্য শুরু হলে বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ব্যবসায়ীদের কাজ শুরু হলে তা দেখা যায় না, বোঝা যায়। আসলে আমাদের একটি ধারণা আছে এই বাংলায় যে, বাণিজ্য মানেই ঢাউস একটি কারখানা হবে এবং কর্মী সংখ্যা হবে হাজার হাজার। আজকের ভারতে নতুন প্রজেক্ট সেই অর্থে কোথায়? মোদ্দা কথা আজকের ব্যবসার মূল মন্ত্র তুমি বানাও আমি কিনি। মঙ্গলবার কিন্তু দেশ বিদেশের বহু বাণিজ্য প্রতিনিধি কলকাতার বিশ্ব বাণিজ্য অনুষ্ঠানে এসেছিলেন এবং তাঁরা প্রতিশ্রুতিও দিলেন লক্ষ কোটি টাকার। এত সত্ত্বেও সভার সব আলো কেড়ে নিলেন মুকেশ আম্বানি এবং সৌরভ গাঙ্গুলি। বলতে দ্বিধা নেই আম্বানিরা এখনও অর্থ ভাণ্ডারে দেশের প্রথম নম্বরে, কাজেই যে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁদের উপস্থিতির আলাদা যুক্তি আছে।
এই মুহূর্তে কেন্দ্রের প্রেরণায় দ্রুত আম্বানিদের কাছে এগিয়ে আসছেন আর এক শিল্পপতি গৌতম আদানি। শোনা যায় তিনি গুজরাতের মধ্য মানের ব্যবসা থেকে আজ ভারতে আগামীর অধিকাংশ বাণিজ্যে এগিয়ে চলেছেন। বিরোধী কংগ্রেসের মতে, মোদির কৃপায়। এই নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট বুদ্ধিমতী এবং এখন বিরোধী রাজনীতির অন্যতম মুখ। তাঁর মুখমন্ত্রীত্বের ১২ বছর কেটে গিয়েছে কাজেই আরও ধারালো হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা। তিনি জানেন আদানিরা এখন বিরোধীদের ব্যাড বুকে রয়েছে। দেরি না করে এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি অম্বানিকে 'মুখ' করলেন। আগামীতে মুকেশ এই রাজ্যে আরও বেশি প্রকল্প করবেন তা তাঁর বক্তব্যে উঠেও এলো। রাজ্যের হতে পারতো এমন শিল্প থেকে আদানি থাকবেন কিনা প্রশ্ন তুলে দিলেন। দিনের শেষে দেশের পয়লা নম্বর বণিক তাঁর বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
একই সাথে হঠাৎই ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় সৌরভ গাঙ্গুলি এখন থেকে বাংলার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। কিন্তু শাহরুখকে বাদ দিয়ে সৌরভ কেন? প্রথমত, শাহরুখ তো নামেই ব্র্যান্ড ছিলেন। আদতে তাঁকে দিয়ে কোনও কাজ হচ্ছিলো না। দ্বিতীয়ত শাহরুখ পেশাদার। কেকেআর ছাড়া সত্যিই তাঁর কলকাতা নিয়ে আদৌ কোনও ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে সৌরভ বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ড থেকে অসম্মানিত (পড়ুন বিজেপি থেকেও ) | তাঁর হাতে দাদাগিরি ছাড়া মানুষের জন্য কোনও ভূমিকা নেই। সম্প্রতি বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ মুহূর্তে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যা অপমানের। দেরি না করে মমতা খেলা দুদিনের মধ্যে তাঁকে দায়িত্ব দিলেন। এ ক্ষেত্রে সৌরভ কাজটা করতে পারবেন এবং আগামী নির্বাচনে কি হয় তা তো সময়েই বলবে।
মঙ্গলে শুরু হয়েছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এদিন নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেশন সেন্টারে পৌঁছে গিয়েছেন রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি। আর তিনি মঞ্চে উঠেই বক্তৃতা দেওয়ার সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেন মুকেশ আম্বানি। তিনি মমতাকে বললেন, "আপনি সত্যিই অগ্নিকন্যা।" এছাড়াও তাঁর মুখে শোনা গেল, 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।' আবার এদিন একগুচ্ছ বিনিয়োগ নিয়ে উপস্থিত থেকে বাংলার শিল্প এবং কর্মংসংস্থান সম্ভাবনাকে উস্কে দেন রিলায়েন্সের কর্ণধার।
বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে মুকেশ আম্বানির দাবি, সপ্তম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে উপস্থিত থাকতে পেরে তিনি সম্মানিত। বিশ্বমঞ্চ তৈরি করে এই ধরনের বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অভিনন্দনও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, গত চার বছরে রাজ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিসর বেড়েছে, এগিয়েছে বাংলা। আরও বেশি উজ্জীবিত এবং আত্মবিশ্বাসী বাংলা। শ্রদ্ধেয় মমতাদির গঠনমূলক নেতৃত্বের কারণে এই রূপান্তর সম্ভব হয়েছে। এর পর প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রসঙ্গ এনে বলেন, 'অটল বিহারী বাজপেয়ী আপনাকে যেমন বলতেন, আপনি সত্যিই অগ্নিকন্যা।'
মঙ্গলবার শুরু হল সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (BGBS2023)। দিন ব্যাপী বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আসর বসেছে নিউটাউনে (Newtown) বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে। নিউটাউনে বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে দু-দিন ব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন দেশ ও বিদেশের একাধিক শিল্পপতি।এই উপলক্ষে সেজে উঠেছে বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টার। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা চত্বর। রাজ্যের লক্ষ্মীলাভের আশায় মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
জানা গিয়েছে, সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর চেয়ারপার্সন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, আইটিসি-র এমডি সঞ্জীব পুরী, টিসিজি গ্রুপের পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, আম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, জিন্দাল গ্রুপের কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল, নিরঞ্জন হিরানন্দানি, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজন ভারতী মিত্তল, উমেশ চৌধুরী, মেহুল মোহাঙ্কা-সহ রাজ্য ও দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা।
সূত্রের খবর এবার আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স সহ বিদেশের মোট ২৮টি দেশের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নর্থ ক্যারোলিনার সেক্রেটারি ইলেইন এফ মার্শাল, ইউকে ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লর্ড ডেভিস, পোল্যান্ডের মন্ত্রী গ্লেজর্জ টোবিজস্কি ছাড়াও কিম ইউং রক ও ফ্যাব্রিজিও সালাকে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশযাত্রার পর থেকে এবারের বাণিজ্য সম্মেলন ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে।
এবারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের দিকে নজর সব মহলের। নিউটাউনে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে তাবড় শিল্পপতি ও উদ্যোগপতিদের এই চাঁদের হাটে রাজ্যে শিল্পে বড় বিনিয়োগ আসবে বলে আশাবাদী প্রশাসনিক কর্তারা।