এ মাসেই রাষ্ট্রপুঞ্জের (United Nation) নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে ভারত। সেই গুরু দায়িত্ব পাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার নিয়ম মেনে ঘানার (Ghana) প্রস্তাবে সায় দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভাপতিত্বের দায়িত্ব এল ভারতের হাতে। এই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ বলেন, 'গণতন্ত্রে কী করতে হয়, তা ভারতকে (India) বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনা আড়াই হাজার বছরের পুরনো।'
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এখনও স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ১৫। ভারত স্থায়ী সদস্য না হলেও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণের নয়াদিল্লির ভূমিকা অপরিহার্য। দীর্ঘ মাস যাবৎ চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভারতের অবস্থান কোনও পক্ষের কাছে উদ্বেগজনক, কোনওপক্ষ আবার কুর্নিশ করেছে। যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে বরাবর মস্কোর কাছে সওয়াল করেছে দেশের বিদেশ মন্ত্রক। একইভাবে পশ্চিম ইউরোপ এবং মার্কিন নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া প্রস্তাবে সায় দেয়নি মোদী সরকার।
সেই কারণেই পশ্চিমী দুনিয়ার একটা অংশের আশঙ্কা, ঘনঘন রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের আনা প্রস্তাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারত। সেই কারণেই হয়তো আগেভাগে 'গণতন্ত্র' নিয়ে ভারতের অবস্থান রাষ্ট্র পুঞ্জে পরিষ্কার করে রাখলো রুচিরা।
দুই ভাইয়ের গল্প। তবে গল্প হলেও সত্যি। দুই ভাই-ই ফুটবলার। খেলার পজিশনও এক, দু'জনেই খেলেন স্ট্রাইকারে। শুধু কী তাই, ক্লাব ফুটবলেও দুই ভাই খেলেন একই ক্লাবে। কিন্তু ওরা দুজন ভিন দেশের প্রতিনিধি। একজনের গায়ে স্পেনের জার্সি। অন্যজন ঘানার জার্সি পরে মাঠে নামেন। ভাবছেন এমনটা আদৌ হয় নাকি? বিশ্বকাপ বলছে এমনটাই হয়।
ঘানা দম্পতির সন্তান দুজনেই। একটা সময় লাইবেরিয়াতে ছিল তাঁদের শান্তির জীবন। কিন্তু গৃহযুদ্ধে সব ভেস্তে গেল। বড়ো ভাই ইনাকির জন্মের আট বছর পর জন্মান নিকো। দাদা ফুটবল খেলে। ভাইও একই পথের পথিক। জীবনের স্রোতে স্পেনের বিলবাওতে চলে আসেন উইলিয়ামস পরিবার। বিলবাও অ্যাকাডেমি থেকেই বেড়ে ওঠেন তাঁরা। লা লিগের ক্লাব বিলবাওতে খেলেন দু'জন। দেখতে দেখতে স্পেনের জাতীয় দলে কড়া নাড়া শুরু হয়ে যায়। লা রোখা (মানে স্পেনের জাতীয় দলকে ওই নামেই ভালোবেসে ডাকেন সমর্থকরা) আপন করে নিয়েছে নিকোকে।
কিন্তু ইনাকি পাড়ি দিয়েছেন ঘানায়। তাঁর মনে হয়েছে ওখানে সুযোগ বেশি। যদি কোনওদিন মুখোমুখি হয় দুই দল? একজন নামবেন লাল টুকটুকে স্পেনের জার্সি পরে। অন্যজন ঘানার সাদা জার্সিতে কলার তুলে। ফুটবল মাঠে জন্ম নেবে অনবদ্য ফুটবল সাহিত্য।
পাঁচটি বিশ্বকাপের (World Cup) সবকটিতে গোল করার রেকর্ড করলেন বটে, তবে নজরকারা ফুটবল খেলতে পারলেন কি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Ronaldo)? এই প্রশ্নটা থেকেই গেলো কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) ঘানার বিরুদ্ধে গ্রুপ (Portugal Beats Ghana) পর্বের প্রথম ম্যাচে। ঘানার কোচ কার্যত বোতলবন্দী করলেন সিআর -সেভেনকে। ম্যাচে ৩-২গোলে পর্তুগাল জয় পেলেও এই পর্তুগাল কতটা বেগ দেবে বলা মুশকিল।
প্রথমার্ধের ফলাফল গোল শুন্য। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৪ মিনিটে ঘানা বক্সে রোনাল্ডোকে ফাউল করেন ৪ নম্বর জার্সি পরিহিত সালিসু। ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলের প্রথম গোলটি করেন রোনাল্ডো। শুরু থেকেই রক্ষণাত্মকভাবে দল সাজিয়েছেন ঘানা কোচ। ৫ জন ডিফেন্ডার নিয়ে দূর্গ তৈরি করে আফ্রিকার এই দেশ। ১ গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্রুত ম্যাচে ফেরে ঘানা। ৭৫ মিনিটে ঘানা অধিনায়ক আন্দ্রে আয়ু গোল করে সমতা ফেরান। কিন্তু এর পরেই ঘনঘন পর্তুগিজদের আক্রমণে তাদের ডিফেন্স কাঁচের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ৭৭ মিনিটে ফেলিক্সের গেলে ব্যবধান বাড়ায় পর্তুগাল।
ঠিক ২ মিনিটের মাথায় ৭৯ মিনিটে সেলেকাওদের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করে রাফায়েল। যদিও খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো শেষ পর্যন্ত খেলে যান ঘানার ফুটবলাররা। ফলস্বরূপ ৮৯ মিনিটে ঘানার পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে নামা ওসমান বুকারি। শেষ বাঁশি বেজে ওঠা পর্যন্ত টেক্কা দিয়ে গেলো ঘানা ফুটবলাররা।
চলতি বিশ্বকাপে (qatar World Cup 2022) গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে বৃহস্পতিবার নামবে পর্তুগাল (Portugal)। প্রতিপক্ষ ঘানা, ২০১৪ বিশ্বকাপে এই ঘানার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল পর্তুগাল। ধারে-ভারে বৃহস্পতিবার রাতে আন্ডারডগ হয়েই নামবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (CR7), পেপে, সিলভারা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United) বিতর্ক সরিয়ে বিশ্বকাপে দ্রুত মনোনিবেশ করতে চান সিআর-সেভেন। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও চুপ ছিলেন রোনাল্ডো। মেসি পারেননি, ব্যর্থ হয়েছেন মুলার, এই জাতীয় একাধিক অঘটনের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। পর্তুগাল দলের শক্তি বলতে সামনে থেকে সিআর সেভেনের মতো তারকা থাকা। যদিও ঘানা শিবির কোনওভাবেই পিছিয়ে নেই। সব শক্তি দিয়েই জয়ের জন্য ঝাঁপাবে এই আফ্রিকান দেশ।
এই বিশ্বকাপ সম্ভবত রোনাল্ডোর শেষবার। তাই ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আরও প্রিয় হয়ে উঠতে মরণ কামড় দেবেন কিনা রোনাল্ডো, সেটাই এখন দেখার।