বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ার ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যার ঘটনা। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব দেশই। ‘ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজ়েশন’-র বার্ষিক রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে। ডব্লিউএমও দাবি করেছে, ২০২২ সালে বিশেষ করে তিনটি গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়েছে— কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড। এই গ্যাসগুলির বলয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আটকে পড়ে। ফলে গরম বেড়ে যায়। ২০২২ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড গড়েছে।
ডব্লিউএমও-র সেক্রেটারি জেনারেল জানান, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ক্রমেই বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, প্রতিকূলতার জেরে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মানুষ বিপর্যস্ত। যেমন ২০২২ সাল, পূর্ব আফ্রিকায় বারবার খরা হয়েছে। পাকিস্তানের বৃষ্টি সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। চিনে রেকর্ড তাপপ্রবাহ। ইউরোপেও তাপপ্রবাহের জেরে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ। এর জেরে খাদ্যের অভাবও দেখা দিয়েছে। মানুষ বাসস্থান ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশগুলি।’
ডব্লিউএমও-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘তাপপ্রবাহের জেরে ভারত-পাকিস্তান, দুই দেশেই শস্য উৎপাদন কমেছে। এর ফলে এই দুই দেশ গম রফতানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। চাল রফতানিতেও কড়াকড়ি শুরু করেছিল ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। গোটা বিশ্বের খাদ্য বাজারে খাবারের অভাব দেখা দেয়। যে সব দেশ চাল, গমের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল, তারা প্রবল সঙ্কটে পড়ে।’
বিধ্বংসী বন্যায় (Flood) ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে (Pakistan) হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু (Death) হয়েছে। ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গ্রামের পর গ্রাম কার্যত জলের নিচে। বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে বইছে সিন্ধু নদ। আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা। উদ্ধার কাজে নেমেছে নৌবাহিনী এবং উদ্ধারকারীর দল। বন্যার জলে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে নৌকা উলটে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এককথায় বিপদের উপর বিপদ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পাক সিন্ধু প্রদেশের সেহওয়ান এলাকার বিলাবলপুর গ্রামে। প্রবল বৃষ্টিতে (Heavy Rain) সিন্ধু নদের জলে ভেসে গিয়েছিল গ্রামটি। উদ্ধারে নেমেছিল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। একটি নৌকায় সেখান থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছিল। ফুলে ফেঁপে ওঠা নদে উল্টে যায় নৌকাটি। ১৩ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ অনেকে।
প্রবল বন্যার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তানের খাদ্য ভাণ্ডার। সেই কারণেই ভারত থেকে সবজি এবং অন্য খাদ্যদ্রব্য আমদানি করার কথা ভাবতে হচ্ছে পাকিস্তানকে, এমনটাই জানিয়েছেন সেদেশের অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইল।
জানা গিয়েছে, প্রতিবেশী দেশের বিপদে সাহায্য প্রদানের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে দাবি করা হয়েছে নয়াদিল্লির তরফে। প্রসঙ্গত, গত জুন মাস থেকে বৃষ্টি চলছে পাকিস্তানে। এই বছর বর্ষায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানে, তা গত ৩০ বছরের সহ রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর এই বিপুল বৃষ্টিপাতের কারণেই সিন্ধু এবং কাবুল নদী-সহ পাকিস্তানের অধিকাংশ নদীতেই জল এখন বন্যার সীমার অনেক উপর দিয়ে বইছে।