মুম্বাইয়ের (Mumbai) মেরিন ড্রাইভের গারওয়ার ক্লাবে রবিরাতে সকলে মেতে উঠেছিলেন কাতার বিশ্বকাপের (FIFA World Cup) আনন্দে। কিন্তু মুহূর্তেই সেই আনন্দ পরিণত হল শোকে। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ সবাই খেলা দেখতে ব্যস্ত। সেই সময় ছ’তলার সিঁড়ির রেলিং গলে নীচে পড়ে মারা (death) যায় ৩ বছরের হৃদয়াংশ রাঠৌর।
রবিবার ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার ফাইনাল ম্যাচ চলছিল। সকলেই উত্তেজিত মেসির হাতে কাপ দেখার জন্য। জানা গিয়েছে, ওই ক্লাবের সহসভাপতি রাজ পুরোহিত ক্লাবের ৪০০ সদস্যের জন্য সাততলায় জায়েন্ট স্ক্রিন বসান। উল্লেখ্য, রাজ পুরোহিত একজন বিজেপি নেতাও। সকলে সেদিন ম্যাচের আনন্দ উপভোগ করছিলেন। তখনই শুনতে পান ভারী কিছু পড়ার শব্দ। সকলে দৌড়ে যান। গিয়ে দেখেন নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৩ বছরের শিশুটি। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা হৃদয়াংশকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিস সূত্রে খবর, হৃদয়াংশ তার বাবা-মা এবং দিদির সঙ্গে মেরিন ড্রাইভের কাছে ওই ক্লাবে গিয়েছিল। বছর এগারোর একটি ছেলের সঙ্গে ছ’তলায় ওয়াশরুমে গিয়েছিল হৃদয়াংশ। সেখান থেকে ফেরার সময় পা পিছলে সিঁড়ির রেলিং গলে পড়ে যায়। আওয়াজ পেয়ে ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসে। তারপর হৈচৈ পড়ে যায়।
হৃদয়াংশের বাবা অবিনাশ ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। শিশুটির এক আত্মীয়ের অভিযোগ, সিঁড়ির রেলিং কাচ দিয়ে ঘেরা ছিল। কিন্তু রেলিংয়ের একটা জায়গায় কাচ ভাঙা ছিল। সে জায়গাটা ফাঁকা ছিল। খেলা দেখানোর আয়োজনের আগে এই জায়গাটি ঠিক করা উচিত ছিল বলে দাবি শিশুটির আত্মীয়ের। জায়গাটি ঠিক থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না বলে অভিযোগ।
মেরিন ড্রাইভ থানার পরিদর্শক সন্তোষ আভাদ বলেন, "দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখনও অবধি ক্লাবের বিরুদ্ধে কোনও অবহেলার মামলা দায়ের করা হয়নি। আরও তদন্ত চলছে। মাথায় আঘাতের পরে চিকিৎসা চলাকালীন ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয়েছে। রাত ২ টোর দিকে মারা যায়। ছেলেটির বাবার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।"
কাতার বিশ্বকাপ সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের চোখে। খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আহ কি খেলাটাই দেখলাম মঙ্গলবার রাতে! খেলা শুরু হয়েছিল আমাদের ঘড়ির রাত ১২.৩০-এ, শেষ হলো ঠিক ২.২০-তে। তারপর বাকি রাতটা আর ঘুম এলো না। স্বাভাবিক এরকম একটা স্বপ্নের ফুটবল ম্যাচ তাও সেমিফাইনাল এবং সঙ্গে মেসি সঙ্গে ৩টে অসাধারণ গোল ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে গেলো। ফুটবল প্রেমীর চরিত্রের উপর প্রশাসনের আবরণ পরে এবার সকালে প্রশাসনিক কাজে বেরোতে হবে যে। হাওড়ার বাসিন্দা কাজেই ফুটবল আমাদের রন্ধ্রে-অণুতে। আমি কিন্তু খাঁটি ভারতীয় তারপর মোহনবাগানী কাজেই বিশ্ব ফুটবলে কোনও সুনির্দিষ্ট দলের সমর্থক নই। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ভালো লাগে এবং অবশ্যই লাতিন আমেরিকার ফুটবলের স্কিল। আমার ভালো লাগার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ২০০২-এর পর। ওই শেষ বারের মতো ব্রাজিলের পায়ের কাজ দেখেছিলাম রোনাল্ডো,রবার্তো কার্লোসদের। তারপর একেবারেই ইউরোপিয়ান ঘরানার প্রেসিং ও পাসিং ফুটবল।
মঙ্গলবার রাতে ফের শিল্প ফায়ার এলো মেসি বাহিনীর হাত ধরে। ৩টি গোল, কোনটাকে কার আগে রাখবো এখনও বুঝতে পারছি না। সকলেই ধরে নিয়েছিল ব্রাজিলকে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া কাজেই আর্জেন্টিনা আর কী করতে পারে। এছাড়া লাতিন আমেরিকার দলের চরিত্রই হচ্ছে ডিফেন্স আলগা রেখে আক্রমণে যাও। কিন্তু ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ব্রাজিলের মতো আক্রমণে প্রথমে যায়নি আর্জেন্টিনা। আল্ট্রা ডিফেন্স রেখে খেলা শুরু করেছিল অর্থাৎ ক্রোটদের আক্রমণ করতে দাও পরে আলগা বল ধরে প্রতি-আক্রমণ। ডিফেন্স এবারে যথেষ্ট ভালো আর্জেন্টিনার। গোলে মার্টিনেজ, উইথড্রল স্টপার মাক্যালিস্টার একটু নিচ থেকে রড্রিগো দি'পল।
শুরুতে ডিফেন্সের পথে না গিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ গেলো মড্রিচের দল। কিন্তু কিছুতেই বক্সের ভিতরে যেতে পারলো না। ৩০ মিনিট এভাবেই চলার পর হঠাৎ চলতি বল নিয়ে যাওয়ার পথে বক্সে ক্রোট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ, আলভারেজকে ফাউল করে বসে, পেনাল্টি ১০০% | মেসি এসে বাঁ পায়ে গোলকিপারের বাঁদিকের কোন দিয়ে গোল করে এগিয়ে দেন দেশকে। এরপর ৫ মিনিটের মধ্যে ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলো জুলিয়ান আলভারেজ। নিজেদের অর্ধ থেকে একই বল নিয়ে বুলডোজারের মতো ক্রোটদের পাশে রেখে একার কৃতিত্বে বুটের টো দিয়ে জালে বল জড়ান। আগামীতে মেসি চলে যাওয়ার পর নতুন সুপারস্টার পেয়ে গেলো আলভারেজকে। এরপর আরও একটি গোল হতে পারতো। দুটি গোল খেয়ে মদ্রিচ, পেরিসিচ, কোভাচিচরা খেলা থেকেই যেন বেরিয়ে গেলো। এমনিতেও এই বিশ্বকাপ এদের অনেকের শেষ বিশ্বকাপ।
ব্রাজিলের সঙ্গে খেলে এনার্জিটা ছেড়ে এসেছিলো কি? তৃতীয় গোল সেই ৮৬-র মারাদোনাকে মনে করিয়ে দিলেন মেসি। ডান দিক থেকে গতি বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার জাস্কো গার্ডিওলকে ঘাড়ের কাছে রেখেই একের পর এক ইনসাইড আউটসাইড ডজ এবং লম্বা স্প্রিন্ট। একটা সময় গার্ডিওলকে ডজ করে পিছনে ফেলে বারের এক প্রান্তে গিয়ে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ালেন আলভারেজকে। গোলমুখ খুঁজতে ভুল করেননি বছর বাইশের আলভারেজ। তিনি ঠিকানা লেখা পাস জালে জড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন বোঝালেন এবার আমি এসে গিয়েছি।
সেরা খেলা দেখলাম মঙ্গলবার মধ্যরাতে। তুলনাহীন, এবারে কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে যতটুকু ফারাক রইলো রবিবাসরীয়তে। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) বিধানসভার উপ মুখ্যসচেতক তাপস রায়ের (Tapas Ray) চোখে। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে কী ভবিষ্যৎবাণী তাঁর।
অঘটন তো বটেই। আমার সঙ্গে আপনারাও সহমত হবেন নিশ্চয় যে বিশ্বকাপের (World Cup 2022) একদা ৪ চ্যাম্পিয়ন দল কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই কাতারকে বিদায় জানিয়েছে। এমনকি, গত বারের চ্যাম্পিয়ন তথা ৪ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি বিশ্বকাপের মূলপর্বে আসতেই পারেনি। ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিও গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায় নিয়েছে। বিদায় নিয়েছে স্পেন এবং দুবারের জুলেরিমে কাপ চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। গত বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার বেলজিয়ামের অসাধারণ টিম থেকেও কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারলো না, তাঁরাও লিগ পর্বেই বিদায় নিয়েছে।
অঘটন তো বটেই। এবার এশিয়ার দলগুলি দুর্দান্ত ফুটবল খেললো। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে যোগ্যতার সঙ্গে উঠে ছিল। জাপান তো অনবদ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের কেউই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারলো না স্রেফ অভিজ্ঞতার অভাবে। অনেকেই জাপানের উপর বাজি ধরেছিল। কিন্তু স্বল্প দৈর্ঘের জাপানিরা হেড গেমে টক্কর দিতে পারলো না ক্রোয়েশিয়াকে। পাশাপাশি টাইব্রেকারেও গুচ্ছ মিস জাপানের। তাই বিদায় ছিল অবশ্যসম্ভাবী।
তবে কোয়ার্টার ফাইনালের ৮ দল কেউই, কারও থেকে কম যায় না। এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ক্রোয়েশিয়া দলটিই। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড,পর্তুগাল তাদের পাওয়ার ফুটবল দেখাবে কিন্তু টাচ ফুটবলে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা শেষ মুহূর্তে জ্বলে উঠবে। এমন দাবি তো করা যেতেই পারে। আর বাকি আফ্রিকার সলতে মরোক্কো! এই দলটির দিকে আমরা সবাই তাকিয়ে রয়েছি। কিন্তু পর্তুগালের সঙ্গে খেলাটা কঠিন নিশ্চিত। তবে স্পেনের মতো বড় মাছকে হারিয়ে মরোক্কোর আত্মবিশ্বাস উচ্চ।
এদিকে, আমি ছেলেবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার ফ্যান। সেটা কলেজ জীবনে, টিভিতে ১৯৭৮-র বিশ্বকাপ প্রথম দেখে আমরা অনেকেই আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ সেটাই ছিল আমাদের 'দূরদর্শন'। পরে তো ফুটবলের ঈশ্বর মারাদোনা এলেন। তারপর আর কাউকে নতুন ভাবে ভালো লাগার প্রশ্নই নেই। ওই সময়টা চুটিয়ে রাজনীতি করছি, পরে ছাত্র পরিষদের সভাপতি হলাম। দায়িত্ব বাড়লো সঙ্গে কাজও। এরপর তো ক্রমশই দায়িত্ব বেড়েই গিয়েছে। কিন্তু এ সমস্ত সত্ত্বেও আমি খেলা প্রিয় মানুষ। ফুটবল প্রেম আমার ছেলেবেলা থেকে হলেও ক্রিকেট-সহ বিভিন্ন খেলা সুযোগ পেলেই দেখি মাঠে বা টিভিতে। তাই ফের এবারে বিশ্বকাপে রাত জাগতেই হচ্ছে। চাই মেসির হাতে কাপটা উঠুক কারণ এটাই ওর শেষ খেলা বিশ্বকাপ। কিন্তু কাজটা কঠিন, একই সাথে ফ্রান্সের এমব্যাপে অথবা পর্তুগালের রামোস এবারের তুরুপের তাস। ফুটবল একজনের খেলা নয়, টিম গেম। দেখা যাক ভবিতব্য কী! (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
কাতার বিশ্বকাপ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের চোখে! খেলা দেখে কী লিখছেন তিনি
আমি চিরকালই ব্রাজিলের ফ্যান। ব্রাজিল ছাড়া আর আছেটা কী? ছেলেবেলায় পড়াশোনার সঙ্গে কৃষ্ণনগরে ফুটবলও খেলতাম। পরে রাজনীতিতে আসি। আমাদের স্বদেশী করা পরিবার। আমার এক দাদুর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কারণে ফাঁসি হয়েছিল। ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই শেষ কিন্তু ওদের ফুটবল খেলা রেখে গিয়েছিল বাঙালির মনে। আগে টিভি ছিল না, কিন্তু ব্রাজিলের খবর পেতাম ছেলেবেলায় খবরের কাগজের পাতায়। পড়তাম পেলের খেলার খবর। সেই থেকে কবে যে ব্রাজিলের ভক্ত হয় গিয়েছি, তা আজও স্মৃতিতে।
এবার বিশ্বকাপ নিয়মিতভাবে দেখা হয়নি, কারণ প্রথম দিকে লিগ পর্যায়ের খেলাগুলি পড়তো কাজের সময়ে। তখন তো দফতরের কাজ থাকতো দেখবো কী ভাবে? তবুও পরে এসে ক্লিপিংস দেখতাম। যাই বলুন লাইভ ফুটবল ছেড়ে বাসি ফুটবল দেখা কি এক? এটা অবশ্য সত্যি যে রাত আটটা বা বারোটার খেলা ছাড়ছি না। ছাড়বোই বা কেন ৪ বছরে বিশ্বকাপ আসে একবার মাত্র, এ খেলা ছাড়া যায়? তবে গভীর রাতে শোয়ার অভ্যাস, কিন্তু বিশ্বকাপের কল্যাণে বহুদিন আগেই সেই অভ্যাস রপ্ত করেছি। তাই এখনও রাত জাগছি।
সোমবারের দু'টি খেলাই দেখলাম। জাপান দুর্দান্ত খেলেও জিততে পারলো না স্রেফ অভিজ্ঞতার কারণে। ক্রোয়েশিয়ার সব বয়স্ক ফুটবলার, লুকা মদ্রিচের কী হাল! কিন্তু ওরা দাঁতে দাঁত চেপে টাই ব্রেকারের জন্য অপেক্ষা করলো এবং সেখানেই বাজিমাত করলো ক্রোটরা। কিন্তু দেখবেন আগামীতে এই জাপান অনেকদূর যাবে।
আমার আবার প্রিয় ব্রাজিল। সোমবার রাতের খেলায় খুঁজে পেলাম সেই পুরনো স্কিল, সেই দৌড়, সেই টাচ। মাঠজুড়ে শুধুই সাম্বা ঝড়। এসবের জন্যই তো ব্রাজিল বিশ্বসেরার খেতাব পেয়েছে চিরকাল। ৬ মিনিটের পরই প্রথম গোল, তারপর পেনাল্টিতে নেইমারের ঠাণ্ডা মাথায় জালে বল ঢোকানো, প্রথম অর্ধেই প্রতিপক্ষের জালে একের পর এক বল জড়িয়ে খেলা প্রায় শেষ করে দেওয়া। পরপর চারটি গোল, অনেক ব্রাজিল ফ্যান আবার ভেবে বসেছিল আটটি হলেও খারাপ হতো না। শেষে ফাউল করে স্পটকিক থেকে একটা পাস্ এবং সামান্য ত্রুটির জন্য ব্রাজিল একটা গোল খেয়ে গেলো। এরপর তো লাতিন আমেরিকার আরও এক দেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসে বিরুদ্ধে তাঁদের দৌড়, টাচ দেখতেই হবে। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
একাই একশো নয়। মেসি একাই এক হাজার। ফুটবল কেরিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ খেলে ফেললেন ফুটবলের রাজকুমার লিয়োনেল মেসি (Lionel Messi)। দিনটা স্মরণীয় করে রাখলেন কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করা অবিশ্বাস্য গোলে, কয়েকটা স্পেলের ফুটবল ম্যাজিকে। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) রক্ষণকৌশল যখন মেসিসহ গোটা নীল-সাদা দলকে বিবশ করে রেখেছিল, তখন ডেডলক ভাঙার কাজটা নিজের কাঁধেই নিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাঁর গোলেই ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় আার্জেন্টিনা। শুধু কি তাই? এটি বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে মেসির করা প্রথম গোল। তাও আবার নিজের হাজারতম ম্যাচে।
এই নিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলছেন মেসি। লক্ষ্যে অবিচল। ন'টা গোল হয়ে গিয়েছে পাঁচটি বিশ্বকাপে। দশ গোল করার অপেক্ষা কেবল। মেসি তাঁর হাজার ম্যাচের মধ্যে দেশের জার্সিতে খেলেছেন ১৬৯ ম্যাচ। বার্সার হয়ে খেলেছেন ৭৭৮টি ম্যাচ। পিএসজির জার্সিতে ৫৩ ম্যাচের মালিক। আর মোট গোলসংখ্যা? ৭৮৯। তার মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯৪টি এবং প্যারিস সঁ জঁ-র হয়ে ২৩টি গোল রয়েছে তাঁর।
এছাড়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৬০টি ম্যাচে ২৮টি গোল, দেশের হয়ে মেসি কোপা আমেরিকায় ৩৪ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে ৫১টি ম্যাচে ৪৪টি গোলের অধিকারী। আর ২০১৮ বিশ্বকাপে গোলসংখ্যা ছিল ৪। এবারের কাতার বিশ্বকাপে সেই সংখ্যা এখনও অবধি ৩।
আগামী শুক্রবার শেষ আটের লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে লিওনেল স্কালোনির দল। সেখানে নতুন কী নজির গড়েন সেদিকেই তাকিয়ে ভক্তরা।
মুন্নি চৌধুরীঃ কেবলই মেসি (Lionel Messi)। শুধুই মেসি। অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করেছে নীল-সাদা। মেসি ম্যানিয়ায় আচ্ছন্ন কাতার (QatarWorldCup2022) থেকে কলকাতা এবং সর্বত্র। বারবার ঘুরে ফিরে আসছে এল এম ১০-এর ৩৫ মিনিটে ম্যাজিক মুভের কথা। ওয়ান-টু খেলে বক্সের মধ্যে জায়গা বানিয়ে নিয়েছিলেন। বিপদজনক জায়গায় মেসির পায়ে বল। ক্লিয়ার করতে এগিয়ে আসেন তিন অজি ডিফেন্ডার। কিন্তু তিন কাঠি চেনা মেসি চকিতে ধাবমান অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পায়ের ভিড়ে বল গলিয়ে দিল জালে। এককথায়, অসম্ভবকে সম্ভব করার নামই তো মেসি। এক আউন্স মাখনে যেন পাতলা ছুরি চালিয়ে দিলেন। যাবতীয় প্রতিরোধ চূর্ণ।
দ্বিতীয় গোল বিরতির পর। মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক রিয়ান। সেই ভুলের মাশুল গোল দিয়ে তুলে নিলেন আলভারেজ। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে গেল আর্জেন্টিনা ভক্তদের জয় উল্লাস। বিশ্বকাপে এই নিয়ে নিজের নবম গোল করলেন মেসি। কিন্তু নকআউটে তাঁর পা থেকে এল প্রথম গোল।
ডন ব্র্যাডম্যান আর ক্যাঙ্গারুর দেশ ম্যাচে ফিরেছিল শেষ বারো মিনিটে। ফার্নান্দেজের সেমসাইড গোল রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলেছিল। শুধু কি তাই? শেষ মুহূর্তের ত্রাতা হলেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্টিনেজ। নাহলে মেসির রাতেও আরও কাঠ-খড় পোড়াতে হত স্কালনির দলকে।
উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার হবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে নামবে এই দু’দল। এই স্টেডিয়ামেই হওয়ার কথা বিশ্বকাপের ফাইনাল। ভারতীয় সময় রাত ১২.৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা।
এবারের বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) কোনও জ্যোতিষের ভবিষ্যৎবাণী মিলবে কিনা সন্দেহের। রবিবারটিও ছিল না ব্যতিক্রমী। সাধারণত জুন-জুলাইতে বিশ্বকাপ (FIFA World Cup) ফুটবল হয়ে থাকে কিন্তু ওই সময়ে কাতারে ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে কাজেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম (Football Stadium) যতই থাকুক দর্শকদের খেলা বাদে শহরে ঘুরে বেড়ানোটাই অসম্ভব। তাহলে খেলাটা দেখবে কে? ফলে এই সময়টাই বেছে নেওয়া হয়েছিল। অসময়ের বিশ্ব ফুটবল নিয়মের বাইরে ফলাফলে অর্থাৎ খেলার ফল একেবারেই ভিন্ন হচ্ছে, যেমনটি হলো রবিবার।
প্রথম খেলা ছিল জার্মানিকে হারিয়ে দেওয়া জাপান বনাম স্পেনের কাছে ৭ গোল খাওয়া কোস্টারিকা। সকলেই ভেবেছিল অনায়াসেই জাপান ফের তার ভেলকি দেখাবে। কিন্তু হল উল্টো, প্রথম থেকেই কোস্টারিকা তার ডিফেন্সকে শক্ত রেখে মিডফিল্ডারদের একটু নিচ থেকে অপারেট করছিল। পাস খেলছিল তারা গগনে গগনে কাজেই অনেকটাই খাটো চেহারার জাপানি খেলোয়াড়দের হেড নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। আক্রমণ কিন্তু জাপান করেছিল কিন্তু গোল পাওয়ার জায়গায় যেতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে কোনটার আক্রমণে ৮০ মিনিটে জয়ের গোল পেয়ে যায় কোস্টারিকা।
ওই এক গোলে জাপানের পরের রাউন্ডে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। অন্যদিকে শেষ খেলায় এই মানের কোস্টারিকা রবিবারে খেলা জার্মানিকে হারাতে পারবে বলে মনে করা কঠিন। পরের খেলা আফ্রিকার মরক্কো বনাম কালো ঘোড়া বেলজিয়াম। সারা খেলায় বেলজিয়ামকে খুঁজে বেড়াতে হল তাদের পুরাতনী ছন্দকে। নিয়মিত জিম করা শক্তির প্রদর্শন করলো মরক্কো। দু-দুটি গোল করে জানিয়ে দিল আফ্রিকা নক আউট পর্যায়ে যেতে পারে। এই ম্যাচে ফ্রি-কিক থেকে গোল প্রথম দেখা গেল।
তৃতীয় খেলায় নতুন দল কানাডা খেলার ৬৮ সেকেন্ডে প্রথম গোল করে চমক দিল। তারপর অন্তত ৩৫/৪০ মিনিট খেললো ইউরোপিয়ান পাওয়ার ফুটবল। পাসিং থেকে বল কেড়ে নেওয়া সমস্তটাই ছিল দেখার মতো। প্রথম অর্ধের শেষ দিকে খেলা ধরলো ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ২০১৮-র রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়াকে ফিরে পাওয়া গেল। অজস্ৰ পাস খেলে বেদম করে দিল অনভিজ্ঞ কানাডাকে। চার চারটি গোল পেল তারা।
শেষ খেলাটি ছিল সবচাইতে আকর্ষণীয়। শিল্পের তিকি-তাকা বনাম ইউরোপের সেরা পাওয়ার পাসিং ফুটবল। প্রথমেই গোল পেয়ে যায় জার্মানি কিন্তু নতুন নিয়মের ফাঁদে পরে বাতিল হয়ে তা। দ্বিতীয়ার্ধের আগে অবধি স্পেন মুহুর্মুহু আক্রমণ সানায় জার্মানির দিকে। নয়্যার ছিলেন যেন চীনের প্রাচীর। এরপর খেলোয়াড় বদল করে মাঠে আসে স্পেনের আলভারো মোরাতো এবং এসেই গোল। খেলার বাকি তখন ৩৫ মিনিট।
এরপর খেলার রং বদলে যায়। জার্মানি বুঝিয়ে দেয় কেন তারা ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন। রুডিগার, লিও গোরেৎসগ, লেরওয়ে সানে একের পর এক আক্রমণ বানাতে থাকে স্পেনের গোল লক্ষ্য করে। দুর্ভাগ্য তাদের ৩ গোল পাওয়া দল শেষ পর্যন্ত নিকোলাস ফুলকরুসের গোলে সমতা ফেরায়। এই দল অঘটন না হলে অনায়াসে হারাতে পারে কোস্টারিকাকে। নক আউটে ফের ইউরোপের দাপট থাকবে তা এখনিই বলে দেওয়া যায়।
হীরক বোস: ফুটবল বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) উন্মাদনায় ফুটছে শহর কলকাতা (Kolkata)। ব্রাজিলের দুরন্ত জয় যেন সেই উচ্ছ্বাসকে দ্বিগুণ করেছে। এদিকে, আবার রোনাল্ডো (Ronaldo) পাঁচ বিশ্বকাপেই গোল করে নজির গড়েছেন। তাই পর্তুগালেরও সাপোর্ট বাড়ছে। আর্জেন্টিনাকে (Argentina) নিয়ে বেশ চাপে মেসি ভক্তরা। এমনই সব বিষয় নিয়ে ফুটবল আড্ডা জমে উঠেছে উত্তর কলকাতার ফকির চক্রবর্তী লেনে। কাতার ফুটবল জ্বরের আঁচ এসে পড়েছে উত্তর কলকাতার এই বনেদি পাড়াতে। যেখানকার রাস্তা সেজেছে হলুদ-নীল আর নীল-সাদা রং-এ। বাড়ির দেওয়ালে মেসি-রোনাল্ডো-নেইমার থেকে মারাদোনার ছবি আঁকা। সঙ্গে রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগালের ফ্ল্যাগ। আর রয়েছে ১৯৩০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রত্যেক চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি হাতে পোষ্টার।
দিশারি ক্লাবের ছেলেরা একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাতারের ফ্যান জোন তুলে এনেছে কলকাতায়। ক্লাবে বসেই জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখা হচ্ছে বিশ্বকাপের খেলা। আর চলছে মেসি, নেইমার, রোনাল্ডোদের নিয়ে কাটাছেঁড়া। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশ গ্রহণ করা ৩২টি দেশ একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। সমর্থকদের হতাশ করেছে আর্জেন্টিনা-জার্মানি। অপরদিকে সাম্বা ঝড়ে উড়ে গিয়েছে ছোট দেশ সার্বিয়া। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ঘানার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে পর্তুগাল।
এই অবস্থায় আগামি দিনে রাউন্ড অফ ১৬-এ কোন সেরা ষোলো দল যায়, সেদিকে তাকিয়ে ক্রীড়া ফুটবল বিশ্ব।
প্রসূন গুপ্ত: শতাব্দীর পথে বিশ্বকাপ ফুটবল (World Cup 2022)। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছুটা থেমে গেলেও আজও অটুট বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) ঐতিহ্য। এই ফুটবল যুদ্ধে বহু ফুটবলার এসেছেন, খেলেছেন কিন্তু রেকর্ড বইয়ে মাত্র কিছু খেলোয়াড় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ফুটবল বললেই ব্রাজিল (Brazil) দেশের কথা প্রথমেই মনে আসে। পাঁচবার বিশ্বকাপ জয় করেছে তারা। অসংখ্য তারকা ফুটবলার দিয়েছে এই দেশ। কিন্তু বিশ্বফুটবলে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ফুটবলের রাজা পেলে (Pele), কালো হীরা নাম হয়েছিল তাঁর। অসংখ্য গোল করে দেশকে সম্মানের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। এটা সত্যি যে পেলের সাথে জার্জিনহো-সহ বহু ফুটবলার খেলেছেন কিন্তু বাস্তবতায় একার কৃতিত্বে পেলে ছিলেন অনন্য।
এরপর যে নামটি আসে তিনি ফুটবলের রাজপুত্র প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা। আর্জেন্টিনাকে শুধু বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তাই নয়, একার কৃতিত্বে অজস্র গোল করেছেন মারাদোনা। বলতে দ্বিধা নেই তাঁর সেরা সময়ে আর্জেন্টিনা দলে আহামরি এমন কিছু বড় খেলোয়াড় ছিল না। গত শতকে এই দুজনই কিংবদন্তি। মারাদোনা অবশ্য আজ প্রয়াত কিন্তু অমর তাঁর ক্রীড়াশৈলী।
এই দুজন ছাড়া আর যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন বা দেশের নাম চিরস্মরণীয় করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন জার্মানির বেকেনবাওয়ার। মধ্য মাঠ থেকে অসংখ্য বল বাড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা মিড-ডিফেন্ডার। এসেছেন জোহান ক্রুয়েফের। নেদারল্যান্ড কোনও দিন বিশ্বকাপ যেতেনি কিন্তু ফুটবল নিয়ে জাদু দেখাতে পারতেন তিনি। গত শতকের আরও এক প্রতিভাবান ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। ৯৮-র বিশ্বকাপে খানিকটা জিদানের ভেলকিতে মাত হয়েছে বিশ্ব। সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিপ্লবের দেশ ফ্রান্স। জিদানের মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড় এর আগে খুব কমই এসেছে।
চলতি শতকে যে দুজন খেলোয়াড় বিশ্বখ্যাত, তাঁদের হয়তো এবারই শেষ বিশ্বকাপ। রোনাল্ডো বা সিআর-৭ এবং মেসি বা এলএম-১০। অবশ্যই দুজনের খেলার ধারণ আলাদা। মেসি আর্জেন্টিনায় মারাদোনার পরবর্তী প্রতিভা এবং রোনাল্ডো উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার। দুজনই গোল করেন বা গোল করতে সাহায্য করেন। এই বিশ্বকাপে এই দু'জন কী করেন দেখার। তবে আগে পরে আরও অনেক নাম আসতেই পারে কিন্তু এদের সমতুল্য কারও নাম এই মুহূর্তে মাথায় আসছেই না।
গ্ল্যামার, প্যাশন, বৈভব। কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup 2022) নানা রঙে রঙিন। ৩২ দেশ কাপ জয়ের লক্ষে। বিশ্বের প্রায় ১২ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী ডেরা বেঁধেছেন মরু শহরে। মেসি (Lionel Messi), রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo), নেইমারদের দেখার তর সইছে না। মঙ্গলবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নামছে আর্জেন্টিনা। তার আগে চমকপ্রদ তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে কাতারে। কী সেই অজানা তথ্য? জানতে উৎসুক সকলে।
নীল সাদার খাদ্যতালিকায় রয়েছে আসাদো। গো-মাংস থেকে তৈরি এই ডিশ। মেসিদের দলে কোচ, ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ, কর্তা মিলিয়ে মোট সদস্য ৭২ জন। প্রায় এক মাস চলবে কাতারের কাপ যুদ্ধ। ৯০০ কেজি মাংস প্যাকেজিং করে নিয়ে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। নিজেদের রাঁধুনি রয়েছে দলের সঙ্গে। এককথায় এলাহি ব্যাপার। ব্রাজিল আবার জোর দিয়েছে কফির উপরে। প্রচুর ব্ল্যাক কফি নিয়ে গিয়েছেন নেইমাররা। নার্ভ চাঙ্গা করতে এই ব্ল্যাক কফির জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া ৩৬ কেজি কাসাভো ময়দা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যা ফুটবলারদের রসনা তৃপ্তিতে ব্যবহৃত হবে।
শুধু কি তাই? লাতিন আমেরিকার আর এক দেশ উরুগুয়ে। গো-মাংস উৎপাদনে ওঁরাও প্রথম সারিতে রয়েছেন। প্রচুর মাংস নিয়ে নিয়ে কাতার পাড়ি দিয়েছেন তাঁরাও। সঙ্গে তাজা ফলের যোগান তো রয়েছেই। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে সদ্য। এমন সব রংদার তথ্য রোমাঞ্চ তৈরি করেছে সমর্থকদের মনে।
প্রসূন গুপ্ত: হাওড়া ময়দানে আসার আগেই নজরে পড়লো বড় একটা ব্রাজিলের পতাকা। ইতিউতি রয়েছে আর্জেন্টিনাও, কিন্তু রবিবারের সন্ধ্যায় যেন নিষ্প্রভ হয়ে রইলো গঙ্গার পশ্চিমপাড় বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা টিকিয়াপাড়া। রবিবারই ছিল কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধন। নজরকাড়া খেলার আগে মাঠের অনুষ্ঠান আর তারপর কাতার বনাম ইকুয়েডরের খেলা। কথা তো জানাই যে ফুটবল পাগল বাংলা মাতোয়ারা হবে এক রবিবার থেকে ফাইনালের রবিবার অবধি। সমস্ত উৎসাহে যেন জল ঢেলে দিলো অভিনেত্র্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যু।
তাঁর দু'বার ক্যান্সার আক্রমণ আচমকা হৃদরোগে আচ্ছন্ন হওয়া, খবরের কাগজ, টেলিভশন থেকে সোশাল মিডিয়াতে বেশ কিছুদিন ধরে ঐন্দ্রিলার অসুস্থতা নিয়েই খবর রাজ্যের মানুষকে হাওড়া বেসরকারি হাসপাতালের দিকেই টেনে নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অনেকে লড়াই করে তাঁর বিশেষ বন্ধু তথা অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী এবং শর্মা পরিবারকে একা করে চলেই গেলেন আদরের মিষ্টি। মিরাকেল হল না, ব্যর্থ শত প্রার্থনা।
সারা বাংলার মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা এই খবরে নজর দিয়েছিলো তারা বিমর্ষ হয়ে গেলো ২৪ বছরের তরুণীর মৃত্যুতে। কিন্তু হাওড়ার অধিবাসীরা মনে গেঁথে রইল যে তাঁদের শহর থেকেই ২০ দিন যমে-মানুষে টানাটানির পর বিদায় নিলেন ঐন্দ্রিলা।
শহরে ঢুকেই সাধারণত মল্লিক ফটকের কাছে সর্বদা মানুষের ঢল দেখা যায়, রবিবার তাঁরাও অনুপস্থিত। হাসপাতাল থেকে ঐন্দ্রিলার নিথর দেহ বের করার সময় কয়েকশো মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বাড়িমুখী মানুষ।
পঞ্চাননতলায় সুবিশাল কার্তিকের মূর্তি নিয়ে ডিজে বাজিয়ে গঙ্গার দিকে যাচ্ছিলো কোনও এক ক্লাবের সদস্যরা। পথ মধ্যেই এলাকার প্রবীণ কিছু মানুষের অনুরোধ, ভাসান দাও কিন্তু বাজনাটা আজ বন্ধ থাকুক। সেই অনুরোধে কাজ হল, বন্ধ হলো ডিজে। কদমতলার মোড়ে আসতেই এই প্রতিবেদকের নজরে এলো একটি সাদাকালো ঐন্দ্রিলার ছবি, নিচে হাতে লেখা 'না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা'। রবিবার ছিল অসংখ্য বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু সেভাবে কোথাও গাড়ির জটলা দেখা গেলো না। নয়া রাস্তার এক পাশে একদল যুবক গভীর ভাবে কথা বলছিলো, কাছে যেতেই শুনি 'দু দুটো ক্যান্সার তার উপর এতগুলো হার্ট অ্যাটাক, নিতে পারলো না মেয়েটা।' বিধায়ক-চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায় জানালেন, চিকিৎসার ত্রুটি ছিল না। শেষ দিকে এতগুলো অ্যাটাক, তার উপর কোমাচ্ছন্ন, ফিরিয়ে আনার লড়াইটা কঠিন ছিল। ফেরার পথে মুসলিম অধুষ্যিত এলাকাতেও শোকের ছায়া। প্রশ্ন করতেই ইদ্রিস বলে এক যুবক বললো, টিভি সিরিয়াল দেখে, এমন হয়তো নামী তারকা ছিলেন না, কিন্তু এই কটা দিনে বড্ডো মায়া পরে গিয়েছিলো।
এদিকে, এবারের বিশ্বকাপ শেষ দেশের হয়ে খেলা মেসি-রোনাল্ডোর। এঁরাও বিদায় নেবে অনেক সমর্থককে কাঁদিয়ে। কিন্তু সেই কান্না কি সব্যসাচীর বেদনার থেকেও বড়? ঐন্দ্রিলার বাবা-মায়ের সন্তানহারার যন্ত্রণার থেকেও বড়। আগামীর প্রেম উপন্যাসের বাস্তব চরিত্র হয়ে থাকলেন সব্যসাচী এবং তাঁর প্রয়াত প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা।
আজকের খেলা: (ভারতীয় সময়)
ইংল্যান্ড বনাম ইরান ৬ঃ৩০
সোমবার নিজেদের বিশ্বকাপ (World Cup 2022) অভিযান শুরু করেছে হ্যারি কেন, স্ট্যারলিন, পিকফোর্ডের মতো ইংলিশ তারকারা। খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ইরানের (England-Iran) বিরুদ্ধে মাঠে নামছে ইংল্যান্ড। ২০১৮-র বিশ্বকাপে দুরন্ত দৌড় দেখা গিয়েছিল সাউথগেটের ছেলেদের। তবে এবার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বেশ চাপে রয়েছেন ইংরেজ কোচ। কারন দলের সাম্প্রতিক খারাপ ফর্ম। শেষ পাঁচ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখিনি ইংল্যান্ড। তার মধ্যে পাঁচ ম্যাচে মাত্র চার গোল করতে পেরেছেন ইংলিশ স্ট্রাইকাররা।
অপরদিকে, ফিফা ৱ্যাংকিংয়ে ২০ নম্বরে থাকা ইরান রয়েছে দুরন্ত ফর্মে। তৃতীয়বার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা ইরান তাদের শেষ ২২টা ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটে ম্যাচে হারের মুখ দেখেছে। তবে শেষ দুবার বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজ থেকে ছিটকে যাওয়া এশিয়া মহাদেশের এই দলটি চমক দিতে চাইছে। হট ফেভারিট ইংল্যান্ড প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে ইরানের। তবে চোট আঘাত চিন্তায় রেখেছে ইংরেজদের। কেইল ওয়ালকার আর জমস ম্যাডিসন চোটের জন্য খেলতে পারবেন না প্রথম ম্যাচে। অন্যদিকে, চোট থাকলেও ইরানি স্ট্রাইকার সর্দার আমাউন নামছেন ইংল্যান্ড ম্যাচে।
ইরানের কোচ কার্লোস কাইরোস কাউন্টার অ্যাটাক ধর্মী ফুটবলের কথা মাথায় রেখে ৪-৫-১ ছকে দল সাজাচ্ছেন। অপরদিকে, ইংল্যান্ড কোচ সাউথগেট ৩-৪-৩ ছকে আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলতে মাঠে নামছে।
কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) ঢাকে কাঠি। ৯৮-র ফ্রান্স বিশ্বকাপের ওলে ওলে থেকে ২০১০-র সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ওয়াকা ওয়াকা। রিকি মার্টিন থেকে শাকিরা (Ricky Martin-Shakira), কাতার বিশ্বকাপের (World Cup 2022) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে বেজেছে এদের থিম সং। বিশ্বকাপের আয়োজনের প্রস্তুতিপর্বে সাময়িক বিতর্কে জড়ালেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাক লাগিয়ে দিল কাতার। দোহার (Doha) আল বায়াত স্টেডিয়ামের জাঁকজমক অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে দেওয়া হল ঐক্য-সাম্যের বার্তা। গোটা অনুষ্ঠানে এক বৃন্তে দুটি কুসুমের মতো ঘুরেফিরে এলো ঐক্য-সাম্য।
এবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ ইকুয়েডর এবং কাতারের। তাই দুই দলের সমর্থকরা অনেক আগে থেকেই আল বায়াত স্টেডিয়ামে ভিড় জমান। রবিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাতারের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমকে পুরোধা হিসেবে দেখা গিয়েছে। প্রথমে গানের অনুষ্ঠান, তারপরেই বিশ্বকাপে ঐক্যের বার্তা শোনান হলিউডি অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যান। তাঁর সঙ্গেই মঞ্চে প্রবেশ করে সে দেশের বিশেষভাবে সক্ষম ঘানেম আল-মুফতাহ।
সূচি মেনেই গাইলেন কোরিয় ব্যান্ড বিটিএস-এর প্রধান গায়ক জান কুক। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন কাতারের গায়ক ফাহাদ আল-কুবায়সি। এমনকি এর আগের বিশ্বকাপে যে যে গানগুলি গাওয়া হয়েছিল, সেগুলি ফিরে এল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে রিকি মার্টিনের গাওয়া ‘ওলে, ওলে’ থেকে ২০১০ বিশ্বকাপে শাকিরার গাওয়া ‘ওয়াকা, ওয়াকা’, সবই শোনা গেল।
আর মাত্র কয়েকঘন্টা বাদেই বল গড়াবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022)। তার আগেই খারাপ খবর ফ্রান্স (France Football Team) শিবিরে। চোটের কারণে চলতি বিশ্বকাপে বল পায়ে দেখা যাবে না ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেঞ্জেমাকে (Karim Benzema)। অনুশীলনে চোট পান করিম, MRI করলে দেখা যায় পেশিতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, মাঠে নামতে পারবেন না ফরাসি স্কোয়াডের এই নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার। এমনিতেই চোটের কারণে পল পোগবা, এন গলো কান্তে এই বিশ্বকাপে নেই। এবার সেই তালিকায় নাম উঠলো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৯৭ ম্যাচে ৩৭ গোল করা বেঞ্জেমার। রিয়াল মাদ্রিদ স্টার করিমের বদলে কে, সেটা নিয়ে টিম মিটিং শুরু করেছে ফরাসি শিবির।
সূত্রের খবর, এসি মিলানের অলিভার জিরুদকে বেঞ্জেমার বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন দিদিয়ের দেশচ্যাম্প। আগামী ২২ তারিখ ফ্রান্সের প্রথম প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক।
এবার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক সংস্থা কাতার (Qatar World Cup)। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশে নাগরিক নিয়ম বড় বালাই। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য, এবং সঙ্গী পুরুষ থাকলে প্রশাসনের কড়া নজরদারি চলে নাগরিকদের উপর। সেই নিয়মের বেড়াজালে পড়তে চলেছেন বিশ্বকাপ দেখতে আসা বিদেশী পর্যটকরাও (Foreign Tourist)। আন্তর্জাতিক এক সংবাদ মাধ্যম বিশ্বকাপ (World Cup 2022) আয়োজক কমিটির এক সদস্যকে উদ্ধৃত করে এই দাবি করেছে। জানা গিয়েছে, কাতারে মহিলারা খোলামেলা পোশাক পরতে পারেন না। তেমনই বিদেশী পর্যটক কোনও খোলামেলা পোশাক পরতে পারবেন না। প্রকাশ্যে ঘুরলে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে, খোলা রাখা যাবে না কাঁধও। অর্থাৎ অফ শোল্ডার পোশাক (Dress Code), কোনওভাবেই কাতারে পরতে পারবেন না বিদেশী মহিলারা।
এই নিয়মের অন্যথা হলে জেল পর্যন্ত হতে পারে নিয়ম ভঙ্গকারীদের। জানা গিয়েছে, শুধু স্টেডিয়ামের বাইরে নয় সে দেশের যেকোনও জনবহুল স্থান, এমনকি স্টেডিয়ামের ভিতরেও মহিলাদের এই নিয়ম পালন করতে হবে। স্টেডিয়ামের ভিতর কে কী করছেন বা কী পোশাক পরছেন, তা তদারকিতে প্রত্যেক স্টেডিয়ামে বিশেষ ক্যামেরা বসিয়েছেন আয়োজকরা। বিশেষ কোনও পোশাক পরার হুলিয়া জারি না থাকলেও, খোলামেলা পোশাক পরলেই কাতারে আইনি পদক্ষেপ অবশ্যসম্ভাবী। এমনটাই জানিয়েছে ওই সংবাদমাধ্যম।
এই বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে বিশ্বকাপ আয়োজক সংস্থা তথা বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফার বক্তব্য স্পষ্ট। তারা জানিয়েছে, দর্শকরা চাইলে ইচ্ছানুযায়ী পোশাক পরতে পারেন। কিন্তু তাঁদের কাছে অনুরোধ, আয়োজক দেশের আইনের কথা মাথায় রেখে যাতে তাঁরা পোশাক বাছেন।
পাশাপাশি বান্ধবী বা স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বকাপ দেখতে গেলেও বিশেষ বিধিনিষেধের মধ্যে পড়বেন বিদেশী পর্যটকরা। রাস্তায় তাঁরা বান্ধবী বা স্ত্রীয়ের হাত ধরে হাঁটতেই পারেন। কিন্তু প্রকাশ্যে জড়িয়ে না ধরাই ভাল। প্রকাশ্যে স্থানে চুম্বন সে দেশে একেবারে নিষিদ্ধ। তাই প্রিয় দলের আনন্দে যাতে বান্ধবী বা স্ত্রীকে চুমু খেয়ে বসবেন না তাহলেই বিপদ।