বৃহস্পতিবার ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে বিস্ফোরক বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি ইউসুফ পাঠান ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন আক্রমণের জন্য দিলীপ ঘোষকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন।
তৃণমূল এবার রেকর্ড গড়ার আশায় বহরমপুরে প্রার্থী করেছে ইউসুফ পাঠানকে। এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ ঘোষ কটাক্ষের সুরে বলেন, ইউসুফ পাঠান থাকেন গুজরাতে। একটা শব্দ বোঝেন না, বাংলায় তাঁকে নিয়ে এসেছে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের টিকিটে কেউ দাঁড়াতে চাইছে না। প্রার্থী পাচ্ছে না শাসক দল।
দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছেন, পুরনোরা রিজেক্ট হয়ে যাচ্ছে তাও কিছু লোককে পাল্টাতে পারেনি, রেখেছে। তাঁদের হোয়াইটওয়াশ করার চেষ্টা হচ্ছে। আর প্রার্থী খুঁজতে খুঁজতে বিহার পার হয়ে গুজরাত চলে গিয়েছে। তৃণমূলের অবস্থা বোঝাই যাচ্ছে, যার টিকিট কেউ দাঁড়াতে চায় না, তারা জিতবে টা কী করে! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ডায়মন্ড হারবারে হাই প্রোফাইল দলীয় বৈঠক করেছেন। সেখানে একলক্ষের বেশি ভোটে জেতার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন। এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, ওখানে সবার সব সময় হাই প্রোফাইল থাকে, লো প্রোফাইল হয় না। ওখানে একটা আলাদা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চলে, ওয়েস্ট বেঙ্গল গর্ভমেন্টের থেকে আলাদা।
নাম না করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রকে উনিও আলাদা দেখাতে চান। তিনি বলেন, সরকারের টাকা নেই, ওখানে বিলিয়ে দেয় কী করে? এত খরচা করেছেন। একটাই লোকসভা আছে নাকি? বাকি ৪১ টার কী হয়েছে, কেন সরকার দেখে না। এদিক ওদিক লুটপাট করে সব লোককে দেখাচ্ছেন! দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ডায়মন্ড হারবারের মানুষের জীবনে কী উন্নতি হয়েছে, সামাজিক কি পরিবর্তন হয়েছে, বড় বড় কথা বলেন।
শান্তনু ঠাকুর, রেখা পাত্রকে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাধা দেওয়া ছাড়া কী করবে তারা? রেখা পাত্রকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছিল, সন্দেশখালি তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। রেখা পাত্রকে বুকে টেনে নিয়েছে। এই ধরনের রাজনীতি এবার বাংলা থেকে বিদায় নেবে, বলেছেন তিনি।
আজই, শনিবার ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। শনিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে ভোটের দিন ঘোষণা কমিশনের ফুল বেঞ্চের। এবার ৭ দফায় ৫৪৩ আসনে হতে চলেছে ভোট। লোকসভা ভোটের পাশাপাশি দেশজুড়ে ২৬টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ভোট। ৪ জুন ভোট গণনা।
বাংলায় কবে কোথায় ভোট?
প্রথম দফা (১৯ এপ্রিল)-কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি
দ্বিতীয় দফা (২৬ এপ্রিল)-রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, দার্জিলিং
তৃতীয় দফা (৭ মে)- মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর
চতুর্থ দফা (১৩ মে)- বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল
পঞ্চম দফা (২০ মে)- শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, হুগলি, বনগাঁ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আরামবাগ
ষষ্ঠ দফা (২৫ মে)- পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর
সপ্তম দফা (১ জুন)- উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুর, জয়নগর, বসিরহাট, বারাসত, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, দমদম
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এদিন জানিয়েছেন, গোটা দেশে ভোট কেন্দ্রের সংখ্য়া ১০ লক্ষ। দেশে মোট ভোটারের সংখ্য়া ৯৭ কোটি। তার মধ্য়ে মহিলা ভোটার ৪৭ কোটি এবং পুরুষ ভোটার ৪৯ কোটি। ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্য়ে ভোটারের সংখ্য়া ২১ কোটি। ১ কোটি ৮২ লক্ষ নতুন ভোটার। আজ থেকেই চালু নির্বাচনী আচারবিধি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে রাজ্যের ৪২টি আসনে মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলেছিল বঙ্গের লোকসভা ভোট। তিনটি রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে সাত দফায় লোকসভা ভোট হয়েছিল ২০১৯ সালে।
২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের প্রায় সবকটিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল মূলত তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই। ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বাম-কংগ্রেস পিছিয়ে ছিল অনেকটাই। তৃণমূল জিতেছিল ২২টি আসনে। আর বিজেপির দখলে ছিল ১৮টি সিট।অন্যদিকে কংগ্রেস জিতেছিল দুটি আসনে। বামেরা খাতা খুলতেই পারেনি। এবারও লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপি এবং তৃণমূলই।