৮ জুলাই শনিবার ছিল রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Electoin)। সেই নির্বাচনে মৃত্যু, বোমাবাজি, গুলি, মারধর সবমিলিয়ে এক উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল গোটা রাজ্য জুড়ে। এমনকি বাদ যায়নি বুথে বুথে শাসক দলের ছাপ্পা ভোট সহ ব্যালট লুঠ করার প্রক্রিয়া। আর সেই ছাপ্পা ভোটের বিরোধীতা করে পুননির্বাচনের (Re-Polling) দাবিতে পথে নেমেছিল বিরোধী দলগুলি। রাজ্যের জেলায় জেলায় সেই নিয়ে শুরু হয়েছিল অনেক বিক্ষোভও। তাই সবকিছু তথ্য যাচাই করে, ভেবেচিন্তে সোমবার নির্বাচন কমিশন (State Election Commision) ৬৯৬ টি বুথে পুননির্বাচনের নির্দেশ দেয়।
আজ অর্থাৎ সোমবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের পুননির্বাচন। পঞ্চায়েতের যেই বুথ গুলিতে ছাপ্পা ভোট হয়েছে এবং ব্যালট বক্স লুঠ হয়েছে, সেই বুথগুলিতেই করা হচ্ছে পুননির্বাচন। সবমিলিয়ে রাজ্যের মোট ৬৯৬ টি বুথে পুননির্বাচন। আগের তুলনায় পুননির্বাচনে বেশি অশান্তি না হলেও এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এক বাম প্রার্থীর শ্বশুর শুকুর আলী শেখের। শনিবারের তুলনায় এদিন একটু শান্ত পরিবেশ নজরে আসছে পুননির্বাচনের বুথগুলি থেকে। এমনকি শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিন বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখা না গেলেও, পুননির্বাচনে বুথ গুলির বাইরে বেশ সক্রিয়তার সঙ্গে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
কেন্দ্রের কাছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাহিনী (Central Force) চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (Election Commision)। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) ধাক্কা খাবার পর কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরকে চিঠি লিখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাহিনীর আবেদন করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস এবং বিজেপির করা একটি মামলায়, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম নির্দেশ দেয়, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এবং তিনি আরও নির্দেশ দেন যে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চেয়ে পাঠাতে হবে। এরপর অবশ্য ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কমিশন কোনও সিদ্ধান্তই নেয় নি। পাশাপাশি হাইকোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরপরই কার্যত সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত সওয়াল জবাবের পর, হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখে। এরপর মঙ্গলবার থেকে আরও তৎপর হয় নির্বাচন কমিশন। এবং এখনও অবধি পাওয়া সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি জেলার জন্য দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আবেদন করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayet Election) দামামা বেজে গিয়েছে। শুক্রবার থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু করেছেন প্রার্থীরা (Candidate)। তা নিয়ে অশান্তি জেলায় জেলায়। সোমবার থেকে অশান্তি রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (Election Commision)। মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রের এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করতে চলেছে কমিশন। সূত্রের খবর, সোমবার থেকেই এই নির্দেশিকা চালু করছে কমিশন। রবিবার রাতেই জেলাশাসকদের এই নির্দেশেকা পাঠানো হবে বলে কমিশন সূত্রে খবর। একসঙ্গে ২ জনের বেশি মনোনয়ন কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। আচমকা নির্বাচন ঘোষণা ও মনোনয়ন জমা নিয়ে আপত্তি তোলে বিরোধীরা। নির্বাচন ঘোষণার আগে সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছে বিজেপি ও কংগ্রেসও।
নির্বাচন ঘোষণার পরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার খবর আসে। মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে কংগ্রেস কর্মী খুনের ঘটনাও সামনে এসেছেন।
মনোনয়ন (Nomination) পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যের (State) বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি তৈরি হচ্ছে। সেকারণে এবার রিপোর্ট তলব করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন (Election Commision)। জেলাশাসকদের অতি দ্রুত ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর শুক্রবার থেকেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। আর তখন থেকেই শুরু অশান্তি। কোথাও তৃণমূল বনাম বিজেপি আবার কোথাও বামেদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে শাসক দল। এমনকী পুলিশের সঙ্গেও হাতাহাতির ছবি প্রকাশ্যে আসে। ফলে প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়ে। সেকারণে অশান্তি নিয়ে রিপোর্ট তলব কমিশনের।
শুক্রবার মনোনয়ন জমা দিতে গেলে কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ককে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। অন্যদিকে শনিবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলে তৃণমূল ও বাম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে প্রচুর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।