
প্রসূন গুপ্তঃ টানাপোড়েনের পরে এই মুহূর্তে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলির (Education Scam) প্রাথমিকের একটি মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Ganguly)। তাঁর হাত থেকে এই বিশেষ অংশটি নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওআই চন্দ্রচূড়। মামলা হয়েছিল এই প্রকার যে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর এজলাসে থাকা মামলার বিষয় মুখ খুলেছিলেন একটি বেসরকারি চ্যানেলে। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে এবং কৌঁসুলি ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি।
সমস্ত তথ্য জানার পর বিচারপতি চন্দ্রচূড় আদেশ দিয়েছিলেন যে, শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি মামলার শুনানি আর করতে পারবেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাকি দায়িত্ব ন্যস্ত করবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। সেই মোতাবেক গত ২৮ এপ্রিল রাতে কোর্ট থেকে বেরোনোর পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিচারপতি। তিনি জানান, এই মামলা ৬ মাসে হবে নাকি ৬০ বছর লাগবে তা তাঁর জানা নেই। তিনি আরও বলেন, তাঁর লড়াই জারি থাকবে ইত্যাদি।
এবারে সম্পূর্ণ বিষয়ের বাকি অংশের কী হবে বা কার এজলাসে যাবে তা তো ঠিক করবেন বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। শনিবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন যে , যিনিই দায়িত্বে আসুন, তাঁরা চান দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হোক, দু তিন মাসের মধ্যে হোক। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে যে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হোক এবং অপরাধ করলে শাস্তি বিধান হোক।
অন্যদিকে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সরে যাওয়াতে কোথাও ব্যথিত হয়েছে বিরোধী নেতারা। অবশ্য এই বিচারালয়ের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বক্তব্য রেখেছেন প্রায় সব দলই। এবারে দেখা বিষয় এই সংক্রান্ত মামলার দায়িত্ব কে পান।
প্রসূন গুপ্ত: বহু বছর আগে প্রয়াত ভারত অধিনায়ক টাইগার পাতৌদি বলেছিলেন, স্পিনারকে পা বাড়িয়ে খেলতে হয়, কিন্তু পিছনের পা-টি যেন পপিং ক্রিজে থাকে। আজকের ক্রিকেটে ওই আপ্তবাক্য কেউই মানে না। অন্তত আইপিএলে, সে কারণেই সিক্সারও যেমন হয়, তেমনি আউটও হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়টিকে ক্রিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উদাহরণটি কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। এজলাস বা কোর্টের প্রধানের আসনটি মোটেই খেলার স্থান নয়। অন্যদিকে বিচারপতির আদেশ শিরোধার্য করতে হবে এটাই দস্তুর। কিন্তু এখানেও নিয়ম নিশ্চিত আছে যে, মাননীয় বিচারপতি তাঁর প্রক্রিয়ায় কীভাবে এগোবেন বা কী আদেশ বা রায় দেবেন তা সর্বদা তাঁর নিজস্ব বিষয়। কে দোষী বা সন্দেহভাজন তা বিচারপতি আদেশের আগে প্রচার করেন না।
তিনি দুই পক্ষের কথা শুনে রায় বা আদেশ দেবেন এটাই চিরায়ত। শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একটি টিভি চ্যানেলে গত সেপ্টেম্বর মাসে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে এই শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় কী হচ্ছে বা তিনি কী ভাবছেন অথবা তাঁর ধরন কী, তা অনেকটাই প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। যা আইনসিদ্ধ কিনা তাই নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক তুঙ্গে ছিল।
অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেছিলেন, এসব তিনি আদেশ দেওয়ার আগে বলে ঠিক কাজ করেননি। ওই সময়ে বর্তমান সরকার বিরোধী মহলে তিনি নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর নামে পোস্টার পড়েছিল বিভিন্ন স্থানে। এরপর তাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে, এমনকি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও। মূল বিষয়ের বাইরে তিনি এজলাসে নাম করেছেন রাহুল গান্ধীর বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, যাঁরা এই মামলায় ছিলেনও না। এই সমস্ত নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে অভিযোগ জমা পড়ে গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে। সমস্ত দিক বিচার করে প্রধান বিচারপতি শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিলেন। এমনটাই নাকি হওয়ার ছিল বলেই ধারণা আইজীবী মহলে। রাতারাতি নায়ক থেকে ট্রাজিক কিংয়ে চলে আসলেন তিনি। এরপর সম্মানের সঙ্গে তিনি কী করেন সেটাই দেখার।
২২ জুলাই, ২০২২ রাজ্য রাজনীতিকে তোলপাড় করে দিয়েছিল একটি ঘটনা। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চর্চিত বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার আবাসনে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। সময় যত গিয়েছে ইডির গুনতিতে, তত বেড়েছে টাকার অঙ্ক। নগদে থাকা সেই টাকা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ বাংলার। সেই ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর, এখনও জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। রাজ্য রাজনীতিতে এই জুটি 'অপা' নামে এখন বেশি পরিচিত। সেই অর্পিতার বাড়িতে উদ্ধার টাকার উৎস কী?
সোমবার সংবাদ মাধ্যম এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল পার্থর দিকে। তাঁর জবাব, 'আপনারা খুঁজে বের করুন।' এই কয়েকটি শব্দের বাইরে সেভাবে এই প্রশ্নে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া এদিন ফের ৮ মে পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ নিয়োগ-কাণ্ডে জেলবন্দি সাত জনের জেল হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ফের নিজের উপর থাকা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উলটে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ঘাড়ে ঘুরিয়ে দোষ চাপান তিনি। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, 'নিয়োগে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। মন্ত্রী নিয়োগ কর্তাও নয়। আইন অনুযায়ী প্রতি বোর্ড এক একটি সংস্থা। এতে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। এক বছরে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। আর নতুন করে কী বলবো?'
এদিকে, ফের নিয়োগ-কাণ্ডে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে। আগামি ৮ মে পর্যন্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ সাত জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এদিন পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া জোড়া কর্মসূচির সাফল্য প্রার্থনা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
অপরদিকে, গত শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের আংটি নিয়ে আদালতে আপত্তি তোলে ইডি। সেই আপত্তির পর এদিন কোনওরকম আংটি-অলঙ্কার ছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। যদিও আংটি প্রসঙ্গে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, ওটা ধর্মাচারণের অঙ্গ। কোনও অলঙ্কার নয়।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের বিরুদ্ধে আরও কড়া হচ্ছে ইডি। ইতিমধ্যে অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে ইডি। এবার এই কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে ইমন গঙ্গোপাধ্যায়। এই ইমন গঙ্গোপাধ্যায়, অয়ন শীলের ছেলে অভিষেক শীলের বান্ধবী। জানা গিয়েছে, অয়নের পুত্রের বান্ধবী ইমন উত্তরপাড়ার অমরেন্দ্র সরণির বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়।
অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা ইমনের অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান ইডির। নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা অয়ন শীল, তাঁর আত্মীয় পরিজন, এমনকী ছেলের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তাই আদৌ সত্য কী, উদঘাটনে এবার ইমনকে তলব ইডির। চলতি সপ্তাহে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অয়ন পুত্রের বান্ধবীকে। পাশাপাশি অয়ন শীলের সংস্থার গাড়ির চালক এবং কর্মীকে তলব করা হয়েছে। প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করা হবে। অন্যদিকে অয়ন শীলের আরও একাধিক ফ্ল্যাটের হদিশ পেয়েছে ইডি। হুগলি জেলাতেই আরও আটটি ফ্ল্যাটের হদিশ মেলায় অয়নের ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৬। বেনামে ৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে তেহট্টের বিধায়ক (Tehatta MLA) তাপস সাহার সঙ্গেই সিবিআই র্যাডারে তৃণমূল মহিলা সেলের নেত্রী ইতি সরকার। এই নেত্রী নাকি তাপস সাহা ঘনিষ্ঠ। এমনটাই স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এদিকে শনিবার ইতির বাড়িতেও ঢুঁ মারে কেন্দ্রীয় সংস্থা। যদিও নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই এদিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ইতি দেবী। তিনি বলেন, 'আমি নিজেই ধারদেনায় ডুবে রয়েছি। আমি যে দেউলিয়া সেটা সিবিআই (CBI) আমার বাড়িতে এসে নথি ঘেঁটে বুঝে গিয়েছে। আমার বাড়িতে শুধু সরকারি একাধিক প্রকল্পের সাহায্যপ্রার্থীদের নথি মিলেছে। আমি একটা সেলফ হেল্প গ্রুপ চালাই। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে তৃণমূল কংগ্রেস করি। একুশের ভোটে তাপস সাহা দলের প্রার্থী হলে প্রচারে সাহায্য করেছিলাম। সেই সূত্রে শুধু পরিচয়।'
তিনি জানান, 'শুক্রবার তাপস সাহার বাড়িতে সিবিআই এসেছে। আমি একসময় ব্লক নেত্রী ছিলাম, এখন মহিলা সেলের জেলার জেনারেল সেক্রেটারি। যেহেতু আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাই হয়তো সিবিআই এসেছে। একুশের প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে তাপস সাহার পরিচয়। আমার সঙ্গে কোনও চাকরিপ্রার্থী যোগাযোগ নেই।'
ইতি সরকার জানান, 'আমি চাকরির সুপারিশ কোনওদিন করিনি। আমি শুধুই রাজনীতি করি। তাপস কাকু ভোটের সময় শুধু প্রচারের কাজে এসেছেন আর বাড়িতে কোনওদিন আসেনি। সিবিআই এসে আমার ফোন, কিছু নথি ঘেঁটে দেখেছে। আমি চেয়েছিলাম সিবিআই এসে দেখুক আমি কী অবস্থায় আছি।'
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের (Education Scam) পর এবার পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কোমর বাঁধছে ইডি। সূত্রের খবর, নিয়োগ-কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন থেকে বাজেয়াপ্ত নথি কেন্দ্রীয় সংস্থার (ED) তুরুপের তাস হতে চলেছে। বাজেয়াপ্ত নথি ঘেঁটে ইডি দক্ষিণবঙ্গের ২২টি পুরসভায় নিয়োগে গরমিল পেয়েছে বলে খবর। তাই এই নিয়োগ-কাণ্ডে (Municipality Recruitment scam) তদন্তের অনুমতি চেয়ে দিল্লির সদর দফতরের দ্বারস্থ হচ্ছে ইডি। জানা গিয়েছে, মোট আড়াই হাজার কোটি টাকার পুর দুর্নীতি-কাণ্ডের প্রাথমিক খোঁজ মিলেছে।
এদিকে, প্রায় চার দিনের মাথায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করেছে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। সিবিআই সূত্রে খবর, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সুপারভাইজার পদে নিয়োগেও লক্ষ-লক্ষ টাকা তুলেছেন জীবন। আশাকর্মী নিয়োগের চাকরি বিক্রি করেছেন তৃণমূল বিধায়ক। শুধু প্রাথমিক শিক্ষক বা এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে নয়, তদন্তে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে নিয়োগের নামে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তুলেছেন জীবনকৃষ্ণ।
নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Case) ফের ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে অয়ন শীল (Ayan Shil)। মঙ্গলবার অয়নের আইনজীবী সওয়াল করেন, 'রিমান্ড পিটিশনের তথ্য অনুযায়ী, যে এজেন্টের কথা বলা হয়েছিল তাঁকে শনাক্ত করা গিয়েছে। ১০ জন কমপক্ষে প্রাথমিক নিয়োগে (Primary Scam) শিক্ষক হিসেবে অবৈধ নিয়োগ পেয়েছে। এখানে বেশিভাগ বক্তব্য পুরসভার চাকরি নিয়ে, যেটা আসল অভিযোগ নয়। আমার মক্কেলের কোনওদিন চাকরি দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অয়ন শীলের কী সম্পর্ক সেটা পিটিশনে দেওয়া নেই।'
তিনি জানান, 'এটা সম্পূর্ণ আলাদা সেক্টর। কোনও নথি নষ্ট হয়নি। আমার মক্কেল ২৩ দিন হেফাজতে। অয়ন শীলকে হেফাজতে রাখার প্রয়োজনীয়তা কী সেটাই বুঝতে পারছি না। যেকোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। যখনই তদন্তের স্বার্থে ডাকা হবে আসতে রাজি।' এই সওয়ালের প্রেক্ষিতে ইডির আইনজীবী জানান, 'একজন লোক যে কখনও স্কুলে যায়নি একটি মালবাহী গাড়ি চুরি করতে পারে। কিন্তু কারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থাকে, তাহলে সে পুরো রেলপথ চুরি করতে পারে। এমনটাই বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট।'
কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে, অভিষেক শীল অয়ন শীলের ছেলে। আর ইমন গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেক শীলের বান্ধবী। এদের শরিকি ব্যবসা আছে। সংস্থার নাম M/S Fossils। সন্দেহ নিয়োগ দুর্নীতির সব টাকা পেট্রোল পাম্পের ব্যবসায় খাটানো হয়েছে। একটা রেস্তোরাঁর ব্যবসা আছে, এটাও এঁরা ২ জন শরিক চালান। বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা ইমন। এই বিভাস গঙ্গোপাধ্যায় পুরসভার নগর উন্নয়ন বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা। এই তিনজন ইডির স্ক্যানারে আছেন। ২০১২-১৪ টেট পরীক্ষার দুর্নীতিতে কুন্তল-অয়ন-পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগ রয়েছে। জামিনের বিরোধিতা করে জেল হেফাজতে রাখার অনুরোধ করতে চাই।'
এরপরেই ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অয়ন শীলকে জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত।
মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার (Contempt of Court) মামলা দায়ের করতে চেয়ে হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Bhattacharya)। হাইকোর্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করুক, এমনটাই আবেদন বিকাশবাবুর। এই মর্মে বিচারপতি টি শিবাজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই আইনজীবী। তাঁর আবেদন হলফনামা আকারে জমা করতে নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের। সেই মামলা গ্রহণ হবে কিনা বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত বলেই সূত্রের খবর। মঙ্গলবার আলিপুর জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যর কয়েকটি অংশে আপত্তি তুলে আদালতের দ্বারস্থ বিকাশরঞ্জন।
সেই মন্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ এই আইনজীবীর। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ-কাণ্ডে চাকরিহারাদের পাশে ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম মন্তব্য, 'যাঁদের চাকরি গিয়েছে আইনি পথে তাঁদের চাকরি ফেরানো হোক। দরকারে আবার ওদের পরীক্ষা নেওয়া হোক। আদালত যেভাবে বলবে সরকার সেভাবেই ব্যবস্থা করবে।' এখানেই আপত্তি তোলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তার প্রশ্ন, 'মুখ্যমন্ত্রীর মতো পদে থেকে কীভাবে এই ধরনের মন্তব্য বা আবেদন করা যায়?'
পাশাপাশি তাঁর বক্তব্যের শেষদিকে জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি প্রধান বিচারপতিকে সামনে পেলাম না। সুব্রত দা-কে পেলাম, আমি শুধু বললাম এটা আমার মনের ভাবনা।' এই মন্তব্যর বিরোধিতায় সরব বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এবারে হলফনামা আকারে বিকাশবাবুর আবেদন জমা পড়ার পর আদৌ এই মামলা গ্রহণ হবে কিনা, তার জন্য অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমন আর বুধের বেলায় নিজাম প্যালেসে হাজির সুজয় ভদ্র। এই সুজয় ভদ্র নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (education Scam) অন্যতম চর্চিত চরিত্র 'কালীঘাটের কাকু' (Kalighat Kaku)। তাঁর নাম উঠে আসে গ্রেফতার হওয়া তাপস মণ্ডল এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার র্যাডারে থাকা গোপাল দলপতির মন্তব্যে। এবার সেই কালীঘাটের কাকুকে সিবিআই (CBI) তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ দুই আইনজীবীকে নিয়ে নিজাম প্যালেসে আসেন সুজয় ভদ্র। ভিতরে ঢোকার আগে সংবাদমাধ্যমকে সুজয়বাবু জানান, 'কাল (পড়ুন মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বাড়িতে ছোট একটা কাগজে লিখে নোটিস পাঠায় সিবিআই। তাতে কী লেখা আমি বুঝিনি। স্ত্রীয়ের শরীর খারাপের মধ্যেই আজ চলে এসেছি। নয়তো বলবে তদন্তে অসহযোগিতা করছি।'
এরপর নিয়োগ-কাণ্ডে সুজয় ভদ্রের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তাঁকে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। বেলা দুটোর পর বেড়িয়ে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয় ভদ্র জানান, 'আমার থেকে কোনও নথি চায়নি, দ্বিতীয়বার আমাকে ডাকেনি। যদি নিয়োগ-কাণ্ডে যুক্ত হতাম তাহলে গ্রেফতার হতাম। আমি টাকা নিয়েছি কিনা তদন্তকারীদের বলেছি, সংবাদমাধ্যমকে আর কিছু বলবো না। তদন্ত চলছে, তদন্তকারীদের থেকে জানুন। রাজনৈতিক যোগে কুন্তল-তাপসকে চিনি।' এদিন সংবাদমাধ্যম তাঁকে একঝাঁক প্রশ্ন ছুড়ে দিলে কার্যত মেজাজ হারান সুজয় ভদ্র। তাঁর জবাব, 'আপনারা দয়া করে তদন্তকারীদের ভূমিকা নেবেন না।' সমন প্রসঙ্গে তিনি জানান, 'আমার স্ত্রীয়ের হাত পুড়ে যাওয়ায় সমনে সই করতে পারেননি। তাই কাগজে লিখে দিয়ে গিয়েছিল।'
এদিকে, নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কুন্তল ঘোষের স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু বুধবারই ইডি দফতরে এসে পৌঁছন জয়শ্রী দেবী। জানা গিয়েছে, লিখিতভাবে কুন্তলের স্ত্রীয়ের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। চলছে ভিডিওগ্রাফিও। ব্যাঙ্কের যাবতীয় নথি-সহ তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। জয়শ্রী দেবীর সঙ্গে কুন্তলের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। নিয়োগ-কাণ্ডে আদৌ কুন্তলের স্ত্রী কিছু জানেন কিনা খতিয়ে দেখবে ইডি। এমনকি, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত অর্থের সূত্র জানতেও জয়শ্রী দেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা বলেই সূত্রের খবর। তবে বুধবার সকালে ইডি দফতরে ঢোকার মুখে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্ন এড়িয়ে যান কুন্তলের স্ত্রী।
অপরদিকে, বুধবার দিল্লির ইডি দফতরে অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের হাজিরার কথা ছিল। কিন্তু 'শারীরিক অসুস্থতার' কারণে এদিন সেই হাজিরা এড়ান সুকন্যা মণ্ডল। কারণ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে মেইল করেছেন অনুব্রত-কন্যা বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে ইডিকে চিঠি দেন সুকন্যা।
আমি যদি কোনও অন্যায় করি, আপনারা গালে যদি চড় মারেন কিছু মনে করবো না। যদি দেখি ইয়েস আমি গিল্টি। আমি জীবনে জেনেশুনে কোনও অন্যায় করিনি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর একটা সিপিএম (CPM) ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছো? মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। সম্প্রতি নিয়োগ-কাণ্ডে কোর্ট (High Court) নির্দেশে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া একাধিক 'অযোগ্য'রা চাকরি খুইয়েছেন। এদিন সেই প্রসঙ্গ উসকে দিয়ে পরোক্ষে বিরোধী শিবিরকে খোঁচা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার জেলা আদালতের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঋষি অরবিন্দের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'দেওয়ার ক্ষমতা নেই কাড়ার ক্ষমতা আছে। সিপিএম আমলে চাকরি সংক্রান্ত একটা কেসে বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় রায়ে বলেছিলেন, সংশোধন করে নাও যদি ভুল থাকে। চাকরি খাওয়ার কথা বলেনি।'
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, 'এখন রোজ কথায় কথায় তিন হাজার চাকরি বাদ, চার হাজার চাকরি বাদ। কেউ যদি নিচুতলায় অন্যায় করে থাকে আমাদের এখানে গণতান্ত্রিক দল। সবাই তো আমার তৃণমূলের ক্যাডার নয়, সবাই গভর্নমেন্টের ক্যাডার নয়। গভর্নমেন্টের ক্যাডার হলেও কোনও কোনও পার্টির সমর্থক। তাঁরা নিচে বসে যদি অন্যায় করে, আমার লোকও যদি অন্যায় করে, আমি ন্যায়ের পথে থাকবো। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো, এটা আমার চিরকালের স্বভাব।'
মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, 'কিন্তু আমি একটু ভেবে দেখতে বলবো। কাল দুজন আত্মহত্যা করেছেন। যদি কেউ ভুল করে থাকে তাঁর দায়িত্ব তাঁরা নেবে কেন? আজকে একটা ছেলেমেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। আজকে একটা ছেলেমেয়ে কাজ করে বলে বাবা-মাকে দেখতা পারে। হঠাৎ করে চাকরিটা চলে গেলে সে খাবে কী? আমি তো বলছি যারা অন্যায় করেছে অ্যাকশন নিন, টেক স্ট্রং অ্যাকশন। আমার কোনও দয়া নেই তাঁদের জন্য। কিন্তু ছেলেমেয়েগুলো যাতে ভিক্টিমাইজড না হয়, তাঁদের চাকরিটা আইন অনুযায়ী ফিরিয়ে দিন। আইন অনুযায়ী কোনও ভুল করে থাকে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হোক। দরকার হলে আবার পরীক্ষা দিক, আলাদা বন্দোবস্ত করে কোর্ট যেটা বলবে আমরা সেটাই করে দেবো।'
তাঁর মন্তব্য, 'সিদ্ধান্ত আপনারা দিন, আমি প্রধান বিচারপতিকে সামনে পেলাম না। সুব্রত দা-কে পেলাম, আমি শুধু বললাম এটা আমার মনের ভাবনা। আত্মহত্যার খবর শুনে আমার মন কাঁদছে। কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। এটা রাজনীতি নয়। দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই হয়েছে কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কত কেস পড়ে আছে, তাকাবে না। কথায় কথায় পিআইএল, মানে পলিটিকাল ইন্টারেস্ট লিটিগেশন। আমরা আগে জানতাম পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন। কেউ কেউ এই জিনিস করছে, সবাই নয়।'
তিনি জানান, 'আমাকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে। আমার পার্টিকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে। আমার সরকার এত মানবিক কাজ করলেও পছন্দ না হতে পারে। যা ইচ্ছা আমাকে দু'বেলা গালাগালি দিন। দরকার হলে মারুন আমায় কিছু মাইন্ড করব না। কিন্তু রাজ্যকে বদনাম করে ছাত্র-যুবদের খাওয়ার অধিকার কেড়ে নেবেন না।'
একসপ্তাহে দ্বিতীয়বার সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির (ED) দফতরে অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা ইডি দফতরে ছিলেন তিনি (Actor Bony Sengupta)। যেসব নথি কেন্দ্রীয় সংস্থা তাঁকে আনতে বলেছিল, সেই নথি সঙ্গে নিয়েই সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন অভিনেতা। এমনটাই সংবাদ মাধ্যমকে জানান বনি। এদিন সিজিও থেকে বেরনোর সময় অভিনেতা বলেন, 'যা যা নথি চেয়েছিল সব জমা দিয়েছি। এরপর সব ইডি বলবে। আমাকে আর আসতে হবে না। টাকা ফেরতের প্রশ্ন নেই, ওসব আমার টাকা।'
সংবাদ মাধ্যমকে বনির অনুরোধ, 'আপনারা আমাকে আর প্লিজ হ্যারাস করবেন না। আপনারা একটু বেশি বলছেন। প্রশ্নের উত্তর সব ইডির থেকে জানতে পারবেন।' এই মন্তব্য করেই গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে যান বনি সেনগুপ্ত। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে সিজিওতে ঢোকার মুখে একঝাঁক প্রশ্ন করা হয়েছিল অভিনেতাকে। ফরেন ট্রিপের টাকা কে দিয়েছিল, কুন্তলের সঙ্গে কোনও চুক্তিপত্র সই হয়েছিল কিনা? কিন্তু কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সিজিও কমপ্লেক্সে ঢুকে যান অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুই দফায় বনি সেনগুপ্তকে জেরা করে ইডি। কুন্তলের থেকে পাওয়া একটা গাড়ির সূত্র ধরে এই জিজ্ঞাসাবাদ বলে সূত্রের খবর। সেবার বনি বলেছিলেন, এক অর্গানাইজারের সূত্রে তাঁর সঙ্গে কুন্তলের পরিচয়। ছবি করার প্রস্তাব নিয়ে কুন্তল এসেছিলেন। তারপর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৪০ লক্ষ টাকার একটা গাড়ি ও আমাকে দিয়েছিল। তবে কোনও ছবি তৈরি হয়নি। কিন্তু বলেছিল প্রোগ্রাম করে সেই টাকা শোধ করে দিতে।
এই পার্থ দা-কে (Partha Chatterjee) চিনি না। এই পার্থ দা আমার কাছে নতুন। দীর্ঘদিন পার্থ দা-র সঙ্গে রাজনীতি করছি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবতে পারি না টাকা নিয়ে কেউ চাকরি (Education Scam) দেবে। এটা অত্যন্ত লজ্জার। মঙ্গলবার এই মন্তব্য করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) । তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী জুড়েছেন, 'যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক নয়। মিডিয়া ইনভেস্টিগেশন এক জিনিস আর আদালতে যতক্ষণ না চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ সে দোষী নয়, তার আগে পর্যন্ত আন্ডার ট্রায়াল।'
মঙ্গলবার চেতলা গার্লস স্কুলের সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী। সেই সময়েই রাজ্যে আলোড়ন ফেলে দেওয়া শিক্ষা দুর্নীতি প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আমরা সকলেই চাই বেকার ছেলেদের চাকরি হোক, পার্টির ছেলেদের চাকরি হোক। কিন্তু কারও অধিকার হরণ করে যদি সত্যি সত্যি চাকরি দিয়ে থাকে তবে সেটা অন্যায়। তবে যতক্ষণ না মহামান্য আদালত বলছেন সে দোষী, ততক্ষণ সে বিচারাধীন। মিডিয়া কী বলছে, সূত্র কী বলছে সে বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না।'
তাঁর দাবি, 'এটা শাসক দলের দুর্নীতি নয়। কোনও ব্যক্তি অন্যায় করলে বা দুর্নীতি করলে সেটা পাপ। যেকোনও দুর্নীতি পাপ। আমরা মানুষের কেয়ার টেকার। মানুষ আমাদের অধিকার দিয়েছে তাঁদের কাজ করার। দুর্নীতি অন্যায় এবং দুর্নীতি যারা করেন তাঁরাও অন্যায় করেন।'
নিয়োগ-কাণ্ডের (Education Scam) মূল চক্রী কুন্তল ঘোষ। এভাবে সবাইকে ডাইভার্ট করে নিজের টাকা সরাচ্ছে কুন্তল (Kuntal Ghosh)। অন্য রাজ্যে টাকা পাঠাচ্ছে। ইডি হেফাজতে (ED Custody) থাকা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। এদিন সিজিও থেকে বেরনোর মুখে হুগলির বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা (TMC Leader) বলেন, 'এই কাণ্ডের মেইন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। ও এরকম করে সবাইকে ডাইভার্ট করছে। মিথ্যা অভিযোগ করে ডাইভার্ট করছে। আর ওর টাকাগুলো এভাবে সাইড করছে, অন্য রাজ্যে পাঠাচ্ছে।'
হুগলি জেলা পরিষদের এই কর্মাধ্যক্ষর দাবি, 'আমি কোনওকিছুর সঙ্গে জড়িত নই। আগামি দিনে প্রমাণ হবে। কুন্তলের লোকজন অন্য রাজ্যে টাকা সরাচ্ছে। এজেন্টদের ভয় দেখাচ্ছে। কয়েকশো এজেন্টের থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে ও। আমার সবকিছু লিগাল। আগামি দিনে সব প্রমাণ হবে।'
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, 'নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোট ৬ বার ইডি ডেকেছে। সপ্তমবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এই ছ'বার সংবাদ মাধ্যম তাঁকে নানা প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা। কিন্তু গ্রেফতার হতেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন তিনি। বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা দাবি করলেন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। তিনি নির্দোষ বরং যারা জেলে বসে রয়েছেন, তাঁরা ফাসাচ্ছেন শান্তনুকে। হঠাৎ কেন কুন্তলকে কাঠগড়ায় তুলছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়?'
যদিও এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডি দাবি করেছে নিয়োগ-কাণ্ডে কুন্তল এবং শান্তনু যৌথভাবে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলেছেন। এঁরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রীয় সংস্থার অনুমান, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি ১১১ কোটির নয় বরং ৩৫০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি। ইতিমধ্যে তদন্তে শান্তনুর নামে ৫১ কাটা জমি, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। একজন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীর কাছে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? ইডির জবাব, 'বেআইনি নিয়োগের মাধ্যমে এসেছে এই টাকা।' আদালতে তারা জানিয়েছে, 'তদন্তে এমন কিছু তথ্য আসছে, যার মাধ্যমে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ছিল। যারা চাকরি পেয়েছে তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড মোবাইলে মিলেছে। এগুলো কী করছিল মোবাইলে?'
নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Scam) ফের গ্রেফতার তৃণমূল নেতা (TMC Leader)। এবার হুগলি (Hooghly) বলাগড়ের শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে ইডি। শুক্রবার তাঁকে টানা সাত ঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর জবাবে অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED)। বিনিয়োগ সংক্রান্ত তাঁর জমা করা নথি ও জেরার বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় এই গ্রেফতারি বলে দাবি ইডির। জানা গিয়েছে, হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন শান্তনু। তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের পর এবার নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনুর গ্রেফতারিতে স্পষ্টতই কি ব্যাকফুটে শাসক দল? জানা গিয়েছে, শান্তনুকে জেরা সংক্রান্ত বয়ানের কপি দিল্লিতে পাঠানোর কিছুক্ষণ পরেই এই গ্রেফতারির সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার তাপস মণ্ডল নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনুর নাম প্রকাশ্যে এনেছিলেন। তারপর তাঁকে মোট ৭ বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৩০০ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম পেয়েছিল ইডি। তদন্তে জানা গিয়েছিল, সেই তালিকা থেকে ৭ জন চাকরি পেয়েছিলেন। এই সাত জন কীভাবে, কত টাকার বিনিময়ে চাকরি পেলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হেফাজতে নিয়ে শান্তনুকে জেরা করবে ইডি।