
প্রসূন গুপ্ত: দীপাবলির আগেই আলোকসজ্জায় সেজে রয়েছে ইডেন গার্ডেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই মাঠ ক্রিকেটারদের বিশেষ পছন্দের। অনেকেই লর্ডস এবং মেলবোর্নের আগে সেরা দর্শকের উপস্থিতি ইডেনেই থাকে বলে দাবি করেছে। তবে এই ইডেন সবার পক্ষে লাকি হয় না। এ মাঠে এক সময়ে জনতার প্রাণের খেলোয়াড় ছিলেন মুস্তাক আলি, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, চন্দ্রশেখর,আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষণ, হরভজন সিং থেকে আজকের রোহিত শর্মা। এঁরা ইডেনে আসলেই সেরা পারফর্মেন্স বেরিয়ে আসতো। তবে ইডেন পাগলও ছিল সচিন তেন্ডুলকারের জন্য। একবার তাঁকে রানআউট দেওয়ার জন্য খেলাই বন্ধ করে দিয়েছিলো ক্ষিপ্ত দর্শক।
রবিবার সেই ইডেনেই ফের বিশ্বকাপের ম্যাচ। বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের টুর্নামেন্টে সেরা দুই দল। ভারত এখনও পর্যন্ত সব কটি ম্যাচে জিতেছে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে একটিতেই, তাও নেদারল্যান্ডের কাছে। কিন্তু ওই ভাবে বিচার করলে চলবে না। বাকি সব ম্যাচে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করেছে তারা। এবারে দক্ষিণ আফ্রিকার চেষ্টা থাকবে ভারতকে হারানোর। যদি তারা জিততে পারে এক নম্বর স্থানে চলে যাবে রানরেটে। ভারত নিশ্চই চাইবে তাদের জয়ের ধারা ধরে রাখতে। এ মুহূর্তে ব্যাটিংয়ে টপ ফর্মে রয়েছে রোহিত ও বিরাট কোহলি। নিয়মিত রান পাচ্ছে। রোহিতের প্রিয় মাঠ ইডেন কাজেই ফের একটি বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা থাকবে অন্যদিকে কোহলির বিশ্বের কোনও প্রিয় মাঠ নেই। এই মুহূর্তে তিনিই ব্যাটিংয়ে সেরা কাজেই সেই খেলাটি ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে। তবে ভারতের প্রধান অস্ত্র বোলিং। ৫ বোলারই দুর্দান্ত খেলছে। শামির নিজের মাঠ নিজের দর্শক কাজেই এই সময়ে বিশ্বের বিস্ময় তিনি এবং তাঁর ইনকাটার ইয়র্কার। মুশকিল একটিই হার্দিক পাণ্ড্য আর এই বিশ্বকাপে মাঠে নামতে পারছেন না। দরকার একজন অতিরিক্ত বলার যা ভারতের বর্তমান জয়ী দলে নেই কাজেই ষষ্ঠ বোলার হিসাবে ভরসা করতে হবে কোহলির উপর।
মনে রাখতে হবে যে জিতবে সেই দল সেমিফাইনালে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের সম্মুখীন হবে। ভারত নিশ্চই অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে চাইবে না। সব শেষে একটি কথা মনে করিয়ে দিতেই হয় \ ২০০৫ এ সৌরভ গাঙ্গুলিকে দল থেকে বাদ দেওয়াতে ক্ষিপ্ত দর্শক সেবার ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন করেছিল।
এ মরশুমে আরসিবি অর্থাৎ ব্যাঙ্গালোরের (RCB) প্রথম ম্যাচেই মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে কিং কোহলি (Virat Kohli)। দীর্ঘ ৮৩ দিন পর আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ইডেনে (Eden Gardens) নামছেন কোহলি, কেকেআরের (KKR) বিরুদ্ধে ভালো ট্রাক রেকর্ড নিয়ে নামছেন তিনি। কোহলির ফর্ম নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় থাকবে কেকেআর। কেকেআরের বোলিং নিয়েও একই চিন্তায় আছে কেকেআর। সাকিবের অনুপস্থিতি যে ভাবাচ্ছে কেকেআরকে সেটা স্পষ্ট।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে আরসিবিআর হয়ে বিরাট কোহলি, নট আউট থেকে ৪৯ বলে ৮২ রান করে। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬ টি বাউন্ডারি ও ৫টি ওভার বাউন্ডারি। বৃহস্পতিবার ইডেনের ম্যাচে বিরাটকে আটকানোর সুপরিকল্পনা করবে কেকেআরের বোলিং কোচ ভরত অরুন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে বিরাটকে ম্যাচের প্রথম দিকেই আউট করতে, প্রথম থেকেই টিম সাউদির বলে সুইং দরকার। এছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে সুনীল নারিনকে। নারিনের বিরুদ্ধে বিরাট আইপিএলে বিরাট ৩ বার আউট হয়েছেন। এবং ৯৮ বল খেলে ১০১ রান করেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নারাইনকে দিয়ে বিরাট কে আউট করার অস্ত্র হিসেবে লাগাতে পারে। এ ছাড়া বরুন চক্রবর্তীকে কাজে লাগাতে পারে কেকেআর।
ইডেনে আরসিবির রেকর্ড যেমন ভালো তেমনিই মোলায়েম। এখানে বিরাটের দলের সর্বনিন্ম ৪৯ রানের টোটাল আছে। সূত্রের খবর, ইডেনে বিরাট ১১ টি ম্যাচ খেলে ৩৩২ রান করেছে, একটি করে সেঞ্চুরি ও একটি করে অর্ধসেঞ্চুরির রেকর্ড আছে, এবং আইপিএলে ইডেনে বিরাটের স্ট্রাইকরেট ৪১,৫০। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ইডেনে আইপিএলের সর্বোচ্চ রান ২৩২। এছাড়া ইডেনে দ্বিতীয় ব্যাটিং অর্থাৎ রান তাড়া করে জেতার সংখ্যা ৭৮টি ম্যাচের মধ্যে ৪৭ টি। কেকেআর আইপিএলে ৭৪টি ম্যাচের মধ্যে ৪৫টি ম্যাচ জয়লাভ করেছে, এবং ২৯ টি ম্যাচ হেরে গিয়েছে।
বিরাট ম্যাচের আগে যে কার্যত উন্মাদনা রয়েছে শহর জুড়ে সেটা স্পষ্ট। বুধবার সন্ধ্যাতেই আইপিএলে কেকেআরের বিরুদ্ধে খেলতে কলকাতায় এসেছেন কিং কোহলি। বৃহস্পতিবার ইডেনে ৭.৩০ থেকে এই খেলা শুরু হবে।
বিক্রেতা: দাদা আইপিএলের টিকিট লাগবে?
ক্রেতা: কত?
বিক্রেতা: কোন টিকিট লাগবে?
ক্রেতা: ১০০০ টাকার টিকিট!
বিক্রেতা : ৩৫০০ টাকা।
ক্রেতা: একটু কম হবে না।
বিক্রেতা: না।
তেমন কিছু না, এটা ইডেনে আইপিএল-র টিকিট নিয়ে দরদামের কথোপকথন সিএন ডিজিটালের প্রতিনিধি মণি ভট্টাচার্য ও একজন অসৎ ব্যবসায়ী অর্থাৎ টিকিটের কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির। কোথাও এই টিকিট বিক্রির চেষ্টা চলছে ৩০০০ টাকায়, কোথাও আবার ৩৫০০ টাকা। এই মরশুমের আইপিএলে ইডেনে প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার। কলকতার ঘরের মাঠের বিপক্ষে নামছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। অর্থাৎ বিরাট কোহলির দল, ৮৩ দিন পর ইডেনে নামছেন কিং কোহলি। এছাড়া ২০১৯-এর পর এই ২০২৩, কলকাতা নাইট রাইডার্স ঘরের মাঠে আইপিএল খেলতে নামছে। ফলে স্বাভাবিক কোহলির ঝড়ে এবং নাইট রাইডার্সের ভাবেই মেতে রয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স। এরই মধ্যে ইডেনের টিকিট নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠল একদল অসৎ কারবারীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার ইডেনে খেলার আগে উন্মাদনা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক ভাবেই শহরের ক্রিকেটপ্রেমী জনতার মধ্যে বৃহস্পতিবারের ম্যাচের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। এরই মধ্যে অভিযোগ মাঠের পিছন দিকে ৭০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে কারও কাছে ২০০০ টাকা। আবার কারও কাছে ১৫০০ টাকা।
বুধবার গোটা দিন এভাবেই চললো আইপিএল টিকিটের কালোবাজারি। বৃহস্পতিবার আইপিএলে ইডেনে ৬৮ হাজার আসন যে টইটম্বুর থাকবে নিশ্চিত। কিন্তু এই কালোবাজারি নিয়ে অভিযোগ তুলছে সাধারণ ক্রিকেট প্রেমীরা। এ বিষয়ে নিয়ে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের ফোনে পাওয়া যায়নি।
প্রসূন গুপ্ত: বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক বর্ণময় চরিত্র। একদিকে রাজনীতির দৌড়ঝাঁপ যেমন থাকে আবার এই মানুষটি সকালে একেবারেই অন্য মুডে। প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়ে দলমত নির্বিশেষে চায়ের আড্ডায় বসে পড়েন এবং সেখানে শুনেছি রাজনীতির বিষয় থাকে কম, আড্ডাই বেশি। দিলীপ ঘোষ খুব সিনেমা প্রেমী নয় কিন্তু কখনও হয়তো দেখেও ফেলতে পারেন কোনও ছবি। দিলীপবাবুর রাজনীতির বাইরে প্রিয় বিষয় খেলাধুলা। এক সময়ে যখন তিনি সংঘ প্রচারক ছিলেন তখন শরীরচর্চা করেছেন, লাঠি খেলা থেকে অন্য খেলাতেও যোগ দিয়েছেন। ফুটবল ক্রিকেট তার প্রিয় খেলা হলেও ভারত অলিম্পিকে গেলে টেনশন নিয়ে সেই খেলাও দেখেন, যদি হাতে সময় থাকে। কিন্তু খেলা দেখাটা তাঁর কাছে অবসর যাপনের অন্যতম বিষয়। সম্প্রতি বিশ্বকাপ ফুটবল গেলো। রাতের খেলাগুলিতো দেখেছেন সময়ে পেলে বিকেলের খেলাও দেখতে কসুর করেননি দিলীপ ঘোষ।
এই প্রতিবেদককে একবার বলেছিলেন, আরে সকলেই তো দেখছি কোনও না কোনও দেশের সমর্থক। আমার ভালো লেগেছে এশিয়ার দলগুলিকে। গোড়া হিন্দুত্ববাদী কি তিনি? দিলীপের কথায় তা বিতর্ক ছড়ালেও খেলার বিষয় নিয়ে একেবারে নিরপেক্ষ। জানিয়েছিলেন, দেখবেন আগামী দিনে ইরান জাপান সৌদি আরবরা ফাইনাল রাউন্ডে খেলবে। এদের খেলাতেই নাকি মুগ্ধ ছিলেন দিলীপ ঘোষ।
ক্রিকেটেও দিলীপ ঘোষকে ভারতের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা যায়। তিনি কপিল দেবের ভক্ত। কথায় কথায় বলেন আমি আর কপিল, যখন তখন দুধ খেয়ে হজম করতে পারি।কপিলের মূল শক্তি যে দুধে তা বলতে কসুর করেন না দিলীপ ঘোষ।
এহেন দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার ইডেনে গিয়ছিলেন ভারত আর শ্রীলংকার দ্বিতীয় একদিবসীয় ম্যাচ দেখতে। না মোটেই ক্লাব হাউসের ভিভিআইপি গ্যালারিতে নয় বরং একেবারে আম জনতার মাঝে বসে খেলা উপভোগ করলেন তিনি। ভারতীয় স্পিনার কুলদীপের বোলিংয়ে উচ্ছ্বসিত দিলীপ। কিন্তু পরে ভারত ব্যাট করতে নেমে দ্রুত তিন উইকেট হারানোতে ভয়ানক নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত রাহুল আর হার্দিকের খেলায় যেন স্বস্তি পেলেন তিনি। জয়ের স্ট্রোক নিতেই উচ্ছ্বাসে লাফালেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর পাশে বসে থাকা সবাই হয়তো বিজেপি সমর্থক নয়, কেউ বা তৃণমূলের কিংবা বাম সমর্থক। তারাও দিলীপকে প্রায় জড়িয়ে ধরলেন। মাঠে কি আর রাজনীতি থাকে? এখানে সকলেই ভারতকে ভোট দেবে।