দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা। বৃহস্পতিবার সন্ধে নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় বাজি কারখানার মূল চক্রী মহম্মদ নজরুল ইসলামকে। ঘটনার পর থেকেই ভিন রাজ্যে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে।
জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের পরেই রাজ্য ছাড়ার পরিকল্পনা করে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম। তারপরেই চেন্নাই পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বেআইনি বাজি রাজ্যের বাইরে পাচার করার চেষ্টা করেছিল। যদিও আগেই সেগুলি আটক করে পুলিশ। এবং দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই মূল চক্রীর হদিশ পাওয়া সম্ভব হয়।
মহম্মদ নজরুল ইসলামের ফের রাজ্য ফিরে আসার বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। সেইমতো পরিকল্পনা শুরু হয়। আগে থেকেই কলকাতা বিমানবন্দরে তৈরি ছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। বিমানবন্দরের বাইরে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়।
দিন কয়েক আগে দত্তপুকুরে একটি অবৈধ বাজি কারখানার ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে শাসক দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন সাংসদ সৌগত রায়। দমদমের সাংসদ তথা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় একটি দলীয় সভা থেকে পুলিসের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, 'পুলিশের একাংশের অবহেলা ছিল। পুলিশকে আরও কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।' খড়দহের একটি দলীয় সভায় অংশ নিয়েছিলেন সাংসদ। সেখান থেকেই বিস্ফোরক উক্তি করেন তিনি।
দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক অভিযোগ করছেন। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় সৌগত রায়কে। তিনি বলেন, “দত্তপুকুরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পুলিশের তলার স্তরে নিশ্চয়ই কোনও অবহেলা ছিল। আমরা আশা করি এরপর আর এরকম হবে না। পুলিশ আরও সক্রিয় হবে।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে, তোমরা বার করো। তারপরও কীভাবে এত বড় বাজি কারখানা থেকে গেল? সেখানকার থানার আইসি ও ওসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশকে আরও কড়া ব্যবস্থা করতে হবে।”
দত্তপুকুরের বাজি কারখানার বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল, যে গোটা বাংলার পরিস্থিতি তেতে উঠেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ উগরে পড়ে তাদের ওপর। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশ সব জেনেও চুপ ছিল। এমনকি প্রথমে এলাকার যে সব যুবক বেআইনি বাজি কারখানার প্রতিবাদ করেছিলেন, পুলিশ তাঁদেরকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ” কেউ কেউ বেআইনি কাজ করছেন এবং পুলিশ সেটা চোখ বুজে দেখছে। লোকাল থানায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরা মাক্সিমাম কী করছেন, সেটা আর বললাম না!” পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অর্জুন সিংও। তিনি বলেন, “পুলিশ কেন নেতাদের কথা শুনবে? তারা চাইলে এক মিনিটে বন্ধ করে দিতে পারে বাজি কারখানা।” ঘটনার পরই সাসপেন্ড করা হয় দত্তপুকুর থানার আইসি ও নীলগঞ্জ ফাঁড়ির ওসি।
এই ঘটনার পরই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের এডিজি জাভেদ শামিম। ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। দত্তপুকুরের ঘটনা কার্যত পুলিশের কাছে ‘অ্যালার্মিং’ বলেও চিহ্নিত করেছেন জাভেদ শামিম।
কে এই কেরামত আলি ? রবিবার দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর কারখানার মালিকের খোঁজেই এখন জোর তল্লাশি চলছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ দাবি করেছে, এগরার ঘটনার পর বেআইনি বাজি তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল কেরামতকে। কিন্তু জামিন হয়ে যায়।
গত মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ছ দফা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের ১৮ জেলায়। নির্দেশিকা তৈরির পাশাপাশি পুলিশকে আরও সতর্ক হতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রবিবারের দত্তপুকুর ফের তা ভুল প্রমাণ করল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আলুবোম তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল নীলগঞ্জের এই বাজি কারখানা। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কেরামত তাঁর ব্যবসার বৃদ্ধি করেছিল। প্রথমে একটি বাড়িতে কাজ হত। পরে আরও তিন-চারটি বাড়ি নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের দাবি, এমন বিস্ফোরণ আগেও হয়েছে। তবে, তা চুপিসারেই রয়ে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরক মজুতের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে বম্ব স্কোয়াডও। এখনও ঘটনাস্থলে বিস্ফোরক রয়েছে কীনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।