প্রসূন গুপ্ত: পুজো উৎসব বলতে নানান পুজোর ছবি আমাদের বিভিন্ন মিডিয়াতে উঠে আসে। পুজো পরিক্রমাতে তার তথ্য পাওয়া যায়।কিন্তু শুরুর ইতিহাস শুভ নাকি অশুভ তার হদিস কেউ রাখে কি? ফাটাকেষ্টর পুজো উদ্বোধন করতে একবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এসেছিলেন, জানে কজন? তখন এই রীতি ছিলই না। কালীপুজো মানে দাদাভাইদের পুজো নাকি এলাকার মাস্তানদের তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আসলে সেই রঘুডাকাতের কালীপুজো থেকেই এই এক অদ্ভুত ধারণা জনমানসে আছে। ছন্নছাড়া ক্লাব তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও মাস্তানদের পুজো বিষয়টি পুজোকর্তারা তীব্র বিরোধিতার মধ্যে রেখেছে।
ছন্নছাড়া নামক অদ্ভুত নামের ক্লাবের জন্ম জরুরি অবস্থার সময়ে দমদম পার্কে। এলাকার বেকার নাকি বাউন্ডুলে কিছু তরুণ এই পুজোর জন্ম দেয়। ৪৫ বছর হয়ে গেলো প্রায়।ওই এলাকার সিপিএম কর্মীরা তখন অনেকেই এলাকার বাইরে, আবার যারা রয়েছে তারা কংগ্রেসি ছেলেদের মধ্যে মিশে রয়েছে। ওই বামদের কারুর কারুর মগজ থেকে এই পুজোর জন্ম। পুজোতে কিন্তু দলবাজি প্রাথমিক ভাবে ছিল না। নিজেদের পকেট থেকে যে যা পারে তাই দিয়ে প্রথম দু'বছর পুজো হয়েছিল। এরপর আসে ১৯৭৭। শুরু বাম জমানা। এবারেই খোলস থেকে বেরিয়ে রমরমা পুজো শুরু করে সিপিএমের যুব মহল। রাতারাতি ক্ষুদ্র পুজো বিশাল হয়ে যায়। ব্যবসায়ী থেকে প্রোমোটারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ফুর্তি সহযোগে চলতে থাকে পুজো। নেতৃত্ব দেয় অজু, আর বুচু ( অসম্পূর্ণ নাম)। পুজোকে কেন্দ্র করে চাঁদার নাম কংগ্রেসি ছেলেদের বেধড়ক পেটানো হয়। এলাকায় ত্রাস হয় ওঠে অজু। মদ খেয়ে পেটানোটাই ছিল তার প্রধান কাজ এবং তার সঙ্গে তোলাবাজি। পরে অবিশ্যি অনেকেই এই পুজোতে যোগ দেয় এবং ত্রাস কমে হটাৎই অজু উধাও হয় যাওয়াতে। ২০০৯-এ অজুর মৃতদেহ পাওয়া যায় রাজ্যের বাইরে কোনও এক হিন্দিভাষী স্থানে।
এরপর দিন পাল্টায়। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আপাতত তাদের হাতেই পুজো। এলাকার মানুষের কোনও সমস্যা নেই। চাঁদা তোলা হয় না। তবে স্মৃতিচারণে আশীষ দাস জানালেন, "আমাদের এই পুজো একেবারেই অরাজনৈতিক। ক্লাবঘর তৈরি করেছি আমাদের পয়সাতে।' ছন্নছাড়া আজ আর ছন্নছাড়া নেই বরং সাহিত্যিক অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্তের কবিতা হয় গিয়েছে।
প্রসূন গুপ্তঃ মহাভারতে জেনেছিলাম যে, অর্জুন পুত্র অভিমন্যু কৌরবদের চক্রবূহ প্রবেশের পথ জানতেন কিন্তু বেরোনোর পথ জানতেন না কাজেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। আজকের কলকাতা শহরের বেশ কিছু পুজোতে একই হাল। দক্ষিণ কলকাতায় বিখ্যাত পুজোর মধ্যে অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস কুমার ইত্যাদি হেভিওয়েট পুজোয় প্রবেশ প্রস্থানের পথ পরিস্কার হলেও এক একটি মন্ডপে দুর্গা দর্শনে সময় লাগে বিস্তর। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে প্রায় কাছাকাছি পুজো হলেও তাঁদের এক মন্ডপ থেকে অন্য মন্ডপে যাওয়ার রাস্তা আটকাননি কেউই।
তাদের মধ্যে অবশ্যই প্রতিযোগিতা আছে এবং নিজেদের সেরা সাব্যস্ত করতে কেউ কাউকে জমি ছাড়েন না। কিন্তু ববি বা অরূপ কেউ অন্যের পুজো দেখা আটকান না। রেষারেষি কিন্তু উত্তর কলকাতার বড় পুজোতে নেই। সুজিত বসুর শ্রীভূমির পুজোয় ভীড় সবথেকে বেশি শহর কলকাতায়। যানযটের অভিযোগ মিডিয়ায় নিয়মিত হলেও মঙ্গলবার থেকে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে সুজিত। এখন ভিআইপি রোডের যানজট কন্ট্রোলে। কিন্তু ভীড় ভয়ঙ্কর।
ব্যতিক্রম দমদম পার্কে। দুর্গা পুজোর জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চল। ৬-৭ টি পুজো, তরুন সঙ্ঘ, ভারত চক্র, নবারুন সর্বজনীন, যুবকবৃন্দ, তরুন দল ইত্যাদি। প্রতিটি পুজোর উদ্বোধক সুজিত বসু। কিন্তু রেশারেশি মাত্রাছাড়া। পুজোর ক'দিন দুপুর থেকেই গাড়ি নিয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করা যায় না। তারপর ভিআইপি রোড দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমে যুবকবৃন্দ। প্রবেশ হলে এমন ভাবে প্রস্থানের পথটি রাখা হয়েছে যে অন্য মন্ডপে যাওয়ার পথ বহু সমস্যার। একই ফর্মুলা যশোহর রোড দিয়ে প্রবেশ করলে তরুন সঙ্ঘ। প্রবেশ আছে, দর্শন করুন তারপর বেরিয়ে আসা ফের যশোহর রোডে অর্থাৎ অন্য পুজোয় যেতে গেলে বহু ঘোরাপথে যেতে হবে। সর্বজনীন তো রাস্তা কেটে এমন ব্যবস্থা করেছে যে গাড়ি কেন সাইকেল নিয়ে চলাও দুস্কর। এ ছাড়া ভিআইপি রোড বা যশোহর রোড এতটাই যানজটের সংকটে পড়ছে যে সময় লেগে যাচ্ছে ফিরতে। সবথেকে ভয়ের বিষয় অসুস্থ মানুষ নিয়ে। এম্বুলেন্স ঢোকা বেরোনোর রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ। অথচ কোনও সময়েই এ নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যথা নেই।