স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ মন্ত্রী (পশ্চিমবঙ্গ সরকার): শোনা যাচ্ছিলো ২০২৪-কে কেন্দ্র করে অর্থাৎ আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে বোধহয় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তদের সুবিধা হবে কিন্তু তাঁর দিশা কোথায়? ৭ লক্ষ বাৎসরিক আয় থেকে কর ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ যার মাসিক রোজগার ৫৮ হাজার টাকা, প্রশ্ন ক'জন এই রোজগারের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত এটা তো প্রত্যক্ষ করের বিষয় কিন্তু পরোক্ষ কর তো তাকে দিতেই হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমছে কি? প্রয়োজন তো ক্রেতার, কেনবার ক্ষমতা পাচ্ছে কি?
অর্থনীতির প্রশ্নে এই ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট করই আমাদের অনেক সময়ে বোকা বানিয়ে দেয়। বাজেট অর্থনীতির প্রথম পাঠ, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেকোনও শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন তখনই সার্থক হবে যখন ক্রেতার কেনার ক্ষমতা থাকবে। আমাদের প্রথম সংকট কিন্তু পেট্রোলিয়ামজাত বিষয়। করোনা আবহ থেকে যেভাবে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা ভারতের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বলা যেতে পারে। এই মুহূর্তে শতাধিক টাকার বিনিময়ে লিটারপ্রতি পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে, তথৈবচ ডিজেল এবং গ্যাস। উৎপাদিত দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতেই দাম হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর কারণে। অথচ আজও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর দাম ভারতের তুলনায় কম।
কাজেই মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না। পরিবহণমন্ত্রী হিসাবে এটা আমার মস্ত মাথাব্যথার কারণ। সিগারেটের দাম বাড়লো, পাশাপাশি টিভির বা মোবাইলের দাম কমলো, এই দিয়ে কি পেট ভরবে? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যবের মূল্যহ্রাস হলো কী? এছাড়া ১০০ দিনের কাজের বিষয় কোনও বার্তা কোথায়? ৩৮ হাজার শিক্ষকের নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে ২ কোটি মানুষ কর্মের খোঁজে। কৃষকদের ক্ষেত্রে ছাড়ের বা অর্থলগ্নির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে পরিষ্কার নেই। আপাত দৃষ্টিতে জমজমাট বাজেট মনে হলেও ধোঁয়াশাই রয়ে গেলো বাজেট। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)
ফের দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের (Crude Oil)। বিশ্ববাজারে (World Market) শনিবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও ডব্লিউটিআই ক্রুড অয়েলের দাম রেকর্ডবৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে। WTI অপরিশোধিত তেলের দাম শনিবার ১.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যারেল প্রতি ৭৯.৮৬ ডলারে ট্রেড করছে। অন্যদিকে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ১.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যারেল প্রতি ৮৫.২৮ ডলারে লেনদেন করছে। এই বৃদ্ধির পর দেশের কয়েকটি শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের (Petrol Diesel) দাম বাড়ানো হয়েছে। জেনে নিন, আজ কোন কোন শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম পরিবর্তন হয়েছে।
চার মহানগরের মধ্যে দিল্লিতে প্রতি লিটার পেট্রোল-ডিজেল যথাক্রমে ৯৬.৭২ টাকা ও ৮৯.৬২ টাকা। কলকাতা প্রতি লিটার পেট্রোল ১০৬.০৩ টাকা, ডিজেল ৯২.৭৬ টাকা। চেন্নাইতে পেট্রোল ১০২.৬৩ টাকা, ডিজেল প্রতি লিটার ৯৪.২৪ টাকা। মুম্বইয়ে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১০৬.৩১ টাকা, ডিজেল ৯৪.২৭ টাকা।
এছাড়া অন্যান্য শহরের মধ্যে নয়ডায় প্রতি লিটার পেট্রোল ৯৬.৫৮ টাকা, ডিজেল ৮৯.৭৫ টাকা। গাজিয়াবাদে প্রতি লিটার পেট্রোল ৯৬.৫৮ টাকা, ডিজেল ৮৯.৭৫ টাকা।লখনউতে পেট্রোল ৯৬.৫৭ টাকা, ডিজেল প্রতি লিটার ৮৯.৭৬ টাকা। পাটনায় প্রতি লিটার পেট্রোল ১০৭.২৪ টাকা, ডিজেল ৯৪.০৪ টাকা। পোর্ট ব্লেয়ারে পেট্রোল ৮৪.১০ টাকা, ডিজেল প্রতি লিটার ৭৯.৭৪ টাকা।
নির্মলা সীতারমণের (Nirmala Sitharaman) বাজেট বক্তৃতা (Budget Speech) মোতাবেক অক্টোবরে পেট্রোল-ডিজেলে (Petrol-Diesel) লিটার প্রতি ২ টাকা অতিরিক্ত শুল্ক বসার কথা। কিন্তু উৎসব আবহে সেই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখল মোদী সরকার। নভেম্বরে জ্বালানিতে অতিরিক্ত ২ টাকা করে কর বসবে। সম্প্রতি এক গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। পেট্রোল-ডিজেলে অতিরিক্ত কর ধার্য হবে আগামী পয়লা নভেম্বর। প্রসঙ্গত, গত বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা জানান, ইথানল ও বায়ো-ডিজেলহীন পেট্রোল-ডিজেলে ১ অক্টোবর থেকে ২ টাকা অতিরিক্ত অন্তঃশুল্ক ধার্য হবে।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক দেশ। আখের নির্যাস অর্থাৎ ইথানল ১০ শতাংশ হারে পেট্রলে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে একদিকে আমদানির উপর নির্ভরতা কমে, তেমনই কৃষকদেরও বাড়তি আয়ের পথ খোলে। এদিকে, একটা সময় লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছিল জ্বালানির দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা পরবর্তী প্রভাবে সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গিয়েছে এই দুই পরিবহণ জ্বালানির দাম।
কিন্তু গত কয়েকমাস স্থিতাবস্থা বজায় রেখে একজায়গায় দাঁড়িয়ে পেট্রোল এবং ডিজেলের মূল্য। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জ্বালানি প্রসঙ্গে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে সম্প্রতি মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।