সৌমেন সুর: আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। কারণ রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক। কবি স্রষ্টার দৃষ্টি নিয়ে যা তিনি অনেক আগেই দেখে গিয়েছিলেন, আজ এতদিন পরে তা অবিশ্বাস্য ভাবে সত্য হয়ে উঠেছে। কবি বলেছেন, নিজেকে প্রাসঙ্গিক করো অন্য মানুষে, মানুষ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে বৃক্ষলতায়, নদী-পর্বত সমুদ্রে, গ্রহে-নক্ষত্রে, মহাবিশ্বে। মনে রেখো, ক্ষুদ্র অস্তিত্ব মানুষের জন্য নয়। তাই মহৎ হয়ে বাঁচো। আমরা যদি ভয়ের প্রতিক্রিয়ায় দুবেলা মরার আগে ভয়েই মরতে থাকি, তাহলে কবি বলেছেন, 'দুঃখ যদি না পাবে তো/ দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে?'
রবীন্দ্রনাথ যদি মহাপর্বত হন, তাহলে তাকে কতটুকু মাপতে পেরেছি? কজনই বা তার চূড়ায় উঠতে পেরেছি? রবীন্দ্রনাথ কখনও পুরোনো হবেন না। কারণ তিনি নিজেকে কখনও পুরনো হতে দেননি। 'শেষের কবিতা' উপন্যাসে নিজেই বলেছেন কবিদের পাঁচ বছরের বেশি বাঁচা উচিত নয়। কেন নয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, আবার নিজেকে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- কবি কিভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সারা জীবন ধরে, এবং জীবনের অনেক পরেও। এমন একদিন আসতে পারে যেদিন কবিতার রবীন্দ্রনাথ, নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রসংগীতের রবীন্দ্রনাথকে মানুষ আলাদা আলাদা স্রষ্টা বলে ভাববে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থাকবেন বহু ভাবে ছড়িয়ে। আমাদের কবি জীবনের প্রতিটা স্তরে কতভাবে কত কিছু চিন্তা করেছেন, যেমন শিক্ষার কত সমস্যার কথা, সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন তার ঋষিকল্প অভিজ্ঞতার প্রজ্ঞায়। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা গল্পের অনেক বিবর্তন ঘটেছে। গল্পের রূপান্তর ঘটে গেছে অনেক, তবু আজও বাংলা ভাষায় এমন গল্প লেখা হয়। যা রবীন্দ্রযুগে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।
রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের কথা ভাবেননি। শিক্ষিত বাঙালি জীবনের রবীন্দ্রনাথ আজ এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যে ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছাই হোক, প্রতিদিন তাঁকে আমাদের স্মরণ করতে হয়। আসলে প্রতিদিন তার জন্ম। কোনদিনও তার মৃত্যু নেই। একটা ঠাকুরের বেদী চিরকাল মাটির সঙ্গে থাকবে গাঁথা, সে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। সবার প্রিয় রবি ঠাকুর। তাই পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ, দুটো তারিখই সমান। অমর, অনন্ত।
১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই, এক লহমায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র (Bengali Movie) জগৎ। প্রয়াত হয়েছিলেন টলিউড সিনেমা জগতের উজ্জ্বল তারকা অভিনেত্রী মহুয়া রায় চৌধুরী (Mahua Roy Chowdhury)। তখন অভিনেত্রীর বয়স মাত্র ২৬ বছর। দীর্ঘ ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। শোনা গিয়েছিল, বাড়িতে স্টোভ ফেটে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। যদিও আজও তাঁর মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য দানা বেঁধে রয়েছে।
অনেকেই এই ঘটনার জন্য অভিনেত্রীর জীবনযাপনকে দায়ী করতেন। অভিনেত্রী প্রায়ই নাকি ক্লাবে যেতেন। তেমনই একদিন ক্লাব থেকে ফিরে স্টোভ জ্বালাতে গিয়েই নাকি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আবার ইন্ডাস্ট্রিতে মহুয়ার সহ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বলতেন, স্বামী তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে নাকি অভিনেত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। দুজনের মধ্যে নাকি প্রায়ই ঝামেলা-অশান্তি লেগে থাকত। কিন্তু ছোট পুত্রসন্তান থাকায় নাকি অভিনেত্রী বিচ্ছেদ করতে পারেননি।
হাসপাতালের বিছানায় অর্ধদগ্ধ অবস্থায় শুয়ে নাকি অভিনেত্রী নিজের স্বামীকে বাঁচাতেই চেয়েছেন। বারবার নাকি সকলের কাছে তিনি অনুরোধ করছিলেন, তাঁর ছেলেকে যেন দেখা হয়। তবে ময়নাতদন্তেও নাকি বেশ অসঙ্গতি ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকের নাকি বলেছিলেন, অভিনেত্রীর সারা শরীর থেকে কেরোসিনের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। অথচ ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছিল, স্টোভ একেবারে অক্ষত রয়েছে। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পরে সেই খবরও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। তাই মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যু এখনও কুয়াশায় ঢাকা রয়ে গিয়েছে।
২০২০ সালের ১৪ জুনের দুপুর অভিঘাত হয়ে নেমে এসেছিল নেটিজেনদের দৈনন্দিনে। সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়ায় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput) আর নেই। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। সাফল্যের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েও তিনি কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন সেই প্রশ্নে ছয়লাপ হয়েছিল নেট দুনিয়া। অভিনেতার পরিবার অভিযোগ তুলেছিল, সুশান্তের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাঁর মৃত্যুর পিছনে প্ররোচনা দিয়েছিলেন কেউ। নেট মাধ্যমে সুশান্তের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে লম্বা ট্রায়াল চলেছিল।
অভিনেতার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত হয়েছিল। তবে কোনও প্ররোচনার প্রমান না পেয়ে তদন্তকারী সংস্থা সেই মামলায় ইতি টানে। তবে সুশান্তের পরিবার এবং নেটিজেনরা আজও সেই দিন ভুলতে পারেনি। প্রয়াত অভিনেতার তিন বছরের মৃত্যুবার্ষিকীতেও দিনের আলোয় আঁধার নেমেছে নেটিজেনদের মনে। এক নেটিজেন লিখেছেন, 'সুশান্তের প্রতি অবিচারের তিন বছর। ১৪ জুন কালো দিবস। প্রকৃত হিরো সুশান্ত তোমাকে মনে পড়ছে।'
অন্যদিকে সুশান্তের দিদি শ্বেতা সিং রাজপুত আজকের দিনে ভাইকে মনে করছেন। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, 'ভালোবাসি ভাই এবং তোমার মেধাকে আমার স্যালুট। তোমাকে প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে। তবে আমি জানি তুমি এখন আমারই অংশ।'
২০২২ সালের ৩১ মে সারা দেশবাসীর জন্য এক অভিশপ্ত দিন ছিল। গতবছরের এদিনই সবাইকে ছেড়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কেকে (KK)। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর অনুরাগীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, তিনি আর এই দুনিয়ায় নেই। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী (Death Anniversary)।
কলকাতাবাসীদের কাছে তাঁর মৃত্যু আরও বেশি বেদনাদায়ক, কারণ তিনি এই 'সিটি অফ জয়'-এ এসেই তাঁর শেষ গান গেয়ে গিয়েছেন। তাঁর সেই মন জুড়নো হাসি শেষ দেখেছিলেন এই শহরবাসীই। ফলে তাঁর চলে যাওয়া যে একেবারেই মেনে নিতে পারে না এই শহর। আজকের দিনে সারা দেশজুড়ে অনুরাগীরা তাঁর কথা স্মরণ করেছেন। কেকে-এর অনুরাগীদের মধ্যে আরও একজন হলেন বাঙালি সংগীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীও। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রামে কেকে-এর কথা স্মরণ করে ছবি শেয়ার করেছেন।
কৃষ্ণকুমার কুন্নাথের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো বিনোদন জগত। এরপর বছর ঘুরতেই অর্থাৎ আজ, তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করেছেন একাধিক সংগীতশিল্পী। পাপন, শান থেকে শুরু করে ইমন, জিৎ গাঙ্গুলি, অনুপম সবাই তাঁর কথা স্মরণ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট শেয়ার করেছেন। ইমন ইনস্টাগ্রামে কেকে-র ছবি শেয়ার করে লিখেছেন 'আমরা তোমাকে ভালোবাসি'। আর ছবিতে লেখা, 'ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল।'
'লিভ লাইফ টু দা ফুলেস্ট' এই শব্দবন্ধে বিশ্বাস করতেন অভিনেতা ঋষি কাপুর (Rishi Kapoor)। 'কাপুর এন্ড সন্স' সিনেমায় বাড়ির বৃদ্ধ-কর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঋষি। সেই সিনেমায় দেখা গিয়েছিল মৃত্যু পথযাত্রী হয়েও কিভাবে মজায়-আড্ডায় জীবনের শেষ ক'দিন বাঁচতে চেয়েছিলেন ঋষি অভিনীত চরিত্রটি। বাস্তব জীবনেও নাকি একইরকম ছিলেন অভিনেতা। তাঁর স্ত্রী নিতু কাপুর ঋষির জীবনের শেষ কয়েকদিনের কথা তুলে ধরেছেন একাধিক জায়গায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিনেতা ঋষি কাপুরকে ক্যামেরার সামনে রেগে যেতে দেখা যেত ঠিকই, কিন্তু সকলে জানতেন তিনি খানিকটা নারকেলের মতো। বাইরে যতই কঠিন, তাঁর মন ঠিক ততটাই নরম। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত মুখে রেখেছিলেন চওড়া হাসি। যৌবনকালেও একইরকম ছিলেন ঋষি। এমনকি মনের কোণে অবসাদ ঢেকে রেখেছিলেন তাঁর ভুবন ভোলানো হাসিতেই।
বলিউডের সফল অভিনেতা ঋষি কাপুর। সাফল্য যেমন পেয়েছিলেন, বেশ কয়েকটি ছবি তাঁকে হতাশও করেছিল। তার মধ্যেই একটি ছবি 'কর্জ।' ঋষি কাপুর অভিনীত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালের ১১ জুন। একই মাসে ২০ জুন মুক্তি পেয়েছিল বিনোদ খান্না, ফিরোজ খান এবং জিনাত আমান অভিনীত 'কুরবানী'। ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে এত হইচই শুরু হয়েছিল যে,'কর্জ' ছবিটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। এরপরেই অবসাদ গ্রাস করে অভিনেতাকে।
দীর্ঘ দুই বছর লিউকেমিয়ার মতো মারণ রোগে ভুগছিলেন অভিনেতা। ২০১৮ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল প্রয়াত হন অভিনেতা ঋষি কাপুর।