ভূপতিনগর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ধৃত মনোব্রত জানা এবং বলাইচরণ মাইতিকে ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ NIA-র বিশেষ আদালতের। সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য তাজা বোমা তৈরি ও বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ ছিল এই দু'জনের বিরুদ্ধে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার ধৃত ২ জনকে পেশ করা হয় আদালতে। এরপরেই আদালতের নির্দেশে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ আদালতের।
প্রসঙ্গত, ২০২২-র ডিসেম্বরে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এক তৃণমূল নেতা-সহ মৃত্যু হয় ৩ জনের। মৃত্যু হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না-সহ তাঁর ভাই দেবকুমার মান্না ও বিশ্বজিৎ গায়েনের। ঘটনার পর পোড়া দেহগুলি রাজকুমার মান্নার বাড়ির অনতিদূরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। দানা বেঁধেছিল রহস্য। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়াও এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন অনিন্দ্যসুন্দর দাস নামে এক আইনজীবী। ঘটনার ৩ মাস পর ভুপতিনগর কাণ্ডে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরবর্তীতে চলতি মাসেই বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে গিয়ে গ্রামবাসীর হাতে আক্রান্ত হয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। হামলা হয় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপরেও। যদিও শেষমেশ এতকিছুর পরেও শেষরক্ষা হয়নি। গ্রেফতার হয় বিস্ফোরণ কাণ্ডের ২ মূল অভিযুক্ত মনোব্রত জানা এবং বলাইচরণ মাইতি।
রাত পেরোলেই রাজ্যে শুরু প্রথম দফার নির্বাচন। আর এই নির্বাচনী আবহে যেভাবে শাসক ঘনিষ্ট নেতা-কর্মীদের নাম, দুর্নীতি, অপরাধ জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে, তাতে আখেরে মুখ পুড়ছে শাসকদলেরই। মত ওয়াকিবহাল মহলের। যদিও এর প্রভাব ভোটবাক্সে আদৌ পড়বে কিনা বা পড়লেও তা কতটা এখন সেটাই দেখার।
স্কুলের ভিতরে দিনের পর দিন ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন অসহায় দৃষ্টিহীন নাবালিকাদের উপর। শহরের উপকণ্ঠে দৃষ্টিহীন নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল হরিদেবপুরের একটি হোমের। নির্যাতনের শিকার হওয়া ২ নাবালিকার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছিল হোমের ৩ সদস্য। শনিবার আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে ছিল এই মামলার শুনানি। গতবারের শুনানিতে ৩৭৬ ধারা এবং পকসো ৬ ধারায় মামলা হয়েছিল ধৃতদের বিরুদ্ধে। শনিবার ধৃতদের ফের পেশ করা হয় বিচারক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের এজলাসে। শুনানিতে ধৃত ৩ ব্যক্তির ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিসি হেফাজতের আবেদন জানান সরকারি আইনজীবী শিবনাথ অধিকারী। তবে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, ধৃতরা এই বিষয়ে কোনোভাবেই জড়িত নয়। বিষয়টি প্রিন্সিপালকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিষয়টি গোপন করা হয়।
এদিন আইনজীবী শিবনাথ অধিকারীর আরও দাবি, নির্যাতিতা নাবালিকারা বর্তমানে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নির্যাতিতাদের জবানবন্দি ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণের সত্যতা উপস্থাপিত করা যাবে না। অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্তদের জামিন দিলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা রয়েছে। তাই সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করেই ধৃতদের পুলিসি হেফাজতের আবেদন সরকারি আইনজীবীর।
বাদী-বিবাদী পক্ষের মতামতের উপর ভিত্তি করে আগামী দিনে হয়তো আদালতের তরফে মিলবে সুবিচার। দোষীরা পাবে শাস্তি। কিন্ত অসহায় দৃষ্টিহীন নির্যাতিতারা কি ভুলতে পারবে সেই বিভীষিকাময় দিনগুলি? বাস্তবে তাদের প্রতি এই সমাজের কি নেই কোনও দায়িত্ব? প্রশ্নটা থেকেই যায়।
বিমান সেবিকা (Air Hostess) খুনে অভিযুক্ত ছিল এক ব্যক্তি, তাকে লক আপে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আজ, শুক্রবার এই অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেছে বলে প্রকাশ্যে এসেছে। কিছুদিন আগেই এক বিমান সেবিকা খুনে অভিযুক্ত হয়েছিল ৪০ বছর বয়সী বিক্রম আটওয়াল। সূত্রের খবর, এদিন সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
সূত্রের খবর, গত রবিবার প্রশিক্ষণরত বিমানসেবিকা রুপাল ওগ্রেকে আন্ধেরির একটি আবাসনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর পর তাঁর আবাসনের এক সাফাইকর্মী বিক্রম আটওয়ালকে তাঁকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার এই হত্যাকাণ্ডে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে অপরাধের কথা স্বীকার করেছিল বলেই জানিয়েছে পুলিস। এর পর তাকে পুলিসি লক আপে রাখা হলে শুক্রবার সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে অভিযুক্ত, বিক্রম আটওয়াল তার প্যান্ট ব্যবহার করে আত্মঘাতী হয়েছে।
কিন্তু পুলিসি নিরাপত্তার মধ্যে থেকেও কীভাবে অভিযুক্ত যুবক আত্মহত্যা করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সোমবার গ্রেফতারির পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল পুলিস। হেফাজতে থাকাকালীন বৃহস্পতিবার রাতে আটওয়াল আত্মহত্যা করে বলে পুলিস জানিয়েছে। তবে আটওয়াল কেন আত্মহত্যার পথকে বেছে নিল, তা খতিয়ে দেখতে সেলের অন্য বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিস।
২০২২ থেকেই অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী (Nawazuddin Siddique) ও তাঁর স্ত্রী আলিয়ার (Aaliya Siddique) সম্পর্কে ছেদ পড়েছে। তাঁদের দাম্পত্য কলহের কথা জানতে পেরেছে নেট দুনিয়া। তিক্ততার জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। গার্হস্থ্য হিংসা থেকে প্রতারণা, অভিনেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে স্ত্রী আলিয়া। নওয়াজউদ্দিনের মা, আলিয়ার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সন্তানের পিতৃত্ব পরীক্ষার আরজি নিয়ে আদালতে গিয়েছেন আলিয়া। অন্যদিকে আলিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন নওয়াজ। তাঁদের সন্তান কার কাছে থাকবে সেই নিয়ে মামলা চলছে।
সন্তানের হেফাজত পেতে চাইছেন নওয়াজউদ্দিন। কিন্তু আলিয়ার দাবি, তাঁর সন্তানরা তাদের বাবার কাছে থাকতে চায় না। সন্তানরা পিতার স্নেহ পায়নি কোনওদিন। আলিয়া আরও বলেন, 'তাঁর সন্তান ইয়ানি ও শোরা জন্ম থেকে তাঁর কাছেই থাকছে। ভবিষ্যতেও আলিয়ার কাছেই সন্তানরা থাকতে চায় বলে দাবি করেছেন তিনি।' এই টালবাহানার মাঝে বম্বে আদালত নওয়াজ ও আলিয়ার সন্তানদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের সন্তানকে দুবাই পাঠাতে হবে। সেখানেই পড়াশোনা করছে নওয়াজ ও আলিয়ার সন্তান ইয়ানি ও শোরা। তবে তারা শেষ পর্যন্ত কার হেফাজতে থাকে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। জুন মাসে সন্তানের হেফাজতের শুনানি হবে।
নিয়োগ-কাণ্ডের (Education Scam) মূল চক্রী কুন্তল ঘোষ। এভাবে সবাইকে ডাইভার্ট করে নিজের টাকা সরাচ্ছে কুন্তল (Kuntal Ghosh)। অন্য রাজ্যে টাকা পাঠাচ্ছে। ইডি হেফাজতে (ED Custody) থাকা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। এদিন সিজিও থেকে বেরনোর মুখে হুগলির বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা (TMC Leader) বলেন, 'এই কাণ্ডের মেইন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। ও এরকম করে সবাইকে ডাইভার্ট করছে। মিথ্যা অভিযোগ করে ডাইভার্ট করছে। আর ওর টাকাগুলো এভাবে সাইড করছে, অন্য রাজ্যে পাঠাচ্ছে।'
হুগলি জেলা পরিষদের এই কর্মাধ্যক্ষর দাবি, 'আমি কোনওকিছুর সঙ্গে জড়িত নই। আগামি দিনে প্রমাণ হবে। কুন্তলের লোকজন অন্য রাজ্যে টাকা সরাচ্ছে। এজেন্টদের ভয় দেখাচ্ছে। কয়েকশো এজেন্টের থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে ও। আমার সবকিছু লিগাল। আগামি দিনে সব প্রমাণ হবে।'
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, 'নিয়োগ-কাণ্ডে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোট ৬ বার ইডি ডেকেছে। সপ্তমবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এই ছ'বার সংবাদ মাধ্যম তাঁকে নানা প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা। কিন্তু গ্রেফতার হতেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন তিনি। বলাগড়ের এই তৃণমূল নেতা দাবি করলেন মাস্টারমাইন্ড কুন্তল। তিনি নির্দোষ বরং যারা জেলে বসে রয়েছেন, তাঁরা ফাসাচ্ছেন শান্তনুকে। হঠাৎ কেন কুন্তলকে কাঠগড়ায় তুলছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়?'
যদিও এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডি দাবি করেছে নিয়োগ-কাণ্ডে কুন্তল এবং শান্তনু যৌথভাবে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলেছেন। এঁরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রীয় সংস্থার অনুমান, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি ১১১ কোটির নয় বরং ৩৫০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি। ইতিমধ্যে তদন্তে শান্তনুর নামে ৫১ কাটা জমি, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। একজন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীর কাছে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? ইডির জবাব, 'বেআইনি নিয়োগের মাধ্যমে এসেছে এই টাকা।' আদালতে তারা জানিয়েছে, 'তদন্তে এমন কিছু তথ্য আসছে, যার মাধ্যমে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ছিল। যারা চাকরি পেয়েছে তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড মোবাইলে মিলেছে। এগুলো কী করছিল মোবাইলে?'
গরু পাচার-কাণ্ডে (Cow Smuggling case) ইডির হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলকে শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। তিন দিনের ইডি হেফাজত (ED Custody) শেষে এদিন রউস অ্যাভেনিউ আদালতে তোলা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে। আরও ১১ দিন ইডি হেফাজত মঞ্জুর আদালতের। এদিন শুনানি শেষে রায়দান কিছুক্ষণ স্থগিত রাখে আদালত। সেই সময় অনুব্রতর (Anubrata Mondal) আইনজীবী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে ১১ দিনের হেফাজতের আবেদন জানানো হলে, আমরা বিরোধিতা করি। এই গ্রেফতারি বেআইনি বলে সওয়াল করি। শেষ ৩ দিনে তদন্ত সেভাবে এগোয়নি, তাহলে আরও ১১ দিনের হেফাজতের কী দরকার? ৬০ দিনের বেশি গ্রেফতারি হয়ে গিয়েছে।'
জানা গিয়েছে অনুব্রতর তরফে আইনজীবী অভিযোগ করেন, 'আমরা যখন মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, তখন সিসিটিভিতে নজরদারি চলছে। ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলা যাবে না? তিন দিনে জেরায় কিছু পাওয়া যায়নি। তিন দিনে ২ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে।'
এই সওয়ালের পর বিচারকের নির্দেশ,'যখন আইনজীবীরা দেখা করতে যাবেন, তখন সিসিটিভি রাখা যাবে না।' পাশাপাশি অনুব্রতর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন বিচারক। তিনি জানতে চান আপনি কিছু বলবেন? অনুব্রত বলেন, 'না।' বিচারক জানতে চান আপনি হিন্দি ও ইংলিশ জানেন? হিন্দিতে বিচারকের কথা বুঝতে না পারায় ইডি বাঙালি অফিসারের সাহায্য নেয়। তখন অনুব্রত বলেন, 'আমি হিন্দি-ইংলিশ জানি না।' বিচারক বলেন, 'বাংলা জানেন?' অনুব্রত বলেন, 'হ্যাঁ জানি'।
বৃহস্পতিবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে (CBI Court) পেশ করা হয়েছিল নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Scam) ধৃত তিন অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ,তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি ঘোষকে। ৯ মার্চ পর্যন্ত এঁদের জেল হেফাজতের (Jail Custody) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এদিন শুনানিতে সকলেরই জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার আপত্তি মেনে খারিজ হয় সেই আবেদন।
যদিও শুনানি চলাকালীন বিচারক সিবিআইকে সিডি দেখিয়ে জনৈক মিস্টার হোসেনের নামোল্লেখ করে প্রশ্ন করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'দু'জনের নাম উঠে এসেছে। সেখানে মিস্টার হোসেন নামে একজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। যিনি বেআইনিভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। সিডিতে নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি কেনো?'
এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, উনি (পড়ুন জনৈক হোসেন) আমাদের প্রাইম উইটনেস। ও আমাদের বলছে, সেইমতো আমরা কাজ করছি।' এরপরেই বিচারক প্রশ্ন করেন, 'এই ব্যক্তির জবানবন্দি কোথায়?' সিবিআই আইনজীবী জানান, সেটা রেকর্ড করার কাজ চলছে।' বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, 'যদি পরে রাজি না হয়?'
এদিকে, কুন্তল, নীলাদ্রি এবং তাপসের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানায়,'এদের আইনজীবীরা স্বীকার করছেন যে ওরা এজেন্ট। এঁরা তদন্তে সহযোগিতা করেনি। মুখোমুখি জেরায় বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। যারা এঁদের সঙ্গে সংযুক্ত। এঁরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারে। ষড়যন্ত্র এতটাই বড় যে, আমাদের তদন্তকারীর এতটা কম্পিটেন্ট যে কোনও প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করছে না। পনিরের কথা বলা হচ্ছে, ভ্যারাইটি অফ পনিরটাই খুঁজছে তদন্তকারীরা।'
এদিন কোর্টের বাইরে তাপস-কুন্তলের আইনজীবী জানান, 'বন্ধ দরজার ভিতরে সিবিআই কী করেছে আমরা জানি না। আমার দুই মক্কেলকে মাত্র এক ঘণ্টা জেরা করেছে। কিন্তু কোর্ট বারবার একটাই প্রশ্ন করছে, প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিটা কোথায়?' পাশাপাশি তাপস মণ্ডলের আইনজীবী জানান, 'সিবিআই এফআইআর-এ আমার মক্কেলের নাম নেই। কুন্তল ঘোষের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সিবিআইয়ের নোটিশের জবাবে আমরা তদন্তে সহযোগিতা করতে ছয় বার কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে গিয়েছি।'
ইডি হেফাজত (ED Custody) শেষে এবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে গত মাসে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। জানা গিয়েছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেকোনও দিন জেলে (Jail) গিয়ে তাঁকে জেরা করতে পারবে ইডি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সংস্থার ফরওয়ার্ডিং লেটারে উল্লেখ, কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) টলিউডে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। শর্ট ফিল্ম-সহ গান রেকর্ডিংয়ের কাজে এই দুর্নীতির টাকা ব্যবহার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে ইডি।
এমনকি, ইডি জেরায় যুব তৃণমূল নেতা স্বীকার করেছেন নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ১৯ কোটি পৌঁছে গিয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে। জানা গিয়েছে, ফরেন্সিক মেথড ব্যবহার করে ইনভেস্টিগেশন করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে জামিনের আবেদন করেন কুন্তল ঘোষ।
তাঁর আবেদন, 'আমি কিছু বলতে চাই। আমি সর্বত্রভাবে ইডিকে সাহায্য করেছি। আমার কাছে কিছু পায়নি ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থা বলতে বাধ্য হয়েছে আমার কাছে কিছু নেই। আমার বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন, আমার ৫ বছরের ছেলে ৪ বছরের মেয়ে আছে। আমাকে হুজুর জামিন দেওয়া হোক।'
গরু পাচার মামলায় (Cow Smuggling) সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের আরও ১৪ দিনের জেল হেফাজত। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের (Jail Custody) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে, গরু পাচার মামলায় আদালতে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে সিবিআই (CBI)। কেন্দ্রীয় সংস্থা শুক্রবার আদালতে আরও ১১৫টি নতুন ভুয়ো অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মাত্র ২ দিনেই এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই দাবি আদালতেও করেছে সিবিআই।
উল্লেখ্য, যাদের নামে এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এই ১৬ জনের মধ্যে আবার ১২ জন টিপ সই করেন, এমনটাই সিবিআই সূত্রে খবর। এদিকে, শুক্রবার আদালতে জামিনের আবেদন করেনি অনুব্রত মণ্ডল। অন্যদিকে গরু পাচার মামলায় ইডি, আসানসোল জেলের মধ্যেই অনুব্রতকে গ্রেফতারের পরে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট তাঁকে দিল্লিতে হাজির করানোর পরোয়ানা জারি করেছিল। ওই পরোয়ানার বিরুদ্ধে এবং রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগেই অনুব্রত দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছেন।
ইডি তাঁকে গ্রেফতারের পরে কারণ জানিয়ে কোনও নথি দেয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে মামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে চারটি মামলায় ইডি-র বক্তব্য জানতে চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অনুপ জয়রাম ভাম্বানি নোটিস জারি করেছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এবিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। তার মধ্যেই অনুব্রতের জেল হেফাজতের মেয়াদ ১৪ দিন বাড়ল।
১৪ দিনের জেল হেফাজত (Jail Custody) শেষে বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতে (Asansol Court) পেশ করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। ফের তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি অবধি তাঁকে আসানসোল জেলেই থাকতে হবে। এমনকি, বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে (Anubrata Mondal) সিবিআই জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবে। এই নির্দেশ দিয়েছে আসানসোল আদালত। এদিন অনুব্রতর পাশাপাশি সায়গল হোসেনকে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয়েছে। সায়গলের তরফে আজকে জামিনের আবেদন করা হয়নি।
যদিও সায়গল বিচারপতির কাছে আবেদন করেন, দিল্লিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তাই ভার্চুয়ালি না করে ফিজিক্যালি পেশ করা হোক। বিচারক সায়গলকে বলেন, 'এভাবে মুখের আবেদন অর্ডার হয় না। আপনার আইনজীবী যদি আবেদন করে, তাঁর ভিত্তিতে শুনানি হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে।'
এদিকে, অনুব্রত মামলাতেও জামিনের আবেদন করা হয়নি। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁকেও জেল হেফাজতের নির্দেশ। এদিন আবার অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে সিবিআই। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। যে কোনওদিন সকাল দশটা-বিকেল পাঁচটার মধ্যে জেলে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
সিবিআইয়ের সওয়াল, 'নতুন কিছু তথ্য এবং নথি হতে এসেছে সিবিআইয়ের। তার ভিত্তিতে অনুব্রতকে জেরা করতে চেয়েছে সিবিআই।' এদিকে এদিন আসানসোল কোর্ট চত্বরে আজ কোনও অনুব্রত অনুগামীর দেখা মেলেনি। এতদিন পর্যন্ত অনুব্রতকে যেদিন আদালতে পেশ করা হয়েছে, সেই দিনই বীরভূম থেকে প্রচুর তৃণমূল নেতা অনুগামীদের জমায়েত হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম বৃহস্পতিবার।
বগটুই হত্যাকাণ্ডের (Bogtui Murder) মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যু। সিবিআই হেফাজতে (CBI Custody) থাকাকালীন মৃত্যু লালনের, এমনটাই কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর। তাদের দাবি, 'আত্মহত্যা করেছেন লালন।' বীরভূমে (Birbhum) সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে মৃত্যু এই অভিযুক্তর। কীভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় বগটুই-কাণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার অভিযুক্তর মৃত্যু? সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ৪ ডিসেম্বর ৬ দিনের সিবিআই হেফাজতে ছিলেন লালন। ১০ ডিসেম্বর তাঁকে ফের কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে ৩ দিনের জন্য পাঠানো হয়। সেই হেফাজতে থাকাকালীন এই মৃত্যু। যদিও পরিবারের অভিযোগ মারধরের কারণে মৃত্যু হয়েছে লালন শেখের। সিবিআইয়ের শাস্তির দাবিতে সরব তাঁরা। হাইকোর্টের নির্দেশেই এই মামলার তদন্তভার পায় সিবিআই।
২১ মার্চ খুন হয়েছিলেন বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপুরপ্রধান ভাদু শেখ। তিনি ঘটনাচক্রে বগটুই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বোমা মেরে তাঁকে খুন করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর সে রাতেই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে পরপর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় ১০ জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছিল দমকল এবং জেলা পুলিস। এই ঘটনায় নাম জড়ায় ভাদু শেখ ঘনিষ্ঠ লালন শেখের। বগটুই-কাণ্ডের পর থেকে পলাতক ছিলেন লালন শেখ। বগটুই হত্যাকাণ্ডের ৯ মাস পর ঝাড়খণ্ডের পাকুর থেকে ৩ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। যদিও গ্রেফতারির পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে লালন দাবি করেছিলেন, ভাদু খুনের পর তিনি রামপুরহাট হাসপাতালে ছিলেন। ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Recruitment Scam) এবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। অর্থাৎ পুজোয় জেলেই কাটাতে হবে তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ইন কমান্ডকে। তবে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে অশোক সাহা, এসপি সিনহা এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি নিয়োগ মামলায় এই চার জনের পুজো কাটবে গারদের পিছনে। বুধবার আলিপুর আদালতে (Alipur Court) তুলে পার্থ- কল্যাণময়ের আর হেফাজত দাবি করেনি সিবিআই (CBI)। তবে জেলে যাতে তাঁদের জেরা করা যায়, কোর্টকে আবেদন করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই আবেদন গ্রাহ্য করে এবং পার্থ-সহ অন্যদের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত।
যদিও এদিন জামিনের আবেদন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, দেশ ছেড়ে যাবেন না আমার মক্কেল। অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার দরকার এবং অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয় কাজ করছে। তাই জামিন দেওয়া হোক। পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবীর সওয়াল, 'মন্ত্রী মানে দফতরের সব কিছুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকবে? রেল লাইনে গণ্ডগোল হলে কি রেলমন্ত্রী যুক্ত হয়? রাস্তায় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কি পরিবহনমন্ত্রী যুক্ত? সিবিআইয়ের আবেদন শিশুসুলভ।
এদিকে, সিবিআই আইনজীবী বলেন, কারও জামিনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৯ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী ছিলেন। অযথা আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক কুমার সাহা মামলায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন। সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে এদিন কিছুক্ষণ নির্দেশ স্থগিত রাখে আদালত। অবশেষে বিকেলের দিকে এই চার জনকেই ৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি।
সিবিআই হেফাজতে (CBI Custody) থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Parth Chatterjee) ৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। সেখানে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন এবং নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের (Recruitment Scam) দায় এড়ান তিনি। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের অন্ধ বিশ্বাস করেছিলাম। সিবিআই জেরায় এই মন্তব্য করেছেন তিনি। সূত্রের খবর তিনি জানান, শিক্ষা দফতর (Eductaion Scam) থেকে যে ফাইল আসতো শুধুমাত্র সেই ফাইলে সই করতাম। তাই দফতরের করা কোনও দুর্নীতির দায়ভার নিতে তিনি রাজি নয়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই স্বীকারোক্তির পরেই শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই। প্রয়োজনে প্রাক্তন মন্ত্রীর মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা।
এদিকে, নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ-অর্পিতা গ্রেফতারের প্রায় ৬০ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেবে ইডি। জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি এবং অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট মিলিয়ে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হতে পারে। সোমবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চার্জশিট জমা দেবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ইতিমধ্যে ২২ জুলাই দিনভর পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। এই তদন্তে অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫০ কোটি টাকা নগদ-সহ সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা। গত প্রায় দু'মাস তদন্ত চালিয়ে পার্থ এবং অর্পিতার একাধিক সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি। কয়েক কোটি টাকার এলআইসি পেপার বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় এই সম্পত্তি কিনা খতিয়ে দেখেই চার্জশিট জমা ইডির।
অনুনয়-বিনয় সার। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Recruitment Scam) ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। একইভাবে ধৃত প্রাক্তন পর্ষদকর্তা কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়েরও ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজত (CBI Custody)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আবেদন এবং সওয়ালকে প্রাধান্য দিয়েই এই নির্দেশ আলিপুর আদালতের বিশেষ সিবিআই কোর্টের। যদিও এদিনও জামিনের পক্ষে নিজেই সওয়াল করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রীতিমতো কান্নায় ভেঙে তিনি আদালতকে বলেন, 'সব সওয়াল-জবাব শুনলাম। এবার একটু বলতে চাই। আমি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। এসএসসি স্বসাশিত সংস্থা। তাদের কোনও কাজেই আমি হস্তক্ষেপ করিনি। বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সব দফতর করে। এখানে মন্ত্রীর কী করার? তাছাড়া আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, পিএইচডি। আমার আত্মীয় শিবদাস বন্দোপাধ্যায়। বহু বছর চাকরি করেছি। পরবর্তীকালে জনপ্রতিনিধি হয়েছি। আমাকে ষাট দিন একটা সংস্থা হেফাজতে রাখল। এখন একটা সংস্থা হেফাজতে চাইছে। আমি ক্লান্ত,অসুস্থ, প্রচুর ওষুধ খেতে হয়। যেকোনও শর্তে আমাকে জামিন দিন। আমি বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল। আপনার কাছে বিচারের প্রত্যাশা করি।'
এদিকে, শুক্রবার একই এজলাসে তোলা হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁর হয়েও জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী। তিনি জানান, কল্যাণময়বাবু একজন উচ্চবিত্ত ঘরের ব্যক্তি। একসঙ্গে একাধিক মামলা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর বিরুদ্ধে ১২০-বি-সহ আলাদা আলাদা মামলা। তদন্তকারী সংস্থা জানেই না কী কারণে গ্রেফতারি। আমার মক্কেলের বিরুদ্ধ কোনও অভিযোগ নেই তথ্য নেই।
বিচারকের প্রশ্ন, আপনি নিয়োগপত্রে সই করেছেন? সেটাকে ষড়যন্ত্র বলা যায় কি? কল্যাণময়ের আইনজীবীর পাল্টা, 'সেটা আমি বলছি না। সিবিআই বলছে নিয়োগপত্র ভুয়ো। ভুয়ো নিয়োগপত্র যাঁদের পাওয়ার কথা ছিল, তারা পায়নি। একজন ষাট বছরের অধ্যাপককে যদি হেফাজতে চায় তাহলে বলার কিছু নেই।'
প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতির আইনজীবীর দাবি, 'আমার মক্কেল কোনও নিয়োগপত্রে সই করেনি। তাঁর সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে সই করেনি।' বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, 'আপনার সই স্ক্যান কে করবে?' জবাবে কল্যাণময় বাবুর আইনজীবী জানান, আমার মক্কেলের স্ক্যান সই পর্ষদে থাকতো। তিনি পর্ষদের দারোয়ান নয়। তাই জানা নেই ওটার অপব্যাবহার হয়ছে কিনা। কল্যাণময় বাবু কোনও পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ নিতেন না। শুধু নির্দেশ দিতেন।
অপরদিকে, এদিন আলিপুর কোর্ট থেকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) হেফজত চাইল সিবিআই (CBI)। এই মর্মে আলিপুর কোর্টে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে শুক্রবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে সশরীরে আলিপুর আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে বুধবার ভার্চুয়ালি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে আদালতে তোলা হয়েছিল। এদিনও জামিনের আবেদন খারিজ করে দু'জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান ইডি-সিবিআই (ED Court) আদালতের বিচারক।
যদিও বুধবারই প্রথমবার কোর্টে জামিনের সওয়াল করেন ইডির হাতে গ্রেফতার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। একইভাবে 'আমি অসুস্থ, আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিন, জামিন দিন', কাঁদতে কাঁদতে এই আবেদন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে কান্নাকাটি বৃথা, ফের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে এই দুই অভিযুক্ত। বুধবার অবশ্য শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিচারকের কাছে বলেন, 'আমার চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। আমাকে জামিন দিন, বাঁচতে দিন। ইডি ৩০ ঘন্টা ছিল আমার বিরুদ্ধে কিছুই সংগ্রহ করতে পারেনি। আমি জানতে চাই কে এটা করেছে? ইডি আমার বাড়িতে আসুন। আমার বিধানসভা কেন্দ্রে আসুন। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। ওর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন।'
ভিডিও কলে হওয়া শুনানিতে পার্থর সওয়াল, 'আমি বৃদ্ধ মানুষ, একজন জনপ্রতিনিধি। অর্থনীতিতে স্নাতক। বহুদিনের রাজনীতিবিদ। আমার শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত ইএসআই জোকার রিপোর্ট জমা আছে দেখে নিতে পারেন।'