শোকের আবহে নয় অভিনবত্ব আনতে, রীতিমতো ব্যান্ড পার্টি (Band Party during last rites) নিয়ে সৎকারের আয়োজন। এ যেন এক উল্টোপুরানের অন্য ছবি দুর্গাপুরে (Durgapur Family)। শোকের আবহে নয়, বরং আত্মীয়-স্বজনরা গণেশ পাসোয়ান নামের এক বৃদ্ধর দেহ সৎকার করতে গেলেন ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বৃদ্ধ গণেশ। তড়িঘড়ি করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মারা যান অশীতিপর ওই বৃদ্ধ।
তারপর ওই মৃতদেহের সৎকারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় পরিবার। কিন্তু স্বজন বিয়োগের আবহে একটু অভিনবত্ব আনার চেষ্টা কড়া হয়। আর সে কারণেই ওই বৃদ্ধর সৎকার করতে তাসা ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় পরিবার। এভাবেই গণেশ পাসোয়ানের দেহ দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রবাদ আছে , 'মরেও শান্তি নেই'। দুর্গাপুর ডিভিসি মোড়ের বাসিন্দা গণেশ পাসোয়ান নামের ওই বৃদ্ধর কাছে এই প্রবাদবাক্য একটু অন্য অর্থ বহন করছে। শোকের আবহে নয়, আত্মীয়-স্বজনরা গণেশ পাসোয়ানের সৎকার করলো তাসা ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে। মৃতের পরিবার থেকে জানা গিয়েছে, বাবা আর প্রিয়জন একবার চলে গেলে আর তো ফিরে আসে না, তাই এমন অভিনব আয়োজন।
তামিলনাড়ুর ত্রিচি জেলার ঘটনা। চেনা-পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন কেউই কোনো খোঁজখবর রাখে না। বাবা চলাফেরা করতে পারেন না। ওই বৃদ্ধার আরও দুই ছেলে আছেন, কিন্তু তাঁরা বাবা-মায়ের খবর রাখেন না। মৃতা মাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের একটি শ্মশানে নিয়ে যান তাঁর ৬০ বছরের বড় ছেলে। পেশায় তিনি ইলেকট্রিকমিস্ত্রি নাম মুরুগানন্ধম।
৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মা সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের শেষকার্য করার জন্য কোনও বন্ধুবান্ধব বা প্রতিবেশীকেও পাশে পাননি ওই বৃদ্ধ, এমনকি দু:খের কথা, ভাইরাও পাশে আসেননি। এছাড়া শববাহী গাড়ি ভাড়া করার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই ওই বৃদ্ধের। তাই মৃত মাকে কাপড়ে মুড়ে হুইলচেয়ারে বসান তাঁর। এই ভাবেই প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শ্মশানে নিয়ে যান তিনি। বৃহস্পতিবার ভোর চারটে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। মুরুগানন্ধমের কথায় জানা যায়, তাঁর মা রাজেশ্বরীর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। কয়েক বছর ধরেই সোরিয়াসিসে ভুগছিলেন। বুধবার তাঁর মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি অতিরিক্ত খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, এই অবস্থায় আর কিছুই করার নেই।
মুরুগানন্ধম পুরসভায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে কি না। পুরসভা থেকে এক কর্মী জানিয়েছিলেন, তাঁরা শেষকৃত্যের জন্য অর্থসাহায্য করবেন মুরুগানন্ধমকে। পাশাপাশি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও খোঁজ দেন ওই কর্মী। তবে সে সবই শ্মশানে যাওয়ার পর। মায়ের দেহ হুইলচেয়ারের ভরসায় তিনি শ্মশানে নিয়ে যান। শ্মশানে অবশ্যই পুরকর্মীরা তাঁকে সাহায্য করেছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এসেছে তাকে সাহায্যে করতে।