লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দিনই প্রাণ গেল এক সিপিআইএম কর্মীর। শুক্রবার নিজের দলের নির্বাচনী বুথ অফিসেই মৃত্য়ুর মুখে ঢলে পড়লেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি ব্লকের বিনয় শা মোড় এলাকায় ১৫/১২৪ নং বুথের বাইরে।
জানা গিয়েছে, মৃত ওই দলীয় কর্মীর নাম প্রদীপ দাস(৫৮)। এদিন ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্য়ে সিপিআইএমের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে ছিলেন তিনি। তখন আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপর তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের মধ্য়েই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কর্মীরা। তবে কীভাবে মৃত্যু ঘটল তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিপিআইএম নেতারা জানিয়েছেন, দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। যা অত্যন্ত শোকের।
প্রসূন গুপ্তঃ নীতীশ কুমারকে পিছনে ফেলে জোটের অন্যতম আইএসএফ ডিগবাজি খেলো একেবারে ভোটের প্রান্তে এসে। আইএসএফের প্রধান নওশাদ সিদ্দিকী নাকি তৃণমূল বিরোধীদের অন্যতম মুখ ছিলেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। তাঁর এই বার্তায় বিজেপি-কংগ্রেস এবং বাম তিন পক্ষই খুশি হয়েছিল। অনেকটা সাগরদিঘি মডেলে ভোটটি করতে চাইছিল বিরোধীরা। শুভেন্দুর ধারণা ছিল, নওশাদ দাঁড়ালে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে ফায়দা বিজেপির। ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪৫% মুসলিম ভোট আছে এবং ওই মোতাবেক চললে হিন্দু ভোটের বড় অংশ নিয়ে বিজেপি জিততেই পারে। ফলত বিজেপি গড়িমসি করেছিল প্রার্থী দিতে (এখনও ওই অবস্থায়)। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস নওশাদ দাঁড়ালে প্রার্থী দিতই না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার নওশাদ জানালেন যে, দলের নির্দেশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন না। এই খবরে অথৈ জলে পড়েছে বিরোধীরা।
একই সাথে জোট নিয়ে প্রবল জটিলতা বাম জোটের মধ্যে রয়েছে। আইএসএফ যত্রতত্র প্রার্থী দিয়ে বিপাকে ফেলেছে সিপিএমকে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি তুলোধনা করছে নওশাদকে। তিনি বলেছেন যে, এই দলটি নাকি বিজেপির সঙ্গে 'সেটিংয়ে' রয়েছে যা ধরা যায়নি। নওশাদকে প্রজেক্ট করা মহম্মদ সেলিম সরাসরি না বললেও প্রকারান্তে বলেছেন যে, আইএসএফ সঠিক ভাবে চলছে না। অন্যদিকে বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদের সেটিং এর তত্ত্ব তুলেছে। এখানেই শেষ নয়, বহু কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসের জোটে জোট পাকিয়েছে। কোচবিহার থেকে পুরুলিয়াতে।
তৃণমূল সুপ্রিম আগেই জেনেছিলেন, এই রাজ্যে তারাই 'ইন্ডিয়া'। এবারে কংগ্রেস ও বামেরা এই তথাকথিত ইন্ডিয়া জোট নামক জট থেকে বেরিয়ে জানাচ্ছে, এই রাজ্যে কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই। কাজেই ভোটের দিন দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডিয়া জোটের গঙ্গা প্রাপ্তি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির, বাকিরা ভোট কাটুয়ার ভূমিকাতেই থাকবে।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের আরও পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিল বামফ্রন্ট। আজ, শুক্রবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলীয় দফতরে সেই ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আইএসএফের দর কষাকষিতে বামফ্রন্ট যে অসন্তুষ্ট সেটাও বোঝা গিয়েছে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে। আইএসএফের পর ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দিল সিপিআইএম।
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইএসএফ দাঁড় করিয়েছে মজনু লস্করকে। নওশাদ সিদ্দিকী প্রথমে এই আসন থেকে লড়াই করবেন বলে বারবার জানিয়ে এলেও তা হয়নি। এই ভোলবদলের কারণ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নওশাদ বলছেন, তিনি দলের ঊর্ধ্বে নন। আইএসএফের প্রার্থী দেওয়ার পর আজ সিপিআইএম প্রতীকুর রহমানকে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী করল। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক এবং সাম্প্রতিক সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ হিসেবে উঠে আসা নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করা হয়েছে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে।
ব্যারাকপুর আসন থেকে সিপিআইএমের হয়ে লড়বেন দেবদূত ঘোষ। ঘাটাল আসনে সিপিআইয়ের তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বারাসত কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রবীর ঘোষ। এদিন বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে, ৩০টি আসনে লড়বেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। জয়নগর ও মথুরাপুর আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। ১২টি আসনে বামেদের সমর্থনে লড়াই করবে কংগ্রেস। পুরুলিয়ায় একাই লড়বে ফরওয়ার্ড ব্লক।
মাঝ আকাশে চণ্ডীগড় থেকে কলকাতাগামী বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক যাত্রী। তড়িঘড়ি জরুরি অবতরণ করা হয় বিমানটি। শুরু হয় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা। কিন্তু শারীরিরক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।
বিমানবন্দর সূত্র মারফত খবর, অসুস্থ ওই ব্য়ক্তির নাম বিশ্বনাথ দাম (৬০)। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার চণ্ডীগড় থেকে কলকাতাগামী ইন্ডিগোর ৬০৪১ বিমানটি যখন কলকাতার আকাশে বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য তৈরি হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় যাত্রী বিশ্বনাথ দাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। যা মেডিক্যাল পরিভাষায় এলওসি নামে পরিচিত। তৎক্ষণাৎ বিমানের কেবিন ক্রু পাইলটকে জানান। পাইলট এয়ার কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমান অবতরণের অনুমতি চান।
এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী বিমানটি অবতরণ করে। জরুরি ভিত্তিতে বিমানবন্দরের অ্যাম্বুলেন্স ছ'নম্বর পার্কিং জোনে গিয়ে পৌঁছয়। তারপর বিমানবন্দরে নামানো হয় অসুস্থ ওই ব্য়ক্তিকে। সেখানে নিযুক্ত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। তারপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এয়ার ইন্ডিয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে দুপুরে অপারেশন গেট ৫ নম্বর থেকে সহকারী যাত্রীদের দিয়ে ভিআইপি রোডে ধরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে ওই যাত্রীর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
লোকসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। ১৬ মার্চ নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ এবারেও বাংলায় ৭ দফায় ভোট হবে৷ শনিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এই তালিকায় চমক, মুর্শিদাবাদে প্রার্থী হচ্ছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সিপিএমের টিকিটে রানাঘাট থেকে লড়বেন অলোকেশ দাস, বোলপুর শ্যামলী প্রধান এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন সুকৃতি ঘোষাল। সুকৃতি ঘোষাল বর্ধমান মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ছিলেন। এদিন বিমান বসু বলেছেন, প্রার্থী তালিকা নিয়ে আরও আলোচনা বাকি রয়েছে। তাই বাকিদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯শে এপ্রিল প্রথম দফায় কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্পূর্ণ বামেদের৷ এর আগে মোট ১৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। সবমিলিয়ে মোট ২১ আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিল তারা। তবে ২১ বাকি আসনে প্রার্থী দিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়ে দিলেন বিমান বসু। কারণ আসনগুলি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। সহমত হওয়ার পরই বাকি প্রার্থীদের নাম ধোষণা করা হবে।
মোবাইল চুরির ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ভার্চুয়ালি হাজিরা কলকাতা পুলিস কমিশনার।আদালতে হাজির হয়ে পুলিস কমিশনার জানান কলকাতা হাইকোর্টের আগের যে নির্দেশ ছিল তা ইতিমধ্যে মানা হয়েছে। এদিন সিপির হাজিরাতে খুশি আদালত। ফের এই ধরনের আদালত অবমাননা যেন আর না হয় এমনটাই হুঁশিয়ারি বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার।
পঙ্কজ কুমার দুগার নামে এক ব্যক্তির মোবাইল হারানোর ঘটনার জল গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। ২০২২ সালের ওই মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আদালতে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই রিপোর্ট কমিশনার নিজে জমা না দেওয়ার কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। আবেদন ছিল ১৮ জুন, ২০২২ তারিখে পঙ্কজের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন কোথায় সেটা জানাতে হবে মোবাইল সংস্থাকে। তার সাথে আবেদন ছিল, আলিপুর পুলিস কোর্ট থেকে হাজরা ক্রসিং ও কালীঘাট ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত পুর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়ার। আদালত পুলিস কমিশনারকে যাবতীয় ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কমিশনার রিপোর্ট না দিয়ে কালীঘাট থানার ওসি ওই রিপোর্ট জমা দেন।
হাই কোর্টের নির্দেশ না মানায় কলকাতার পুলিস কমিশনারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা। পরবর্তী শুনানি ২২ মার্চে ভার্চুয়ালি হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় সিপি-কে। অভিযোগ ওঠে একটি মোবাইল ফোন চুরির মামলায় কলকাতার পুলিস কমিশনারকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা তিনি মানেননি। আদালত অবমাননার সেই অভিযোগ শুনেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, "আদালতের নির্দেশ কি খেলার জিনিস? পুলিস কি মনে করছে আদালতের নির্দেশ না মানলেও চলবে? ভুলে যাবেন না হাই কোর্টের ক্ষমতা কত? কেন আদালত অবমাননার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেব না?"
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ভোটের দিন ঘোষণা হয়নি এখনও। তৃণমূল, বিজেপির পর এবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। প্রার্থী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেইন শরিকদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বৃহস্পতিবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমের ১৩ জন এবং বাকি ৩ প্রার্থী শরিকদের। একনজরে দেখে নিন প্রার্থীতালিকা।
কোচবিহার: নীতীশচন্দ্র রায় (ফরওয়ার্ড ব্লক)
জলপাইগুড়ি: দেবরাজ বর্মন (সিপিএম)
বালুরঘাট: জয়দেব সিদ্ধান্ত (আরএসপি)
কৃষ্ণনগর: এস এম শাদি (সিপিএম)
দমদম: সুজন চক্রবর্তী (সিপিএম)
যাদবপুর: সৃজন ভট্টাচার্য (সিপিএম)
কলকাতা দক্ষিণ: সায়েরা শাহ হালিম (সিপিএম)
হাওড়া: সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (সিপিএম)
শ্রীরামপুর: দীপ্সিতা ধর (সিপিএম)
হুগলি: মনোজিৎ ঘোষ (সিপিএম)
তমলুক: সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (সিপিএম)
মেদিনীপুর: বিপ্লব ভট্ট (সিপিআই)
বাঁকুড়া: নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত (সিপিএম)
বিষ্ণুপুর: শীতল কৈবর্ত (সিপিএম)
বর্ধমান পূর্ব: নীরব খান (সিপিএম)
আসানসোল: জাহানারা খান (সিপিএম)
তবে এদিন যে ১৬ টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানের ১৪ জনই ওনতুন মুখ। ভোট বৈতরণী পার হতেই তরুণ মুখেদের উপরেই ভরসা রেখেছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ম্যানেজাররা। তবে কয়েকটি আসন নিয়ে রীতিমত চাপের মুখে পড়তে হয়েছে বামফ্রন্টকে।
তবে এদিন ডায়মণ্ডহারবার কেন্দ্রের জন্য কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই কেন্দ্র থেকে নওশাদ দাঁড়াতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে। তবে এই বিষয়ে আলোচনা চলতেই পারে বলে দাবি বিমান বসুর। তবে জোট নয়, আসন সমঝোতার উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “বামফ্রন্টের শরিকদলগুলি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কোনওদিনই জোট ছিল না। ভোটে লড়ার জন্য আসন সমঝোতা হয়েছিল। এবারেও হতে পারে।”
সন্দেশখালিকাণ্ডে আজ, মঙ্গলবার সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বসিরহাট এসপি অফিস অভিযানের ডাক দেয় বিজেপি। সেই অভিযানের আগেই এসপি অফিস থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত বসিরহাট জেলা পুলিস জারি করল ১৪৪ ধারা। রাস্তার উপর বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিস বাহিনী।
শেখ শাহজাহানের দুই ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের গ্রেফতারির দাবিতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল গোটা সন্দেশখালিতে। দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন মহিলারা। শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতা মহিলারা। কীভাবে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে তাঁদের প্রতি নির্যাতন করা হত সেই কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন তাঁরা। সোমবার সন্দেশখালি যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকেই। অন্যদিকে সোমবারই সন্দেশখালি পরিদর্শনে রাজ্যপাল। যাওয়ার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও। কিন্তু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় এবং পুলিসি বাধার মুখে পড়ায় সন্দেশখালি ঢুকতে পারেনি।
সন্দেশখালিতে আছড়ে পড়েছে জনরোষ, প্রশাসনিক তরফে জারি ১৪৪ ধারা। আর আছড়ে পড়া জনরোষের পিছনে ইন্ধন সিপিএম নেতা তথা সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের। তিনি নাকি গ্রামবাসীদের উত্তেজিত হতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু হাজরার এহেন অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকালে ছেলের বাড়ি থেকে নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে বাঁশদ্রোণী থানার পুলিস।
ঘটনাচক্রে সন্দেশখালির মানুষের কাঠগড়ায় দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরা। বকলমে এঁরা অন্তরালে থাকা অপর এক তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। জনরোষে শিবুর পোলট্রি ফার্ম আগুনে জ্বলেছে, বাড়িতে চলেছে ভাঙচুর। এবার জনতার কাঠগড়ায় থাকা সেই শিবু হাজরার দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে কলকাতা পুলিসের হাতে গ্রেফতার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক। আর এতেই তেড়েফুঁড়ে বাঁশদ্রোণী থানার সামনে জমায়েত থেকে স্লোগান-শাউটিং সিপিএম নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকদের। সুদুত্তর না পেলে চলবে থানার সামনে জমায়েত, স্লোগানিং, বলছে সিপিএম নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই ছুটির সকালে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁশদ্রোণী থাকা এলাকায়।
যদিও বাঁশদ্রোণী থানার দাবি, বসিরহাট জেলা পুলিসকে সহযোগিতা করতে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ককে। বসিরহাট জেলা পুলিসের প্রতিনিধি এসে সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্রের খবর, টাওয়ার লোকেশন দেখেই ছেলের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় নিরাপদ সর্দারকে। উল্লেখ্য সন্দেশখালিকাণ্ডে মোট ১১১ জনের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে, আর একদম একনম্বরে নাম প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের।
যদিও প্রাক্তন বিধায়কের দাবি, সন্দেশখালিতে জনতার বিক্ষোভের সময় তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। নানা জায়গায় দলীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন নিরাপদবাবু। প্রাক্তন বিধায়কের স্ত্রীর মন্তব্য, পুলিস এসে নিরাপদবাবুকে থানায় নিয়ে যায়। সিএন-র কাছে প্রাক্তন বিধায়ককে ফাঁসানোর অভিযোগে সরব নিরাপদ সর্দারের স্ত্রী।
এদিকে প্রাক্তন বিধায়কের হয়ে সওয়াল করতে বাঁশদ্রোণী থানায় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। বাইরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম নেত্রী মধুজা সেন রায়, শতরূপ ঘোষ থেকে কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতৃত্ব। প্রত্যেকেই বাংলাজুড়ে জঙ্গলরাজের অভিযোগে তুলে সন্দেশখালিতে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে সরব ছিলেন। মধুজা সেন রায়ের মন্তব্য, নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে রাখলে গোটা রাজ্যে পথে নামবে সিপিএম। ক্ষমতা থাকলে পুলিস প্রশাসন আটকে দেখাক, এভাবেই চড়া সুর সিপিএম নেত্রীর। অপর এক সিপিএম নেতা তথা তরুণ মুখ শতরূপ ঘোষেরও সুর চড়া।
প্রসূন গুপ্তঃ আসন্ন ৭ জানুয়ারী ফের ব্রিগেডে সিপিএম সঙ্গে আমন্ত্রিত বাম দলগুলি। বেশ কিছুদিন ধরে জেলায় জেলায় দলের তরুণ নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সিপিএম প্রচার সেরেছে দুই সরকারের বিরুদ্ধে এবং অবশেষে ব্রিগেডে হবে চূড়ান্ত অনুষ্ঠান ঠিক লোকসভা ভোটের মাস দুয়েক আগে। কিন্তু ফায়দা কি হবে, প্রশ্ন উঠেছে একেবারে বামমনস্ক মানুষের মধ্যে থেকে।
প্রশ্ন ১) বামেদের ক্ষমতায় আসার পিছনে নক্সালপন্থীদের যে ভূমিকা ছিল, তারা আজ কোথায়? ক্ষমতায় আসার বিষয়ে ওই নক্সালদের প্রশ্ন ছিল মার্কসবাদ লেলিনবাদের কোথায় লেখা রয়েছে সংসদীয় ভোটের রাস্তায় গিয়ে ক্ষমতা দখল করতে হবে? তারা আন্দোলন করেছিল, যার সুফল পেয়ে বামফ্রন্ট ৩৪ বছর রাজত্ব করেছে।
প্রশ্ন ২) রাজ্যের শিক্ষা থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার কুফল কি সে সময়ের যুব মহলকে পিছিয়ে দেয় নি? অথচ বাম নেতাদের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে দিব্বি পড়াশুনা করেছে।
প্রশ্ন ৩) রাজ্যে কম্পিউটার আসতে বিলম্ব হলো ফলে হাজার হাজার যুব ছেলেমেয়েরা রাজ্যের বাইরে গিয়ে শিক্ষা নিলো এবং সাথে চাকরিও, এর ইনসাফ করবে কে?
প্রশ্ন ৪) দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আরাম ও আয়েস এসে গিয়েছিলো বাম নেতাদের। একটা সময়ে এরাই আধপেটা থেকে লড়াই বা আন্দোলন করেছিল। দেখা গেলো এদেরই পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমতার সুখ পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো সুখী জীবনযাত্রার। আজকে মমতা বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরা সেই সুখ পেতে দুর্বল বাম ছেড়ে দলে দলে একেবারে উল্টো পন্থা অর্থাৎ বিজেপিকে খুঁজে নিলো। আজ এই রাজ্যের বাম ভোটের ৮০ শতাংশ বিজেপির বাক্সে ভোট দিচ্ছে। এর ইনসাফ কোথায়? ইনসাফ পাওয়ার আগে নিজেরাই সাফ হয়ে গিয়েছে।
কাজেই মীনাক্ষীকে মুখ করে হয়তো বা ব্রিগেডে এক বা দেড় লক্ষ লোক আনতে পারবে সিপিএম কিন্তু এই ভিড়ের ১০% মানুষ কি সিপিএমকে আসন্ন লোকসভায় ভোট দেবে? বিশ্লেষকরা কিন্তু মোটেই আশাবাদী নয়। তাদের ধারণা একটিও আসন পাবে না বাম বা সিপিএম। বাকি জনতার অভিমত!
কলকাতা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম ইএম বাইপাস। সেই ইএম বাইপাসে দীর্ঘক্ষণ যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, বাইপাসের দক্ষিণ অংশে শনিবার ছ'ঘণ্টা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
উল্লেখ্য, একাধিক রুট ডাইভারশনের কথা জানিয়ে অ্যাডভাইজারি প্রকাশ করল কলকাতা ট্রাফিক পুলিস। আজ শনিবার রাত ১০ টা থেকে রবিবার ভোর ৪ টে পর্যন্ত ইএম বাইপাসের দক্ষিণ অংশে উভয় দিকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পাটুলির কাছে ঘোষপাড়ায় ৪৫ মিটার লম্বা ফুটওভার ব্রিজ বসানোর জন্যই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই কাজের দায়িত্বে রয়েছে সিএমডিএ।
সিএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুট ওভারব্রিজ বসানোর জন্য ঘোষপাড়ার কাছে ক্রেন ও অন্যান্য মেশিন আনা হবে। সেই কারণে যান চলাচলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বদল আনা হবে। যান চলাচলের জন্য একাধিক রুট ডাইভারশনও করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
কোন পথে চলবে যানবাহন:-
•দক্ষিণ থেকে রুবি হাসপাতালের দিকে যাওয়া ভারী যানবাহন গুলিকে পাটুলি মোড় থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। ভারী যানবাহন গুলিকে বৈষ্ণবঘাটা, পাটুলি কানেক্টর, রাজা এসসি মল্লিক রোড, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর হয়ে সুলেখা মোড় দিয়ে পুনরায় বাইপাসে পৌঁছতে হবে।
•দক্ষিণ থেকে রুবিমোড়গামী ছোট গাড়িগুলোকে বা যানবাহন গুলোকে বৈষ্ণবঘাটা, পাটুলি কানেক্টর হয়ে পাটুলি আই ব্লক রোডে যেতে হবে। সেখান থেকে মোল্লা রোড ধরে তারা পুনরায় বাইপাসের দিকে যেতে পারবে।
•উত্তর থেকে গড়িয়াগামী ভারী যানবাহন গুলিকে অভিষিক্তা মোড় থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। ভারী যানবাহনগুলি অভিষিক্তা মোড় থেকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর হয়ে রাজা এসসি মল্লিক রোড ও বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি কানেক্টর হয়ে ফের বাইপাসে উঠতে পারবে।
উত্তর থেকে গড়িয়াগামী ছোট গাড়িগুলিকে পিয়ারলেস হাসপাতালের সামনের কাটআউট দিয়ে ঘুরে পঞ্চসায়র রোড, ঢালাই ব্রিজ ও গড়িয়া স্টেশন রোড হয়ে ফের বাইপাসে উঠতে পারবে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা ট্রাফিক পুলিস সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে ঘোষপাড়া অঞ্চলে যাতায়াত করার সময় অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং সেই দুর্ঘটনা রেকর্ড দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা ঘটার প্রতিরোধ করার জন্য ফুটওভার ব্রিজ বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসূন গুপ্তঃ এই রাজ্যে সিপিএমের কোনও বিধায়ক বা সাংসদ নেই। ত্রিপুরাতে বিধায়ক আছে, কিন্তু সাংসদ নেই। আবার কেরলে দুইই আছে, কিন্তু কংগ্রেস বিরোধিতায়। অন্যদিকে, আজকের বামফ্রন্ট বলতেও তেমন কিছু নেই অর্থাৎ যা কিছু সিপিএম এবং সিপিআইয়ের। এবারে যদি ভারত জুড়ে সত্যিই কোনও জোট যার নাম 'ইন্ডিয়া' হয় তবে সিপিএম পরবে নানান সমস্যায়।
প্রথমত, এই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য একই সুরে কথা বলছে না। দিল্লিতে সিপিএমের সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন নিয়মিত ভাবে এই ইন্ডিয়ার বৈঠকগুলোতে অংশ নিচ্ছে তেমনটি কিন্তু রাজ্যের সম্পাদক সেলিমের ভূমিকা নয়। সেলিম রাজ্য প্রশাসনে থাকা তৃণমূলের ঘোরতর বিরোধী। প্রচার মাধ্যমের সামনে শুভেন্দু অধিকারী আর সেলিমের বক্তব্যের কোনও ফারাক নেই। তার উপরে আবার আইএসএফের সঙ্গে সেলিমের যথেষ্ট মধুর সম্পর্ক। এ রাজ্যে সেলিম থেকে শুরু করে দলের বাকি নেতাদের অবস্থান একই রকম। অবিশ্যি সেটাই রেজিমেন্টেড পার্টির বরাবরের নিয়ম তো বটেই।
সিপিএমের সাথে কেরালায় কোনও ভাবেই কংগ্রেসের জোট বাঁধা সম্ভব নয়। সিপিএম তো চাইছেই না, উল্টোদিকে কংগ্রেস যদি কোনও ভাবে জোটের কথা ভাবেও তবে দল ভেঙে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দলের কর্মী সমর্থকদের ত্রিপুরার মতো বিজেপিতে চলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে না তৃণমূল না বামেরা এক হতে পারে। মনে রাখতে হবে তৃণমূলের জন্মই সিপিএমের বিরোধিতা করে। যদিও একা বা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এ রাজ্যে লড়লে কংগ্রেসের সুবিধা হয়তো হতে পারে কিন্তু সিপিএমের পকেটে শূন্যই জুটবে। সিপিএমে এখন যে ৭% ভোট অবশিষ্ট আছে তারাও বেরিয়ে যাবে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়।
সমস্ত বিষয়টি বোঝা যাবে ১৯ ডিসেম্বর, পরবর্তী 'ইন্ডিয়া'র বৈঠকে। তবুও খবর যতটুকু আপাতত দিল্লি কংগ্রেস চাইছে তৃণমূলের সঙ্গেই সম্পর্ক পোক্ত করতে। প্রয়োজনে শুধু ত্রিপুরাতেই এই দলের জোট অটুট থাকবে লোকসভা নির্বাচনে।
মধ্যরাতে সিপিআইএমের প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো ঘটনার বৃত্তান্ত। চাঞ্চল্য দুর্গাপুরের কাঁকসা অঞ্চলের পানাগড় এলাকায়। পুলিসের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
রাত তখন ২ টো বেজে ৭ মিনিট। হঠাৎই বাড়ির ভারী লোহার গেট ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙলো সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সহ পরিবারের সদস্যদের। এরপর ফের রাত ২ টো বেজে ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় দরজা ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। শনিবার গভীর রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় দুর্গাপুরের কাঁকসা অঞ্চলের পানাগড় এলাকায়।
জানা গিয়েছে, কাঁকসার গুরুদ্বারা রোডে মধ্যরাতে সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। দরজা ভেঙে ওপরে উঠে আরও একটি দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে পরিবারের সদস্যদের চিৎকার চেঁচামেচিতে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রায় দশ মিনিট ধরে এই তাণ্ডব চলে যদিও কিছু নিতে পারেনি দুষ্কৃতী দল। কিন্তু সশস্ত্র এই দুষ্কৃতী দল কি কারণে এসেছিলো? তা নিয়ে ধন্দে পরিবারের সদস্যরা।
সম্ভবত খুনের উদ্দেশেই ৯ জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেন সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ওমপ্রকাশ আগরওয়াল।
দুষ্কৃতী তাণ্ডবের এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসায় তোলপাড় কাঁকসা অঞ্চল জুড়ে। গোটা ঘটনায় আতঙ্কে পানাগড় চেম্বার অফ কমার্সের চিফ অ্যাডভাইজার সহ বাম নেতারা।
প্রসূন গুপ্ত: বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীসভা। সকাল থেকেই কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ অবধি বিভিন্ন স্তরের নেতা মন্ত্রী ও কর্মীদের ভিড় লক্ষ করার মতোই ছিল। পুজোর দিনগুলি শেষ হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বাণিজ্য মেলা কখনও দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসাবে জনসভা করা শুরু করে দিয়েছেন। মঙ্গল ও বুধবার ছিল বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী , শিল্পপতিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এই শিল্পমেলায় প্রধান আকর্ষণ ছিলেন দেশের সবচাইতে বড় বাণিজ্যপতি মুকেশ আম্বানি। আগামীতে তিনি যে পশ্চিমবঙ্গে কয়েক হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজ সেই প্রতিশ্রুতিই তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলেন মমতা।
রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁর রীতি অনুযায়ী ঝোড়ো বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আজকে যথারীতি তাঁকে ২১ জুলাইয়ের মুডে পাওয়া গেলো।অনুষ্ঠানে বক্তা হয়তো অনেকেই ছিলেন কিন্তু মূল আকর্ষণ যে তিনি এবং তাঁর উপস্থিতির কারণেই যে প্রবল ভিড় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কিছু নতুন মোড়কে পুরোনো বাম আক্রমন ছিল লক্ষণীয়। মমতা বিলক্ষণ জানেন যে আজকের বিরোধী বলতে যে বিজেপি এবং তাদের বিধায়ক সংখ্যা তা আদতে সিপিএমের ভোট। কিন্তু বিরোধিতায় থাকায় গত কয়েক বছর তাঁর ভাষণের মূল আক্রমণ থাকতো বিজেপিই। তিনি বললেন ও বিস্তর। ১০০ দিনের কাজ থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তো ছিলই , যুক্ত করলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ। জানালেন, মিডিয়া থেকে বিরোধীদের ভয়ে রেখেছে বিজেপি। তিনি বললেন যে, দেশের বিরোধীদের চোর বানানোর পরিকল্পনা চলেছে যদিও কয়লা থেকে গরু পাচারের টাকা যাচ্ছে বিজেপির প্রশাসনের হাতেই। ওদিকে এদিন ইন্ডোরের সভা থেকেই মহুয়া প্রঙ্গে মুখ খুলে একার্থে কৃষ্ণনগরের সাংসদের পাশে দাঁড়ালেন মমতা।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, আজকের ভাষণে তিনি নিয়ে আসলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হেনস্তা করার ঘটনা। নিয়ে আসলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ তাদের মতোই অশোক গেহেলত সহ বিভিন্ন কংগ্রেস নেতাদের হেনস্তার ঘটনা। এরপরেই তুমুল সমালোচনা করলেন সিপিএমের। শুনে মনে হচ্ছিলো মমতা ফিরে গিয়েছেন ২০১১ র আগের মুডে। তুলোধনা করলেন সিপিএমকে। এর অবিশ্যি অন্য কারণ, তাঁর দলের সমর্থক কর্মীরা সোশ্যাল নেটে যে ভাবে সিপিএমকে আক্রমণ করে তা পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না মমতা। দেখার বিষয় আসন্ন লোকসভায় কে থাকবে তাঁর জোটসঙ্গী।
জয়নগরের পর এবার আমডাঙ্গা। তৃণমূল প্রধানকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমডাঙ্গা কামদেবপুর এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, আমডাঙার ওই মৃত পঞ্চায়েত প্রধানের নাম রূপচাঁদ মন্ডল। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে এখনও অবধি একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, পাশাপাশি আরও দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনও অবধি মৃত ওই প্রধানের পরিবারের তরফে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের দিকেই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কামদেবপুর বাজার এলাকায় রূপচাঁদ মণ্ডলকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। বোমার আঘাতে রূপচাদের দেন হাত উড়ে যায়। এ ঘটনা টের পেতেই তাঁকে উদ্ধার করে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাতেই মৃত্যু হয় রূপচাঁদের। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। বারাসত পুলিশ জেলা সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার নাম আনোয়ার হোসেন। কয়েকদিন আগেই জমি কেনাবেচা নিয়ে তৈয়বের সঙ্গে ঝামেলা হয় রূপচাদের। পাশাপাশি আটক তৈয়ব হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তৈয়ব হোসেনের দুই ছেলে আনোয়ার ও সাদ্দাম। সম্প্রতি জমি কেনাবেচা নিয়ে তৈয়বের সঙ্গে গন্ডগোল রূপচাঁদ মণ্ডলের। যদিও আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান জানিয়েছেন, তৈয়ব অঞ্চলের তৃণমূল নেতা। কিন্তু এই ঘটনায় তৈয়বের নাম আসলেও, সেটা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে রাজনৈতিক কোনো গোষ্ঠী নেই। রূপচাঁদের এর সঙ্গে তৈয়বের কোনো ঝামেলা থাকলে অন্য কোনো কারণে হতে পারে। সেটা ব্যাক্তিগত হতে পারে।
এ ঘটনায় রূপচাদের পরিবার ও স্থানীয়দের তরফে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকেই অভিযোগ তুলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যারা খুন করেছে তারা শাসক দলের কর্মী। উনি প্রধান হওয়ায় অনেকে মেনে নিতে পারেন নি। ওদিকে, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মন্ডলের মৃতদেহ বারাসাত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।