
সিগন্যালিংয়ের (Signal) ত্রুটি থেকেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। করমন্ডল এক্সপ্রেসের (Coromondel Express) দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে জমা পড়া রিপোর্টে সেরকমই উল্লেখ রয়েছে বলে খবর। রেল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রেলওয়ে বোর্ডের কাছে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে ‘কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি (CSR)’। বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। এমনকি রেলমন্ত্রীর সুপারিশে ওই ঘটনায়।সিবিআই তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে রেলওয়ে সেফটি বোর্ডের রিপোর্টে কী আছে, তা নিয়ে বিশদে অবশ্য এখনও কোনও আধিকারিক মুখ খোলেননি।
সূত্রের খবর, বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৩ হয়েছে। এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন অনেকে। ‘কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি’ ছাড়াও এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-কে। ইতিমধ্যেই এই দুর্ঘটনার জেরে একাধিক উচ্চপদস্থ রেলের আধিকারিকের বদলি হয়েছে।
ওড়িশার বাহানাগা বাজারের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromondel Express) দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও স্পষ্ট। সেই প্রভাব এবার পড়তে চলেছে রথযাত্রায় (Rath Yatra)। প্রত্যেক বছর বহু যাত্রী এই রাজ্য থেকে পুরী যান রথের দড়ি টানতে, একবার জগন্নাথদেবকে দর্শন করতে। এই বছর সেই রীতিতে বাধ সাধতে চলেছে করমণ্ডল দুর্ঘটনা। বাহানাগা বাজারের রেল লাইনে এখনও মেরামতির কাজ চলছে। তাই এই রাজ্য থেকে পুরীগামী বহু ট্রেন বাতিল হয়েছে। কোন কোন ট্রেন বাতিল (Trains cancelled), জানুন।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী জানিয়েছেন, ২০ জুন ২০টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। মঙ্গলবারে বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে, বালাসোর-ভদ্রক মেমো স্পেশাল, হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া-ভদ্রক এক্সপ্রেস, শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, ভদ্রক-হাওড়া এক্সপ্রেস, পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-এমজিআর চেন্নাই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেস,সম্বলপুর-শালিমার এক্সপ্রেস, সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস। এছাড়াও ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পুরী আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস ১৯ জুন ১০টা ১০-এর বদলে ২০ জুন সকাল ৮টায় হাওড়া থেকে ছাড়বে।
২০ জুন কয়েকটি ট্রেনের রুটের বদল করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮৪৭৮ যোগ নাগরী ঋষিকেশ-পুরী এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটি ঝারসুগুদা রোড-সম্বলপুর সিটি কটক হয়ে যাবে। অন্যদিকে ১৮৪৭৭ পুরী-যোগ নাগরী ঋষিকেশ-পুরী এক্সপ্রেস কটক-সম্বলপুর-ঝারসুগুদা হয়ে চলবে।
তবে চিন্তার বিশেষ কারণ নেই। জগন্নাথ ভক্তদের জন্য দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের তরফে দুটি বিশেষ ট্রেন ছাড়া হবে। এরমধ্যে রয়েছে ০৮০৩৭ এবং ০৮০৩৮ পুরী-বালাসোর রথ যাত্রা স্পেশাল ট্রেন।
২ জুন ওড়িশার বালাসোরের বাহানাগা বাজারের কাছে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromondel Express Accident)। তারপর ২ সপ্তাহ পেরিয়েও থামেনি আর্তনাদ। বেসরকারি হিসেবে বলছে কমপক্ষে ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। খবর পেয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সওয়ারিদের বাড়ির লোক ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। অনেকেই মৃতদেহ সনাক্ত করে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কিছু মৃতদেহ এতটাই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে যে সেই দেহ সনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়ে আগেই জানিয়েছিলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদেহ দাবি করতে হলে ডিএনএ পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবশ্য আরও একটি কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। দেখা গিয়েছে, ক্ষতিপূরণের লোভে একটি মৃতদেহর জন্য প্রায় ৮ জন দাবিদার এসে হাজির হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই তাই রেল কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আবার এই নিয়মে সমস্যায় পড়েছেন অনেকে। দেখা গিয়েছে, অনেকেই মৃতদেহ সনাক্ত করে ফেলেছেন। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না আসায় সেই মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সেই ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসতে ১২ দিনও সময় লেগে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনও করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদেহ সনাক্তকরণের সমস্যা কাটেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব (South Eastern Railway) রেলে যেন ফাঁড়া চলছে। করমণ্ডল (Coromondel Express) দুর্ঘটনার পর এদিকে-ওদিক অনেক ট্রেনই বেলাইন হয়েছে, বা কামরা থেকে ধোঁয়া বেরিয়েছে। এবার বেলাইন হয়ে গেল মেদিনীপুর-হাওড়া (Medinipur Howrah Local) লোকাল। শনিবার রাতের এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে। গিরি ময়দান ও খড়গপুর স্টেশনের মাঝে কাটিং খোলি এলাকায় এই দুর্ঘটনা হয়। ঘটনার সময় ট্রেনটি মেদিনীপুর থেকে হাওড়া আসছিল। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মেরে বেলাইন হয় লোকাল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাত নটার কিছু পরে তাঁরা একটা আওয়াজ শুনতে পান। ছুটে গিয়ে দেখেন বেলাইন হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুর থেকে হাওড়া যাওয়ার পথে লোকাল ট্রেন। ভেঙে গিয়েছে পাশের বিদ্যুতের খুঁটি। আতঙ্কে যাত্রীরা ট্রেন থেকে লাফাতে শুরু করেন। তাতেই অনেকে চোট পান বলে দাবি স্থানীয়দের।
এদিকে ট্রেন বেলাইন হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন খড়গপুরের যাত্রীরা। অভিযোগ, দুর্ঘটনা সম্পর্কে খুব বেশি খবর দেয়নি রেল। করমণ্ডলের দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছিল, ওই একই শাখায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ২৮৮ জনের। তাঁর ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি রেল কতৃপক্ষ। তাঁর মধ্যে ফের এমন দুর্ঘটনায় রেল কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। শনিবার রাতে কেন এমন দুর্ঘটনা হল তা খতিয়ে দেখছে রেল আধিকারিকরা।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromondel Express) দুর্ঘটনার (Accident) আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে আরও একটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়তে চলেছিল। কিন্তু, বরাত জোরে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচল নিউ দিল্লি-ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস (Rajdhani Express)। জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ার সাঁওতালডি এলাকায় দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের লেভেল ক্রসিংয়ে হঠাৎই বিকল হয়ে যায় একটি ট্রাক্টর। সেইসময় দ্রুত গতিতে ছুটে আসছিল রাজধানী। আরেকটু হলেই ঘটে যেতে পারত বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু, যথাসময়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন চালক। আর তার ফলেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দূর থেকে চালক ট্রাক্টরটি দেখতে পেয়েই ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রেনটি। যদিও ট্রাক্টরটির ডালার অংশ ছুঁয়ে যায় ইঞ্জিনের পিছনে থাকা একটি বগির খানিক অংশ। কিন্তু, সেরকম কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে যায় রাজধানী।
প্রশ্ন উঠছে, ট্রেন আসছে দেখেও কেন পড়েনি রেল গেট? স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গেটের একদিকের অংশ পড়লেও অন্যদিক পড়েনি। ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে গেট ম্যানকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গোটা দেশ। ওড়িশার কাছে বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromondel express accident), মালগাড়িতে ধাক্কা মেরে লাইন থেকে ছিটকে যায়। প্রায় ২০টি কামরা দেশলাই বাক্সের মতো এদিক ওদিক উল্টে পড়ে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৮৮ জন। জখম হয়েছেন অন্তত ৯০০ জন। এই ঘটনায় মুখে খুললেন অভিনেতা সোনু সুদ (Sonu Sood)। তাঁর বক্তব্য সরকারের উদ্দেশেই।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সোনু বলছেন, 'ওড়িশাতে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, পুরো দেশ এই সময় শোকে। আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি, টুইট করছি কিন্তু কিছুদিন পরে নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। কিন্তু তাঁদের পরিবারের কী হবে। অনেকে হয়তো রুটি অর্জন করতে বেরিয়েছিলেন, মজদুর- শ্রমিক, তাঁদের পরিবার তো শেষ হয়ে গেল। আমার মনে হয় না তাঁরা আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন। তাঁরা যা ক্ষতিপূরণ পাবেন, হয়তো দু-চার মাসে শেষ হয়ে যাবে। আহতরা ক্ষতিপূরণ পাবেন কিন্তু তাও হয়তো শেষ হয়ে যাবে।'
Heartbroken by the news of the train tragedy in Odisha. Heartfelt deepest condolences 💔🙏
— sonu sood (@SonuSood) June 3, 2023
Time to show our support and solidarity for the unfortunates. 💔#OdishaTrainAccident 🇮🇳 pic.twitter.com/ZfuYYp8HK9
সোনু বলছেন, 'যার কাঁধ ভেঙে গিয়েছে, পা বাদ চলে গিয়েছে তাঁরা কী আর উঠে দাঁড়াতে পারবে? সরকার খুব ভালো কাজ করছে। কিন্তু আমার মনে হয় সরকারের একটি স্কিম আনা উচিৎ। যাতে এমন দুঘটনায় আহতদের প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট অর্থ একাউন্টে ঢোকে। যে পরিমাণ অর্থ সরকার দিক না কেন প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেলে সেই মানুষদের সুবিধা হবে।'
করমণ্ডল ট্রেন দুর্ঘটনায় (Coromondel Accident) আহতদের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এবং ডাক্তার পাঠাল রাজ্য সরকার (State Government)। নবান্ন (Nabanna) থেকে একটি বুলেটিন প্রকাশ করে এই খবর জানানো হয়েছে। রাজ্যে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৭০টি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ৩৪জন চিকিৎসক। এছাড়াও আহত যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ১০টি বাস পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে ২০টি মিনি ট্রাকে করে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ২০ টি অ্যাম্বুলেন্স করে ১২০ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুটি দলকেও পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে। এছাড়াও কয়েকজন আইএএস অফিসার, ডেপুটি মেজিস্ট্রেটকেও পাঠানো হয়েছে বালেশ্বর। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর শনিবার দুপুরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর নবজোয়ার যাত্রা একদিনের জন্য বন্ধ রেখেছেন।