
মণি ভট্টাচার্য: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা হার মানিয়েছে গত ৪ দশকের ভয়াবহতাকেও। ছাপিয়ে গিয়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এরপর করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে অভিশপ্ত বলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। রেল সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনায় এখনও অবধি মৃতের সংখ্যা ২৭৫ জন। আহতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে বলেই খবর। কিন্তু এই ২৭৫টি প্রানের মৃত্যুর দায় কার? এই দায় কি কেবল ঈশ্বরের? হয়ত নয়। হয়ত এর মধ্যে অন্তর্ঘাত রয়েছে, কিংবা রয়েছে রেলের গাফিলতি। এ বিষয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছে স্বয়ং রেলমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীও।
শুক্রবারের এই রেল দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে বাহানাগা স্কুলে রাখা মৃতদেহের স্তূপে নিজের ছেলেকে খুঁজছেন বাবা। চারিদিকে স্বজনহারা কান্না। বাতাসে যেন মুহূর্তে মিশে গিয়েছিল রক্তের মাদকতা। এখনও ওই বিষাক্ত জায়গায় মুছতে পারেনি রক্তের ছাপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহের কোনও ধর্ম ছিল না। কেবল লাশ হিসেবেই চিহ্নিত করা ছিল তাঁরা।
প্রাথমিক ভাবে মৃতদের সনাক্তকরণ নিয়েও চাপে আছে রেল। ঘটনার পরেই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্তে নেমেছে রেলের সুরক্ষা কমিশনার। এরই মধ্যে রেল মন্ত্রী অস্বিনী বৈষ্ণব এ ঘটনায় সিবিআই তদন্ত শুরু করার সুপারিশ করেছেন। সেইমত সোমবার থেকেই মাঠে তদন্তে নেমে পড়ছেন সিবিআই। যদিও এই ঘটনায় আপাতত বেঁচে আছেন ওই দুই ট্রেনের ড্রাইভার ও গার্ডরা। ওদিকে সোমবারই খড়্গপুর ডিভিশনের রেল আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসছে সিবিআই।
প্রাথমিক ভাবে রেলের সিগন্যাল জনিত কারণ দেখালেও, রেলমন্ত্রীর দাবি ছিল এ ঘটনায় অন্য কোনও ষড়যন্ত্র আছে। উনি জানিয়েছিলেন সমস্তটা তদন্ত সাপেক্ষ, সময় হলে সমস্তটা প্রকাশ হবে। ঘটনাস্থলে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিল, এ ঘটনায় দোষীরা সাজা পাবে। যদিও এখনও অবধি স্বজন হারা মানুষ গুলোর কাছে দুষবার মত ঈশ্বর ছাড়া কেউই নেই।
বাহানাগা বাগ স্কুলে যেখানে মৃতদেহ রাখা ছিল সেখানে রক্তের ছাপ পুরো মুছতে পারছে না কতৃপক্ষ। ১৯৮১-র পর এতবড় দুর্ঘটনা দেখেনি রেল। স্বজনহারা মানুষগুলো এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁদের প্রিয়জনকে। কেউ কেউ হয়ত প্রিয়জনকে খুঁজে পেয়েছে কিন্তু খুঁজে পায়নি প্রিয়জনের হাত, কিংবা পা। কেউ কেউ প্রিয়জনের শরীরের নির্যাস টুকু পেয়েছে। তাতেই হয়ত তাদের শান্তি। সত্যি বলতে এত গুলো লাশ। একসাথে এত মৃত্যু অনেক দিন দেখেনি বাতাস। সেদিন যেন বাতাসে লাশের গন্ধ। দুর্ঘটনার পরের দিন সকালেই দেখছিলাম রেল লাইনে স্বজনের মৃতদেহ ঢেকে রেললাইনে বসে আছেন মহিলা। শোকতাপ হীন। এই মানুষগুলো যেন মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠে, ঈশ্বর ছাড়া অন্তত কাউকে পাক এ মৃত্যুতে দুষবার। এই কেবল প্রার্থনা।
ওড়িশার বালাসোরে (Balasore) ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। ঘটনাস্থল রাজ্য থেকে ২৫০ কিমি দূরে হলেও এর প্রভাব বাংলায় ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে আটকে পড়া স্পেশাল ট্রেন প্রায় ২০০ জন যাত্রী নিয়ে হাওড়া (Howrah) ফিরেছে। রেলসূত্রে খবর, আরও প্রায় ১০০০ যাত্রীকে নিয়ে হাওড়া ফিরছে স্যর এম বিশ্বেশ্বরায়-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। হাওড়া স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্মে উপস্থিত রয়েছেন রেলের আধিকারিকরা। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স, ওলা উবের সহ আরও বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুত করা রয়েছে যাতে শ্রুত আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া যায়। স্টেশনে উপস্থিত রয়েছেন চিকিৎসকদের একটি দল। খড়্গপুর স্টেশনে যাত্রীদের জল, চা এবং খাবার দেওয়া হয়।
ওড়িশার বালাসোরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২৮৮। এবং আহতের সংখ্যা ৯০০-এর অধিক। রেলের তরফে এই তথ্য জানানো হয়েছে। যদিও মৃত ও আহতের সঠিক সংখ্যা জানানোর ক্ষেত্রে রেলের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
মনি ভট্টাচার্য: করমন্ডল এক্সপ্রেসের (Coromondal Express) দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আড়াইশো ছাড়িয়েছে। সিএন-ডিজিটাল কে ওড়িশা শহরের আইজি বালাসোরের (Balasore) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন অবধি মৃতের সংখ্যা ২৮৮ জন। আইজি বালাসোর শ্রী হিমাংশু কুমার লাল শনিবার সিএন ডিজিটালকে বলেন, 'এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৫০ জনের অধিক।' এবং তিনি আরও বলেন, 'এই দুর্ঘটনায় এখনও অবধি ১০০০ জনের উপরে আহত।' উড়িষ্যার বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।'
সূত্রের খবর, এখনও অবধি করমন্ডল এক্সপ্রেসের এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৮৮ জনের বেশি। যা হার মানিয়েছে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের (Jnaneswari Express) দুর্ঘটনাও। রেল সূত্রের খবর, ২০১০ সালে ২৮শে মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটে, যে দুর্ঘটনায় ১৪৮ জনের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ছিল ২০০-এর অধিক। আপাতত করমন্ডল এক্সপ্রেস এরই দুর্ঘটনা হার মানিয়েছে অন্যান্য অনেক দুর্ঘটনাকেই।
গতকাল রাত থেকেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিল স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বায়ু সেনা, সেনা, আধা সেনা ও সামরিক বাহিনী। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপায়ে তাদের উদ্ধার কার্য চালাচ্ছে তাঁরা। এখনও অবধি স্থানীয় মারফত যে খবর তাতে সম্প্রতিকালে এই দুর্ঘটনার একটি বৃহৎ দুর্ঘটনা। পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব রেল ও খড়গপুর ডিভিশন সূত্রে খবর করমন্ডল এক্সপ্রেস ও হামসফর এক্সপ্রেসের মোট ১৭ টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় জেনারেল কামরা অর্থাৎ আনরিজার্ভড কামরার যাত্রীদের পরিচয় উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে উড়িষ্যা ও রেল প্রশাসনকে।
এ বিষয়ে উড়িষ্যার স্বরাষ্ট্র সচিব সিএন-ডিজিটালকে বলেন, 'মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে। যাদের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি, তাদের ছবি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে পৌঁছানোর চেষ্টা করব, সেইখান থেকেই তাদের পরিচয়ের খোঁজ চালানো হবে।'