
করমন্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express) দুর্ঘটনায় এখন অবধি মৃত্যু (Death) হয়েছে ২৭৫ জনের। প্রাথমিকভাবে রেলের সুরক্ষা বিভাগীয় কমিশনারের দলীয় রিপোর্ট অনুযায়ী সিগনালিং বিভ্রাটের জন্যই এই দুর্ঘটনা। এরপর অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাত বা নাশকতার ছক দেখেন। এরপর তিনি এ ঘটনায় তদন্তের জন্য সিবিআই (CBI) সুপারিশ করেন।
প্রাথমিকভাবে তদন্ত নেমে সিবিআই আধিকারিকরা খড়গপুর ডিভিশনের সমস্ত উচ্চ আধিকারিকদের নিয়ে প্রাথমিক বৈঠকে বসেছিলেন। এরপর গতকাল অর্থাৎ বুধবার বালেশ্বরের সমস্ত রেল কর্মী, ইন্টারলকিং, লকম্যান, গেটম্যান সবাইকে জেরা করেন সিবিআই-এর একটি দল। পাশাপাশি তাঁরা বুধবার ফের ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
ওদিকে দুর্ঘটনার পর বুধবারই প্রথম আপ করমন্ডল এক্সপ্রেসের চাকা গড়ায়। সঠিক টাইমেই বাহানাগা বাজার অর্থাৎ দুর্ঘটনাস্থল পেরোয় শালিমার থেকে ছাড়া আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস।
বিভ্রাট পিছু ছাড়ছে না করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandel Express)। শুক্র সন্ধ্যায় উড়িষ্যার বাহানাগা বাজার এলাকায় আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এরপর আজ অর্থাৎ বুধবার বিকেল ৩টে ২০ মিনিটে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস। ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের বিভ্রাটের অভিযোগ করমন্ডল এক্সপ্রেসে। অভিযোগ সাঁতরাগাছি স্টেশনে পৌঁছতে না পৌঁছতেই বাতানুকূল কামরার এসি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঠিক সাঁতরাগাছিতে পৌঁছে একটি কামরায় এসি বন্ধ হয়ে যায়।
যাত্রা শুরুর সময় এসি বন্ধই ছিল। কিছু ক্ষণ পরে ট্রেনে বাতানুকূল যন্ত্র চালু হলেও সাঁতরাগাছিতে পৌঁছেই বন্ধ হয়ে যায় এসি। সাঁতরাগাছিতে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পরে বি-১ এবং বি-২ কোচে এসি চালু হলেও বি-৩ কোচে বন্ধই থাকে এসি।
এ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরি জানিয়েছেন, এ রকম কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত জানা নেই। এমন যদি হয়ে থাকে নিশ্চয়ই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল চেন্নাইমুখী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সময় যত গিয়েছে, ততই বেড়েছে মৃত নিহত এবং আহতের সংখ্যা। রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা এসে ঠেকেছে ২৮৮-তে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেই সংখ্যা আর বাড়েনি। তবে উদ্ধারকাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল রেললাইন ঠিক করার কাজ। এর পর মঙ্গলবার রেল জানায় আবার চলবে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় ১১৬ ঘণ্টা পর, বুধবার দুপুর ৩টে ২০ মিনিটে শালিমার থেকে ছাড়ার কথা ছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। তবে ৬ মিনিট দেরিতে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি।
বালেশ্বর (Balasore) দুর্ঘটনার (Accident) ১১৬ ঘণ্টা পর আজ বুধবার থেকে আবারও ছুটবে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express)। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, আগের রুট ধরেই যাবে ট্রেন। শুক্রবার রাতের পর বুধবার। বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর প্রায় পাঁচ দিন কেটে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই রেললাইন মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। রেল পরিষেবাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এদিকে, বুধবার থেকেই ফের আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের পরিষেবা চালু হচ্ছে। বাহানগার দুর্ঘটনাস্থল দিয়েই ছুটবে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার দুপুর ৩টে ২০ মিনিটে শালিমার থেকে ছাড়বে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একই সময়ে বাহানগা বাজার স্টেশন দিয়ে পার হবে ওই ট্রেন। রেল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট রেলপথ দিয়ে একাধিক ট্রেন চলাচল করেছে। তবে, বালেশ্বরের কাছে ট্রেনের গতি কম থাকছে । সেখান দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিবেগে যাচ্ছে ট্রেনগুলি। সদ্য রেলপথ মেরামত হয়েছে বলেই গতিবেগ কম রাখা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার করমণ্ডল ছাড়াও ওই রেলপথে ছুটে যাবে ২২৮৫৪ বিশাখাপত্তনম-শালিমার এক্সপ্রেস, ১২৮৮২ পুরী-শালিমার এক্সপ্রেস, ১৮৪১০ পুরী-শালিমার শ্রী জগন্নাথ এক্সপ্রেস ইত্যাদি। এদিকে, বুধবার বেশ কয়েকটি ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রসূন গুপ্তঃ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে ওই ট্রেনের নিহত ও আহত যাত্রীদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তেমনই পুরী বা উড়িষ্যার অন্য প্রান্তের ভ্রমণকারীরাও মহা সংকটে। আসলে যে কোনও দুর্ঘটনার পরে একদল মানুষ লুঠপাঠে নামে, তা সে যেখানেই হোক না কেন। ব্যতিক্রম নয় উড়িষ্যাও। প্রশাসনিক দিক থেকে কোনও কালেই উড়িষ্যা তেমন সুনাম অর্জন করতে পারে নি। যদিও সিবিআই রেল দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেই জানিয়েছে, এটির সঙ্গে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্ন থাকে, অন্তর্ঘাত যদি হয়েই থাকে তবে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া যায় যে স্থানীয় মানুষ বিশেষ করে রেলের সিগন্যাল ম্যান জড়িত রয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছুটা দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন উদ্ধার কাজে। মঙ্গলবার তিনি আচমকাই উপস্থিত হয়েছিলেন কটকে। গিয়েছিলেন হাসপাতালেও। এবারে তাঁর ফর্মুলার রেড লাইট নিয়ে বেশ কিছুটা একমত কেন্দ্রের অনেকেই। কাজেই ভাবার বিষয়। অন্যদিকে, মমতা অনেক আহতকে রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এবারে প্রশ্ন উঠেছে, পুরী বা উড়িষ্যার অন্য প্রান্তে এমন অনেকেই রয়েছে যাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না টাকার অভাবে। ট্রেন নেই, কাজেই ভরসা করতে হচ্ছে উড়িষ্যা পরিবহনের উপর। এখানেই এক প্রকার চাপ দিয়ে দিয়ে টাকা তুলছে ওই বাসগুলি। যেখানে ভাড়া ১০০০ -১২০০ টাকা, সেখানে কলকাতায় আসার জন্য দর দেওয়া হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা। অনেকেই বাসে জায়গা না পেয়ে হোটেলে ফিরত যাচ্ছে, কিন্তু এবারে হোটেলওয়ালারাও দর বাড়িয়ে দিচ্ছে। অসহায় অবস্থা। প্রশাসনের কানে যেতে তারা কিছুটা তৎপর হয়েছে। পরিবহনের ইন্সপেক্টররা বার্তা দিয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ২৫ হাজার টাকা অবধি জরিমানা হতে পারে। করোনাকালে এমনটিই হয়েছিল। এই ধরনের কুকীর্তি গ্রহণযোগ্য নয়, কাজেই ফের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে যাত্রীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। বাংলার দিদি কি করেন সেটাই দেখার।
উল্লেখ্য, ভয়াবহ দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর বুধবার থেকে আবার চলবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বুধবার বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ শালিমার থেকে ছাড়বে করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
করমণ্ডল (Coromandel Express) দুর্ঘটনায় (Accident) আহত এবং নিহতদের পরিবারপিছু আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ওই ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে চেক তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
জানা গিয়েছে, সোমবার জেলাশাসকদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্য়ের মুখ্য়সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সূত্রের খবর, জেলাশাসকদের দ্রুত নিহত ও আহতদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। সেই তালিকা নবান্নে পৌঁছনোর পর বুধবার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোমবারই ৩ দিনের সফরে দার্জিলিং যাওয়ার কথা ছিল মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দার্জিলিং সফর বাতিল করেন। নবান্নের তরফে সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিলের কথা জানানো হয়।
অবশেষে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার (Coromandel Train Accident) ৫১ ঘণ্টা পরে বালাসোরের (Balasore) রেলপথে ফের চালু হল ট্রেন। দীর্ঘ ৫১ ঘণ্টার টানা চেষ্টায় মিলল সাফল্য। ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বাহানাগা। রবিবার রাতে শুরু হল ট্রেন পরিষেবা। পরপর দু’টি মালগাড়ি এবং আপ লাইনে একটি ট্রেন চালানো হয়। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রেললাইনের কাজ পরিদর্শন করলেন খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw)। ট্রেন চালুর পর আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন তিনি। মৃত ও আহতদের নিয়ে কথা বলার সময় কার্যত কেঁদে ফেললেন রেলমন্ত্রী। হাত জোড় করে ভগবানকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি। বিপর্যয়ের পর থেকে দুর্ঘটনাস্থলেই রয়েছেন তিনি।
প্রত্যেকের চোখে-মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। তারমধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হল রেল পরিষেবা। দুর্ঘটনার পর থেকে ট্রেন পরিষেবা ফের স্বাভাবিক ছন্দে আনার নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রবিবার রাতে ওই রেলপথ দিয়ে ডাউন লাইনে প্রথম ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু করে রেল। রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ডাউন লাইনে প্রথমে একটি মালগাড়ি চালানো হয়। এর পর রাত ১১টা ৩৯ মিনিটে চালানো হয় আরও একটি মালগাড়ি। আপ লাইনে প্রথম ট্রেনটি চালানো হয় রাত ১২টা ৫ মিনিটে। আজ, সোমবার সকালেও বালাসোরের সেই রুট দিয়েই এগোল হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
ট্রেন চালুর পরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। শনিবার সকাল থেকে তিনি রয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলেই। রেলমন্ত্রী বলেন, 'দুটি ট্র্যাক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ৫১ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এখন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ট্র্যাক লাইনটি এখন ট্রেন চলাচলের জন্য উপযুক্ত।'
অশ্বিনী বৈষ্ণব কর্মরত কর্মকর্তা এবং শত শত কর্মীদের উপস্থিতিতে বালেশ্বর রেললাইনে ট্রেন চলাচলের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। পুনরুদ্ধার করা ট্র্যাক ধরে ট্রেনটি চলার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তাদের ও তাঁকে হাত জোড় করে প্রার্থনা করতেও দেখা গিয়েছে। টুইটারে রেলমন্ত্রী বলেন, 'ডাউন-লাইন পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হয়েছে। সেকশনে প্রথম ট্রেন চলাচল।'
ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে শনিবার পর্যন্ত বাংলার ৬২ জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকার এই খবর জানিয়েছে। এছাড়াও আহতের সংখ্যা ৫৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনকে ওড়িশার হাসপাতালে এবং ১১ জনকে এরাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতদের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা।
নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে, বালেশ্বর রেল দুর্ঘটনায় আহদের চিকিৎসার জন্য শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৭০টি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ৩৪ জন চিকিৎসক। এছাড়াও আহত যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ১০টি বাস পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে ২০টি মিনি ট্রাকে করে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থলে শনিবার দুপুরেই গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে হাসপাতালে যান। আহতদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রেলের আধিকারিকদের তৈরি করা ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ভুল সিগন্যালের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জ্ঞানেশ্বরীর ভয়াবহতাকেও হার মানাল করমণ্ডলের বীভৎসতা! যেদিকে দু-চোখ যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে শুধুই মৃতদেহের সারি। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও অবধি মৃতের সংখ্যা ২৭৫। আহত প্রায় হাজার জন। বিভিন্ন রাজ্যের সরকার সহ রেলমন্ত্রকের তরফেও ঘোষণা করা হয়েছে আর্থিক সাহায্য। কিন্তু প্রশ্ন? অসংরক্ষিত মৃত যাত্রীদের সহায়তা কোথায়? এই নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
পার্থ ভৌমিক বলেন, মর্মান্তিক। বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে রয়েছি। বাংলা থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ছেড়েছিলো। কাজেই জানা দরকার অবশ্যই কোন কোন যাত্রী আহত হলেন বা প্রয়াত হলেন। এখানে বাঙালি, অবাঙালির প্রশ্ন আসছেই না। কিন্তু যা আসছে সমস্ত যাত্রীই হাওড়া থেকেই ট্রেনে উঠেছিলেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অকুস্থলে গিয়েছিলেন শনিবার। তিনি বরাবরই দায়িত্বশীল। তিনি গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে উপদেশ দিয়ে এসেছেন। তাঁর এবং আমাদের সকলেরই দায়িত্ব যাঁরা নিহত হলেন বা আহত তাঁদের ঠিকানা বের করা। কিন্তু রেল সংস্থা এখনও পর্যন্ত আমাদের পরিষ্কার তথ্য দিতে পারে নি। একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যাঁরা অসংরক্ষিত কামরায় ছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের নাম ঠিকানা বের করা তো প্রায় অসম্ভব বিষয়। এদের পরিবার সরকারি অর্থ সাহায্য পাবে কি করে আমার মাথায় আসছে না। প্রধানমন্ত্রী তো সমস্ত অর্থনৈতিক লেনদেনে এখন আঁধার কার্ড বা প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করেছেন, তাহলে ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরার যাত্রীদের টিকিট কাটার সময়ে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? সেটি করলে তো সকলের নাম ঠিকানা বের হয়ে যেত। ভাববেন কি আগামী দিনে?
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেন, এখনও পর্যন্ত ভয়ঙ্কর ঘোর আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি নি। আমি রাজ্যের পরিবহন দায়িত্বে আছি। কাজেই গত দু'দিন ধরে অসংখ্য ফোন আসছে, দাদা কি হলো। প্রথমত, আমি মনে করি এটি সম্পূর্ণ রেলের গাফিলতি, তা সেটি সিগন্যালের ত্রুটি হোক কিংবা অন্য কিছু। মেনে নিতেই হবে ভারতবর্ষের সবচাইতে বড় বিপর্যয় ঘটলো এই করমণ্ডলের দুর্ঘটনায়। প্রধানমন্ত্রী যদিও বলেছেন, ত্রুটি যারা করেছে তারা শাস্তি পাবে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের কতৃপক্ষ কি এর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে? একদিকে রেল নিয়ে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, তখন লাইনের সমস্যা নাকি সিগনালের, মানুষ শুনবে কেন? আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন দুর্ঘটনা হওয়ার পর। ঘুরে দেখেছেন। একটি এক্সপার্ট দলকে পাঠানো হয়েছে। বাকি তো দুর্ভাগ্যের।
একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। আজ কেন্দ্রীয় সরকার বা মোদী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঁধার কার্ড এবং প্যান কার্ডের লিঙ্ক চালু করেছে। আমার প্রশ্ন অসংরক্ষিত যাত্রীদের কি হবে? আজ যদি জেনারেল টিকিটেও ওই লিঙ্ক চালু থাকতো, তবে ওই অসহায় মানুষ, যাঁরা বেঁচে নেই, তাঁদের পরিবার কি এই অর্থ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতো না। বিভিন্ন রেল দফতরের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমার প্রস্তাবটি নাকি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু রেল বোর্ডকে জানাবে কে? মানে বেড়ালের গলায় ঘন্টি বাঁধার লোক নেই। সুপার এক্সপ্রেস ইত্যাদি চালু হবে শুনছি। রেলের এই হালত থাকলে লাভ কি?
মণি ভট্টাচার্য: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় (Coromandel Express Accident) এখনও অবধি মৃত ২৮৮। আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০০-এর বেশি। এ অবস্থায় একদিকে এখনও যেমন চলছে উদ্ধারকার্য, তেমনই চলছে বিভাগীয় তদন্ত। এ অবস্থায় আনরিজার্ভড বা জেনারেল কামরায় থাকা যাত্রীদের অধিকাংশ মৃতদেহ সনাক্ত করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কতৃপক্ষ। সূত্রের খবর, রিজার্ভড কামরার যাত্রীদের তথ্য ঘেঁটে তাঁদের মৃতদের পরিবারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে রেল। কিন্তু কিছু মৃতদেহ বা আহতের পরিচয়ের খোঁজ এখনও পায়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
এই সমস্যার সমাধান করতে রেলের ওয়েবসাইটে বা বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের ছবি দিয়ে খোঁজ চালানো হবে, এমনটা আগেই সিএন-ডিজিটালকে জানিয়েছিল ওড়িশার মুখ্য সচিব। এবার দক্ষিণ পূর্ব রেলের ওয়েবসাইটে এই দুর্ঘটনায় আহত ও মৃতের ছবি সহ তথ্য আপলোড করেছে দক্ষিণ পূর্ব রেল। দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, 'আপাতত যাদের স্পষ্ট ছবি পাওয়া গেছে তাদের ছবি আপলোড করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিবারকে মৃতদেহ বা আহত ব্যক্তিদের তুলে দেওয়া হবে।'
নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট গুলির মাধ্যমেই খোঁজ চালানো হচ্ছে।
নিহতদের খোঁজের জন্য
আহতদের খোঁজের জন্য
ইতিমধ্যেই ট্রেন দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কতৃপক্ষ। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, সিগন্যালিং বিভ্রাটের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।' সাম্প্রতিক কালে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেনি বলেই দাবি রেলের। এর পিছনে আদতে কী কারণ রয়েছে তা নিয়ে উচ্চবিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অর্চনা জোশি। তিনি জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনার আসল কারণ তদন্তের রিপোর্টেই পাওয়া যাবে। যদিও এই ঘটনায় রেলের গাফিলতি বলেই দাবি সাধারণের। পাশাপাশি রেল আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ওড়িশার (Odisha) বালেশ্বরে তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে ভয়াবহ (Train Accident) পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনার পরই শনিবার দুর্ঘটনাস্থলে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। আর সেখানে পৌঁছতেই তিনি জানালেন, 'দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।' আজ, শনিবার সকাল থেকেই দুর্ঘটনাস্থলে একে একে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার সকালে নয়াদিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তারপরেই বালেশ্বরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। শনিবার বিকেল পৌনে ৪টা নাগাদ বালেশ্বরে পৌঁছন মোদী। এরপর রেলমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রের আরও এক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। খতিয়ে দেখেন উদ্ধারকাজ। ঘটনাস্থলে তিনি ওড়িশা মন্ত্রিসভার সচিব ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন। আহতদের এবং তাঁদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এরপর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বালেশ্বর হাসপাতালেও যান প্রধানমন্ত্রী। আহতদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কথা বলেন চিকিৎসকদের সঙ্গেও। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার কোনও চেষ্টাই বাকি রাখবে না। এটা একটা গুরুতর ঘটনা। প্রতিটি কোণ থেকে এর তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।'
করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromondol Express) দুর্ঘটনায় মৃতের (Dead) সংখ্যা ২৫০ ছাড়ালো। আহত ১০০০ এর বেশি। এখনও অবধি ওড়িশা সরকারের থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এই দুর্ঘটনার জেরে দক্ষিণভারত গামী সমস্ত ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কতৃপক্ষ। এ ঘটনায় আজ সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
হাড়হিম করা এই ট্রেন দুর্ঘটনা খড়গপুর ডিভিশনের বালেশ্বর স্টেশনের কাছে। এই দুর্ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। ওখানে ধাক্কা মারে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। কিছু কামরা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। উদ্ধারকাজে নেমেছে বায়ুসেনা, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সহ আরও সশস্ত্র বাহিনী, সঙ্গ দিয়েছে স্থানীয়রাও। তাঁদের সহযোগিতায় প্রাণে বেঁচেছে কেউ কেউ। আপাতত রেল মন্ত্রী টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ টাকা এবং মাইনর ইনজুরি তে ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে টুইট করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এবং শুভেন্দু অধিকারী সহ অনেকেই। ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে ওই লাইনে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কতৃপক্ষ। পাশাপাশি দক্ষিণের সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে খবর।
হেল্পলাইন হাওড়া: ০৩৩২৬৩৮২২১৭
হেল্পলাইন শালিমার:৯৯০৩৩৭০৭৪৬
হেল্পলাইন খড়গপুর: ৮৯৭২০৭৩৯২৫,৯৩৩২৩৯২৩৩৯
হেল্পলাইন বালাসোর: ৮২৪৯৫৯১৫৫৯,৭৯৭৮৪১৮৩২২
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা (Train Accident)। বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Howrah-Chennai Coromandel Express)। সূত্রের খবর, ওড়িশার (Odisha) বালেশ্বর স্টেশনের কাছে এই ট্রেনের একাধিক কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। মালগাড়ি ও এক্সপ্রেসের মুখোমুখি ধাক্কার ফলেই এই দুর্ঘটনা বলে জানা গিয়েছে। ট্রেনটি শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। আর চেন্নাই যাওয়ার আগেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হয়েছেন বলে খবর। ১৩২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে, জানালেন ওড়িশার মুখ্যসচিব। রেলমন্ত্রকসূত্রে খবর, ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১০০ জন ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু কীভাবে একই লাইনে মালগাড়ি ও এক্সপ্রেস ট্রেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জানা গিয়েছে, প্রবল সংঘর্ষে তিনটি বাদে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সবকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। এমনকি গতি এতটাই ছিল যে, মালগাড়ির পাঁচটি বগিও লাইনচ্যুত হয়েছে। এতটাই জোরে দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওপরে। ইতিমধ্যে খড়্গপুর থেকে বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী দল রওনা দিয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে। সূত্রের খবর, উদ্ধারকারী ও চিকিৎসকদের ২ টি দল পাঠানো হয়েছে ও প্রায় ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে।
তবে দুর্ঘটনার তীব্রতা ও ভয়াবহতা দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা অনেক হতে পারে। মুখোমুখি সংঘর্ষের পর স্থানীয়রা প্রথমে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। এরপর শুরু হয় উদ্ধারকার্য। তবে কীভাবে দুটি ট্রেন এক লাইনে এসে পড়ল? সিগনালিংয়ের কোনও সমস্যা নাকি কারোর গাফিলতির জেরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখার কাজও শুরু হয়েছে।