আসামিকে বাড়তি সুবিধে কেন? এই প্রশ্ন তুলে জেল সুপারকে আর্থিক জরিমানা অনাদায়ে ৭দিন জেলের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) সুপার দেবাশিষ সরকারের উদ্দেশে এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার কয়লা পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে (vikash Mishra) অযথা নানা সুবিধা দিয়েছেন। এই অভিযোগে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অশোককুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন জেল সুপারকে। তাঁর উপর ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে জেলের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্ট সূত্রে খবর, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে জরিমানার অর্থ দিয়েছেন কিনা জেল সুপার? জরিমানার টাকা জেল সুপার দিতে ব্যর্থ হলে তাঁকে ৭ দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এমনটাই কড়া নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের।
আদালত অবমাননা করায় জেল সুপারের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। 'একজন সরকারি আধিকারিক হয়ে এই ধরনের কাজ আইন সংগত নয়।', মন্তব্য আদালতের। এদিন কোর্টে সশরীরে হাজির হয়ে জেল সুপার ক্ষমা চাইলেও, সেই ক্ষমা গ্রহণ করেনি আদালত। হাইকোর্টের মন্তব্য, 'রাজ্যের সবথেকে বড় সংশোধনাগারের দায়িত্বে আপনি। সেই আপনি যদি অন্য আসামিদের সাথে দ্বিচারিতা করেন, এটা একেবারেই কাম্য নয়।'
জানা গিয়েছে, কয়লা-কাণ্ডে অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে জেলে রেখেই চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর না করে অভিযুক্ত বিকাশকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার। সেই কারণেই আদালত অবমাননার মামলায় জরিমানার নির্দেশ জেল সুপার দেবাশিস সরকারকে।
কয়লা-কাণ্ডের তদন্তে বালিগঞ্জ আর্ল স্ট্রিটের এক রিয়েল এস্টেট সংস্থার অফিসে ইডি অভিযানে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নগদ (Cash Recover) উদ্ধার হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই অর্থ উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) হাজরা রোডের এক ধাবার মালিকের যোগাযোগ রয়েছে। সেই ব্যক্তির নাম মনজিৎ সিং বলে খবর। শুধু দক্ষিণ কলকাতার হাজরা রোড নয়, শহরের একাধিক জায়গায় এই ধাবার শাখা রয়েছে। তবে ইডি (ED) সূত্রে খবর, অর্থ উদ্ধারের ঘটনার পর থেকেই 'পলাতক' মনজিৎ সিং।
এদিকে কয়লা-কাণ্ডের তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানতে পেরেছে, এই মনজিৎ সিংয়ের ধাবার ফুড চেনের হাত ঘুরে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে রিয়েল এস্টেট সংস্থার মালিক বিক্রম শিখারিয়াকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ফলে উদ্ধার হওয়া বিপুল টাকার উৎস কী, জানতে ফের বিক্রম শিখারিয়াকে সিজিওতে তলব করতে পারে ইডি। এই ব্যক্তির সঙ্গে একাধিক প্রভাবশালীর যোগসূত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এদিকে উদ্ধার হওয়া ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ছাড়াও একটি ডেস্কটপ, কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
খাস কলকাতায় ফের নগদ টাকা উদ্ধার (Cash Recover)। ইডি অভিযানে (ED Raid) বালিগঞ্জের এক সংস্থা থেকে উদ্ধার হয়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। বুধবার সন্ধ্যায় এই নগদ গুণতে আনা হয়েছিল টাকা গোনার মেশিন। জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও চলেছে টাকা গোনার কাজ। এমনকি এই অভিযানে কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তারা নেতৃত্ব দেন। অভিযোগ, কয়লা-কাণ্ডের (Coal Case) কালো টাকা ঘুরে এই সংস্থার মাধ্যমে সাদা করা হয়েছে। একাধিক জায়গায় বিনিয়োগ হয়েছে সেই অর্থ।
জানা গিয়েছে, ইডির ১২-১৩ জন কর্তারা মনজিত সিং জিততার খোঁজে আসেন তদন্তকারী অফিসাররা। মনোজিতকে না পেয়ে বিক্রম শিখারিয়া নামে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে ইডি। কোথাও টাকা লুকনো রয়েছে কিনা সেই খোঁজেও কেন্দ্রীয় সংস্থা। পাশাপাশি সংস্থার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইডি সূত্রে খবর, কয়লা পাচারকাণ্ডে বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি ঘেঁটে এই বেসরকারি সংস্থার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। খোঁজ মিলেছে এমন আরও একাধিক সংস্থার।
কয়লা পাচার-কাণ্ডে অভিযুক্ত ৮ জন ইসিএল (ECL) আধিকারিককে মঙ্গলবার নিয়ে আসা হয় আসানসোল (Asansol) আদালতে। গত ৩১-ই অগাস্ট তাঁদের আসানসোল আদালতে (court) নিয়ে এলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজত নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো আজ আবার তাঁদের আসানসোলের আদালতে নিয়ে আসা হয়। তবে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বিকাশের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে প্রেসিডেন্সি জেল (jail) থেকে আসানসোল বিশেষ সিবিআই (CBI) আদালতে নিয়ে আসে সিবিআই।
প্রসঙ্গত, কয়লা পাচার কাণ্ডে নাম জড়ানো বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এরপর এই মামলায় ইতিমধ্যেই বিকাশ সহ ইসিএলের বর্তমান এবং প্রাক্তন মিলিয়ে মোট ৮ জন কর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের সবাইকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২৭ শে সেপ্টেম্বর।
বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের (Minister Malay Ghatak) ৫টি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই (CBI)। নেপথ্যে কয়লা পাচার-কাণ্ড (Coal Case)। প্রায় ৫ ঘণ্টা মন্ত্রীর আসানসোল-কলকাতার একাধিক জায়গায় হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। সে প্রসঙ্গে এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বলেন, আজ আমার বাড়ি, আমার ভাইয়ের বাড়ি এবং ছেলের বাড়িতে সিবিআই আসে। আমার থেকে ফোন ছেয়েছিল,তিনটি ফোন দিয়ে দিয়েছি। সঙ্গে কাছে ১৪ হাজার টাকা ছিল, সেটা ওরা নেয়নি। আমি যেখানে থাকি সেখানে সরকারি আবাসন। সেখানেও সিবিআই আসে, আমার খুব অবাক লাগল, আমাকে ডাকলো না, তলব করল না, আচমকাই হাজির হয়ে গেল। শুধুমাত্র বদনাম করার জন্য এই অভিযান। আমাকে আসানসোল পুরসভা ভোট, আসানসোল লোকসভা ভোট উপনির্বাচনের সময়েও ডেকেছে। আমি তো সব উত্তর দিয়েছি।'
১৪ সেপ্টেম্বর ইডির তলব প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, আমি ১৪ সেপ্টেম্বর তলবের কোনও চিঠি বা মেল পাইনি। আমাকে ডাকবে, আমি যাবো, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। একটা লোক যদি বলে আমি কয়লা নিয়েছি বা কয়লা পাচারে জড়িয়ে তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।
এদিন সিবিআই হানা প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'আদালতের নির্দেশে এই তদন্ত। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, আদালত শাস্তি দেবে। তাই এই তদন্তকে প্রভাবিত করার কোনও ইচ্ছা নেই বিজেপির। আমরা শুধু আবেদন করেছি যত দ্রুত সম্ভব এই তদন্ত শেষ হোক। আগে বাংলার মানুষ রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে সকালে উঠতেন, এখন বালি আর কয়লা শুনছেন।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'বাংলার আইনমন্ত্রী বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত। পার্থ, অনুব্রত, এই তালিকায় আরও অনেকে আছে। ভাইপো ম্যানেজ করে আসায় কি মলয় ঘটক ঢুকে গেলেন তালিকায়। ভাইপোর থেকে তথ্য জেনে এখন কি মলয় ঘটক?'
কয়লা পাচার মামলার তদন্ত করছে রাজ্যের সিআইডি(CID)। ধৃতদের জেরায় পাওয়া তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রাজ্য পুলিসের(police) কর্মী এবং আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা চায় তদন্তকারীরা। তাই এবার রাজ্য পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তলব করা হয়েছে ভবানী ভবনে(Bhabanibhawan) বলে সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যে সিআই (CI), আইসি (IC) ব়্যাঙ্কের বেশ কয়েকজন পুলিস আধিকারিককে তলব করা হয়েছে। যাঁরা এক সময়ে কোল বেল্টে কর্মরত ছিলেন বলে সূত্রের খবর। এই কয়লা পাচার কাণ্ডে এর আগে সিআইডির হাতে গ্রেফতার(arrest) হয়েছে আব্দুল বারিক মণ্ডল ও সঞ্জয় সিং নামে এক ব্যবসায়ী। আজ থেকে একাধিক পুলিস আধিকারিকদের ডেকে জেরা পর্ব শুরু হয়েছে এমনটাই খবর সিআইডির সূত্রে। ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত খনি অঞ্চলের তিন থানার দায়িত্বে থাকা মোট ১০ কর্মী, আধিকারিককে জেরা করতে চায় সিআইডি ।
সূত্রের খবর, আজ দুপুর একটার পর ভবানীভবনে প্রথম পর্বের জেরা শুরু হবে। প্রথমদিনে তিন পুলিস আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর। আগামী তিনদিন ধরে চলবে জেরাপর্ব। শুক্রবার তিনজন এবং শনিবার চারজনকে জেরা করবে সিআইডি। খনি অঞ্চলে তাঁদের ভূমিকা কি ছিল, তা খতিয়ে দেখতেই সিআইডি তলব । প্রসঙ্গত, একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যে নিযুক্ত আইপিএস আধিকারিকদের ভূমিকা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। দিল্লিতে ৮ আধিকারিককে তলব করেছে ইডি। এমন আবহে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে চাইছে সিআইডিও।
কয়লা-কাণ্ডে (Coal CAse) এবার ইডির নজরে রাজ্যের পদস্থ পুলিশ কর্তারা (IPS in Bengal)। অন্তত ৮ জন আইপিএস-কে ১৫ অগাস্টের পর দিল্লিতে তলব করেছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED)। সম্প্রতি কয়লা পাচার-কাণ্ড নিয়ে দিল্লিতে ইডির উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের পরেই এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা। এমনটাই সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিং থেকে কোটেশ্বর রাও-সহ সুকেশ জৈন, তথাগত বসু, রাজীব মিশ্র-সহ ৮ জনকে তলব করেছে ইডি। ইডি যখন তদন্তের গতি বাড়াতে কয়লা পাচার-কাণ্ডে কোমর বাঁধছে, তখন গোরু পাচার-কাণ্ডে বৃহস্পতিবার সিবিআই গ্রেফতার করেছে অনুব্রত মণ্ডলকে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এই মামলায় অভিযুক্ত দেখিয়ে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে তাঁর বাড়ি এবং অফিসে চলেছে তল্লাশি।
বুধবার অনুব্রতকে দশমবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সেই হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। এ নিয়ে মোট ৯ বার হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তারপরেই এদিন সকালে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বীরভূম তৃণমূলের সভাপতির বোলপুরের বাড়ি ঘিরে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সিবিআই।