ফের খাস কলকাতায় বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধার। বড়বাজারে ৪৩ লাখ টাকা-সহ গ্রেফতার তিন। এত বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এল, তাঁদের কাছে কোনও সদুত্তর নেই। জানা গিয়েছে, একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভিত্তিতে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নজরদারি চালিয়ে বিমল ওঝা, আমান কুমার তিওয়ারি এবং বিমল কুমার দুদানিকে ৪০/১, স্ট্র্যান্ড রোডের কাছে আটক করা হয়। তাঁদের কাছে থাকা দুটি ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করে তল্লাশি চালানো হলে ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।
কেন এই অর্থ তাঁরা বহন করছিল, সেই সংক্রান্ত কোনও বৈধ নথি দিতে পারেনি অভিযুক্তরা। তাই তাঁদের গ্রেফতার করে বড়বাজার থানা সিআরপিসি এবং আইপিসির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে। এই মুহূর্তে বেআইনি নগদ উদ্ধারের নিরিখে গত বছর থেকে শিরোনামে বাংলা। সে নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে অর্পিতার মুখোপাধ্যায়ের জোড়া ফ্ল্যাটে নগদ উদ্ধার হোক বা ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের গাড়ি। লক্ষ-কোটি টাকা উদ্ধারে চক্ষু ছানাবড়া বঙ্গবাসীর। এই তালিকায় নাম আছে গার্ডেনরিচ এবং হাওড়া স্টেশনেরও। সেই তালিকায় এবার নতুন সংযোজন বড়বাজারের ঘটনা।
টালিগঞ্জ, গার্ডেনরিচের পর ফের খাস কলকাতায় বিপুল নগদ অর্থ উদ্ধার (Cash Recovery)। এবার ঘটনাস্থল পোস্তা থানা (Posta PS) এলাকার দিগম্বর জৈন টেম্পল রোড। জানা গিয়েছে, ১০ নম্বর দিগম্বর জৈন টেম্পল রোড থেকে পোস্তা থানার পুলিস (kolkata Police) দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই ব্যক্তিকে বিপুল নগদ-সহ প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করেছে। দীর্ঘদিন তাঁরা টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন অফিস থেকে টাকা নিতেন। এমনটাই জেরায় পুলিসকে জানিয়েছেন দুই ধৃত। তাঁরা জানায়, 'কলকাতার কটন স্ট্রিটের এক অফিস থেকে ১০ টাকার নোটের একটি নাম্বার দেখিয়ে নগদ ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে পোস্তার ১০ নম্বর দিগম্বর টেম্পল রোডে আসলে পুলিস তাঁদের আটক করে।'
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতরা দু'জনেই টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তাঁদের কাছে এতো টাকা বহনের কোনও বৈধ নথি ছিল না। এমনকি, পুলিসি জেরায় অসংগতি পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। শনিবার তাঁদের আদালতে তোলা হবে। জানা গিয়েছে, ধৃত দুই জন বাবা-ছেলে। চলতি বছর রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকে বিপুল নগদ উদ্ধারে চাঞ্চল্য বাংলাজুড়ে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের তালিগঞ্জ-বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট কিংবা হাওড়ায় ঝাড়খণ্ড বিধায়কের গাড়ি। লক্ষ-কোটি টাকা উদ্ধারে চাঞ্চল্য জনমানসে। সম্প্রতি গার্ডেনরিচের এক বাড়ি থেকে বিপুল নগদ উদ্ধার করেছে ইডি। এমনকি হাওড়া স্টেশনেও সন্দেহভাজন ব্যক্তির থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ টাকা।
টাকার পাহাড় উদ্ধারের এই ঘটনাগুলোর মধ্যে নয়া সংযোজন পোস্তার দিগম্বর জৈন টেম্পল রোডের ঘটনা।
গার্ডেনরিচে (Gradenreach ED) পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে প্রায় ১৮ কোটি (cash recovery) টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত মূল অভিযুক্ত। আমির খান নামে ওই অভিযুক্তকে গাজিয়াবাদ (Ghaziabad) থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিস। শনিবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়েছিল। এদিকে, পার্থ-অর্পিতার ঘটনার পর আমির খানের বাড়ি থেকেও প্রায় ১৮ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। ট্রাঙ্কে ভরে সেই টাকা পাঠানো হয়েছিল এসবিআই ব্যাঙ্কে। কিন্তু এই ইডি অভিযানের সময় থেকেই নিখোঁজ ছিলেন আমির। অনলাইন গেমিংয়ের ফাঁদ পেতে প্রতারণা চক্র খুলেছিলেন পরিবহণ ব্যবসায়ী আমির। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, গা ঢাকা দেওয়ার পর একাধিকবার সিম বদলিয়ে পুলিসকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আমিরত খান। ইতিমধ্যে মোমিনপুরের বাসিন্দা জুনেইদ নামে এক ব্যক্তির যোগসূত্রে অর্থ উদ্ধার-কাণ্ডে উঠে এসেছে। তবে এই ঘটনায় পুলিসের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ একটি ব্যাঙ্ক এক বছর আগে পার্ক স্ট্রিট থানায় প্রতারণার অভিযোগ জানালেও কোনও পদক্ষেপ হয়নি। এমনকি গার্ডেনরিচ থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে মূল অভিযুক্তর বাড়ি। যে বাড়ি থেকে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি। কীভাবে এই বিপুল নগদ সম্পর্কে অন্ধকারে ছিল পুলিস? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যদিও কেন্দ্রীয় এই সংস্থা নয়, বরং কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা শাখা। অপরদিকে, ১০ সেপ্টেম্বর গার্ডেনরিচে পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানের ছেলে আমির খানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ইডির কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৯৭টি অ্যাকাউন্টে গেমিং অ্যাপ থেকে তোলা টাকার লেনদেন হত। ভিনরাজ্যের বহু বাসিন্দাকে টাকা দিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া করার তথ্যও সামনে এসেছে। যাঁদের নামে এই অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল তাঁদের সন্ধান এই মুহূর্তে চালাচ্ছে ইডি।
প্রাথমিকভাবে ইডি পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে। যেখানে রাখা হয় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে সোমবার অ্যাকাউন্টগুলি ও তার নথি পরীক্ষা করবেন ইডি আধিকারিকরা। এই গেমিং অ্যাপ থেকে তোলা কালো টাকা সাদা করতে বাবার পরিবহণ ব্যবসায় কি বিনিয়োগ করেছিল আমির খান? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেনা ইডি আধিকারিকরা। তাই তদন্তকারীদের রাডারে রয়েছে এই পরিবহণ ব্যবসাও।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত আমিরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৭ কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ। জানা যায়, পার্কস্ট্রিট থানায় আগেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে একটি ব্যাঙ্ক। অভিযোগ অনুসারে, সাড়ে ১৭ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে ইতিমধ্যে। তাহলে বাকি সাড়ে ২৯ কোটি টাকা কোথায়? ব্যাঙ্ক থেকে কি সব টাকা তুলে নিয়েছিল আমির? সব টাকা তুলে না নিলে বাকি টাকা কোথায়? তাহলে কি সেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে আমির? প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছে ইডি।