যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়া উদ্যোগ কলকাতা মেট্রোর। এবার লম্বা পথের যাত্রা আর একঘেয়ে লাগবে না। কারণ যাত্রীদের জন্য এবার মেট্রো কামরাতেই 'টম অ্যান্ড জেরি' কিংবা 'ছোটা ভীম'-এর মতো জনপ্রিয় কার্টুন দেখানোর ব্যবস্থা করল কলকাতা মেট্রো রেল।
শুক্রবার থেকেই এই বিশেষ ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। মূলত স্কুল পড়ুয়াদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। এতদিন মেট্রো রেলের ভেতরের বোর্ডে পরবর্তী স্টেশনের নাম দেখানো হত।
সেই বোর্ডেই এবার থেকে স্টেশনের পাশাপাশি এই সব জনপ্রিয় কার্টুন দেখানো হবে। আপাতত দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত চলাচল করা নর্থ-সাউথ মেট্রোতেই এই কার্টুন পরিষেবা পাবেন যাত্রীরা।
ছোটদের পছন্দের কার্টুন চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম পছন্দের ছোটা ভীম (Chhota Bheem) এবার বড় পর্দায় আসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই সিনেমার টিজার মুক্তি পেয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সিনেমার নাম, 'ছোটা ভীম দা কার্স অফ দামায়ান'। সিনেমায় এক ঝাঁক নতুন মুখের সঙ্গে থাকবেন, বলিউডের কিছু অভিজ্ঞ অভিনেতারা। নানা ধারার ছবিতে অভিনয় করে, এবার ছোটদের সিনেমাতেও দেখা যাবে অভিনেতা অনুপম খের-কে।
গুরু শম্ভু-এর চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। ছোটা ভীমের চরিত্রে অভিনয় করবেন, যজ্ঞ ভাসিন। সিনেমার পর্দায় বাস্তবে দেখা যাবে চুটকি, রাজু, কালিয়া, ঢোলু ও ভুলুর চরিত্রদের। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন রাজীব চিলাকা, প্রসঙ্গত ছোটা ভীম-এর এই গল্প তাঁরই সৃষ্টি। তাই নিজের সৃষ্টিকে এবার আরও বেশি উজ্জীবিত করতে, চরিত্রগুলিকে বড় পর্দায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিচালক।
সিনেমার টিজার দেখার মতো। কার্টুনের পর্দার ঢোলকপুর রয়েছে একইরকম। ভীমকে দেখা গিয়েছে ধামাকেদার অ্যাকশন দৃশ্যে। সিনেমায় ভীম এবং তার সেনাকে দেখা যাবে বুদ্ধির জোরে জিত হাসিল করতে। কিন্তু কার্টুনের বাইরে বেরিয়ে পর্দায় ছোটা ভীমকে আরও বেশি করে জীবন্ত হয়ে যেতে দেখলে বাচ্চাদের পছন্দ হতে বাধ্য। ২০২৪ সালের মে মাসে মুক্তি পেতে চলেছে সিনেমাটি।
সৌমেন সুরঃ কার্টুন ছবি সম্পর্কে সত্য়জিৎ রায়ের বিশেষ উৎসাহ ছিল। তিনি যখন ডি.জে কিমারে কাজ করতেন তখন থেকেই রেবতীবাবুর সঙ্গে আলাপ। তিনি রেবতীভূষণকে বলেছিলেন, আপনাকে সঙ্গে নিয়ে আমি একটা কার্টুন ছবি করবো। কিন্তু সেটা পরে সম্ভবপর হয়নি। রেবতীবাবু প্রচন্ডভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। একসময় কলকাতায় তিনি খুব কম দিনই থাকতেন। সত্য়জিৎ রায়ের খুব উঁচু ধারণা পোষন করতেন রেবতীভূষণের প্রতি। ওনার ইলাসট্রেশানের কোনো কাজে কখনও কখনও কার্টুনের আভাস চোখে পড়তো। শতরঞ্জকে খিলাড়ি ছবিতে কার্টুনের ব্য়াপার ছিল, সে সম্পর্কে সত্য়জিৎ বাবুর সঙ্গে রেবতীভূষণের আলোচনা হয়নি।
তখনকার দিনে ফিল্ম পোস্টারে কার্টুনের চল ছিল। একটা সময়ে কলকাতা চলচ্চিত্রের সঙ্গে কার্টুনের নিবিড় যোগ ছিল। দর্শক সচেতনতার জন্য় আমাদের আরো বেশী করে শিক্ষামূলক তথ্য়চিত্র, শর্ট ফিল্ম ও কার্টুন ছবি দরকার। ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ক ঘটনাকে ভিত্তি করে সেলুলয়েডের কাজ বেশী হওয়া প্রয়োজন। সিনেমা আজকের দিনে বিশেষ শিল্প মাধ্য়মরুপে চিহ্ণিত ও স্বীকৃত। এর সুদূরপ্রসারী আবেদন অগ্রাহ্য় করার নয়। শিক্ষিত রুচিশীল দর্শক তৈরি না হলে সংস্কৃতির সংকট কিছুতেই কাটবে না। যারা নতুনভাবে আসছেন তাদের প্রতি একটা দায়িত্ব থেকেই যায়। নতুন মন্ত্রে উজ্জীবিত হরার সঙ্গে ভবিষৎ পরিকল্পনাও তারা ঠিক করুন।
তবে বাংলায় সেই তুলনায় কার্টুন মুভি জনপ্রিয় না হবার কারন হলো পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। তাছাড়া স্ট্য়ান্ডের একটা ব্য়াপার আছে। দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য় করে রম্য়রসাত্মক ব্য়াপারটাকে উচ্চস্তরে শিল্পকৌশলের মাধ্য়মে পৌঁছে দেবার আগ্রহ তেমন দেখা যায় নি। বর্তমানে বহু গুণী প্রতিভাবান মানুষ ভাল কাজ করছেন। একদিন হয়ত কেউ আমাদের সুখী করতে পারবেন কার্টুন ছবিতে আমরাও সেরা। তথ্য়ঋণ-রেবতীভূষণ
আজকাল বাংলা কার্টুন ছবি যা এখন অ্যানিমেশন ফিল্ম নামে বহুখ্যাত, তা বঙালি দর্শক মানসে সমাদৃত হলেও টিকে থাকেনি। যদিও এই কাজটা ছিল পরিশ্রম ও খরচের। কলকাতার প্রথম কার্টুন ছবির জনক মন্দার মল্লিক। ওর কার্টুন ছবি আকাশ পাতাল-এর পরই কার্টুনিষ্ট রেবতীভূষণ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় কুইন অ্যানাফিলিস নামে ১০-১৫ মিনিটের কার্টুন ছবি করেন। সেই সময় কাহিনীচিত্রের শেষে খানিকটা হাসাত্মক কার্টুন ছবি দেখানোর রেওয়াজ ছিল।
নিউ থিয়েটার্স-এর বি.এন সরকার রেবতীভূষণকে দিয়ে মিচকে পটাস নামে ১৫-২০ মিনিটের কার্টুন ছবি প্রডিয়ুস করেন। ওই ছবিতে সুর দেওয়ার কথা ছিল রাইচাঁদ বড়ালের। কিন্তু ওনাকে দিয়ে কাজটা করানো হয়নি। আসলে সুর দিয়েছিলেন রঞ্জিত রায়। গল্প- সুনির্মল রায়। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সুনির্মল ও ভক্তরাম মিত্র। ব্যাকগ্রাউন্ড ড্রইং ছিল শৈল চক্রবর্তীর। ছবিটা তৈরি করা এখনকার মতো সহজ সাধ্য ছিল না। কাহিনী চিত্রনাট্য মিলিয়ে চরিত্রদের ড্রইং করা হতো-কে কীরকম দেখতে হয় এইসব। এরপর ড্রইং থেকে প্লাস্টাসিন দিয়ে মডেল তৈরি করা। প্লাস্টাসিন হলো প্লাস্টারের মত এক নরম বস্তু। তাকে টিপেটাপে নানা আকার দেওয়া যেতো। মডেলের বিভিন্ন প্রোফাইল দেখে কার্টুন স্কেচ করতে হতো বিভিন্ন অ্যাঙ্কেলের। রঙিন হলে রঙের প্রয়াস। তার পর স্ত্রিপ্টের সিকোয়েন্স অনুযায়ী ছবি করার পর ক্যামেরার নীচে ফেলে ছবি নেওয়া। ব্যাপারটা যতটা সহজ করে বলতে লাগে, ততটা সহজ কার্যক্ষেত্রে ঘটে না।
----তথ্যঋণ রেবতীভূষণ
এক দশক পর কার্টুন-কাণ্ডে (Cartoon Row) অব্যাহতি পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র (Ambikesh Mahapatra)। বুধবার আলিপুর জজ কোর্টের বিচারক কার্টুন মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে অম্বিকেশবাবুকে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা ফৌজদারি মামলা থেকেও মুক্ত অধ্যাপক মহাপাত্র। নিম্ন আদালত বা আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে জজ কোর্ট। আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে অম্বিকেশ মহাপাত্র জানান, এতদিনে মামলা ভ্যানিশ হল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর বদলে তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে 'দুষ্টু লোক ভ্যানিশ' সংক্রান্ত ফেসবুকে একটি মিম শেয়ার করেন যাদবপুরের অধ্যাপক। তার জেরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
প্রায় ১০ বছর আগে এক এপ্রিল মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিস। থানা থেকে তিনি জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু চার্জশিট দিয়ে মামলা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিস। দু'বছর আগে সেপ্টেম্বরে আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন অম্বিকেশ। এই সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে অব্যাহতির খবর দেন অধ্যাপক মহাপাত্র। দেখুন সেই পোস্ট:
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, অম্বিকেশের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগেই ওই ধারা 'অসাংবিধানিক' বলে খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও কীভাবে ওই ধারায় মামলা চলেছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকার কর্মীরা। পাশাপাশি অম্বিকেশ মহাপাত্রের অভিযোগ, 'সেই ঘটনার পর আমার উপর শারীরিক হামলা হয়, প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। পুলিসকে দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়েছে। রাতে হাজতবাস করানো হয় এবং পরের দিনেই আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়।'