৪২ বছরে পা দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের লিভিং লেজেন্ড মহেন্দ্র সিং ধোনি (MSD)। কিন্তু কিছু মানুষ থাকেন তাঁদের জীবনে দিন বাড়ে না। মনে হয় তাঁরা যেন আরও পরিণত হলেন। তেমনই একজন ভারতীয় ক্রিকেটের নয়া যুগের প্রবক্তা। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। আজ বিয়াল্লিশ বছরে পা দিলেন ক্যাপ্টেন কুল (Captain Cool)। কিন্তু কোনও হইচই নেই। আছে নিঃস্তব্ধতা আর ধীর-স্থির থাকার বার্তা। তবুও ভক্তরা তাঁকে ছাড়বেন কেন। সাতই জুলাই রাত বারোটা বাজতেই শুরু হয়ে গিয়েছে হ্যাপি বার্থডে এমএসডি।
পঞ্চমবার আপিএল জয়ের পর শুক্রবার প্রথম জন্মদিন পালন করবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাতেও তাঁর জীবনে যেন কোনও উচ্ছ্বাস নেই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, উচ্ছ্বাস তাঁকে ছুঁয়ে যায় না। বরং ওই সময় নিজেকে বার বার সামলে নিতে পছন্দ করেন তিনি। আসলে এই দর্শনেই তিনি বাকিদের থেকে পৃথক, ভিন্ন, ব্যতিক্রমী। সবসময়ে। তাই হাঁটুর ব্যথা তিনি বুঝতে দেন না। বুঝতে দেন না তাঁর বয়সের ভার।
বয়স তাঁর কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। শেষবার আমেদাবাদের মাঠে আইপিএল জিতে তিনি জানিয়েছিলেন, অবসরের এটাই তাঁর কাছে সেরা মঞ্চ। কিন্তু তিনি এখনই অবসর নিতে চান না। বরং অপেক্ষা করতে চান আরও কয়েকটা দিন। ভক্তদের কাছে আজ এক বিশেষ দিন। সবাই অপেক্ষা করবেন ধোনি মন্ত্রের জন্য।
মণি ভট্টাচার্য: 'ধোনি' নামটার সাথেই যেন জড়িয়ে আছে আবেগ। নিজের ক্রিকেট জীবনের শেষ বয়সে এসেও তিনি যে সেই 'ক্যাপ্টেন কুল'ই রয়ে গেলেন সেটা আবার প্রমাণিত। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর যা অবদান সেটা অনস্বীকার্য। হয়ত শেষবারের মত আইপিএল (Indian Premiere League) চ্যাম্পিয়ন হলেন ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। হয়ত এরপরে আইপিলের জমক অনেক কমে যাবে। এটাই কি ধোনির শেষ ম্যাচ! এই প্রশ্ন ওঠে আসছে ২০১৯-২০ সাল থেকে। এবারের এই একই প্রশ্নে ধোনির উত্তর, এখনও হাতে ৯ মাস আছে। নিজেকে ফিট রাখতে পারলে অবশ্যই খেলব। কিন্তু ধোনির কৃতিত্ব যে হৃদয়ের পাতায় লিখে রাখার মতই সেটা ক্রিকেট বিশ্ব জানে।
ভারতীয় ক্রিকেটকে আইসিসির শ্রেষ্ঠ ট্রফি দিয়েছে চেন্নাই। নিজের দল চেন্নাইকে দিয়েছে বহু সাফল্য। যে সাফল্য হয়ত ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম ও যুগান্তকারী। মাত্র ১.৩ কোটি টাকার বোলিং ডিপার্টমেন্ট চেন্নাইয়ের। অবশ্যই দীপক চাহারকে বাদ দিয়ে। যদিও পঞ্চম বারের আইপিএলে দীপকের ভূমিকা ছিল সামান্যই। চোট থেকে ফিরে দীপকের পারফরম্যান্স নজরকাড়া বটে। পঞ্চম বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে ধোনির মুখে যেন চেনা অবিচলতা। কেবল দুটো দৃশ্য যা অচলায়তন ভেঙে নতুন দেখা গিয়েছে এবার। প্রথম শেষ বলে যখন ৪ রান দরকার। সেই যে তখন ঈশ্বর চোখ বুঝলেন, চোখ খুললেন না জেতার পরেও। জাদেজা চার মেরে যখন উচ্ছাস শুরু করে দিয়েছে তখন ধোনি চোখ খুললেন। হয়ত প্রার্থনাই করছিলেন। কিন্তু এ দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীরা বহুদিন মনে রাখবে। এখানেই শেষ নয়। ম্যাচ জিতে মাহি ভাইয়ের ভক্ত জাড্ডু যখন মাহির কাছে এলো। তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে কোথাও যেন সন্তর্পনে মাহিকে দেখা গেল আবেগঘন হতে। যা সচরাচর ক্রিকেট বিশ্ব দেখেনি।
ম্যাচ জিতে এই জয় তাঁর মাহি ভাইকে উৎসর্গ করেন জাদেজা। যদিও ধোনি প্রথম বলেই আউট হয়ে ঘরে ফেরেন। সোমবারের দিন হয়ত ধোনিদের নামেই ছিল। নইলে গুজরাতের এমন বোলিং বিভাগের সামনে ১৫ ওভারে ১৭১ রান তোলা সহজ ছিল না। এই ম্যাচ জয়ে ধোনির ভূমিকা অবশ্য অসীম। উইকেটের পিছনের দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ বেগে স্ট্যাম্প করলেন গিলকে। যদিও অন্যদিকে আর একটু হলেই চেন্নাই সমর্থকদের চোখে খলনায়ক হয়ে যেতে পারতেন ধোনি। অম্বাতি রায়ডু আউট হওয়ার সময় চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৫ বলে ২২। ভেবেছিলেন আবার নিজের পুরনো ফিনিশার রূপ ফেরাবেন। কিন্তু ক্রিকেট কোনও চিত্রনাট্য মেনে হয় না। তাই ধোনিরও ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো নায়ক হওয়া হল না। প্রথম বলেই কভারে ক্যাচ এবং আউট।
যদিও ১৪ টি মরশুমে ১০ বার ফাইনালিস্ট, ও ৫ বার চ্যাম্পিয়ন ধোনিবাহিনী। সময় বদলেছে, দল বদলেছে, সঙ্গী বদলেছে কিন্তু ধোনির কেরামতি বদল হয় নি। সেই কেরামতির জোরেই হয়ত ২০১০, ২০১১, ২০১৮,২০২১,২০২৩। পাঁচবারের ভারত সেরা চেন্নাই এবং গোটা দলের পিছনে দাঁড়িয়ে অধিকাংশ কৃতিত্ব টাই ধোনির। ধোনির এই অবদান অবশ্যই মনে রাখার মত। মনে রাখা হবে।