প্রসূন গুপ্ত: শিক্ষাক্ষেত্রে চাকরি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। নিয়োগ বিতর্ক ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তুলকালাম চলছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে বন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ আরও অনেক কেষ্টবিষ্টু। নিয়মিত মিডিয়া জগতে এই খবরের প্রাধান্য। এমন অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে যারা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বা দলের পদাধিকারী। এই ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে বিরোধী বিজেপি-বাম আন্দোলনের পথে। ঠিক এই সময়েই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন বাম আমলে কারা চাকরি পেয়েছে এবং তাদের নিয়োগ সঠিক পথে হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। দায়িত্ব বর্তেছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর। এরপরেই চিত্র পরিবর্তন হয়েছে এবং 'চিরকুটে চাকরি' নামক কটাক্ষ স্থান পেয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
এক সময়ে বামফ্রন্টের মন্ত্রী তথা বহু যুদ্ধের নেতা সুভাষ চক্রবর্তী বলেছিলেন, 'ভুকা পেটে বিপ্লব আসে না'। দেখা গিয়েছিলো ১৯৮২-র আগে অবধি যারা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, তাঁদের লড়াই-সংগ্রামে বামেরা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এই পট পরিবর্তিত হতে শুরু হয় দ্বিতীয় বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর ১৯৮২-তে। ক্ষমতায় আসার আগে এক ধরণের আন্দোলনের ভূমিকা থাকে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত দলের মধ্যে কী দিলাম আর কী পেলামের প্রাবল্য বাড়ে। এরপর সরকারি স্কুল বা কলেজের বেতন বাড়ে কারণ সমস্ত খরচের দায়িত্ব নেয় সরকার নিজেই। অন্য সরকারি বেতন অনেকটাই বেড়ে যায়।
ওই সময় থেকে ২০০৯ অবধি যত সরকারি চাকরি হয়েছে তা পেয়েছে দলের কর্মী নেতা বা তাদের পরিবারের কেউ বলেই তীব্র দাবি তৃণমূলের। অবশ্য এই দাবি এক সময় ছিল কংগ্রেস বা বিজেপিরও। এবার ওই চাকুরিপ্রাপ্তদের নিয়োগের কাগজ খোলা শুরু করেছে বর্তমান সরকার। তাতেই উঠে এসেছে বহু নামের সঙ্গে এক সময়ের সাংসদ-বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলির নাম। যদিও সিপিএম থেকে বলা হয়েছে তাঁকে সঠিক ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি নাকি পরীক্ষা দেননি এবং তার কোনও প্রমাণ নেই বলছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে এমন অনেক প্রাক্তন বাম নেতা জানাচ্ছেন যে আগে চিরকুট দিয়েই কমরেডরা চাকরি পেয়েছেন। যারা পার্টি হোলটাইমার ছিল তাদের পরিবারের অন্য কেউ চাকরি পেয়েছেন। সুজন তাদের অন্যতম জানাচ্ছেন একদা সিপিএম নেতা তথা পিডিএস প্রধান সমীর পুতুতুণ্ডু।
সমীরবাবু জানাচ্ছেন, তিনি নিজেই নাকি সুজন-মিলির বিয়ের এবং চাকরির সাক্ষী। কার্যত কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু। এনজয় করছে বিজেপি কারণ সামনেই পঞ্চায়েত ভোট।
দীর্ঘ রোগভোগের পর মল্লিক বাজারের এক নার্সিংহোমে প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় (Manab Mukherjee Death)। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এই সিপিএম নেতার (CPM Leader)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। সম্প্রতি দু'বার সেরিব্রাল স্ট্রোকের আক্রান্ত হয়েছিলেন বামফ্রন্ট আমলের (Left Front Government) এই মন্ত্রী এবং বেলেঘাটার প্রাক্তন বিধায়ক (former Beleghata MLA)।
জানা গিয়েছে মঙ্গলবার চক্ষুদানের পর পিস হেভেনে শায়িত থাকবেন মানব মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ। বুধবার অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর সেখান থেকে দেহ বের করে প্রথমে বেলেঘাটা পার্টি অফিস, সেখান থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এবং জেলা অফিস হয়ে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই হবে প্রাক্তন পর্যটন মন্ত্রীর দেহদান। ২০১১ সাল পর্যন্ত সিপিএম-র বিধায়ক ছিলেন মানব মুখোপাধ্যায়। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একাধিক দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন রাজ্য রাজনীতিতে সুবক্তা হিসেবে পরিচিত এই সিপিএম নেতা।
১৯৫৫-র ২৪ অগাস্ট টালিগঞ্জের হরিপদ দত্ত লেনে জন্ম মানব মুখোপাধ্যায়ের। যোধপুর পার্ক বয়েজ হাইস্কুলের প্রাক্তনী, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বা এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে ভারতের যুব ফেডারেশন বা ডিওয়াইএফআআই-র রাজ্য সম্পাদক নিযুক্ত হন প্রয়াত এই বাম নেতা।
আজীবন বামপন্থী এই নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতেই মল্লিকবাজারের নার্সিংহোমে জড়ো হয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, রবীন দেব এবং সিপিএম জেলা কমিটির সম্পাদক প্রমুখরা।