লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দিনই প্রাণ গেল এক সিপিআইএম কর্মীর। শুক্রবার নিজের দলের নির্বাচনী বুথ অফিসেই মৃত্য়ুর মুখে ঢলে পড়লেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি ব্লকের বিনয় শা মোড় এলাকায় ১৫/১২৪ নং বুথের বাইরে।
জানা গিয়েছে, মৃত ওই দলীয় কর্মীর নাম প্রদীপ দাস(৫৮)। এদিন ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্য়ে সিপিআইএমের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে ছিলেন তিনি। তখন আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপর তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের মধ্য়েই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কর্মীরা। তবে কীভাবে মৃত্যু ঘটল তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিপিআইএম নেতারা জানিয়েছেন, দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। যা অত্যন্ত শোকের।
প্রসূন গুপ্তঃ নীতীশ কুমারকে পিছনে ফেলে জোটের অন্যতম আইএসএফ ডিগবাজি খেলো একেবারে ভোটের প্রান্তে এসে। আইএসএফের প্রধান নওশাদ সিদ্দিকী নাকি তৃণমূল বিরোধীদের অন্যতম মুখ ছিলেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। তাঁর এই বার্তায় বিজেপি-কংগ্রেস এবং বাম তিন পক্ষই খুশি হয়েছিল। অনেকটা সাগরদিঘি মডেলে ভোটটি করতে চাইছিল বিরোধীরা। শুভেন্দুর ধারণা ছিল, নওশাদ দাঁড়ালে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে ফায়দা বিজেপির। ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪৫% মুসলিম ভোট আছে এবং ওই মোতাবেক চললে হিন্দু ভোটের বড় অংশ নিয়ে বিজেপি জিততেই পারে। ফলত বিজেপি গড়িমসি করেছিল প্রার্থী দিতে (এখনও ওই অবস্থায়)। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস নওশাদ দাঁড়ালে প্রার্থী দিতই না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার নওশাদ জানালেন যে, দলের নির্দেশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন না। এই খবরে অথৈ জলে পড়েছে বিরোধীরা।
একই সাথে জোট নিয়ে প্রবল জটিলতা বাম জোটের মধ্যে রয়েছে। আইএসএফ যত্রতত্র প্রার্থী দিয়ে বিপাকে ফেলেছে সিপিএমকে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি তুলোধনা করছে নওশাদকে। তিনি বলেছেন যে, এই দলটি নাকি বিজেপির সঙ্গে 'সেটিংয়ে' রয়েছে যা ধরা যায়নি। নওশাদকে প্রজেক্ট করা মহম্মদ সেলিম সরাসরি না বললেও প্রকারান্তে বলেছেন যে, আইএসএফ সঠিক ভাবে চলছে না। অন্যদিকে বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদের সেটিং এর তত্ত্ব তুলেছে। এখানেই শেষ নয়, বহু কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসের জোটে জোট পাকিয়েছে। কোচবিহার থেকে পুরুলিয়াতে।
তৃণমূল সুপ্রিম আগেই জেনেছিলেন, এই রাজ্যে তারাই 'ইন্ডিয়া'। এবারে কংগ্রেস ও বামেরা এই তথাকথিত ইন্ডিয়া জোট নামক জট থেকে বেরিয়ে জানাচ্ছে, এই রাজ্যে কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই। কাজেই ভোটের দিন দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডিয়া জোটের গঙ্গা প্রাপ্তি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই লড়াই হবে তৃণমূল বনাম বিজেপির, বাকিরা ভোট কাটুয়ার ভূমিকাতেই থাকবে।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের আরও পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিল বামফ্রন্ট। আজ, শুক্রবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলীয় দফতরে সেই ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আইএসএফের দর কষাকষিতে বামফ্রন্ট যে অসন্তুষ্ট সেটাও বোঝা গিয়েছে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে। আইএসএফের পর ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দিল সিপিআইএম।
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইএসএফ দাঁড় করিয়েছে মজনু লস্করকে। নওশাদ সিদ্দিকী প্রথমে এই আসন থেকে লড়াই করবেন বলে বারবার জানিয়ে এলেও তা হয়নি। এই ভোলবদলের কারণ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নওশাদ বলছেন, তিনি দলের ঊর্ধ্বে নন। আইএসএফের প্রার্থী দেওয়ার পর আজ সিপিআইএম প্রতীকুর রহমানকে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী করল। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক এবং সাম্প্রতিক সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ হিসেবে উঠে আসা নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করা হয়েছে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে।
ব্যারাকপুর আসন থেকে সিপিআইএমের হয়ে লড়বেন দেবদূত ঘোষ। ঘাটাল আসনে সিপিআইয়ের তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বারাসত কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রবীর ঘোষ। এদিন বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে, ৩০টি আসনে লড়বেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। জয়নগর ও মথুরাপুর আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। ১২টি আসনে বামেদের সমর্থনে লড়াই করবে কংগ্রেস। পুরুলিয়ায় একাই লড়বে ফরওয়ার্ড ব্লক।
লোকসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। ১৬ মার্চ নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ এবারেও বাংলায় ৭ দফায় ভোট হবে৷ শনিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এই তালিকায় চমক, মুর্শিদাবাদে প্রার্থী হচ্ছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সিপিএমের টিকিটে রানাঘাট থেকে লড়বেন অলোকেশ দাস, বোলপুর শ্যামলী প্রধান এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন সুকৃতি ঘোষাল। সুকৃতি ঘোষাল বর্ধমান মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ছিলেন। এদিন বিমান বসু বলেছেন, প্রার্থী তালিকা নিয়ে আরও আলোচনা বাকি রয়েছে। তাই বাকিদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯শে এপ্রিল প্রথম দফায় কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্পূর্ণ বামেদের৷ এর আগে মোট ১৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। সবমিলিয়ে মোট ২১ আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিল তারা। তবে ২১ বাকি আসনে প্রার্থী দিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়ে দিলেন বিমান বসু। কারণ আসনগুলি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। সহমত হওয়ার পরই বাকি প্রার্থীদের নাম ধোষণা করা হবে।
সন্দেশখালিকাণ্ডে আজ, মঙ্গলবার সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বসিরহাট এসপি অফিস অভিযানের ডাক দেয় বিজেপি। সেই অভিযানের আগেই এসপি অফিস থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত বসিরহাট জেলা পুলিস জারি করল ১৪৪ ধারা। রাস্তার উপর বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিস বাহিনী।
শেখ শাহজাহানের দুই ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের গ্রেফতারির দাবিতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল গোটা সন্দেশখালিতে। দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন মহিলারা। শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতা মহিলারা। কীভাবে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে তাঁদের প্রতি নির্যাতন করা হত সেই কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন তাঁরা। সোমবার সন্দেশখালি যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকেই। অন্যদিকে সোমবারই সন্দেশখালি পরিদর্শনে রাজ্যপাল। যাওয়ার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও। কিন্তু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় এবং পুলিসি বাধার মুখে পড়ায় সন্দেশখালি ঢুকতে পারেনি।
সন্দেশখালিতে আছড়ে পড়েছে জনরোষ, প্রশাসনিক তরফে জারি ১৪৪ ধারা। আর আছড়ে পড়া জনরোষের পিছনে ইন্ধন সিপিএম নেতা তথা সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের। তিনি নাকি গ্রামবাসীদের উত্তেজিত হতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু হাজরার এহেন অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকালে ছেলের বাড়ি থেকে নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে বাঁশদ্রোণী থানার পুলিস।
ঘটনাচক্রে সন্দেশখালির মানুষের কাঠগড়ায় দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরা। বকলমে এঁরা অন্তরালে থাকা অপর এক তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। জনরোষে শিবুর পোলট্রি ফার্ম আগুনে জ্বলেছে, বাড়িতে চলেছে ভাঙচুর। এবার জনতার কাঠগড়ায় থাকা সেই শিবু হাজরার দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে কলকাতা পুলিসের হাতে গ্রেফতার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক। আর এতেই তেড়েফুঁড়ে বাঁশদ্রোণী থানার সামনে জমায়েত থেকে স্লোগান-শাউটিং সিপিএম নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকদের। সুদুত্তর না পেলে চলবে থানার সামনে জমায়েত, স্লোগানিং, বলছে সিপিএম নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই ছুটির সকালে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁশদ্রোণী থাকা এলাকায়।
যদিও বাঁশদ্রোণী থানার দাবি, বসিরহাট জেলা পুলিসকে সহযোগিতা করতে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ককে। বসিরহাট জেলা পুলিসের প্রতিনিধি এসে সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্রের খবর, টাওয়ার লোকেশন দেখেই ছেলের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় নিরাপদ সর্দারকে। উল্লেখ্য সন্দেশখালিকাণ্ডে মোট ১১১ জনের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে, আর একদম একনম্বরে নাম প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের।
যদিও প্রাক্তন বিধায়কের দাবি, সন্দেশখালিতে জনতার বিক্ষোভের সময় তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। নানা জায়গায় দলীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন নিরাপদবাবু। প্রাক্তন বিধায়কের স্ত্রীর মন্তব্য, পুলিস এসে নিরাপদবাবুকে থানায় নিয়ে যায়। সিএন-র কাছে প্রাক্তন বিধায়ককে ফাঁসানোর অভিযোগে সরব নিরাপদ সর্দারের স্ত্রী।
এদিকে প্রাক্তন বিধায়কের হয়ে সওয়াল করতে বাঁশদ্রোণী থানায় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। বাইরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম নেত্রী মধুজা সেন রায়, শতরূপ ঘোষ থেকে কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতৃত্ব। প্রত্যেকেই বাংলাজুড়ে জঙ্গলরাজের অভিযোগে তুলে সন্দেশখালিতে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে সরব ছিলেন। মধুজা সেন রায়ের মন্তব্য, নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে রাখলে গোটা রাজ্যে পথে নামবে সিপিএম। ক্ষমতা থাকলে পুলিস প্রশাসন আটকে দেখাক, এভাবেই চড়া সুর সিপিএম নেত্রীর। অপর এক সিপিএম নেতা তথা তরুণ মুখ শতরূপ ঘোষেরও সুর চড়া।
প্রসূন গুপ্তঃ আসন্ন ৭ জানুয়ারী ফের ব্রিগেডে সিপিএম সঙ্গে আমন্ত্রিত বাম দলগুলি। বেশ কিছুদিন ধরে জেলায় জেলায় দলের তরুণ নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সিপিএম প্রচার সেরেছে দুই সরকারের বিরুদ্ধে এবং অবশেষে ব্রিগেডে হবে চূড়ান্ত অনুষ্ঠান ঠিক লোকসভা ভোটের মাস দুয়েক আগে। কিন্তু ফায়দা কি হবে, প্রশ্ন উঠেছে একেবারে বামমনস্ক মানুষের মধ্যে থেকে।
প্রশ্ন ১) বামেদের ক্ষমতায় আসার পিছনে নক্সালপন্থীদের যে ভূমিকা ছিল, তারা আজ কোথায়? ক্ষমতায় আসার বিষয়ে ওই নক্সালদের প্রশ্ন ছিল মার্কসবাদ লেলিনবাদের কোথায় লেখা রয়েছে সংসদীয় ভোটের রাস্তায় গিয়ে ক্ষমতা দখল করতে হবে? তারা আন্দোলন করেছিল, যার সুফল পেয়ে বামফ্রন্ট ৩৪ বছর রাজত্ব করেছে।
প্রশ্ন ২) রাজ্যের শিক্ষা থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার কুফল কি সে সময়ের যুব মহলকে পিছিয়ে দেয় নি? অথচ বাম নেতাদের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে দিব্বি পড়াশুনা করেছে।
প্রশ্ন ৩) রাজ্যে কম্পিউটার আসতে বিলম্ব হলো ফলে হাজার হাজার যুব ছেলেমেয়েরা রাজ্যের বাইরে গিয়ে শিক্ষা নিলো এবং সাথে চাকরিও, এর ইনসাফ করবে কে?
প্রশ্ন ৪) দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আরাম ও আয়েস এসে গিয়েছিলো বাম নেতাদের। একটা সময়ে এরাই আধপেটা থেকে লড়াই বা আন্দোলন করেছিল। দেখা গেলো এদেরই পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমতার সুখ পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো সুখী জীবনযাত্রার। আজকে মমতা বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরা সেই সুখ পেতে দুর্বল বাম ছেড়ে দলে দলে একেবারে উল্টো পন্থা অর্থাৎ বিজেপিকে খুঁজে নিলো। আজ এই রাজ্যের বাম ভোটের ৮০ শতাংশ বিজেপির বাক্সে ভোট দিচ্ছে। এর ইনসাফ কোথায়? ইনসাফ পাওয়ার আগে নিজেরাই সাফ হয়ে গিয়েছে।
কাজেই মীনাক্ষীকে মুখ করে হয়তো বা ব্রিগেডে এক বা দেড় লক্ষ লোক আনতে পারবে সিপিএম কিন্তু এই ভিড়ের ১০% মানুষ কি সিপিএমকে আসন্ন লোকসভায় ভোট দেবে? বিশ্লেষকরা কিন্তু মোটেই আশাবাদী নয়। তাদের ধারণা একটিও আসন পাবে না বাম বা সিপিএম। বাকি জনতার অভিমত!
প্রসূন গুপ্তঃ এই রাজ্যে সিপিএমের কোনও বিধায়ক বা সাংসদ নেই। ত্রিপুরাতে বিধায়ক আছে, কিন্তু সাংসদ নেই। আবার কেরলে দুইই আছে, কিন্তু কংগ্রেস বিরোধিতায়। অন্যদিকে, আজকের বামফ্রন্ট বলতেও তেমন কিছু নেই অর্থাৎ যা কিছু সিপিএম এবং সিপিআইয়ের। এবারে যদি ভারত জুড়ে সত্যিই কোনও জোট যার নাম 'ইন্ডিয়া' হয় তবে সিপিএম পরবে নানান সমস্যায়।
প্রথমত, এই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য একই সুরে কথা বলছে না। দিল্লিতে সিপিএমের সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন নিয়মিত ভাবে এই ইন্ডিয়ার বৈঠকগুলোতে অংশ নিচ্ছে তেমনটি কিন্তু রাজ্যের সম্পাদক সেলিমের ভূমিকা নয়। সেলিম রাজ্য প্রশাসনে থাকা তৃণমূলের ঘোরতর বিরোধী। প্রচার মাধ্যমের সামনে শুভেন্দু অধিকারী আর সেলিমের বক্তব্যের কোনও ফারাক নেই। তার উপরে আবার আইএসএফের সঙ্গে সেলিমের যথেষ্ট মধুর সম্পর্ক। এ রাজ্যে সেলিম থেকে শুরু করে দলের বাকি নেতাদের অবস্থান একই রকম। অবিশ্যি সেটাই রেজিমেন্টেড পার্টির বরাবরের নিয়ম তো বটেই।
সিপিএমের সাথে কেরালায় কোনও ভাবেই কংগ্রেসের জোট বাঁধা সম্ভব নয়। সিপিএম তো চাইছেই না, উল্টোদিকে কংগ্রেস যদি কোনও ভাবে জোটের কথা ভাবেও তবে দল ভেঙে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দলের কর্মী সমর্থকদের ত্রিপুরার মতো বিজেপিতে চলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে না তৃণমূল না বামেরা এক হতে পারে। মনে রাখতে হবে তৃণমূলের জন্মই সিপিএমের বিরোধিতা করে। যদিও একা বা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এ রাজ্যে লড়লে কংগ্রেসের সুবিধা হয়তো হতে পারে কিন্তু সিপিএমের পকেটে শূন্যই জুটবে। সিপিএমে এখন যে ৭% ভোট অবশিষ্ট আছে তারাও বেরিয়ে যাবে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়।
সমস্ত বিষয়টি বোঝা যাবে ১৯ ডিসেম্বর, পরবর্তী 'ইন্ডিয়া'র বৈঠকে। তবুও খবর যতটুকু আপাতত দিল্লি কংগ্রেস চাইছে তৃণমূলের সঙ্গেই সম্পর্ক পোক্ত করতে। প্রয়োজনে শুধু ত্রিপুরাতেই এই দলের জোট অটুট থাকবে লোকসভা নির্বাচনে।
মধ্যরাতে সিপিআইএমের প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো ঘটনার বৃত্তান্ত। চাঞ্চল্য দুর্গাপুরের কাঁকসা অঞ্চলের পানাগড় এলাকায়। পুলিসের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
রাত তখন ২ টো বেজে ৭ মিনিট। হঠাৎই বাড়ির ভারী লোহার গেট ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙলো সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সহ পরিবারের সদস্যদের। এরপর ফের রাত ২ টো বেজে ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় দরজা ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। শনিবার গভীর রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় দুর্গাপুরের কাঁকসা অঞ্চলের পানাগড় এলাকায়।
জানা গিয়েছে, কাঁকসার গুরুদ্বারা রোডে মধ্যরাতে সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। দরজা ভেঙে ওপরে উঠে আরও একটি দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে পরিবারের সদস্যদের চিৎকার চেঁচামেচিতে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রায় দশ মিনিট ধরে এই তাণ্ডব চলে যদিও কিছু নিতে পারেনি দুষ্কৃতী দল। কিন্তু সশস্ত্র এই দুষ্কৃতী দল কি কারণে এসেছিলো? তা নিয়ে ধন্দে পরিবারের সদস্যরা।
সম্ভবত খুনের উদ্দেশেই ৯ জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেন সিপিআইএম নেতা তথা কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ওমপ্রকাশ আগরওয়াল।
দুষ্কৃতী তাণ্ডবের এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসায় তোলপাড় কাঁকসা অঞ্চল জুড়ে। গোটা ঘটনায় আতঙ্কে পানাগড় চেম্বার অফ কমার্সের চিফ অ্যাডভাইজার সহ বাম নেতারা।
প্রসূন গুপ্ত: বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীসভা। সকাল থেকেই কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ অবধি বিভিন্ন স্তরের নেতা মন্ত্রী ও কর্মীদের ভিড় লক্ষ করার মতোই ছিল। পুজোর দিনগুলি শেষ হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বাণিজ্য মেলা কখনও দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসাবে জনসভা করা শুরু করে দিয়েছেন। মঙ্গল ও বুধবার ছিল বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী , শিল্পপতিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এই শিল্পমেলায় প্রধান আকর্ষণ ছিলেন দেশের সবচাইতে বড় বাণিজ্যপতি মুকেশ আম্বানি। আগামীতে তিনি যে পশ্চিমবঙ্গে কয়েক হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজ সেই প্রতিশ্রুতিই তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলেন মমতা।
রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁর রীতি অনুযায়ী ঝোড়ো বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আজকে যথারীতি তাঁকে ২১ জুলাইয়ের মুডে পাওয়া গেলো।অনুষ্ঠানে বক্তা হয়তো অনেকেই ছিলেন কিন্তু মূল আকর্ষণ যে তিনি এবং তাঁর উপস্থিতির কারণেই যে প্রবল ভিড় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কিছু নতুন মোড়কে পুরোনো বাম আক্রমন ছিল লক্ষণীয়। মমতা বিলক্ষণ জানেন যে আজকের বিরোধী বলতে যে বিজেপি এবং তাদের বিধায়ক সংখ্যা তা আদতে সিপিএমের ভোট। কিন্তু বিরোধিতায় থাকায় গত কয়েক বছর তাঁর ভাষণের মূল আক্রমণ থাকতো বিজেপিই। তিনি বললেন ও বিস্তর। ১০০ দিনের কাজ থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তো ছিলই , যুক্ত করলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ। জানালেন, মিডিয়া থেকে বিরোধীদের ভয়ে রেখেছে বিজেপি। তিনি বললেন যে, দেশের বিরোধীদের চোর বানানোর পরিকল্পনা চলেছে যদিও কয়লা থেকে গরু পাচারের টাকা যাচ্ছে বিজেপির প্রশাসনের হাতেই। ওদিকে এদিন ইন্ডোরের সভা থেকেই মহুয়া প্রঙ্গে মুখ খুলে একার্থে কৃষ্ণনগরের সাংসদের পাশে দাঁড়ালেন মমতা।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, আজকের ভাষণে তিনি নিয়ে আসলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হেনস্তা করার ঘটনা। নিয়ে আসলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ তাদের মতোই অশোক গেহেলত সহ বিভিন্ন কংগ্রেস নেতাদের হেনস্তার ঘটনা। এরপরেই তুমুল সমালোচনা করলেন সিপিএমের। শুনে মনে হচ্ছিলো মমতা ফিরে গিয়েছেন ২০১১ র আগের মুডে। তুলোধনা করলেন সিপিএমকে। এর অবিশ্যি অন্য কারণ, তাঁর দলের সমর্থক কর্মীরা সোশ্যাল নেটে যে ভাবে সিপিএমকে আক্রমণ করে তা পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না মমতা। দেখার বিষয় আসন্ন লোকসভায় কে থাকবে তাঁর জোটসঙ্গী।
তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ জয়নগর। সোমবার সকাল থেকেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায় । এবার সিপিএম কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে । এমনকী, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সিপিএম কর্মী সমর্থকদের বাড়ি। অভিযোগ, অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থালে পৌঁছেছে দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন । আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের মহিলারাও । অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা খুনের পাল্টায় জয়নগরে এক দুষ্কৃতীতে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে জনতার বিরুদ্ধে।
সোমবার সকালে স্থানীয় বামনগাছি এলাকায় খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। সিপিএমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী।
প্রসূন গুপ্তঃ এতো ঘটা করে সিপিএমের দেশজ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'তে উপস্থিত থেকে অনেক উপদেশ দিলেন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সীতারাম, তারপরেই যখন সমন্বয় কমিটি হলো তখনই সেই কমিটি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলো সিপিএম। এখন শুধু এই নিয়ে প্রশ্ন নয় বিতর্ক হচ্ছে বিস্তর। তাদের ইঙ্গিত কেরালায় তারা কংগ্রেসের এবং বাংলায় তৃণমূলের বিরোধী কাজেই ওই সমন্বয় কমিটিতে নাকি তাদের প্রতিনিধি থাকলে জনতার কাছে ভুল বার্তা যাবে। কিন্তু এসব তো জোট গড়ার আগেই ভাবনার মধ্যে ছিল তবে এই জোট বৈঠকে যাওয়ার দরকার কি ছিল, উঠছে এমন প্রশ্ন।
এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের শক্তি বিলীন হয়ে গিয়েছে। ৩৪ বছর শাসনের পরে ১০ বছরের মাথায় বিধানসভা ভোটে তাদের অবস্থান শূন্য। লোকসভাতে এই রাজ্য থেকে বামেদের একজনও সাংসদ নেই। অন্যদিকে প্রায় একই অবস্থা অন্য প্রাক্তন বামদুর্গ ত্রিপুরাতেও। সেখানেও গত ভোটে বিরোধী হওয়ার যোগ্যতাও হারিয়েছে তারা। টিকে আছে কেরালাতে। আপাতত ওই রাজ্যের ক্ষমতায় বামেরা। বামেদের বিভিন্ন রাজ্যে প্রধান প্রতিপক্ষ একমাত্র ত্রিপুরায় বিজেপি। বাকি বাংলায় তৃণমূল এবং কেরালায় কংগ্রেস। সমস্যা তাদের এই দুই রাজ্য নিয়েই। কেরালাতে তাদের কংগ্রেসের সঙ্গে জোট মোটেই মেনে নেবে না সমর্থকরা। একই কথা বাংলাতেও। মূলত সিপিএমের বিরোধিতার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের উত্থান কাজেই তৃণমূলের আদি কর্মীরা যেমন মেনে নেবে না সিপিএমের সঙ্গে জোট, তেমনই সিপিএমের টিকে থাকা ভোটাররাও মেনে নেবে না তৃণমূলের সঙ্গে জোট। এই দুই রাজ্যেই জোট করলে আখেরে ক্ষতি সিপিএমের।
অবিশ্যি ব্যঙ্গক্তি আসছে তৃণমূলের তরফ থেকে। তাদের বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে আসল সেটিং সিপিএমেরই। আজ বাংলায় বিজেপির ভোট শতাংশের সিংহভাগই সিপিএমের। বিজেপির এই রাজ্যে নাকি কোনও দিনও ৬-৭ % বেশি ভোট ছিল না, তাহলে ৩৭/৩৮% ভোট তাদের বাক্সে পড়ছে কি ভাবে? একই সাথে তারা বলছে এতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ প্রতি বিরোধী দলের উপর অথচ সিপিএমের উপর কোনও চাপই নেই। তাদের বিস্ফোরক বক্তব্য, চিটফান্ডের জন্ম বাম জমানাতে এবং তাদের সেলিম সহ বহু নেতাকে ওই ব্যবসায়ীদের সাথে একই মঞ্চে বা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে অথচ কি এমন ঘটনা যে, আজ অবধি সিপিএমের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হলো না। রহস্যের এই সমস্ত উত্তর একমাত্র সিপিএমই দিতে পারবে।
শিয়রে লোকসভা ভোট। তার আগে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে বিজেপিকে হঠাতে এখন আদা-জল খেয়ে ময়দানে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। এই অবস্থায় রবিবার সিপিএম পলিটব্যুরো জানিয়ে দিল, তারা ইন্ডিয়ায় আছে। কিন্তু সমন্বয় কমিটিতে থাকবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কমিটি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হল দু দিনের সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকে।
সম্প্রতি ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, ১৪ নম্বর জায়গাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে সিপিএমের জন্য। তা নিয়েই সিপিএমের অন্দরে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বলেই খবর। দিল্লিতে এদিনের বৈঠক শেষে সিপিএম স্পষ্ট করেছে, জোট শক্তিশালী হোক তারা চায়। বিজেপি হঠাও লড়াইতেও তারা সামিল হবে। তার জন্য জোটকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তবে সিপিএমের আপত্তি জোটে সাংগঠনিক কাঠামোকে কেন্দ্র করে। সিপিএম মনে করে, তা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে।
জোটে থাকলেও শুরু থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমন্বয় কমিটিতে সিপিএমের থেকে কেউ থাকুক, তাতে আপত্তির কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। পলিটব্যুরোতেও তার ভিন্নমত হল না। এমনিতেই আসন রফা নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এর আগেই তিনি জানিয়েছেন, সিপিএম চায় কেন্দ্রীয় ভাবে নয়, আসন সমঝোতা হোক রাজ্য ভিত্তিক।
সামনেই লোকসভা ভোট। ধুপগুড়িতে চূড়ান্ত ব্যর্থতা থাকলেও, হাল ছাড়তে নারাজ বামেদের যুব ব্রিগেড। লোকসভার আগে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া লাল ব্রিগেড। লোকসভার আগে আগামী বছরের শুরুতেই তাই শক্তি প্রদর্শনের জন্য কোমর বাঁধছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। টার্গেট ব্রিগেডে শ্বেত পতাকার ভিড় জমানো। আগামী ৭ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই।
হাতিয়ার বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, শিল্প-কারখানা, কাজে স্থায়ীকরণের দাবি। এই সব ইস্যুগুলিকে সামনে রেখেই মাঠে ময়দানে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে মরিয়া বামেদের যুব শিবিরে শ্বেত পতাকার ধারক-বাহকরা। জানুয়ারিতে ব্রিগেড। তার আগেও থাকছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। আগামী দু’মাস ধরে টানা রাস্তায় নেমে প্রচার চালাবে ডিওয়াইএফআই। জেলায় জেলায় চলবে প্রচার। এরপর আগামী ৩ নভেম্বর ডিওয়াইএফআই প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যজুড়ে পদযাত্রার ডাক দিয়েছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী বলছেন, ‘আমাদের তো সরকারি বদান্যতায় পদযাত্রা নয়। আমাদের পদযাত্রায় শিক্ষিত বেকার যুবরা থাকবেন। যাঁরা বেকারত্বের মধ্যে পরিবারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা আসবেন। আমরা তাঁবুর লড়াইয়ে নেই। রাস্তার লড়াইয়ে আছি। খোলা আকাশের নীচে আমাদের লড়াই।
স্বাধীনতা উত্তর যুগ থেকেই বামেদের উত্থান। আগে একটি দল সিপিআই ছিল পরে ভেঙে বহু দলে বিভক্ত হয়েছে তারা যদিও এসইউসি ছাড়া বাকি তথাকথিত কমিউনিস্টরা একত্রে বামফ্রন্ট গড়েছিল বা কোথাও এলডিএফ বা লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ২০১১ তে পশ্চিমবঙ্গ হাতছাড়া হয় তারও কয়েক বছর পরে হাতছাড়া হয় ত্রিপুরাও। থাকার মধ্যে রয়েছে শুধু কেরালা। এই বঙ্গে ১২ বছর আগে বাম বিশেষ করে সিপিএম বিদায় নেওয়ার পরে এমন কোনও ভোটের ফল দেখা যায় নি যেখানে আদপে তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা চির রাজনৈতিক শত্রু কংগ্রেসের সঙ্গে কোথাও কোথাও হাত মিলিয়ে ভোট লড়েছে বটে কিন্তু সিপিএমের দিকে সুবিধা এসেছে এমন তথ্য নেই। কাজেই প্রশ্ন থেকে যায় বাম সূর্য কি পশ্চিম আকাশে চলে যাচ্ছে?
২০২১ এর বাংলার বিধানসভা ভোটে তারা শূন্যতে পৌঁছিয়েছে। দশা একই কংগ্রেসেরও কিন্তু কংগ্রেসের এ রাজ্য থেকে লোকসভায় দুই প্রতিনিধি রয়েছে যা সিপিএম বা বামেদের নেই। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পর ৫টি উপনির্বাচন হয়েছে এবং পৌরসভা পঞ্চায়েত ইত্যাদি নির্বাচন হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে উপনির্বাচনগুলিতে দক্ষিণবঙ্গে সিপিএম কিছু ভোট পেয়েছিলো, বিশেষ করে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে বেশ কিছু ভোট পেয়েছিলো। এরপর পৌরসভা নির্বাচনে মধ্য বাংলার একটি পৌরসভা দখলও করেছিল। পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছু আসন পেয়েছিলো বটে কিন্তু তা বুক ফুলিয়ে বলার মতো জায়গায় নেই বরং সেই বিজেপি দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে।
আসলে তৃণমূল বিরোধী বা বলা ভালো মমতা বিরোধী ভোটাররা আর বামেদের উপর আস্থা না রেখে সবেগে বিজেপির দিকেই চলে গিয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত ধূপগুড়ির নির্বাচনে লালদুর্গতে তাদের নির্মম পতন হয়েছে , জামানত জব্দ হয়েছে ফের। সম্প্রতি হয় যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপনির্বাচন হয় এবং শুক্রবার তার ফল প্রকাশিত হয়েছে। দেখা গেলো ৭টি আসনে বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী ৪টি আসনে পরাজিত এবং একই ভাবে সিপিএমও চারটি আসনে জমি খুঁজে পায় নি। সর্বত্রই পরাজয় এমনকি তাদের দখলে থাকা কেরালাতেও পরাজিত 'বন্ধু' কংগ্রেসের কাছে। রাজ্য কংগ্রেসের মধ্যে এই অবস্থান দেখে গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে এই সিপিএমের সাথে জোট বেঁধে লড়লে আখেরে তাদের ক্ষতি কাজেই ধীরে ধীরে তৃণমূলের দিকে তারা অবস্থান বদলাতে চাইছে। তাহলে বামেদের কি হবে ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা গঙ্গাই জানেন। গঙ্গা প্রাপ্তির আগে পারবে কি বামেরা কিছু করতে, লক্ষ টাকার প্রশ্ন।