এবার ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে সিবিআই হানা রাজ্যের একাধিক জায়গায়। মহালয়ার দিনও তৎপরতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তল্লাশি চালাচ্ছে শিলিগুড়িতে (Siliguri)। সূত্রের খবর, শুধু শিলিগুড়ি নয়, শিলিগুড়ি, গ্যাংটক-সহ মোট ৫০ জায়গায় একসঙ্গে হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। তল্লাশি চলছে উলুবেড়িয়াতেও (Uluberia)।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, শিলিগুড়ির নকশাল বাড়ির পানিঘাটা এলাকায় বরুণ জিৎ সিং রাঠোর-এর বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তল্লাশি চলছে অটল চা বাগানের অফিসেও। এর পাশাপাশি আরও এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও অভিযান চলছে। পুলিস সূত্রে খবর, সিবিআই জানতে পেরেছে, ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের একাধিক আধিকারিকরাও যুক্ত রয়েছেন বলে সিবিআই জানতে পেরেছে। এমনকি একজন এজেন্ট-এর কাছ থেকে এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
অন্যদিকে উলুবেড়িয়ায়ও চলছে সিবিআই তল্লাশি। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের মহিষালি গ্রামে শেখ শাহানুরের বাড়িতে সিবিআই হানা চলছে। ভোর চারটে নাগাদ চারজনের একটি দল শাহানুরের বাড়িতে ঢোকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহানুর পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে কাজকর্ম করতেন। দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে দশটার পর সিবিআই টিম শাহানুরের বাড়ি থেকে বের হয় এবং আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শেখ শাহানুরকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যজুড়ে সিবিআই তল্লাশি চলছে। বেশিরভাগ সময় বাইরেই থাকত কাজকর্ম নিয়ে। বাড়িতে খুব বেশি সময় থাকতেন না। এলাকায় ভালো ছেলে বলেই সকলে জানত কিন্তু তার মাঝখানে জাল পাসপোর্টের কাজ করত সেটা ভেবে পাচ্ছে না গ্রামের বাসিন্দারা।
এসএসসি(SSC) নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে এবার সিবিআই(CBI) ব়্যাডারে এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, বুধবার সকাল দশটা নাগাদ কেন্দ্রীয় দল এসে পৌঁছয় শিলিগুড়িতে। পৃথক দুটি গাড়িতে ৮ থেকে ৯ জনের দল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছন বলেই খবর। তাঁরা দু'টি ভাগে ভাগ হয়ে যান। একটি দল আসে উপাচার্যের দফতরে। অপর দলটি যায় শিলিগুড়িতে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের(university campus) ভিতরে উপাচার্যের সরকারি বাসভবনে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি এসএসসি-র চেয়ারম্যান(Chairman)) ছিলেন। জানা গিয়েছে, তদন্ত চলাকালীন উপাচার্যর দফতরের বাইরে যে সকল কর্মীরা ছিলেন তারা যাতে বাইরে যোগাযোগ করতে না পারেন, তার জন্য তাদের মোবাইল(mobile) জমা নিয়ে নেওয়া হয়। যাতে কেউ উপাচার্যের দফতরে যেতে না পারে তার জন্য ছিল কড়া পুলিসি(police) প্রহরা। সূত্রের খবর, দফতরে গিয়ে তাঁরা উপাচার্য সুবীরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের অন্য একটি দল দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর ফ্ল্যাটে পৌঁছয়। বাঁশদ্রোণীতে ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ ছিল। ফলে অফিসাররা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে কাউকে পাওয়া যায়নি বলে সূত্রের খবর। তাই আধিকারিকরা ফ্ল্যাটের ভিতরে অভিযান চালাতে পারেনি। কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায় সুবীরেশের ফ্ল্যাট সিল করে দেয় সিবিআই।
প্রসঙ্গত, তিনি ৪ বছরের বেশি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে প্রাক্তন বিচারপতি আর কে বাগের কমিটির দেওয়া রিপোর্টে জানানো হয়, ৩৮১টি ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। তার মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি বলে অভিযোগ। বাগ কমিটির সেই রিপোর্টেও উল্লেখ ছিল সুবীরেশের নাম।
যদিও বিষয়টি নিয়ে এর আগেই সুবীরেশ ভট্টাচার্য জানান, ‘চেয়ারম্যান থাকাকালে কোনও আপস করিনি। ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত আমি চেয়ারম্যান ছিলাম। তখন দুর্নীতি হয়নি।’
মহাজোট সরকারের গঠনের পর বুধবার বিহার বিধানসভায় (Bihar Assembly) আস্থা ভোট মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের (Nitish Kumar)। আর সেদিনেই সে রাজ্যের একাধিক জায়গায় সিবিআই তল্লাশি। জমির বিনিময়ে চাকরি দুর্নীতি মামলায় মূলত আরজেডি নেতাদের বাড়িতে এই সিবিআই অভিযান (CBI Raid)। শুধু বাড়ি নয় একাধিক আরজেডি (RJD) নেতার অফিসেও তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
সিবিআই সূত্রের খবর, লালুপ্রসাদের দলের রাজ্যসভা সাংসদ আশফাক করিম, বিধান পরিষদের সদস্য সুনীল সিং এবং বিধান পরিষদের প্রাক্তন সদস্য সুবোধ রাইয়ের বাসভবনে বুধবার তল্লাশি হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই দুর্নীতি মামলায় জুলাই মাসে লালু-ঘনিষ্ঠ ভোলা যাদবকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
তবে নীতীশ কুমারের আস্থা ভোটের দিন সিবিআইয়ের এই তল্লাশি অভিযানকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলছে বিজেপি বিরোধী শিবির। লালুপ্রসাদ যাদব যখন প্রথম ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী, তখন নাকি বিহারের বহু যুবককে জমির বিনিময়ে রেলের 'গ্রুপ-ডি' পদে নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিয়োগ ওঠে। এই ইস্যুতে কাঠগড়ায় বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী-সহ তাঁদের দুই কন্যা মিসা এবং হেমার বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্তে গত ২০ মে সিবিআই পাটনা, দিল্লি-সহ দেশের মোট ১৫টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল।
এই সিবিআই তল্লাশি প্রসঙ্গে লালু-পত্নী রাবড়ি দেবী জানান, গোটা বিশ্ব দেখেছে, সারা দেশ দেখছে, আমরা এসবে ভয় পাই না, কেনই বা পাব।
প্রসূন গুপ্ত: জন্মাষ্টমীর আনন্দে যখন রাজধানী মাতোয়ারা তখন সকাল থেকে সিবিআই হানা দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার বাড়িতে। বিষয় আবগারি দফতরের বেহিসাবি কাজ। দিল্লি আবগারি নীতিতে বেনিয়ম চলছে এই অভিযোগে সিবিআই আগেই এফআইআর করেছিল। তাঁদের বক্তব্য, মদ বিক্রির সংক্রান্ত বেনিয়ম। দিল্লি পুলিস যদিও দিল্লি সরকারের অধীনস্থ নয়। কাজেই শোনা গিয়েছ, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে আবগারি দফতরের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট তারা। এরপরই নাকি তদন্তে নামে সিবিআই এবং বর্তমান আপ সরকারের আবগারি দফতরের মন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এর আগে সিসোদিয়ার বাড়িতে একবার সিবিআই হানা দিয়েছিল, আজ নিয়ে দ্বিতীয়বার সিবিআই তল্লাশি।
শুধুমাত্র মনীশ সিসোদিয়ার বাড়িই নয়, তাঁর বাড়ির আশেপাশে ২০টিরও বেশি এলাকায় একইসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সিসোদিয়া অবশ্য বিচলিত নয় বলে জানাচ্ছেন। এই নিয়ে তিনি টুইটও করেছেন। তিনি টুইটে জানাচ্ছেন, সিবিআই এসেছে, স্বাগত তাদের। আমরা (অর্থাৎ আপ পার্টি) খুব সৎ, এই বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যের যে, দেশে যারা ভালো কাজ করে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এ সমস্ত কারণে আমাদের দেশ পয়লা নম্বরে যেতে পারল না।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, এর আগেও সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছে। সেবারও কিছু পায়নি, এবারও পাবে না। কেজরিওয়াল প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে।
মূল ঘটনার বিষয় মদের দোকান। সিসোদিয়া জানিয়েছেন, দিল্লির কিছু অঞ্চলে বা এলাকায় মদের দোকান খোলা নিয়ে অবস্থান পাল্টিয়েছেন উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজল। মন্ত্রিসভা থেকে একসময় অনুমোদন করা হয়েছিল নতুন স্থানে এই ব্যবসা খোলা হবে। মন্ত্রিসভার এই বিলে সম্মতি নাকি জানিয়েছিলেন উপ-রাজ্যপাল। পরে অজানা কারণে এই নীতি অনুমোদন করছেন না তিনি। এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি বিরোধীরা সচল হয়ে জানাচ্ছে, সিবিআই দিয়ে রাজনীতি চালাচ্ছে সরকার।