লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। এই আবহেই গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক এবং পশ্চিমবঙ্গের একাধিক আসনের বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল বিজেপি। এর মধ্য়ে উত্তর ২৪ পরগনার বরানগর এবং মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা আসনের প্রার্থীর নামও রয়েছে। সম্প্রতি বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় ইস্তফা দেওয়ায় ওই আসনটি শূন্য হয়। সেখানে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর সজল ঘোষকে। বরানগর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দল তাঁকে প্রার্থী করায় স্বভাবতই খুশি সজল ঘোষ। জয়ের বিষয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত বরানগরের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি, 'লড়াইটা তৃণমূলের চুরি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে।'
তৃণমূল জমানায় একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই দুর্নীতিই এবার বিজেপির প্রচারে প্রধান হাতিয়ার হতে চলেছে, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। ভগবানগোলা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন শ্রী ভাস্কর সরকার।
কেবল জিতল না, ফিরে পেল সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাও। শুক্রবার ত্রিপুরার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলঘোষণার পর দেখা গেল, বিজেপি শুধু জিতেছেই তা নয়, প্রতিপক্ষ সিপিএমের কার্যত জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছে। ধনপুর কেন্দ্রটি বিজেপিরই ছিল। সেখানে জয় নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না গেরুয়া শিবিরের। ত্রিপুরা বিজেপি মন দিয়েছিল বক্সনগরে গেরুয়া পতাকা ওড়াতে। কারণ, বক্সনগর শুধু সিপিএমের দখলে ছিল তা-ই নয়, এই কেন্দ্রটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।
ভোটের ফলঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, বক্সনগরে বিজেপি প্রার্থী তফজ্জল হোসেন পেয়েছেন ৩৪,১৪৬ ভোট। অন্য দিকে, সিপিএমের মিজান হোসেন পেয়েছেন ৩,৯০৯ ভোট। ধনপুরে বিজেপির বিন্দু দেবনাথ পেয়েছেন ৩০,০০৭ ভোট। সিপিএমের কৌশিক চন্দ পেয়েছেন ১১,১৪৬ ভোট।
ভোটের ফলাফল নিয়ে ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘সিপিএম ভোটের পরে ময়দান ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ, ওরা বুঝে গিয়েছিল, মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করছে। তাই আর গণনাকেন্দ্র মুখো হয়নি।’ পক্ষান্তরে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘ভোটের ফল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি প্রশাসনকে ব্যবহার করে কার্যত ছেলেখেলা করেছে। এটা কোনও ভোটই হয়নি! মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল নয়। ভোট ডাকাতি করেছে বিজেপি।’
মোট ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট পেয়েছিল ৩৩টি আসন। বাম-কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪টি আসন। তিপ্রা মথা পায় ১৩টি আসন। এই জয়ের পরে বামেদের যেমন একটি সংখ্যা কমে গেল, তেমনই বিজেপি বাড়ল বিধানসভায়।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে প্রথম দিকে পিছিয়ে থাকলেও, শেষের রাউন্ড গুলিতে এগিয়ে থেকে ৪৮৮৩ ভোটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী। জানা গেছে, সপ্তম রাউন্ডের শেষে বিজেপি পেয়েছে ৬৯,৫০৯টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৭২,৪৪০টি ভোট
জানা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে নির্মলচন্দ্র রায় এগিয়ে ছিলেন শেষের দিকে। প্রথম দিকে অবশ্য এগিয়ে ছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, চতুর্থ রাউন্ড শেষে তাপসী রায় পেয়েছেন ৩৮,৭৩৬ ভোট, নির্মলচন্দ্ৰ রায় পেয়েছেন ৩৯,০৯৬ ভোট। এর পরেই শুরু হয়েছে আবির খেলা। শুক্রবার গোনাহর শুরুতে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল বিজেপি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকে তৃণমূল প্রার্থী।
সম্প্রতি ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। ফলত লোকসভা ভোটের আগে ধূপগুড়ি হয়ে উঠেছিল প্রেস্টিজ ফাইট। এরপরেই রাজ্যের সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্বরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই আসন দখলের জন্য। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের আগে তৃণমূলের পক্ষে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় গিয়ে সাধারনের উদ্দেশ্যে বলেছিলে, আমি কিছুই চাইনি কোনওদিন, আজ চাইছি যে এবার ভোট আমাদের দিন।' এরপরই অবশ্য ২০১৬ সালের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী ও ২০২১ সালে বিজেপির কাছে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়। এর ফলে অবশ্য কোনও প্রভাব পড়ল না তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে।
ধুপগুড়ি উপনির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সপ্তম রাউন্ডের গণনার শেষে এগিয়ে গেল তৃণমূল। জানা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে নির্মলচন্দ্র রায় এগিয়ে গিয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ভোটে। ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে বিজেপির থেকে ৩ হাজার ৭৭৩ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। সূত্রের খবর, চতুর্থ রাউন্ড শেষে তাপসী রায় পেয়েছেন ৩৮,৭৩৬ ভোট, নির্মলচন্দ্ৰ রায় পেয়েছেন ৩৯,০৯৬ ভোট। এর পরেই শুরু হয়েছে আবির খেলা। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, পরে আবারও এগোবেন এবং তাঁরাই জিতবেন এই নির্বাচনে।
এই দিকে আজ ধূপগুড়িতে জেতা সম্ভব ছিল না বলে মন্তব্য করেন অধীর চৌধুরী। ইতি মধ্যেই ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়। এই পরাজয় প্রত্যাশিত ছিল বলে জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বললেন, সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোটের জয় নিশ্চিত ছিল। ইস্যুও আলাদা ছিল। কিন্তু ধূপগুড়িতে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের জয়ের কোনও সম্ভাবনা ছিল না।
দু একটি বিক্ষিপ্ত অভিযোগ ছাড়া সকাল থেকেই শান্তিতে রাজ্যের ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন। সম্প্রতি কলকাতার মৃত্যু হয়েছিল এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়ের। সেই কারণেই মঙ্গলবার এই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
সকাল থেকে ইভিএম বিকলের অভিযোগের পাশাপাশি, বুথের কেন পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, রাজ্যের এই একমাত্র বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রচুর পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মব্যস্ত দিন হলেও সকাল থেকে প্রতিটি বুথের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে।
দু বছর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে যে আসনগুলিতে শাসক তৃণমূলের রক্তক্ষরণ হয়েছিল, ধূপগুড়ি ছিল তাদের অন্যতম। তৃণমূলের মিতালি রায়কে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় গিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের বিষ্ণুপদ রায়। তাই এই নির্বাচন দুই রাজনৈতিক দলের কাছেই কার্যত চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিজেপির কাছে।
কারণ, গত পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবি হয়েছে। বিধানসভায় হারানো ক্ষমতা ফের নিজেদের পালে টানতে সক্ষম হয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী লোকসভা ভোটের আগে এই ধূপগুড়ি ধরে রাখা এখন সরাসরি চ্যালেঞ্জ সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।
গত প্রতিটি নির্বাচনেই এই রাজ্যে তাঁদের সামনে রেখেই ভোটে লড়াই করছে বিজেপি। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত উপনির্বাচনেও নিজেদের জয়ী আসন হারিয়েছে বিজেপি। দিল্লি থেকেও কার্যত ধূপগুড়ি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে সুকান্ত-শুভেন্দুকে।
গত শনিবার এই কেন্দ্রে প্রচারে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে প্রচারে ধূপগুড়িকে আলাদা মহকুমা তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ওই সভায় হাজির থাকা প্রাক্তন বিধায়ক মিতালি রায়, পরের দিনেই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মিতালির এই দলবদল কোনও ফ্যাক্টর হল কীনা, তা বোঝা যাবে ভোট শতাংশের উপরেই।
প্রসূন গুপ্ত: ভোট আপাতত শান্তিতেই বলা যেতে পারে। উপনির্বাচন নিয়ে বছর কয়েক আগেও খুব একটা হৈচৈ থাকতো না। ২০২১ এর নির্বাচনে তৃণমূল তৃতীয় বারের মত ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই কিন্তু বিধানসভার পটভূমি সম্পূর্ন বদলে গিয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর যুগে কোনও কংগ্রেস বা বাম প্রতিনিধি নেই। সেই ১৯৫২ এর হিন্দু মহাসভার উত্তরসূরী বিজেপি আজ বিরোধী আসনে।
এবারের ধূপগুড়ি বিধানসভা, বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে শূন্য কাজেই ভোট। ভোটে অংশ নিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, বাম সহ নানান নির্দল। তবে এবারের ভোট কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রেস্টিজের। বিজেপির আসন ধরে রাখার তাগিদ যেমন রয়েছে তেমন তাগিদ বামেদের যে যুগের পর যুগ এই কেন্দ্র এক প্রকার লালদূর্গ ছিল। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন তৃণমূলের তাগিদ ডুয়ার্স অঞ্চলে জমি খুঁজে নেওয়া।
এরকম অতি সাধারণ এক উপনির্বাচনে তিন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মাটি কামড়ে পরে প্রচার চালিয়েছে। যদিও বিজেপি বিরোধী ২৮টি দল এক ছাতার তলায় এসে " ইন্ডিয়া" নামে একটি জোট তৈরি করেছে কিন্তু তবুও এই ভোটে ওসব দোস্তি পাত্তা দিচ্ছে না কেউই। পাখির চোখের মত জয় তাদের টার্গেট।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে। সামান্য কথা কাটাকাটি ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ আপাতত। ডুয়ার্স অঞ্চলে গন্ডগোলের ইতিহাস প্রায় নেই বললেই চলে। বরং ঝামেলা পাকলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আজকের ভোটে পুরুষদের থেকে মহিলাদের ভীর বেশি। এটি নিয়ে চিন্তিত বিরোধীরা। তবে এখনও এত ভাবনার জায়গা নেই। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ফলাফল।
প্রসূন গুপ্ত: আর হাতে শনিবার এবং রবিবার বিকেল অবধি প্রচারের সময়সীমা ধার্য রয়েছে, কাজেই শেষ লগ্নে লড়ে যাচ্ছে তিন দল। ধূপগুড়ির মতো প্রায় অনিয়মিত প্রকাশের বিধানসভায় এতো কোমর কষে ভোট প্রচার এর আগে বোধকরি হয় নি। আর হবেই বা না কেন, এই কেন্দ্রের ভোটের ফল তৃণমূল বিজেপি বা কংগ্রেস/সিপিএম জোটের উত্তরবঙ্গের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
প্রচারে সব থেকে এগিয়ে নিঃসন্দেহে বিজেপি। ওই এলাকার সমস্ত হোটেল বা গেস্ট হাউস দখল করে রেখে প্রচার চালাচ্ছে তারা বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কেন্দ্রে জিততেই হবে বিজেপিকে কারণ বিগত বিধানসভা ভোটে জয় তাদেরই হয়েছিল। দেখা গেলো রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদা, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ সহ প্রথম শ্রেণীর তাবড় তাবড় নেতারা মাটি কামড়ে পরে রয়েছেন ধুপগুড়িতে। কেন্দ্রের নাকি কড়া নির্দেশিকা রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে এই কেন্দ্রে জয় আনতেই হবে নতুবা নাকি আসন্ন লোকসভায় এর প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে। প্রায় প্রতিদিন সুকান্তবাবু ওখানে থাকাকালীন প্রচার এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন।
প্রচারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, যুব তৃণমূল সভাপতি সায়নী ঘোষ সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নেতা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করছেন। জনসভা বা পথসভা তো আছেই। শনিবার প্রায় শেষ লগ্নে যাচ্ছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বালিগঞ্জ থেকে আসানসোল ইত্যাদি বিভিন্ন উপনির্বাচনে শেষ লগ্নে প্রচার করে অভিষেক বাজিমাত করেছিলেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম নেই।
ঘরে ঘরে প্রচার করছে সিপিএমের যুব কর্মী নেতারা। অবিশ্যি তাদের দলে সেলিম বা সুজন চক্রবর্তী ছাড়া তেমন প্রচারের বড় মুখ কোথায়? যদিও শুক্রবার অধীররঞ্জনকে নিয়ে বেশ বড়োসড়ো প্রচার করলো বাম/কং জোট। এই কেন্দ্রে একসময় সিপিএমের দাপট থাকলেও আজ সেই সংগঠন হারিয়েছে সিপিএম। এবারে বাস্তব হচ্ছে এই যে সিপিএম যদি ১০/১৫% ভোট বাক্সবন্দি করতে পারে তবে আখেরে সুবিধা হবে তাদের "ইন্ডিয়া" জোটসঙ্গী তৃণমূলের। মজার বিষয় সারা ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির নজর কিন্তু এই কেন্দ্রে। ধূপগুড়ি বিখ্যাত হতে চলেছে।
প্রসূন গুপ্তঃ সোমবার কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিনে ধূপগুড়ি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন যে, সামনেই ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে ওই অঞ্চলে বিজেপি সমস্ত হোটেল বুক করে রেখেছে। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার সমস্তই তাদের হাতে, যাতে অন্য কোনও দলের কেউ সুবিধা না পায়। তিনি বলেন যে, টাকা পয়সা ছড়ানো হচ্ছে। একই সাথে তিনি অবশ্য বাংলার নাগরিক হিসাবে রাজবংশীদের নামে জয়ধ্বনি দেন।
একটি বিষয় আগেও আমরা জানিয়েছি যে, ধূপগুড়ি নির্বাচনে প্রতিটি দলের কাছে প্রেস্টিজ লড়াই। যদিও ধূপগুড়ি চিরকালই বামেদের ভূমি। এখানকার ভোটাররা ২০১১ অবধি বামেদের ভোট দিয়ে এসেছে এবং বামশক্তি দুর্বল হলে তারা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য তৃণমূলকে পরাস্থ করা। যদিও বাস্তব ঘটনা এই যে, তৃণমূল এই ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে পরাস্থ হলে তাদের কোনও লোকসান নেই। কারণ এই জমি তো তাদের ছিলই না। কিন্তু জিততে পারলে মস্ত লাভ।
তৃণমূল জিতলে এটা প্রমাণিত হবে যে, বিজেপির হওয়া আর উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে ডুয়ার্স/তরাইতে নেই, যা কিনা ১৯ এবং ২১-এ প্রবল ভাবে ছিল। একই সাথে আগামী লোকসভায় উত্তরবঙ্গে জমি খুঁজে পাবে মমতার দল। অন্যদিকে, বিজেপি জিততে না পারলে তাদের মস্ত ভাবনা। এই কারণে যে তাদের শক্ত ঘাঁটি হাতছাড়া হতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে ৩৫ আসন তো দূরস্থান, ৫টি আসন পাবে কিনা চিন্তার। কাজেই ওখানকার মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এই উপনির্বাচন জিততে মরিয়া বিজেপি। সেই সঙ্গে তারা অনন্ত মহারাজকে (যিনি এখন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ) প্রচারে নামিয়ে রাজবংশী ভোট দখল করতে চলেছে। এই অনন্ত মহারাজ কিন্তু একসময় বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। বিজেপি অফিসিয়ালরা কিন্তু ওই বিষয়টিকে সামনে আন্তে চাইছে না। তারা চাইছে যেভাবেই হোক এবারেও সিপিএমের সিংহভাগ ভোট যেন তাদের বাক্সে পড়ে, নতুবা জয় পাওয়া কঠিন। দেখার বিষয় ২ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রচারে কি বলেন।
প্রসূন গুপ্তঃ আমাদের এই নিয়মিত ধূপগুড়ি নিয়ে প্রতিবেদন দেখে নানান দলের সমর্থকদের নানান অভিমত আছে। তাদের কারও বক্তব্য, ও দেখতে হবে না, সিপিএমের ৮০ শতাংশ ভোট বিজেপিতে পরবে। হাসতে হাসতে বিজেপি তার নিজের আসন ফিরে পাবে। আবার তৃণমূলের সমর্থকরা মনে করেন অন্তত ২০ হাজার ভোট জিতবে দিদির দল। সিপিএম আপাতত কোনও মন্তব্য করছে না, তাদের একটাই আতঙ্ক যতটুকু কংগ্রেস ভোট আছে তা কি আদৌ তাদের বাক্সে আসবে।
ইতিমধ্যে শনিবার সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গড়তে সিপিএম জয়ী প্রার্থীরা বিজেপিকে ভোট দিয়ে বোর্ড গড়ছে। এই খবর সরকারি ভাবে তাদের কাছে আসার পর দল থেকে অনেককেই বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু বেপরোয়া ওই জয়ীরা। তারা মনে করছে তাদের প্রধান শত্রু তৃণমূল কাজেই যে ভাবেই হোক তাদের আটকাও। এই একই ঘটনা যে ধুপগুড়িতে ঘটবে না তার গ্যারান্টি আছে কি। বলা ভালো মোটেই নেই কারণ আজ যে শক্তিতে বিজেপি এই অঞ্চলগুলিতে শক্তিশালী সেই শক্তি সিপিএমেরই। আজকের দিনে গ্রামগঞ্জে কি আর মার্কস, লেনিনের পাঠ দেওয়া হয়? সুতরাং আজকের প্রজন্মের কাছে পুরাতনী কমিউনিজম চলে না।
অন্যদিকে ৩০ অগাস্ট বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে বিগত সাগরদিঘি উপনির্বাচনে শুভেন্দুর 'একমুখী ভোট' দেওয়ার আবেদনে প্রচুর হিন্দু ভোট কংগ্রেসের বাক্সে পড়েছিল। এবারেও জল মেপে কি নিধন বিরোধী নেতা দেন সেটাই দেখার। সুজন চক্রবর্তী ইতিমধ্যে নাকি প্রচার সারছেন বাড়ি বাড়ি, কিন্তু শোনা গেলো সেই প্রচারে কোনও ঝাঁজ নেই। অনেকেই বলছে খেলার আগেই সিপিএম হেরে বসে আছে। একেবারে প্রচারের শেষ দিনে যাবেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গেলো এলাকায় নাকি পঞ্চায়েতের একটা হওয়া রয়েছে। যদি তাই হয় তবে সদ্য রাজ্যসভায় পাঠানো অনন্ত মহারাজকে প্রচারে দেখা যেতে পারে, তেমনটাই ভাবছে নাকি বিজেপি কারণ এবারের লড়াইটা টাফ। (চলবে)
প্রসূন গুপ্তঃ ৫ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়ির উপ-নির্বাচন। এর আগের পর্বগুলোতে আমরা মোটামুটি বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলাম। আজ আরও কিছু। ধূপগুড়িতে যতটুকু জানতে পারলাম, বিধানসভার মোট ভোটারের অনেকটাই রাজবংশীদের। এই রাজবংশী কারা? দেশ বিভাগের আগে উত্তরবঙ্গের 'এদেশীয়' বলতে যাদের মূলত বোঝায়, তারা রাজবংশী। স্বাধীনতার উত্তর এবং পূর্ব লগ্নে এই রাজবংশীরা উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ছিল। পরে ঝাঁকে ঝাঁকে ওপার বাংলা থেকে উদ্বাস্তুরা এসে এদের সাথেই বসবাস করলেও ওই সময়ে কোথাও একটা গোষ্ঠীগত ফারাক ছিলই। শহর কলকাতা বা নিকটবর্তী অঞ্চলে যখন ওপার বাংলার মানুষরা এসেছিলো, তখন যেমন ঘটি বাঙালির একটা বিভেদ ছিল, যেমন ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের রেষারেষি ছিল, তেমন রাজবংশী ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে একটা নরম লড়াই ছিল বা কিছুটা আজকেও আছে।
শোনা গিয়েছে, এ বিষয়ে বামপন্থীরা এই বিভেদের রচনা করেছিল। প্রাথমিক ভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বা সংঘ পরিবার যেমন ওপার বাংলার উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়িয়ে একটা রাজনীতির পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, পরে কিন্তু পঞ্চাশের মধ্যভাগে তা ছিনিয়ে নিয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছিল বামেরা। তারা উদ্বাস্তুদের যেমন বুঝিয়েছিল যে, বিধান রায় তাদের উপযুক্ত ত্রাণের বা ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করেননি, তেমন রাজবংশীদের বুঝিয়েছিল যে তাদের জমিতে উদ্বাস্তুরা দখলদারি করেছে। কাজেই এই পক্ষই বরাবরই কংগ্রেস বিরোধী ছিল এবং এই কারণে বারবার উত্তরবঙ্গে সফর করা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অঞ্চলগুলিতে খুব দৃঢ় সংগঠন করতে পারেননি। এই বিভেদের রাজনীতির কারণে রাজবংশী এবং উদ্বাস্তু, দুই গোষ্ঠীই বাম নির্ভর হয়ে পড়েছিল।
পরবর্তীতে ২০১৯ থেকে বামেদের সেন্টিমেন্ট কেড়ে নেয় বিজেপি এবং সেই কারণে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার তাদের দখলে। যদিও বিগত পঞ্চায়েতে তৃণমূল বেশ ভালো ফল করেছে উত্তরবঙ্গে, কিন্তু পঞ্চায়েত ও বিধানসভার মধ্যে ফারাক তো আছেই। এক সময়ে লালদুর্গ ধূপগুড়িতে বামদের ভোট আপাতত গেরুয়া বাক্সেই পড়ছে। মজার বিষয় ধূপগুড়ি বামদুর্গ হলেও বর্তমানের এই উপনির্বাচন নিয়ে তাদের খুব একটা তাপউত্তাপ নেই। একটা সময়ে যুব বামপন্থীরা প্রচারের অঙ্গ ছিল কিন্তু ইদানিং নব্য বামপন্থীরা যেন অনেকটাই কর্পোরেট ধারায় চলেছে। তারা মনে করে টেলিভিশন বা সোশ্যাল নেটে বিতর্কিত কথাবার্তা বললেই মানুষের ভক্তি তাদের উপর উপচে পড়বে। কিন্তু আদতে তাই কি হয়? ফ্যাশন দুরস্ত এই নব্য বামেদের কথা শুনতে ভালো লাগলেও তাদের কটাক্ষকে যে ভোটে পরিবর্তিত করা যায় না, তা বামেদের কে বোঝাবে! ( চলবে )
প্রসূন গুপ্তঃ ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত এলাকা হলেও বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রাস্তাঘাট, আলো, স্কুল-কলেজ ইত্যাদির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এলাকার মানুষ কেউ সরকারি স্কুল বা জলপাইগুড়ি কোর্টে চাকরি করতে যায়। এছাড়া কিছু ছোট কারখানা আছে, সেখানে কাজ করে। কিন্তু মূলত কৃষি প্রধান বিধানসভা অর্থাৎ চাষবাস চলে সম্বৎসর। এই কৃষির অন্যতম কিন্তু চা বাগানে কাজ যা আগের পর্বে জানানো হয়েছিল। চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল, যা বামেরা ক্ষমতায় এসে সংগঠন করে একটা বাম ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল।
যদিও চা বাগানের সমস্যার সমাধান হয়েছিল নামমাত্র, কিন্তু এলাকার মানুষ বামেদের দিকে ঝুকে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে এদের ভোট ২০১৯ এবং ২০২১-এ বিজেপিতে পড়েছিল। কারণ ততদিনে বামেরা দুর্বল হয়েছে। এরা কিন্তু কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আস্থা রাখেনি। অথচ সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এখানে দারুন ফল করেছে। ভোটের সময়ে বুথ দখল বা ওই গোত্রীয় কোনও অবিচারের দাবি কিন্তু ওঠেনি এই অঞ্চল থেকে।
সোমবারে তৃণমূল তাদের প্রার্থীকে ডেকে পাঠিয়েছে কলকাতায় বলে খবর। তিনি রাজবংশীয়। নাম নির্মল চন্দ্র রায়। উচ্চ শিক্ষিত, দার্জিলিং-এর একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন এবং তিনি সাহিত্যিকও বটে। তার সঙ্গে কিছু কথা হলো এই প্রতিবেদকের। নির্মলবাবু নম্রস্বরে জানালেন দল তাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি কৃতজ্ঞ। ভোটের ভবিষ্যত কি হতে পারে প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত কথায় বললেন।
নির্মলবাবু জানালেন, তিনটি কারণে তৃণমূল এগিয়ে। ১) এটি উপনির্বাচন কাজেই ভোটদাতারা জানেন তাদের ভোট সরকার গঠন হবে না কাজেই সরকারি দলকেই ভোট দেওয়াই উচিত। ২) পঞ্চায়েত ভোটে এলাকার স্বার্থে তারা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে ফলে তা বিধানসভায় পরিবর্তন হবে এমন আশা করা ভুল। ৩) বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে এবং বামে সেই ভোটের অনেকটাই ফিরে গিয়েছে কাজেই ভোট ভাগাভাগিতেও লাভ তৃণমূলেরই। তিনি সাগরদিঘির উদাহরণকে আমলই দিলেন না। অন্যদিকে বিজেপির এখনও প্রার্থী ঠিকই হয়নি। (আগামী পর্বে)
সিপিআইএমের পর ধুপগুড়ি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী করা হয়েছে অধ্যাপক নির্মল চন্দ্র রায়কে। দলের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই খবর জানানো হয়েছে।
বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুর পর ওই আসনটি ফাঁকা হয়েছিল। চলতি মাসের ১১ তারিখ ওই কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছিল সিপিআইএম। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র রায়কে প্রার্থী করেছে তারা। বাম প্রার্থীকে সমর্থন করেছে কংগ্রেসও। এদিকে প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজবংশী নেত্রী মিতালি রায়কে উপনির্বাচনের টিকিট দিল না তৃণমূল।
অন্যদিকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও আসন পায়নি বাম এবং কংগ্রেস। যদিও সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস জিতলেও ফের তৃণমূলে যোগদান করেন দলের জয়ী বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। আবার রাজ্যের জোট সঙ্গী কংগ্রেসের হাত ধরেই ভোটের লড়াইয়ে নামছে বামফ্রন্ট।
এদিকে যেহেতু বিধানসভা নির্বাচন এবং লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেকারণে 'ইন্ডিয়া' জোটও কার্যকর হচ্ছে না। কারণ,বাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকেও জানানো হয়েছে কেন্দ্রে বিজেপি হারানো তাদের লক্ষ্য হলেও রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই চলবে।
প্রসূন গুপ্ত: শনিবারের প্রতিবেদনে ছিল ধুপগুড়িতে কবে কি হয়েছে। পূর্বতন ইতিহাস লেখা হয়েছিল এই কারণে যে, জলপাইগুড়ির এই বিধানসভা মূলত বামপন্থীদের হাতে তিন দশকের বেশি ছিল। কাজেই প্রশ্ন থাকতেই পারে যা ধূপগুড়ির এই শক্ত বাম ঘাঁটিতে কি করে বিজেপি ক্ষমতা দখল করলো? আসল তথ্য এই যে, ওই অঞ্চল মূলত কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী। ২০১৬ তে প্রথম বাম বিজেপির ভোট ভাগাভাগিতে সুবিধা পেয়েছিল তৃণমূল এবং প্রথম বারের জন্য টিএমসি এখানে খাতা খুলেছিলো। পরিবর্তন তো বিভিন্ন জায়গায় হয়েই থাকে কিন্তু ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের বাসিন্দাদের একটা বামেদের প্রতি আকর্ষণ ছিলই। কারণ খতিয়ে দেখে অবাক হতে হয়।
আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আগে একটাই জেলা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে দুই ভাগ হয়। তা হলেও সংস্কৃতি ও ভাষা কিন্তু একই এই দুই জেলাতে। অন্তত ৬০ এর বেশি জনজাতির বা এখানে। এখানে বাস বলতে ব্রিটিশ আমলে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহেবরা সাঁওতাল, কোল, ভিল ইত্যাদি জনজাতির মানুষকে এখানে তুলে নিয়ে আসে চা বাগানে কাজের জন্য। এরা প্রচন্ড পরিশ্রমী হলেও অত্যাচারিতও হয়েছিল। স্বাধীনতা উত্তর যুগে এই সমস্ত চা বাগান ব্রিটিশদের হাত থেকে ধীরে ধীরে কিনে নেয় অবাঙালি ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ী সংস্থাগুলি কিন্তু বেশ নামজাদা। আজকেও এদের বেশির ভাগ রাজ করছে জলপাইগুড়ি বা আলিপুরদুয়ারে। দাবিদাবা এদের বিস্তর হয়েছে এমনকি লোকসভা বা রাজ্যসভায় এই চা শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনায় ঝড় উঠেছে বারংবার। অনেক সমস্যার মধ্যে একটি ছিল ব্রিটিশ আমলের বেতন। এই শ্রমিকদের বেতন ছিল খুবই কম এছাড়া চা বাগানে কাজ করা মহিলাদের চা গাছ থেকে একধরণের রোগের উৎপাত ছিল।এই নিয়ে বহু সিনেমাও হয়েছে। সে যাই হোক না কেন ধূপগুড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় ১৯৭৭ অবধি এই শ্রমিকদের সমস্যার পূর্ণ সমাধান হয় নি। এরপর আসে বামেরা।(এরপর তৃতীয় পর্ব)
প্রসূন গুপ্ত: আবারও একটি উপনির্বাচন এসে গেলে এবং ফের পুজোর আগে। ধূপগুড়ি। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন ২০২১-এ জিতে আসা বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। খুবই দ্রুততার সঙ্গেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই উপনির্বাচন ঘোষণা করেছেন। এখন নানান জোট-বেজোটের মধ্যেই এই নির্বাচন, কাজেই সবারই নজর ফলের দিকে। এবারে প্রশ্ন হচ্ছে কে এগিয়ে জেতার লক্ষ্যে। এই ধুপগুড়িতে এতো সমীকরণ আছে যে চট করে চূড়ান্ত উত্তর দেওয়া কঠিন।
আড়াই লক্ষ ভোটার এই কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর জলপাইগুড়ির এই গ্রাম প্রধান অঞ্চলে ৫২ থেকে ৭২ অবধি ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু পট পরিবর্তন হয় বাম জমানাতে অর্থাৎ ১৯৭৭-এ। যাদবপুর, দমদম বা দুর্গাপুরের মতোই লালদুর্গ এই ধূপগুড়ি। ৭৭-এর পরে যতরকম নির্বাচন হয়েছে বাম আমলে, ধুপগুড়িতে বিপুল ভোট পেয়েছে সিপিএম। ২০০৯-এর লোকসভায় যখন পরিবর্তনের হওয়া উঠলো তখনও জলপাইগুড়িতে জেতে সিপিএম এবং ২০১১-তে তৃণমূলের আগমনের সময়েও এই কেন্দ্রে সিপিএমের মমতা রায় নাম্নী এক নেহাতই গৃহবধূ এই কেন্দ্রে জিতে আসেন। বাম জমানার পরেও এই বিধানসভা তৃণমূল দখল করতে পারে নি।
পরিবর্তন এলো ২০১৬-র বিধানসভায়। ক্ষমতা দখল করলো তৃণমূল। এর মাঝে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল ভালো ফল করে ধুপগুড়িতে। কিন্তু ধূপগুড়ি কখনোই তৃণমূল কে আপন করে নেয়নি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলের বামপন্থীরা ঢেলে ভোট দেয় বিজেপিকে। ওই এলাকাতে গিয়ে জানা যায় যে, এরা যে কোনও ভাবেই তৃণমূলের পরাজয় চায়, তাই ক্ষয়িষ্ণু সিপিএমকে বাদ দিয়ে তারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটেছিলো ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও। এবারেও এই অঞ্চল বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়কেই জিতিয়ে আনে।| এবারে বিষ্ণুপদর প্রয়াণে উপনির্বাচনে কি হতে পারে তাই প্রশ্ন রাজনীতির মানুষের। (পরের অংশ আগামীকাল)
আসানসোল ও বনগাঁ উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল(tmc)। বনগাঁ ১৪ নং ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে(by election) জয়ী তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহা । দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি । আসানসোল ৬ নং ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায় । দ্বিতীয় স্থানে বাম প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(tmc suprimo Mamata Banerjee) আগেই তাঁকে আসানসোল পুরসভার মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নাম ঘোষণার সময় তিনি তখন ছিলেন বারাবণির বিধায়ক(MLA)। নিয়ম অনুযায়ী আসানসোল পুরসভার মেয়র হতে হলে তাঁকে কাউন্সিলর হিসেবে ভোটে জিততে হত। ছ’মাসের মধ্যে জিতে আসতে হত। আর ঠিক ছ’মাসের মাথায় গত ২১ আগস্ট আসানসোল পুরসভার উপনির্বাচন হয়। আসানসোলে সেই ওয়ার্ডেই বড় ব্যবধানে জিতলেন বিধান উপাধ্যায়। ৫ হাজার ৪৭৭ ভোটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায়। বুধবারের গণনার পর জানা গিয়েছে, প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিধানের পরেই রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শুভাশিস মণ্ডল। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপির শ্রীদিব চক্রবর্তী। এই জয় মানুষের জয় বললেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায়।
বনগাঁ ১৪ নং ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহা । নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী অরূপ পালের থেকে ২ হাজার ১১৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। স্বভাবতই আবিরে উল্লাস তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএমের ধৃতিমান। উল্লেখ্য, গত পুরসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ দাস। শপথ গ্রহণের আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাই উপনির্বাচন।