আধার কার্ডে বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ। ৫০ হাজার টাকা খোয়ালেন এক ব্যক্তি। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখা। ধৃতের নাম ছোট্টু কুমার। উল্লেখ্য, সম্প্রতি, শহরে আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে টাকা তোলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগও জমা পড়েছে পুলিশে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গোটা ঘটনার প্রধান মাথা হতে পারে ওই ছোট্টু।
পুলিস সূত্রে খবর, ধৃত ব্যক্তি আসলে বিহারের বাসিন্দা। তার নামে আগেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, ওই ব্যক্তি হরিয়ানায় জেলবন্দি ছিল বলে খবর। জানা গিয়েছে, অগাস্ট মাসে তপনকুমার লাহা নামে এক ব্যক্তি বড়তলা থানায় আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তোলেন। তারই তদন্তে নেমে ছোট্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে লাখ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠছে মাঝে মধ্যেই। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রতারকরা ফাঁকা করে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট। এমনকি ফোনেও আসছে না OTP।
সম্প্রতি কলকাতার পুলিসের তরফের বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেগুলি মেনে চললে প্রতারণার ঘটনা কমবে বলেই আশা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হল দ্রুত বায়োমেট্রিক লক করা। এছাড়াও আনমাস্কড আধার নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধ করা হয়েছে পুলিসের তররফে। প্রয়োজনে পুরো আধার নম্বর না দিয়ে শেষ চারটি ডিজিট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিস।
কীভাবে বায়োমেট্রিক লক করবেন?
আপনার নিজের স্মার্টফোন থেকেই আধারের বায়োমেট্রিক লক করতে পারবেন। তার জন্য এম আধার (mAadhaar) অথবা উমাঙ্গ অ্য়াপ ডাউনলোড করতে হবে।
-প্রথমে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করুন।
-এররপর সেখানে Lock/Unlock biometric অপশন আসবে।
-ওই অপশনে ক্লিক করুন।
-সেখানে নিজের আধার নম্বর দিতে হবে। এরপর রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে OTP আসবে।
-সেই OTP দেওয়ার পর আধারের বায়োমেট্রিক লক হবে।
সম্প্রতি একাধিক এই সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতারণার ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করুন। এবং ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট নিয়ে রাখুন।
এছাড়াও কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে ভেজা বা তৈলাক্ত হাতে বায়োমেট্রিক ছাপ দেবেন না। এবং সঠিক কারণ না জেনে কোথাও বায়োমেট্রিক দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে প্রতারণার ফাঁদ। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় প্রতারকরা। আর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খোয়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। একের পর এক অভিযোগ পেয়ে চিন্তায় পুলিশও।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আঙুলের ছাপ ক্লোন করছে প্রতারকরা। এবং ব্যাঙ্কে সেই ক্লোন করা আঙুলের ছাপ কাজে লাগিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে।
এমনই ঘটনার শিকার হয়েছেন মহেশতলার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ কর। প্রমোটারির ব্যবসা রয়েছে তাঁর। দিন কয়েক আগে তাঁর ফোনে একটি মেসেজ আসে। তার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, তাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রসেনজিৎবাবু ওইদিন ব্যাঙ্ক থেকে কোনও টাকা তোলেননি।
ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করার পর তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অনুমান, রেশন দোকান থেকে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন তোলার সময় বায়োমেট্রিক ছাপ ক্লোন করা হয়েছিল। যদিও প্রসেনজিৎবাবু জানিয়েছেন তিনি কোনওদিন রেশন তোলেননা। তবে তাঁর ধারণা, বেহালা রেজিস্ট্রি অফিসে তিনি গিয়েছিলেন একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে। সেখান থেকেই ক্লোন হয়ে থাকতে পারে।
সিভিভিও (CVV) দেননি, ওটিপিও (OTP) দেননি। তবুও হাতছাড়া ব্যাঙ্কে জমানো টাকা? বাজারে নয়া আর্থিক প্রতারণা (Financial fraud) থেকে সাবধান। বেশি কিছু নয়। শুধুমাত্র আধার কার্ডের (Aadhaar Card) বায়োমেট্রিক চুরি (Biometric theft) করেই গুম হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ঠিক এমনই কায়দায় প্রতারিত হয়েছেন দুর্গাপুরের (Durgapur) ইলেকট্রিকের সরকারি ঠিকাদারী সংস্থার কর্ণধার বিবেকানন্দ মুখার্জি। ঘটনায় তাজ্জব সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস।
কিন্তু কীভাবে হচ্ছে এই অপরাধ? জানা গিয়েছে, ঠিকাদারী সংস্থার নানা কাজের বরাত পেতে বিবেকানন্দ বাবু নিজের আধার কার্ড জমা করছেন বিভিন্ন জায়গায়। যেখানে লুকিয়ে রয়েছে এই অপরাধের মূল সূত্র। বিবেকানন্দ বাবুর আধার কার্ডের লিঙ্ক ধরেই তাঁর বায়মেট্রিক হ্যাক হয়ে যায়। গত শুক্রবার রাত্রি ৮.৩৫ মিনিট নাগাদ প্রথম বিবেকানন্দ বাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। আর সন্ধে ৮.৩৬ মিনিট নাগাদ রাষ্ট্রয়ত্ত একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। এই ব্যাবসায়ীর আশঙ্কা আরও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেও হয়তো হ্যাকাররা টাকা তুলে নিয়েছে।
ইতিমধ্যে দুর্গাপুর সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সাইবার পুলিস খতিয়ে দেখছে পুরো ঘটনাটি। কিন্তু আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক হ্যাক করে টাকা চুরির ঘটনায় তোলপাড় দুর্গাপুর। সরকার আর ব্যাঙ্ককে আরও সতর্ক হতে হবে, প্রয়োজনে সচেতনার ক্যাম্প করতে হবে, অভিমত আই. টি সেক্টরের কর্মী সিদ্ধার্থ মুখার্জীর।
কিন্তু, এর থেকে বাঁচবেনই বা কীভাবে? একমাত্র উপায়, ওয়েবসাইট বা এম আধার অ্যাপের মাধ্যমে লক করে রাখতে হবে যাবতীয় বায়োমেট্রিক তথ্য। প্রয়োজনে কিছুক্ষণের জন্য চালু রেখে ফের লক করে রাখতে হবে সেই তথ্য। একশো দিনের কাজ থেকে আরও সরকারি নানা সুযোগ সুবিধে পেতে আধার কার্ড লিঙ্ক বাধ্যতামূলক। প্রশ্ন, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এই সম্পর্কে কতটা জানবেন?