সৌমেন সুর: ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্রের এক অতি প্রাচীন নৃত্যকলা ভরতনাট্যম। অনেকে মনে করেন ভরত মুনি এর প্রবর্তন করেছিলেন বলে এই নৃত্যকলার নাম ভরতনাট্যম। ভাব,রাগ ও তালের সমন্বয়ে অপূর্ব মিশেলে সৃষ্টি এই নৃত্যকলা। ভরতনাট্যমের ভাবধারা মূলত ধর্মভিত্তিক এবং দেবতা কেন্দ্রীক। মহাদেব শিবকে এই নৃত্যশৈলীর ভগবান বলা হয়। এই অসাধারণ নৃত্যশৈলী বহুদিন যাবৎ মন্দিরের দেবদাসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে দেবদাসী প্রথা অবলুপ্ত হলে এই অসাধারণ নৃত্যশৈলীর অবলুপ্তি ঘটে।
প্রথম পর্বের পর... রুক্মিণী অরুন্দলে ১৯৫৬ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৬৭ সালে সঙ্গীত নাটক একাডেমির ফেলোশিপ পান। যারা ভারতকে গড়েছেন এমন ১০০ জন ভারতীয়কে তালিকাভুক্ত করে 'ইন্ডিয়া টু ডে'। তার মধ্যে রুক্মিণী দেবী অন্যতম। দক্ষিণ ভারতীয় এই নৃত্যধারা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রুক্মিণী কঠোর পরিশ্রম করেন। পুরাণ মতে, মুর দৈত্যকে বধ করে, দেবতাদের এবং স্বয়ং বিষ্ণুকে ভয়মুক্ত করতে দেবী চণ্ডী, দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতী একসঙ্গে মিলিত হয়ে বৈষ্ণো দেবী রূপ নেন।
কোনও অশুভ শক্তিকে নাশ করতে শুধু শক্তি নয়, অর্থ নয়, বিদ্যা ও জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে।। অনিয়ন্ত্রিত শক্তি এবং অর্থ কোনওটাই পৃথিবীকে মঙ্গল করতে পারে না। আর বিদ্যার একমাত্র সুন্দর মাধ্যম হল সঙ্গীত। সেই সঙ্গীতের স্বাদ থেকে নারী কীভাবে বঞ্চিত থাকতে পারে! পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে কেন জানি না নারীর চলার পথ অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন, ধরিত্রির মতোই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত একের পর এক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারে বলেই হয়তো নারীকে সর্বসহা উপাধি দিয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তবে পথ যত কঠিন, নারীরা তার চেয়েও যে কঠিন এই পরীক্ষা নারী যুগে যুগে দিয়ে এসেছে।
সৌমেন সুর: ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্রের এক অতি প্রাচীন নৃত্যকলা ভরতনাট্যম। অনেকে মনে করেন ভরত মুনি এর প্রবর্তন করেছিলেন বলে এই নৃত্যকলার নাম ভরতনাট্যম। ভাব,রাগ ও তালের সমন্বয়ে অপূর্ব মিশেলে সৃষ্টি এই নৃত্যকলা। ভরতনাট্যমের ভাবধারা মূলত ধর্মভিত্তিক এবং দেবতা কেন্দ্রীক। মহাদেব শিবকে এই নৃত্যশৈলীর ভগবান বলা হয়। এই অসাধারণ নৃত্যশৈলী বহুদিন যাবৎ মন্দিরের দেবদাসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে দেবদাসী প্রথা অবলুপ্ত হলে এই অসাধারণ নৃত্যশৈলীর অবলুপ্তি ঘটে।
ভারতের এই নৃত্যশৈলীকে যিনি একপ্রকার অভিশাপমুক্ত করেছিলেন, তিনি হলেন রুক্মিণীদেবী অরুন্দলে। ১৯২০ দশকে ভরতনাট্যম নিম্নমানের এবং অশ্লীলতার দোষে দূষিত হলেও, রুক্মিণী দেবী এই নৃত্যকে সমর্থন করে, নতুন ভাবে প্রাণদানের ব্যাপারে সচেষ্ট হন। তিনি উচ্চবর্ণের মানুষ। সেই সময়ে সমাজে জাতপাত নিয়ে একটা সমস্যা ছিল, উচ্চবর্ণের নারী হয়ে নাচ, তাও আবার নিম্নরুচির নাচকে ছন্দিত করা, খুব একটা সহজ কাজ ছিল না।
এই ভরতনাট্যমে এক অনাবিল সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি তিনি অনুভব করেছিলেন। ফলে এই নাচকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রচার ও প্রসারে তৎপর হন। প্রবল প্রতিবাদের মুখেও রুক্মিণী দেবী মাথা নোয়াননি। এই নৃত্যকে মঞ্চে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতীয় এই নৃত্যধারাকে ১৯৩৫ সালে প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে তাঁর নাম হয় 'কলাকেন্দ্র'।Western ব্যালে নৃত্যের সঙ্গে এই নাচের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বিপ্লব সৃষ্টি করেন। রুক্মিণী দেবী প্রথম এই নৃত্যের নামকরণ করেন 'ভরতনাট্যম'... (চলবে)
তথ্যঋণ: দেবশ্রী ভট্টাচার্য