বিশ্বকাপ জয়ের নায়ককে আবার ফিরিয়ে আনতে সফল হল ইংল্যান্ড। একদিনের ক্রিকেটে অবসর ভেঙে ফের মাঠে ফিরছেন বেন স্টোকস। খেলবেন ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপও। তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে দেখা যাবে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ককে।
চার বছর আগে বিগ বেনের বিক্রমে লডর্সের মাটিতে ঐতিহাসিক ভাবে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্টোকসের সেই লড়াই এখন রঙিন প্রতিটি ব্রিটিশের মনে। কিন্তু হঠাৎ করেই নিজেকে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন স্টোকস। দাবি করেছিলেন, তিনি মোটর গাড়ি নন।
ব্রিটিশ মিডিয়া দাবি করে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একদিনের অধিনায়ক জস বাটলারকে একদিনের ক্রিকেটে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্টোকস। সেই মতো, বিশ্বকাপের আগে অবসর ভাঙিয়ে ফিরিয়ে আনা হল বিগ বেনকে।
বিরাট শতরান করেও দেশকে উদ্ধার করতে পারলেন ইংরেজ অধিনায়ক (Cricketer) বেন স্টোকস (Ben Stokes)। তিনি ১৫৫ রানে আউট হতেই লর্ডসে অ্যাসেজ সিরিজে (Ashes 2023) দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪৩ রানে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। এই টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে পঞ্চম দিনে উত্তাপ ছড়াল ঐতিহাসিক লং রুমেও। জনি বেয়ারস্ট্রোর আউট ঘিরে লং রুমে সদস্যদের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন দুই অজি ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজা। চার উইকেটে ১১৪ রান থেকে ইংল্যান্ড শেষ ৩২৭ রানে। ম্যাচে তিনটি করে উইকেট স্ট্রার্ক, কামিন্স এবং হ্যাজেলউডের।
ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ ক্রিকেটের মধ্যে নতুন আগ্রাসন এনেছেন ব্র্যান্ডন ম্যাকালাম। তাঁর ডাকনাম বাজ। আর তাই এখন ইংল্যান্ডে চলছে বাজবল ক্রিকেট। কিন্তু অ্যাসেজের প্রথম দুটি টেস্টেই সেই বাজবল ক্রিকেট মুখ থুবড়ে পড়েছে। শেষ দিনে রান তাড়া করতে নেমে ছুটছিলেন ব্রিটিশরা। ন্যাথন লায়ন নেই, সেই সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু তিন অজি পেসার যে ভাবে ইংরেজ ব্যাটারদের গিলে খেলেন, তাতে কোনও ভুল নেই এই অস্ট্রেলিয়া অ্যাসেজে অনেক এগিয়ে।
২৫৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে লাঞ্চের আগেই জনি বেয়ারস্টো উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। আর তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় ইংল্যান্ডের এই ম্যাচের ভাগ্য। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গিয়েছিলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উইকেট কিপার অ্যালেক্স ক্যারি বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। এই আউট নিয়েই এখন চলছে যাবতীয় আলোচনা। ব্রিটিশ সমর্থকদের অভিযোগ, ক্রিকেটের স্পিরিট দেখায়নি অস্ট্রেলিয়া।
তাতে অবশ্য কিছু যায় আসছে না। কারণ, অ্যাসেজে স্কোর বোর্ড বলছে অস্ট্রেলিয়া ২ ইংল্যান্ড ০। চার বছর আগের হেডিংলি আর ফিরল না। এবার ট্র্যাজিক হিরো ব্রিটিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। হাতে রয়ে গেল শুধু ১৫৫ রানের একটা লড়াকু ইনিংস।
শেষ ওভারে বেন স্টোকস মিডঅনের উপর দিয়ে বলটি তুলে দিতেই ১৯ ওভারেই বিশ্ব চ্যাম্পিও হলো ইংল্যান্ড দল। এবারের টি২০ বিশ্বকাপে ইংলিশম্যানেরাই ছিল চ্যাম্পিয়নের দাবিদার কিন্তু গ্রুপ লিগে আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর অনেকেই ভেবেছিলো হয়তো একটু বেশি ভাবা হয়েছিল তাদের নিয়ে। আসলে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ব্যালেন্স দল ছিল ইংরেজরাই। বেশির ভাগ খেলোয়াড়রাই আইপিএলের নামি দামি খেলোয়াড়। সেই প্রমাণটিই আজ দিয়ে দিলো। একই সাথে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দিলো না তারা। ১৯৯২ এ এই মেলবোর্নেই হয়েছিল ইমরানের পাকিস্তানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেবারেও পাক দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল এবং হেরেছিল। ভাবা গিয়েছিলো হয়তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে কিন্তু হলো না শেষ হাসিটি ছিল বেন স্টোকের ব্যাটের ভরসায়।
ঠিক সময়ে রবিবাসরীয় মেলবোর্ন ফাইনাল শুরু হয়। ঝড়বৃষ্টির প্রবল সম্ভবনা যেমন ছিল তেমন ছিল খেলা না হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে আনলাকি ১৩ শেষ পর্যন্ত লাকি হয়ে উঠলো। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৩৭ এই গুটিয়ে যায় আজম বাবরদের পাকিস্তান। সর্বোচ্চ রান আসে শান মাসুদের ব্যাট থেকে মাত্র ৩৮। এরপরই বাবরের ৩২। মেলবোর্ন মাঠ কিন্তু আজ বোলারদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে। দু দলের বোলাররাই দুর্দান্ত বল করেছেন। বিশ্বের সেরা টি২০ জুটি রিজওয়ান, বাবর আজ প্রথম থেকেই ঢিমে তালে খেলছিল। রান ওঠেনি কোনও দলেরই আশানুরূপ।
এরমধ্যে স্যাম কারেন সেরা বল করেন মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট দখল করেন তিনি। এরপরই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস বোলিংয়ের গোড়াপত্তন করতে এসে নেন একটি উইকেট। পরে ব্যাট করতে এসে ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড করা বাটলার, হেলেস জুটি চলে যান বেশি রান করার আগেই। অধিনায়ক বাটলারের সংগ্রহ ২৬ এবং হেলেসের মাত্র ৭। একটা সময়ে দেখা যায় ৬০ বলে ৩ উইকেট এবং দরকার ৬১ রান। এই সময়ে স্টোকস খেলাটি ধরেন কিন্তু বড় শট নিতে দেখা যায় নি। নেবার মতো অবস্থায় মাঠ ছিল না। এরই মধ্যে আরও ৬ ওভারের মধ্যে আরও দুটি উইকেট পরে যায়। খেলা ধরেন অবশ্য মঈন খান। কোঠিন অবস্থায় ১৫ বলে ১৯ রান করে আউট হয়ে যান। এ সময়ে ১২ বলে ৭ রান দরকার ছিল যা আজকের সেরা স্টোকস তুলে নেন। পাক দলের দুর্ভাগ্য প্রথমে দুর্দান্ত বল করেও শাহীন আফ্রিদি তৃতীয় ওভার বল করতে এসে পায়ে পেশির টানে ম্যাথ থেকে বেরিয়ে যান সঙ্গে নিয়ে যান পাকিস্তানের ভাগ্য।