ঘটনার প্রায় মাস ঘুরতে চলল। এখনও খোঁজ নেই সন্দেশখালির বেতাজ 'বাদশা' শেখ শাহজাহানের। তবে অন্তরালে থেকেই ইতিমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। যদিও পুলিস এখনও শাহজাহানের খোঁজ পায়নি। এমনকি ইডির ডাকেও সাড়া দেননি প্রভাবশালী এই তৃণমূল নেতা। এই পরিস্থিতিতে এবার ইডির নজরে শাহজাহানের সম্পত্তি। শেখ শাহজাহানের ১০ বছরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত আর্থিক লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখছেন ইডি আধিকারিকরা। শুধু শাহজাহান নয়, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের সম্পত্তিতেও নজর ইডির।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবারই অমিত শাহের কাছে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কেন্দ্রীয়স্তরে এই বিষয়ে যাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই আর্জিও তিনি জানিয়েছেন বলে খবর। এরপরেই শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্তে গতি বাড়াল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জোগাড়ে নেমে পড়লেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির নজরে এই তৃণমূল নেতা।
মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছ থেকে এই তৃণমূল নেতার নাম পাওয়া যায়। আর এরপরেই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। তদন্ত তো দূর, রীতিমত মার খেয়ে ফিরতে হয় কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের। গত কয়েকদিন আগেও সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়ি যায় ইডি। তালা ভেঙে ঢুকে চলে তল্লাশি। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা। তৃণমূল নেতার চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে বলেও খবর। আর তাতে কোন সময় কত টাকা পড়েছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সেই টাকার উৎস কি তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর।
শনিবার ব্যঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়েছিল রেশন বণ্টনে দুর্নীতির ধৃত বাকিবুর রহমানকে। আদালতে এইদিন তাঁকে সোমবার পর্যন্ত ইডি হেফাজত দেওয়া হয়। এই দুদিন বাকিবুর রহমানকে নিজেদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন ইডি আধিকারিকরা। সেই মত শনিবার আদালতে থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিজিওতে। তারপর থেকেই রেশন বণ্টনের দুর্নীতি জাল কতদূর বিস্তৃত তা জানতে তৎপর ইডি।
ইডির নজরে এবার বাকিবুর ঘনিষ্ঠ একাধিক চালকল ব্যবসায়ী ও ডিস্ট্রিবিউটাররা। ৫৪ ঘন্টা তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বাকিবুরের বাড়ি থেকে একাধিক নথিপত্রসহ ৬ টি মোবাইল ফোনও বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা, সেই নথিপত্র খতিয়ে দেখেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তল্লাশি অভিযানে একাধিক ডিজিটাল এভিডেন্স, রেজিস্ট্রার বুকের সাথে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। ইডি সূত্রে দাবি নগদ ছাড়াও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে । সরকার থেকে পাঠানে রেশনের খাদ্য সামগ্রী বণ্টন না করে , সেগুলিকে খোলা বাজারে বিক্রি করা হত।সেই বিক্রির টাকা শতাংশের হারে ভাগ পেতেন ডিস্ট্রিবিউটার ও মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ীরা। যেই টাকা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই লেনদেন হয়েছে বলেই মনে করছেন ইডি কর্তারা।তল্লাশি অভিযানে বাকিবুরের যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা , সেই সমস্ত ব্যাঙ্ক বেশ কিছু ট্রানজেকশন খতিয়ে দেখেই এই তথ্য উঠে এসেছে।তাই ইডি নজরে এবার বাকিবুর রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ ডিস্ট্রিবিউটারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
প্রসঙ্গত একাধিক চালমিলে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ইডি হাতে উঠে এসেছে নয়া দুর্নীতি তথ্য রেশন বণ্টনে দুর্নীতি।যেখানে মন্ত্রী-ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের নাম উঠে এসেছিল।তার হদিশ পেতেই বাকিবুরের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালান ইডি আধিকারিকরা। ৫৪ ঘন্টা তল্লাশির পর প্রথমে তাকে আটক ও পরে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত সোমবার পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রেখে ইডি আধিকারিকরা আরও কোন প্রভাবশালী এই দুর্নীতিতে যুক্ত রয়েছে কিনা তা জানতে চেষ্টা করবেন ।এখন শুধু দেখার আরও কোন নতুন তথ্য উঠে আসে জিজ্ঞাসাবাদে।
মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গোপাল দলপতিকে। ফের বুধবার সিবিআইয়ের (CBI) তরফে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে (Education Scam) কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল, নীলাদ্রি ঘোষের সঙ্গেই গোপাল দলপতির নাম উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, এদিন নিজাম প্যালেসে প্রয়োজনে তাপস-কুন্তলের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে গোপালকে। ইডির (ED) হাতে গ্রেফতারির পর গোপাল দলপতির নাম বলেছিলেন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। 'গোপালকে চিনি', প্রকাশ্যে বলেছিলেন নিয়োগ-কাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডল।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির পর এবার সিবিআই নজরে গোপাল দলপতির স্ত্রীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হেফাজতে রয়েছেন কুন্তল- তাপস- নীলাদ্রি। তাঁদের একদিকে যেভাবে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করছে, অন্যদিকে বুধবার আবার ডেকে পাঠানো হয় গোপাল দলপতিকে। গোপালের থেকে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা জানতে চায় তাঁর স্ত্রীয়ের অ্যাকাউন্টে ৬১ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। এই টাকা কোথায় থেকে এসেছে, কে পাঠিয়েছিল?
কেন্দ্রীয় সংস্থার অনুমান, চাকরি বিক্রির টাকাই ঢুকেছে গোপাল দলপতির স্ত্রী অ্যাকাউন্টে। ইতিমধ্যে একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদের পর গোপালের বয়ানে অসঙ্গতি পেয়েছে সিবিআই। তবে শেষ পাওয়া খবর, সকাল ১১টায় তাঁকে নিজামে হাজিরার কথা বললেও, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা (এই খবর লেখা পর্যন্ত) হলেও হাজিরা দেননি গোপাল দলপতি।
সামান্য এক মোমবাতি বিক্রেতার (Candel seller) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (Bank Account) বিপুল অঙ্কের টাকা। আর সেই অভিযোগে বিক্রেতার বাড়িতে অভিযান চালালেন আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখার (Financial Anti Corruption Branch) আধিকারিকেরা। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আগরপাড়া (Agarpara) আজাদ হিন্দ নগর এলাকায়।
পেশায় মোমবাতি বিক্রি করেন পানিহাটি পৌরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আগরপাড়া আজাদ হিন্দ নগরের বাসিন্দা অমল সেন। স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনিকে নিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকেন অমলবাবু। পুরসভার সরকারি প্রকল্পে বাড়ি করার জন্য লোন নিয়ে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন। পুরো টাকা না পাওয়ায় বাড়ির কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
অমলবাবুর এই আর্থিক অবস্থার মধ্যে হঠাৎ করে তাঁর ও পরিবারের সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটে। তাঁর বাড়িতে অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকেরা অভিযান চালান। এবং বলা হয় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মোমবাতি বিক্রি করা অমল বাবু স্বাভাবিকভাবেই তা শোনার পর হতবাক হন।
সূত্রের খবর, ভুলবশত কোনও কারণে বিপুল অঙ্কের টাকা অমল বাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের আগরপাড়ার শাখায় তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সোমবার ব্যাঙ্কের কাগজপত্র নিয়ে অমল বাবুকে যেতে বলা হয়েছে কলকাতার অর্থনৈতিক গুন্ডাদমন শাখার অফিসে।
যদিও অমলবাবু ভেবে কুল করতে পারছেন না, কী করে তাঁর অ্যাকাউন্টে এত বিপুল পরিমাণে টাকা এল? সামান্য একজন মোমবাতি বিক্রেতা অমলবাবু ঘটনার পর থেকে চিন্তিত। আতঙ্কিত পরিবারের সকলে।
গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআই জালে অনুব্রত মণ্ডল। ইতিমধ্যেই সিবিআই আধিকারিকদের হাতে উঠে এসেছে বেশ কিছু নয়া তথ্য। সিবিআই সূত্রে খবর, গরুপাচার কাণ্ডে যে টাকা আসত তার লাভের একাংশ যেত বীরভূমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। এই টাকা দুভাবে দেওয়া হত। লোনের মাধ্যমে এবং নগদ টাকা হিসেবে। বেআইনি গরু পাচারের এই টাকা এনামুল এবং তার সহযোগীরা লোন হিসেবে দেখাত। অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ের দুই সংস্থার ব্যালেন্স শিট খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই তথ্য উঠে আসে সিবিআই আধিকারিকদের হাতে। সিবিআই কর্তারা মনে করছেন ব্ল্যাক মানিকে হোয়াইট মানি করার জন্যই এই পথ বেছে নেওয়া হত।
অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়নি, কিন্তু তার বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের সম্পত্তির পরিমাণে ইতিমধ্যেই চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। এবার তাঁদের নজরে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। পাশাপাশি, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ আরও ১২ থেকে ১৫ জনের উপর সিবিআই নজর রেখেছে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, সায়গলের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে তাতে অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, কেষ্টর হয়েই টাকা নিতেন তাঁর দেহরক্ষী। সেভাবেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন সায়গল। এই পরিস্থিতিতে, সিবিআইয়ের অভিযোগ, গরু পাচার সহ বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন অনুব্রত। এবং সায়গল হোসেন তাঁর সহযোগী ছিলেন। এবার বেআইনি উপায়ে যে টাকা উপার্জন হয়েছে, তার হিসেব মেলাতে চাইছেন তদন্তকারীরা।