কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি (Justice) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly) নির্দেশে মঙ্গলবার স্কুলশিক্ষিকার চাকরি হারিয়েছেন শিলিগুড়ির ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। সেই চাকরি দেওয়া হয়েছে অনামিকা রায় নামে এক পরীক্ষার্থীকে। এবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হলেন ববিতা।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর, ববিতার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপরই ববিতাকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। এবং ঐ এখনও অবধি প্রাপ্ত টাকা হাইকোর্টকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এবং ওই টাকা দুই ধাপে দিতে হবে বলে জানান তিনি। যদিও এই নির্দেশের পর ববিতা জানিয়েছিল পুরোটা টাকা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে ববিতা।
কলকাতা হাই কোর্টের (High Court) নির্দেশে এবার চাকরি চলে গেল শিক্ষিকা (Teacher) ববিতা সরকারের (Babita Sarkar)। মঙ্গলবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ববিতার বদলে চাকরি পেতে চলেছেন অনামিকা রায়। অনামিকাকে বাড়ির কাছেই চাকরির নিয়োগ দিতে হবে বলে পর্ষদকে নির্দেশ হাই কোর্টের। তিন সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ শেষের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
উল্লেখ স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এই ববিতার অভিযোগের ভিত্তিতে চাকরি গিয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। অঙ্কিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই ববিতার নিয়োগও প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। ববিতার চাকরি বাতিলের দাবি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে অভিযোগ দায়ের করেন শিলিগুড়ির অনামিকা রায়।
অনামিকার অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় জটিলতা। অনামিকার দাবি ছিল, ববিতার ক্রমতালিকায় পিছিয়ে গেলে প্রথম ২০ জনের মধ্যে উঠে আসবে তাঁর নাম। ফলে চাকরি তাঁরই পাওয়ার কথা ছিল।
রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিত অধিকারীর বদলি হিসাবে শিলিগুড়ির স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন ববিতা সরকার। চাকরি হারানোর পাশাপাশি এবার ববিতাকেও টাকা ফেরতের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এক নির্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী বুধবারের মধ্যে ১১ লাখ টাকা এবং আগামী ৬ জুনের মধ্যে বাকি টাকা ফেরত দিতে হবে ববিতা সরকারকে। ববিতাকে মোট ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা ফেরত দিতে হবে।
এদিকে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছেন ববিতা সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত তিনি ১১ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে পারবেন। কিন্তু বাকি টাকা ফেরত দিতে আরও তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। কারণ তিনি একটা গাড়ি কিনেছেন বলেও জানিয়েছেন ববিতা। যদিও আদালত জানিয়েছে, পরবর্তী নিয়োগে প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন ববিতা।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একসময় আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন উত্তরবঙ্গের ববিতা সরকার। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই স্কুল থেকে চাকরি হারিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। আদালতের নির্দেশে বেতনের সব টাকা ফেরত দিয়েছিলেন অঙ্কিতা। ববিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্নাতক স্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে
প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর (Paresh Adhikary) মেয়েকে সরিয়ে সরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে অঙ্কিতা অধিকারী এযাবৎকাল পাওয়া বেতন তুলে দিয়েছে ববিতাকে। এবার ববিতার নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তড়িঘড়ি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ববিতা সরকার, পিছিয়ে নেই তাঁর নিয়োগ অবৈধ দাবি করা অনামিকা রায়। ববিতা যে চাকরি করছেন, সেই চাকরির দাবিদার অনামিকা, এই দাবিতে হাইকোর্টে গিয়েছেন তিনিও।
দু'পক্ষের দায়ের এই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি আদালত। তবে বেতন বাবদ পাওয়া যে টাকা, ববিতাকে তুলে দিয়েছে অঙ্কিতা, সেই ববিতাকে আলাদা সরিয়ে রাখতে নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রয়োজনে সেই টাকা কলকাতা হাইকোর্টের রেজিষ্টার জেনারেলের কাছে জমা রাখতে হবে। এহেন নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী নয় জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন হলফনামা আকারে অবস্থান জানাতে হবে ববিতা সরকারকে।
আদালতে পরেশ কন্যার চাকরির অন্যতম দাবিদার অনামিকা রায়ের আবেদন, 'ববিতা সরকার ৩১ পেলেও ৩৩ দেখিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আদালতের কাছে সেই নম্বর বাড়ানোর প্রসঙ্গ লুকনো। এদিকে কোর্ট নির্দেশে চাকরি পেয়েছেন ববিতা। এখন তাঁকে সেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে সেই চাকরি দেওয়া হোক।'
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ববিতার আইনজীবী ফিরদৌস শামীম জানান, এটা তৈরি করা গল্প। ববিতা যখন চাকরি পাওয়ার আবেদন করে তখন উনি নিজের নম্বরের কথা জানায়নি আদালতকে। এখন জানাচ্ছেন, ববিতার চাকরি পাওয়ার মামলায় অনামিকাকে দিয়ে সই করানো হয়। এখন উনি অস্বীকার করছেন। চাকরি যার পাওয়ার কথা তিনি পাবেন। আদালতের কাছে লুকনোর কী আছে? আমার মক্কেল সমস্যা দেখেই আদলতকে জানিয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত অনামিকা সাজানো গল্প বলছে, প্রয়োজনে তাঁর দাবী তদন্ত করে দেখা হোক।'
বিচারপতি পাল্টা জানান, 'আপনি যেটা অনামিকার সই বলছেন, আমি তো দেখছি না ওটা অনামিকার সই।' এই শুনানিতে পর্ষদ আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য বলেন, 'আমি চাই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক।' পাল্টা অনামিকা রায়ের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, 'ববিতা ও অনামিকা একই সাবজেক্টের পরীক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের। অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি ববিতা পান আদালতের নির্দেশে। অঙ্কিতা অধিকারীর র্যাঙ্ক জাম্প ছিল। তারপর ববিতা জানতে পারলেন তিনি ৩৩ না ৩১ পেয়েছেন। এটা যদি হয়, তবে অনামিকার নম্বর ববিতার থেকে বেশি। ইতিমধ্যেই পর্ষদের ভুল প্রকাশ্যে এসেছে, এটাও একটা ভুল।'
আইনি লড়াই (SSC case) শেষে পরেশ অধিকারী (Paresh Adhikary) তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে (Ankita Adhikary) হটিয়ে সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার। শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও ফের একবার সংবাদ শিরোনামে ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। প্রশ্ন উঠছে ববিতা সরকারের আবেদনের বৈধতা নিয়ে। অভিযোগ, তাঁর নাকি দুই নম্বর নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যদিও ববিতার সাফাই, 'আমাদের নম্বর এসএসসি প্রকাশ করেনি। আমি র্যাঙ্ক জানতাম। ওয়েটিং লিস্টের র্যাঙ্ক জানতাম। সেই র্যাঙ্ক বদল নিয়ে আমি আইনি লড়াই চালিয়েছি। কোনও সদুত্তর না পেয়ে আইনি পথে লড়াই চালাই।'
তাঁর দাবি, 'তিনি আবেদনের সময় সঠিক তথ্যই পেশ করেছিলেন। তাঁর তরফে কোনও ভুল নেই। সেক্ষেত্রে ফের একবার আদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি। আদালতের যা নির্দেশ হবে তা শিরোধার্য। কিন্তু অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে।' চাকরি চলে গেলেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। এমনটাই জানিয়েছেন ববিতা সরকার।
এদিকে ববিতা সরকারের আবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই আরও এক চাকরিপ্রার্থী নিজেকে ওই পদের দাবিদার হিসেবে প্রকাশ্যে এসেছেন। তাঁর নাম অনামিকা রায়। শহর শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুধমোড় এলাকার বাসিন্দা অনামিকা। তাঁর কথায়, 'দু'নম্বর কমে যাওয়া মানে মেরিট লিস্টের অনেক পিছনে চলে যাওয়া। তাতে এই পদের পরবর্তী দাবিদার আমি। কীভাবে এই ভুল হয়েছে বা ভুল এড়িয়ে গিয়েছে জানি না। যখন বিষয়টি সামনে এসেছে, তখন আমার প্রাপ্য চাকরিটা আমাকে দেওয়া হোক। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আইনি পথে যাবো।' জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কলেজ অফ এডুকেশন থেকে বিএড করেন অনামিকা। বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
অপরদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর, চাকরি দেওয়ার সময় এলিজিবিলিটি মিলিয়ে নেওয়া হয়। ইন্টারভিউ ও তার আগে ভেরিফিকেশন হয় ২ বার। এখন আমরা নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ করবো না। আদালতে মামলা হলে দেখা হবে। যখন উনি চাকরি পান তখন সার্ভার রুম বন্ধ ছিল। তখন মেলানোর উপায় ছিল না। এখন আদালত নির্দেশ দিলে দেখবে এসএসসি। ববিতা তথ্য আপলোড ঠিক করে থাকলে যদি এসএসসির তরফ থেকে ভুল হয় সেটাও দেখতে হবে। তথ্য আদালত তলব করলে এসএসসি দেবে তখন।