
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার বাজেয়াপ্ত হল কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অয়ন শীলের সম্পত্তি। ইতিমধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় আরও তিনজনের নাম যুক্ত হল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর মধ্যে কুন্তল, শান্তনু এবং অয়নের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে থাকা টাকা, শেয়ারে বিনিয়োগ, জমি, ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই জেলে বন্দি রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এই তিনজন। তদন্ত এগোলে এমন আরও অনেক সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ইডি গোয়েন্দারা।
অন্যদিকে নবম ও দমশ শ্রেণির নিয়োগে চার্জশিট জমা করল ইডি। ওই চার্জশিটে জীবন কৃষ্ণ সাহার নাম রয়েছে। ইতিমধ্যে আলিপুর আদালতে ওই বিশেষ চার্জশিট জমা পড়েছে বলে খবর। ফলে নিয়োগ দুনীতি নিয়ে ইতি মধ্যেই বিশেষ চাপে আছে শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূল। এ অবস্থায় কুন্তল, শান্তনু, অয়ন শীলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। এ ঘটনায় পঞ্চায়েত ভোটে ইতিবাচক সাফল্যের পরেও রীতিমত চিন্তায় আছে তৃণমূল।
পুর-নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ফের ধাক্কা রাজ্যের। এবার জাস্টিস অমৃতা সিনহার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গ্রীষ্মের অবকাশকালীন বেঞ্চের দারস্থ হয়েছিল রাজ্য। এই মামলার শুনানিতে কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ মিললো না রাজ্যের, বরং অবকাশকালীন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, পরবর্তীতে এই মামলার শুনানি হবে ৫ই জুন। ফলে ততদিনে গ্রীষ্মকালীন ছুটিও শেষ হয়ে যাবে, এরপর যে বেঞ্চে অর্থাৎ যে ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি চলছিল তারাই এই মামলা শুনবেন।
সূত্রের খবর, পুর-নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়। জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য প্রথমে অমৃতা সিনহার বেঞ্চে জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। যদিও ওই আবেদনে তেমন কোনও সাড়া দেয় নি জাস্টিস সিনহা। জাস্টিস সিনহা, জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বহাল রেখে জানিয়ে দেয়, এই মামলায় সিবিআই তদন্তের রায় বহাল থাকবে। এরপরই রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চ এর কাছে আবেদন জানালে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল গ্রীষ্ম অবকাশকালীন বেঞ্চে এই মামলার আবেদন করুন। আজ অবকাশকালীন বেঞ্চে রাজ্য ফের আবেদন জানালে সেই আবেদনে কাজ হল না। ফলে ৫ই জুন অবধি খানিকটা অস্বস্তিতে থাকবে তৃণমূল।
শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতারির পর অয়ন শীলের নথি ও উদ্ধার করা বেশ কিছু হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ ঘেঁটে পুর-নিয়োগ দুর্নীতির হদিশ পায় ইডি। সেকথা জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায় কে শুনানির সময় জানালে জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায় পুর-নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে (Scam) এবার বিপাকে ধৃত অয়ন শীল (Ayan Shil)। নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির (ED) খপ্পরে আগেই পড়েছিল অয়ন শীল। ওই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই রায় নিয়ে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় রাজ্য। বিচারপতি অমৃত সেনার এজলাসে রাজ্যের এই আর্জি কোন কাজেই এলোনা বরং এই মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায়ে যোগ হলো ইডি।
পুর নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তা সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে ফের হাইকোর্টে আসে। কিন্তু মামলার বেঞ্চ বদল হয়। মামলা যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। শুক্রবার তিনিও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছেন। আবার এদিনই আদালতে দাঁড়িয়ে ইডি দাবি করল, পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে একা অয়ন শীলই (Ayan Sil) তুলেছিলেন ৪০ কোটি টাকা।
এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা সিবিআই তদন্ত বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, রাজ্য সরকারের উচিত দফতরগুলিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এই তদন্তে সহযোগিতা করা। অয়ন শীলের মতো আরও যাঁরা যুক্ত তাঁদের খুঁজে বার করতে যেন সিবিআই দ্রুত পদক্ষেপ করে সে কথাও বলেছেন বিচারপতি।
ইডির বক্তব্য, রাজ্যের অন্তত ৬০টি পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছিল। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোনের মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, যে কায়দায় অয়ন শীলের সংস্থা ওএমআর শিট বিকৃত করে নিয়োগ দুর্নীতি করেছিল তাতে সরকারি অফিসারদেরও যোগ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এসবের মধ্যেই আবার জানা গিয়েছে, অয়ন শীলের ছেলের বান্ধবীর বাবা পুর দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তা ছিলেন। ইতিমধ্যে অয়নের স্ত্রী, ছেলে, বান্ধবীকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
শুধু তাই নয়। ইডি এদিন আরও বলেছে, শুধু পুরসভা নয়। জেলা পরিষদে নিয়োগেও কলকাঠি নেড়েছিল অয়নের সংস্থা। তবে এর শুরু বাম জমানায়। ২০০৯ সালে হুগলি জেলা পরিষদে নিয়োগের দায়িত্বে ছিল অয়ন শীলের সংস্থা। সেই সময়ে হুগলি জেলা পরিষদের সভাপতি ছিলেন অসিত পাত্র।বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আদালতে আবেদন করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তা খারিজ হয়ে গিয়েছে এদিন। যা রাজ্য সরকারের কাছে ধাক্কা হিসাবেই দেখছেন অনেকে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে (Scam) বাংলায় একের পর এক মহারথীদের গ্রেফতার করেছে ইডি (ED)। ইডির গ্রেফতারির পর বেরিয়ে এসেছে ওই মহারথীদের নামে-বেনামে সম্পত্তি। ঠিক সেরকম ভাবে অয়ন শীলের (Ayan Shil) গ্রেফতারির পর খোলসা হয়েছিল তাঁর সমস্ত সম্পত্তি। নামে-বেনামে সম্পত্তির হদিস করতে থাকে ইডি। অয়নের যে সম্পত্তির হদিস মিলছে সেই তালিকায় এবার যোগ হল ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম! ইডি (ED) সূত্রে দাবি, এই দুর্নীতিকাণ্ডে ইমনের ১ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পেয়েছে তারা। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের (Ayan Shil) পুত্র অভিষেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ইমন।
হুগলির শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করার পরই ইডির র্যাডারে আসে অয়নের নাম। তাঁর বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন নথি উদ্ধার করেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা। সেখান থেকেই নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হন তিনি। জেরায় উঠে আসে একাধিক সম্পত্তির হদিস। এই মামলায় অয়নের স্ত্রী, পুত্র ও ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীকে জেরা করে ইডি।
নিয়োগ মামলায় অভিষেকের বান্ধবী ইমনকে ডেকে পাঠায় ইডি। সিজিও কমপ্লেক্সে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, সেই সময়ই তাঁর কিছু সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়। ইডির দাবি, অয়নের টাকাতেই কেনা হয়েছিল তা। ইডির আরও দাবি, অয়ন পুত্র অভিষেক ও ইমনের নামে যৌথ মালিকানায় একটি পেট্রল পাম্পও কিনেছিলেন অয়ন। এমনকী দু’জনের যৌথ মালিকানায় একটি ফার্মও আছে। আর এইসব সম্পত্তি কেনার টাকা জুগিয়েছেন অয়ন!
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের বিরুদ্ধে আরও কড়া হচ্ছে ইডি। ইতিমধ্যে অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে ইডি। এবার এই কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে ইমন গঙ্গোপাধ্যায়। এই ইমন গঙ্গোপাধ্যায়, অয়ন শীলের ছেলে অভিষেক শীলের বান্ধবী। জানা গিয়েছে, অয়নের পুত্রের বান্ধবী ইমন উত্তরপাড়ার অমরেন্দ্র সরণির বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়।
অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা ইমনের অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান ইডির। নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা অয়ন শীল, তাঁর আত্মীয় পরিজন, এমনকী ছেলের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তাই আদৌ সত্য কী, উদঘাটনে এবার ইমনকে তলব ইডির। চলতি সপ্তাহে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অয়ন পুত্রের বান্ধবীকে। পাশাপাশি অয়ন শীলের সংস্থার গাড়ির চালক এবং কর্মীকে তলব করা হয়েছে। প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করা হবে। অন্যদিকে অয়ন শীলের আরও একাধিক ফ্ল্যাটের হদিশ পেয়েছে ইডি। হুগলি জেলাতেই আরও আটটি ফ্ল্যাটের হদিশ মেলায় অয়নের ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৬। বেনামে ৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে ইডি।
বিধায়ক (MLA) জীবনকৃষ্ণকে (Jibankrishna Saha) নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা বার্তা, নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনুর। শান্তনু ও জীবন দু'জনের গ্রেফতারির কারণ এক এবং গ্রেফতার হয়েছেন বহু ছল-চাতুরির পর। বুধবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত শান্তনুর শুনানি ছিল নগর দায়রা আদালতে। দুপুরেই প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আদালত চত্বরে আনা হয় তাঁকে। শান্তনুকে দেখেই উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন ছুড়ে দেন তাঁকে। জানতে চাওয়া হয় জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তিনি কি কিছু বলতে চান? জবাবে কিছুটা নির্বিকার ভাবেই শান্তনু বলেন, ‘সবাইকে নববর্ষ এবং ইদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
শান্তনুর বিরুদ্ধে স্কুল ছাড়াও আরও বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ইডি। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা এমনও দাবি করেছে যে, শান্তনুর সঙ্গে উপর মহলের অনেকের যোগাযোগ ছিল। অন্যদিকে, জীবনকৃষ্ণর বিরুদ্ধে যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে বড়ঞার বিধায়কের অধীনে কয়েকশো এজেন্ট কাজ করত বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। বিভিন্ন জেলায় সেই এজেন্টরা ছড়িয়ে ছিল, এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, বুধবার নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া অয়ন শীলের বাবা-মা ও স্ত্রীকে ইডির কলকাতার দফতরে তলব করে ইডির আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, তাদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কিছু লেনদেন করেছিল অয়ন এবং সেই লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানতেন কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাদেরকে ডাকা হয়েছিল বলেই খবর। বুধবার সকালে ইডির দফতরে হাজির হয়েছিলেন অয়ন সিলেন বাবা-মা ও স্ত্রী।
নিয়োগ-কাণ্ডে (Education Case) ফের ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে অয়ন শীল (Ayan Shil)। মঙ্গলবার অয়নের আইনজীবী সওয়াল করেন, 'রিমান্ড পিটিশনের তথ্য অনুযায়ী, যে এজেন্টের কথা বলা হয়েছিল তাঁকে শনাক্ত করা গিয়েছে। ১০ জন কমপক্ষে প্রাথমিক নিয়োগে (Primary Scam) শিক্ষক হিসেবে অবৈধ নিয়োগ পেয়েছে। এখানে বেশিভাগ বক্তব্য পুরসভার চাকরি নিয়ে, যেটা আসল অভিযোগ নয়। আমার মক্কেলের কোনওদিন চাকরি দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অয়ন শীলের কী সম্পর্ক সেটা পিটিশনে দেওয়া নেই।'
তিনি জানান, 'এটা সম্পূর্ণ আলাদা সেক্টর। কোনও নথি নষ্ট হয়নি। আমার মক্কেল ২৩ দিন হেফাজতে। অয়ন শীলকে হেফাজতে রাখার প্রয়োজনীয়তা কী সেটাই বুঝতে পারছি না। যেকোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। যখনই তদন্তের স্বার্থে ডাকা হবে আসতে রাজি।' এই সওয়ালের প্রেক্ষিতে ইডির আইনজীবী জানান, 'একজন লোক যে কখনও স্কুলে যায়নি একটি মালবাহী গাড়ি চুরি করতে পারে। কিন্তু কারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থাকে, তাহলে সে পুরো রেলপথ চুরি করতে পারে। এমনটাই বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট।'
কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে, অভিষেক শীল অয়ন শীলের ছেলে। আর ইমন গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেক শীলের বান্ধবী। এদের শরিকি ব্যবসা আছে। সংস্থার নাম M/S Fossils। সন্দেহ নিয়োগ দুর্নীতির সব টাকা পেট্রোল পাম্পের ব্যবসায় খাটানো হয়েছে। একটা রেস্তোরাঁর ব্যবসা আছে, এটাও এঁরা ২ জন শরিক চালান। বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা ইমন। এই বিভাস গঙ্গোপাধ্যায় পুরসভার নগর উন্নয়ন বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা। এই তিনজন ইডির স্ক্যানারে আছেন। ২০১২-১৪ টেট পরীক্ষার দুর্নীতিতে কুন্তল-অয়ন-পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগ রয়েছে। জামিনের বিরোধিতা করে জেল হেফাজতে রাখার অনুরোধ করতে চাই।'
এরপরেই ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অয়ন শীলকে জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত।
জেল খাটতে হলে চেয়ারম্যান (Chairman) খাটবে, কাউন্সিলর খাটবে, বিধায়ক খাটবে, এমপি খাটবে, কিন্তু কর্মচারীরা যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। মন্তব্য কামারহাটি (Kamarhati) পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহার। কিন্তু কেন এমন বললেন তিনি? কারণ, অয়ন শীল (Ayan Shil) গ্রেফতার হয়েছে। রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করে নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম উঠেছে ৭০টি পুরসভার। অয়নকে গ্রেফতারির পর মধ্যখানে কেটে গিয়েছে ৩-৪টে দিন। বিতর্কের মাঝেই কামারহাটি পুরসভায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্বেতা চক্রবর্তী। আগেই জানিয়েছিলাম, শ্বেতা কামারহাটি পুরসভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত। সেই পদেই নিজের কাজে যোগ দেন তিনি। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন খোদ কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র।
শুক্রবার মদন মিত্র শ্বেতার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার পর, শ্বেতাকে জিজ্ঞেস করা হলে শ্বেতা জানান, 'উনি আমাদের বিধায়ক, উনি আসতেই পারেন।' পাশাপাশি শুক্রবার নিয়োগ বিতর্কে শ্বেতার নাম জড়ানোয়, ওই পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, 'যদি জেল খাটতে হয়, চেয়ারম্যান খাটবেন, কাউন্সিলর খাটবেন, বিধায়ক খাটবেন, এমপি খাটবেন। কিন্তু কর্মচারীরা যেখানে ছিল সেখানেই থাকবেন। এর কোনও ব্যতিক্রম হবে না। যদি অন্যায় আমরা করে থাকি তাহলে শাস্তি আমাদেরই হবে। প্রত্যেকেই সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছে।' কামারহাটি পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা আরও বলেন, 'হাসিমুখে কাজ করুন। সাধারণ মানুষকে তাঁদের পরিষেবাটা দিন।'
অয়নের নথি হাতড়ে এবং ধৃত অয়নকে জেরা করে এজেন্টদের তথ্য বার করে ফেললো ইডি। এই তালিকায় রয়েছে একাধিক এজেন্ট দের নাম। যাদের মাধ্যম দিয়ে দুর্নীতি চালাত অয়ন। ইডির সূত্র অনুযায়ী, কানুদা, এমডি, তপনদা, লাল, কানুদা এসব নাম উদ্ধার করেছে ইডি। যদিও এদেরপরিচয় এখনও জানা যায়নি বলেই খবর, সেসব তথ্য, নথি, ইডি খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর আরও নাম, এবং তথ্য উঠে আসবে বলেই দাবি করেছে ইডি। ইডির তালিকা থেকে আরও জানা যায় যে, এদের মধ্যে কেউ ৯৬ জন প্রার্থীর তালিকা পাঠিয়েছিল অয়নের কাছে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের রোল নম্বর, পদ, পুরসভা, বিভাগ-সহ বিস্তারিত বিবরণও রয়েছে। এছাড়া জানা যায় ৬৮ জন প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠিয়েছে লাল। ৪৩ জন প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠিয়েছে এমডি, ১৫ জন ক্যান্ডিটেড নামের লিস্ট পাঠিয়েছেন তপনদা। এ সমস্ত লিস্ট আদালতেকে জানিয়েছে বলে দাবি ইডির।
সে সঙ্গেই উদ্ধার অয়নের সঙ্গে এক রহস্যময়ী নারীর যোগ। যে নারীই নাকি অয়নকে সমস্ত নথি সরিয়ে ফেলতে বলে মেসেজ করেছিল। সে মেসেজও ইডি উদ্ধার করেছে অয়নের ফোন থেকে। ইডি সূত্রেই খবর, অয়ন শীলের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আছেন, যার নাম শ্বেতা চক্রবর্তী, যিনি নৈহাটি জেলাপাড়াতে থাকেন। তথ্য যাচাই করে ইডি জানতে পেরেছে যে, কামারহাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতো শ্বেতা। বাবা প্রাক্তন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী। সূত্রের খবর, শ্বেতা কে অয়ন শীল দামি গাড়ি উপহার দিয়েছিলো। সেই গাড়ির রিসিভ, অর্থাৎ স্বেতা চক্রবর্তীর নামে যে গাড়ি কেনা হয়েছিল তার বিল উদ্ধার করেছে ইডির কর্তারা। এছাড়া আরও খবর , অয়নের বাড়ি থেকে শ্বেতার ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানোর রশিদ উদ্ধার হয়েছে। শ্বেতা-অয়ন শীলের প্রমোটারির ব্যাবসায় মদত দিত বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি সোমবার ইডি তল্লাশির পর জানিয়েছে, অয়নের ঘর থেকে মিলেছে বেশ কয়েকটি ডিপোজিট স্লিপও। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে আরও কয়েকটি মানি রিসিপ্ট, ধনেখালি, কেএলসি, ভাঙড় থানা এলাকায় বেশ কয়েকটি জমি এবং দিল্লি এনসিআর এলাকায় কাকলি শীলের নামে কেনা সম্পত্তির নথি। পাশাপাশি সই করা চেকের পাতা, কয়েকটি ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ড ডিস্কও পেয়েছে ইডি।