সোনার ছেলের গলায় আরও এক সোনার মেডেল, হাতে তেরঙ্গা। এই ছবি দেখবে বলেই রবিবার মাঝরাতে জেগে ছিল গোটা দেশ, স্বপ্ন সত্যি হল। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ভারতীয় হিসাবে জ্যাভলিনে সোনা জিতলেন নীরজ চোপড়া। ৮৮.১৭ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়ে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নেন নীরজ।
নিজের দ্বিতীয় থ্রোতেই সর্বোচ্চ দূরত্ব জ্যাভলিনটি ছোড়েন নীরজ, প্রথম থ্রোটি ফাউল হয়। রুপো জিতলেন পাকিস্তানের নাদিম। পড়শি দেশের দুই বন্ধুর একই সঙ্গে সোনা-রুপো জয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের মঞ্চে তৈরি হল এক অন্য ছবি। ২০২১ সালের ৭ অগাস্ট অলিম্পিক্সে প্রথমবার দেশকে জ্যাভলিনে সোনা এনে দিয়েছিলেন নীরজ। এবার এনে দিলেন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স-এর মঞ্চে।
তাঁর বর্শায় বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের মঞ্চে মঙ্গলকাব্য তৈরি করেছে ভারত। সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া জানিয়েছেন, তিনি অভিভূত। টোকিও তাঁকে প্রথম সোনা দিয়েছিল। পুশকাসের দেশ হাঙ্গেরি তাঁকে খালি হাতে ফেরালো না। তবুও নিজের থ্রো নিয়ে খুশি নন নীরজ।
তিনি জানিয়েছেন, এই জয় ভারতের জয়। তিনি দেশের জন্য গর্বিত। খুব খারাপ ছুঁড়েও সোনা পেয়েছেন। সোনা সবসময় সোনা বলেই মনে করেন ভারতের সেরা জ্যাভলার। নীরজ জানিয়েছেন, আবার নিজের সেরা নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফিরবেন। টার্গেট থাকবে ৯০ মিটার।
বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে সোনা জিতেছেন নীরজ চোপড়া। রবিবার মধ্যরাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ৮৮.১৭ মিটার ছুঁড়ে সোনা পেয়েছেন নীরজ। এরআগে জিতেছিলেন ডায়মন্ড লিগ।
ধীরে ধীরে আবার দেশে ফিরে আসছ সেই খেলার আবহ, এমনটাই মত ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের। আর সেখানেই ফের সোনার সময় শুরু হবে বলেও আশাবাদী ক্রীড়া মহল। আর এবার সেই স্বপ্ন খানিক সত্যি করেই আশার আলো দেখাচ্ছে হুগলির (Hooghly) বুলটি রায়। সম্প্রতি ২৩ নভেম্বর থেকে মহারাষ্ট্রের নাসিকে (Nasik) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। দ্বিতীয় জাতীয় ফেডারেশন ক্রীড়া চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা (2nd National Federetion Meet) আর সেখানেই অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলার প্রতিযোগিরাও। আর সেখানেই যথাক্রমে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার, ৮০০ মিটার ও রিলে দৌড়ে (Relay Race) বাংলার হয়ে অংশগ্রহণ করেন বুলটি। শুধু তাই নয়, এই প্রতিটি বিভাগেই সোনা জিতেছেন এই কৃতি খেলোয়াড়। বাংলা ছাড়াও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন আরও ১২টি রাজ্য এবং পাশপাশি প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং নেপালের প্রতিযোগিতারা।
উল্লেখ্য, তারকেশ্বর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণ বাজার এলাকায় একটি ছোট্ট টালির চালের ভাড়া বাড়িতে স্বামী এবং দুই সন্তান কে নিয়ে বসবাস করেন বুলটি। স্বামী সন্তোষ দাস ট্রেনে হকারি করে সংসার চালান। অভাবের সংসারে থেকেও একের পর এক সফলতা অর্জন করে চলেছেন বুলটি। জাতীয় স্তরে পাঁচ পাঁচটি স্বর্ণ পদক জয়ের পর কোথাও যেন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে অলিম্পিকের স্বপ্ন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে ২৭ শে এপ্রিল থেকে ১লা মে পর্যন্ত তামিলনাড়ুর জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া ৪২ তম জাতীয় মাস্টার্স অথ্যালেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার হয়ে পাঁচটি মিটে অংশ গ্রহণ করেন বুলটি। সেখানেও ২০০ মিটার দৌড়,৪০০ মিটার দৌড় এবং ৪০০ মিটার হার্ডলসে স্বর্ণ পদক লাভ করেন তিনি।
অন্যদিকে ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে পান রুপো। তবে এত খুশির মধ্যেই রয়েছে বিষাদও। এতদিন যিনি বুলটিকে শিক্ষা দিয়ে এসেছেন, তিনি অর্থাৎ বুলটির ট্রেনার প্রয়াত হয়েছেন একদিন আগেই। তাই এদিন যথেষ্ট শোকে রয়েছেন বলে জানালেন বুলটি।
অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই চলছে দিনের পর দিন অনুশীলন। গত ২৫ বছরে অনুশীললের ফল হিসাবে বাড়িতে থাকা টিনের ট্যাঙ্কে ভর্তি হয়ে আছে বেঙ্গল এবং জাতীয় স্তরের হাজার হাজার শংসাপত্র এবং সোনা,রুপা, ব্রোঞ্জের মেডেল। হয়তো ভবিষ্যতে সেখানেই যুক্ত হবে কমনওয়েলথ বা অলিম্পিকের পদকও, এই আশাতেই বুক বাঁধছেন সকলে।