প্রসূন গুপ্ত: না আমরা বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল নিয়ে কিছু লিখছি না। এই মুহূর্তে লিখবো না, কারণ এখনও অন্য রাজ্যের ভোট হতে বাকি। ভোটপর্ব মিটলে একটা ধারণা দেওয়াই যেতে পারে ২ মার্চের আগে। কিন্তু কী হলে, কী হতে পারে ত্রিপুরায়, তা নিয়ে একটা সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা যেতেই পারে। উল্লেখ্য, ত্রিপুরার ভোট রাজনীতির একটা ইতিহাস আছে, শাসক দলকে খুব সহজে গদিচ্যুত করে না সে রাজ্যের আম আদমি।
তবে ১৯৮৮-তে রাজীব গান্ধীর পৌরহিত্যে এবং সন্তোষমোহন দেবের হাতযশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। কিন্তু ৫ বছর বাদে ফিরেও যেতে হয়েছিল। যদিও এই ইতিহাসে ভর করে এই মুহূর্তে ত্রিপুরা নিয়ে কিছু বলা অসম্ভব। যদিও শাসক বিজেপি দাবি করেছে, এই ভোটে তাদের আসন বাড়বে। পাল্টা গদি উলটোবে, এই আশায় বুক বাঁধছে বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট।
অন্যদিকে আদিবাসী এলাকার ২০টি আসনের মধ্যে তিপরা মোথা যদি ফ্যাক্টর হয় তবে নিঃসন্দেহে ত্রিশঙ্কু অবস্থান হবে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ ক্ষেত্রে সরকার গড়বে কে, এটাই বড় প্রশ্নচিহ্ন!
ফল ঘোষণার পর তিপরা মোথা ফ্যাক্টর হলে, এই দল তাদের দর বাড়াবে। জোট বা বিজেপিকে সমর্থনে জন্য হয়তো বা তারা শর্ত দেবে যে মুখ্যমন্ত্রীর পদের।এক্ষেত্রে কী হতে পারে?
সম্ভাবনা উসকে বলা যেতে পারে, প্রথমত বিজেপি হয়তো বা রাজি হবে না। কারণ ২০২৪-র লোকসভা ভোটে ত্রিপুরার দুটি আসনে তাদের নজর আছে। বিজেপি জানে ৭০ শতাংশ বাঙালির বাস যেখানে, সেখানে উপজাতির মুখ্যমন্ত্রী হলে বাঙালিরা হয়তো বা মেনে নেবে না। কিংবা মহারাষ্ট্রের মতো শাসক জোটের শরিক হলেও হতে পারে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলে বিজেপি এখনই প্রধান চালিকাশক্তি হওয়ার জন্য ত্রিপুরায় হয়তো বা ঝাঁপাবে না। তারা অপেক্ষা করবে লোকসভা নির্বাচনের ফলের দিকে। কাজেই গো স্লো পদ্ধতিতে এগোবে পদ্মশিবির।
মনে রাখতে হবে এই বিশ্লেষণ পুরোটাই সম্ভাবনা এবং অনুমান ভিত্তিক। আদতে ভোটের ফলের উপর নির্ভরশীল শাসক-বিরোধী রাজনীতির দাড়িপাল্লা। সেটা জানতে অপেক্ষা করতেই হবে ২ মার্চ অবধি। (চলবে)
প্রসূন গুপ্ত: ত্রিপুরার ভোট হয়ে গিয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি, ফল ঘোষণা ২ মার্চ। সমস্ত দলের কাছেই ফল কিন্তু টেনশনের। যদিও ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা থেকে বিজেপির বিভিন্ন নেতা মিডিয়ার সামনে জয় সুনিশ্চিত বলে দাবি করেছেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্বের বাকি দুই রাজ্যে ভোট।
তারপর বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে শুরু বুথ ফেরত সমীক্ষা অর্থাৎ পরিভাষায় যাকে বলে স্যাম্পেল টেস্ট। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বিভিন্ন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এই বুথ ফেরত সমীক্ষা তৈরি হয়। যদিও বহু সময়ে এই অগ্রিম বার্তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তেমনই প্রায় ঠিকও হয়েছে বহুবার। তবে এই সমীক্ষায় ভরসা রাখে না অনেকেই। তবে কী করে অগ্রিম জানা যাবে? এক্সিট পোল না করেও ধারণা যা দাঁড়ায় তাই ব্যক্ত করা হচ্ছে। প্রথমত বিপুল সংখ্যাই ভোট পোল হয়েছে। কোথাও ৯১ শতাংশ অবধি বলেই খবর, তবে শতাংশের হিসাবে ৮৭%-এর মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল ভোট কার বাক্সে যেতে পারে?
ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকেই ভোটবাক্সে বিপুল ভোট মানে সরকার-বিরোধী ভোট! ১৯৭৭-এ জরুরি অবস্থার পর যে ভোট হয়েছিল লোকসভায়, তা সাধারণ ভোট শতাংশের থেকে অনেক বেশি ছিল। ইন্দিরা পরাজিত হয়েছিলেন, আবার ইন্দিরার মৃত্যুর পর বিপুল যে ভোট হয়েছিল তাতে সুবিধা হয়েছিল ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের। রাজীব গান্ধী রেকর্ড গড়েছিলেন, ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪১৩ আসন পেয়ে।
ফলে এই দুই ধরণের ভোটের ফল হয়েছিল। ত্রিপুরায় এই মুহূর্তে জল্পনা হচ্ছে যদি ত্রিশঙ্কু হয়? তবে কি তিপরা মোথা ফ্যাক্টর? নাকি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের আগরতলার মসনদে বিজেপি সরকার? অপেক্ষা কিন্তু ২ মার্চের। (চলবে)
চলতি বছর দেশে মোট নয়টি রাজ্যে বিধানসভা ভোট (Assembly Vote)। তার মধ্যে উত্তর-পূর্বের (North East States) তিন রাজ্যের ভোট নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন (ECI)। ত্রিপুরায় ভোট গ্রহণ ১৬ ফেব্রুয়ারি আর মেঘালয়-নাগাল্যান্ডে ২৭ ফেব্রুয়ারি। ৬০ বিধানসভা বিশিষ্ট এই তিন রাজ্যে ভোট গণনা ২ মার্চ। বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, ত্রিপুরায় ভোট হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। পাশাপাশি নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে নির্বাচন হবে ওই মাসের ২৭ তারিখ। জানা গিয়েছে, তিন রাজ্যে ভোট দু’দিনে হলেও ভোট গণনা কিন্তু একই দিনে অর্থাৎ আগামী ২ মার্চ হবে।
২০১৮-র বিধানসভা ভোটে বামশাসিত ত্রিপুরায় পালাবদল। দীর্ঘ বাম শাসনের ইতি টেনে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। শরিক হিসেবে রয়েছে জনজাতি দল আইপিএফটি। সেই ভোটে রাজ্যের ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩৬ এবং আইপিএফটি ৮টিতে জেতে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বে লড়ে সিপিএম পায় মাত্র ১৬টি আসন।
যদিও এবার আইপিএফটির দাপটকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে তিপ্রা মোথা। অন্যদিকে, রাজধানী আগরতলা-সহ বেশ কিছু এলাকায় শাসক বিজেপির সঙ্গে বাম এবং কংগ্রেসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা। ভোটের লড়াইয়ে রয়েছে তৃণমূলও। প্রসঙ্গত, ২০১৮-র বিধানসভা ভোটে একটি আসনে না জিতলেও ২০১৯-র লোকসভা ভোটের হিসাবে প্রায় ২০টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস।
নয় রাজ্যের বিধানসভা ভোট (Assembly Poll 2023) এবং চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে জেপি নাড্ডাতেই (JP Nadda) ভরসা বিজেপির। ২০২৪ পর্যন্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি (BJP President) থাকছেন সেই নাড্ডাই। অর্থাৎ আরও এক বছর তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধিতে সায় মোদী-শাহদের। মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও বিজেপির সংবিধান মেনে পূর্ণ সময়ের সভাপতির মেয়াদ ৩ বছর। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার দলের শীর্ষ পদে তাঁর মেয়াদ বাড়লে ২০২৬ পর্যন্ত তাঁর সভাপতিত্ব থাকার কথা। কিন্তু আপাতত সাধারণ নির্বাচন পর্যন্তই অর্থাৎ ২০২৪ পর্যন্ত তাঁকে কাজ চালাতে বলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
এর আগে ২০১৪ থেকে ২০২০, ছয় বছর মোট দু'দফায় বিজেপি সভাপতি ছিলেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর শাহ জানান, আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বিজেপির সভাপতি হিসাবে থাকবে নড্ডাই।
জানা গিয়েছে ২০২৪-র জুন পর্যন্ত সভাপতি থাকবেন নড্ডা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, চলতি বছর ৯ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তালিকায় আছে মধ্য প্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলো। আবার এই বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই এই মুহূর্তে নাড্ডায় আস্থা রেখে বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ঘুঁটি সাজাতে চাইছে পদ্মশিবির।