
স্ত্রী হাসিন জাহানের দায়ের করা গার্হস্থ্য হিংসা মামলায় সোমবার আদালত বড় সিদ্ধান্ত শোনাল ভারতীয় পেসার মহম্মদ শামিকে (Mohammad Shami)। ভারতীয় বোলারকে প্রতি মাসে স্ত্রী হাসিন জাহানের (Hasin Jahan) খোরপোশ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিল আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালত। যদিও কোর্টের এই রায়ে খুশি নয় হাসিন। কারণ তিনি প্রতিমাসে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার আর্জি জানান আদালতকে। এদিন রায়ের পর তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, হাসিন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
২০১৮ সালে হাসিন জাহান, মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, গার্হস্থ্য হিংসা-সহ বেশ কয়েকটি মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। যদিও শামি প্রতিটা অভিযোগই একেবারে ভুয়ো দাবি করে অস্বীকার করেন। তারপর থেকেই তাঁরা আলাদা থাকা শুরু করেন। বিচ্ছেদ মামলা আদালতে ওঠার পর হাসিন মাসে ১০ লক্ষ টাকা খোরপোশ দাবি করেছিলেন। যদিও জাতীয় দলের ক্রিকেটার পাল্টা দাবি করেন, হাসিন মডেলিং করে মাসে ১০ লক্ষ টাকা আয় করেন। ফলে খোরপোশের বিষয়ে আপত্তি জানান শামি।
এদিন অতিরিক্ত জেলা বিচারক অনিন্দিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, 'স্ত্রী হাসিন জাহানকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দিতে হবে মহম্মদ শামির। এমনকি তা প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দিতে হবে।' স্ত্রী হাসিনের পাশাপাশি ক্রিকেটারের মেয়েও আগের মতোই মাসিক খরচের টাকা পাবে শামির থেকে।
প্রসঙ্গত, এই দম্পতি ২০১৪ সালে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের আগে হাসিন জাহান একজন চিয়ার লিডার হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি মডেলিংও করতেন। তাঁদের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। তবে মেয়ে এখন মায়ের সঙ্গেই থাকে। উল্লেখ্য, আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন হাসিন জাহান। কিন্তু ২০১০ সালে ডিভোর্স হয়ে যায়।
বিবাহবিচ্ছেদের (Divorce) পর স্ত্রী ব্যভিচারী এবং নিষ্ঠুর হলে ভরণপোষণের (Alimony) দায় নেবেন না স্বামী। এক মামলায় এমন তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট (Punjab-Haryana High Court)। এমনকি মামলাকারী এক মহিলার ভরণপোষণের আবেদন নাকচ করেছে আদালত। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি ঋতু বাহ্রি এবং বিচারপতি নিধি গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় স্ত্রীর স্থায়ী ভরণপোষণের আবেদন নাকচ করেছে আদালত। সূত্রের খবর, সেই মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারিতা এবং নিষ্ঠুরতার অভিযোগ ছিল। পারিবারিক আদালতে তার ভিত্তিতেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।
জানা গিয়েছে, মামলাকারী ব্যক্তির বিবাহ হয় ১৯৮৯ সালে। কিন্তু তিনি বিয়ের কয়েক বছর পর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। স্ত্রীর উগ্র ব্যবহার, এই অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছিলেন মামলাকারী। অভিযোগ, স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অপমান করেছেন স্ত্রী।
এ ছাড়া সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগও এনেছেন মামলাকারী। তিনি জানিয়েছেন, পরপুরুষের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। যাবতীয় অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দেন ওই ব্যক্তি। এরপরেই পারিবারিক আদালত বিবাহবিচ্ছেদে সিলমোহর বসায়।
কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের পর স্বামীর থেকে স্থায়ী ভরণপোষণ দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। কিন্তু উচ্চ আদালত তাঁর আবেদন নাকচ করে পর্যবেক্ষণে বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের আগে এবং পরে মহিলা অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। ব্যভিচার এবং নিষ্ঠুরতার দায়ে তিনি অভিযুক্ত। তাই তিনি স্বামীর কাছ থেকে স্থায়ী ভরণপোষণ পাবেন না।
স্বামীর আচরণে (Domestic Problem) যদি এক ছাদের তলায় থাকা অসম্ভব হয়, তাহলে খোরপোশ (Alimony) দাবি করতেই পারে স্ত্রী। তবে তথ্য প্রমাণের সাপেক্ষে স্ত্রীয়ের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। আর সেই অভিযোগ প্রমাণিত হলে খোরপোশ দিতে অস্বীকার করতে পারবেন না স্বামী। এক মামলার পর্যবেক্ষণে জানিয়ে দিল দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court)।
জানা গিয়েছে, নিম্ন আদালতের এক রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে যান এক মহিলা। সেই মামলার শুনানিতে সম্প্রতি এই মন্তব্য হাইকোর্টের। নিম্ন আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, দায়রা আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে তিনি খোরপোশ দাবি করার অধিকারী নয়। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ ভুল বলে জানিয়েছে।
দিল্লি হাইকোর্টের মন্তব্য, প্রত্যেকের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যাঁদের ভরণপোষণ প্রয়োজন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিচারকদের এ কথা মাথায় রাখতে হবে। খোরপোশ সংক্রান্ত প্রতিটি মামলা ভিন্ন। বিচারপতি শর্মা জানান, যদি আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণে দেখা যায় যে স্বামীর আচরণের কারণেই স্ত্রী তাঁর সঙ্গে থাকতে পারছেন না। তা হলে স্ত্রী ও নাবালক সন্তানদের খোরপোশ দিতে স্বামী কখনই অস্বীকার করতে পারেন না।