রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের হাতে মার খেতে হয়েছিল ইডির আধিকারিকদের। সেই ঘটনার পর ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। তার নাগাল পাচ্ছে না রাজ্য পুলিস। এই অবস্থায় শাহজাহানের খোঁজ দিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে নেই শাহজাহান। চিকিৎসার জন্য সে বাইরে রয়েছে।
অখিল গিরির এহেন মন্তব্য নিয়ে বঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। অখিল গিরিকে জেরার দাবি, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। বিরোধীদের অভিযোগ, বাংলার শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকার জন্যই এখনও অধরা শাহজাহান। এই অবস্থায় কারামন্ত্রীর মন্তব্যে বিরোধীদের সেই দাবিই কি মান্যতা পাচ্ছে না? কেন ধরা হচ্ছে না শাহজাহানকে কোনও কিছুকে আড়াল করতেই কি শাহজাহানকে ধরতে এত অনীহা রাজ্য প্রশাসনের?
অভিষেকের (Abhishek Banerjee) নবজোয়ারে ধাক্কা খেলেন রাজ্যের মন্ত্রী (Minister) অখিল গিরি (Akhil Giri)। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকে এই জনসংযোগ যাত্রায় রাজ্যের কারামন্ত্রীকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিরাপত্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে। যার জেরে বুধবার কাঁথিতে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে অখিল গিরিকে উত্তেজিত দেখালেও, পরে ঘটনার কথা অস্বীকার করেন তিনি। দাবি করেন কোনও গোলমাল হয়নি। ঘটনাস্থলে থাকা বাকি নিরাপত্তরক্ষীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিন দুপুরে অভিষেকের এই যাত্রা ঘিরে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায় শুভেন্দু অধিকারীর জেলায়। স্থানীয়দের দাবি এই ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় সাংসদে নিরাপত্তারক্ষীদের। এরমধ্যেই এই ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অভিষেক কাছাকাছি যেতে গিয়েই প্রাথমিক বাধা পান অখিল গিরি। তাঁকে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলেই প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ করা হয়েছিল। যদিও পরে তা অস্বীকার করেন রাজ্যের কারামন্ত্রী।
দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (President Murmu) উদ্দেশে মন্ত্রী অখিল গিরির করা মন্তব্য মামলায় বাদ দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) নাম। সোমবার এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের মন্ত্রী অখিলের (Akhil Giri) বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলায় পার্টি করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু আইনজীবীর তরফে আবেদন করা হয়, তাঁর নাম বাদ দিতে। সেই সওয়াল শুনেই নাম বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও যোগ নেই, তাই এই নির্দেশ বলে সূত্রের খবর।
পাশাপাশি রাজ্যকে জমা দিতে হবে হলফনামা, এমনটাই নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। এদিকে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশে মন্ত্রী অখিলের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। অখিলকে আক্রমণ করে সরব হয়েছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অখিল গিরি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় এখনও জিইয়ে সেই বিতর্ক।
প্রসূন গুপ্ত: সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য অখিল গিরি, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে যে কুকথা বলেছেন তাই নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে। অখিলের কুমন্তব্যের কারণে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। এখানেই হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারতো এই ইস্যু, কিন্তু হলো কি? অখিল প্রশ্নে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, অখিলকে কান ধরে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। এখানেই থামেননি তিনি, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেও আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
আবার তার পাল্টা বক্তব্য রেখেছেন ববি হাকিম। অন্যদিকে অখিলের মন্তব্যের সমালোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন যে, এ কোন সংস্কৃতির মধ্যে চলছে? তিনি আরও বলেন, যে দিনের পর দিন সোনিয়া গান্ধীকে নানা কুবাক্য করা হয়েছে আইনসভায়। নীতিবোধ তখন কোথায় থাকে?
মনে পরে যায় আগের জমানার কথা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্লামেন্টে অটলবিহারী বাজপেয়ী ভূয়সী প্রশংসা করে ইন্দিরাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আবার আমেরিকা সফরে ইন্দিরার সঙ্গে রোনাল্ড রেগনের মতবিরোধ হওয়ার পর ইন্দিরা বাজপেয়ীকেই আমেরিকা সফরে পাঠান। তর্ক-বিতর্ক, বিরোধিতা নেহেরুর আমল থেকেই ছিল কিন্তু শালীনতা ভেদ করেনি কখনও। এ রাজ্যে জ্যোতিবাবুর আমলে, মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন কেন্দ্র বা রাজ্যের। তিনি সমালোচনা করেছেন মমতারও। আবার মমতাও প্রশাসনের চরম বিরোধিতা করেছেন কিন্তু কখনও তা সীমা ছাড়িয়ে যায়নি।
তৃণমূলের প্রথম আমলে বিরোধী নেতা হন সূর্যকান্ত মিশ্র। পরের বার অর্থাৎ ২০১৬-তে আসেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। তাঁরা সরকারের যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণে যাননি কেউ। এই সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে গত ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। কুকথা, কুৎসিত ভাবে ব্যক্তি আক্রমণ চলেছে। তৃণমূল থেকে এমন অভিযোগ অহরহ করা হয় যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, যিনি একসময় রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, তিনিও নানাভাবে ব্যক্তি আক্রমণ করেন।
কমতি যান না তৃণমূলের কুনাল ঘোষরাও। গতকাল শুভেন্দু জানিয়েছেন যে তিনি কারুর নাম করে ব্যক্তি আক্রমণ করেন না। কুনালও জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তি আক্রমণ করেননি। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ইদানিং যে ভাষা বিজেপি ও তৃণমূলের সমর্থকরা করছেন তা পড়ার অযোগ্য। পিছিয়ে নেই বামপন্থীরাও। তাঁদের সূক্ষ্ম গালিগালাজ সবচাইতে উচ্চস্থানে রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূর (President Draupadi Murmu) উদ্দেশে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করেছেন মন্ত্রী অখিল গিরি (Akhil Giri)। এবার তাঁর বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার আবেদন কলকাতা হাইকোর্টে (High Court)। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের ও দ্রুত শুনানির আবেদন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে মামলা দায়েরের অনুমতি দিলেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। মন্ত্রী অখিল গিরিকে সরানো হোক মন্ত্রিত্ব থেকে সঙ্গে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিক আদালত। যদিও অখিল গিরির মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই নবান্নে (Nabanna) মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)।
এই মর্মেই মামলা দায়েরের আবেদন, যা গ্রহণ করেছে আদালত। এই প্রসঙ্গে মামলাকারী আইনজীবী বলেন, 'এই মন্তব্যের পর রাজ্য সরকার কোনও আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানি না। ও অবলীলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাষ্ট্রপতি দেশের সাংবিধানিক প্রধান। সব সাংবিধানিক সংস্থার প্রধানে নিয়োগ কর্তা। তাঁকে উদ্দেশ্য করে এভাবে বলা, আদিবাসি সমাজের বিরুদ্ধে বলা, এগুলো এক ধরনের হেট স্পিচ।'
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশে নন্দীগ্রামের সভায় ঠিক কী বলেছিলেন অখিল গিরি? তিনি বলেছিলেন,'আমরা তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা? আমরা রূপের বিচার করি না।' আর শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে এভাবেই আলটপকা মন্তব্য করে বসেন অখিল গিরি। যদিও পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের এই নেতা ভুল বুঝতে পেরে বলেন, 'আমি দেশের সংবিধান এবং সংবিধানের রক্ষাকর্তা দেশের রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি। আমাকে নিয়ে যা বলা হয়েছে, সেই রাগে আমি এই মন্তব্য করেছি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।'
তারপর থেকেই বেড়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। ইতিমধ্যে রাজ্যের একাধিক জেলায় অখিল গিরির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে বিজেপি। তাঁর বরখাস্ত চেয়ে সোমবার রাজ ভবন অভিযান করে বিজেপি বিধায়করা। নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
পাশাপাশি রাজ্যের আদিবাসী সমাজের তরফেও এদিন রাজ্যের একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়েছিল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীর করা এই মন্তব্য সমর্থন করেননি। তিনি জানান,'রাষ্ট্রপতিকে অবমাননাকর মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। আমি এই মন্তব্যের নিন্দা করি। আমি আমার মন্ত্রীর হয়ে ক্ষমা চাইছি। অখিল গিরিকে দল থেকে সতর্ক করা হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রপতিকে আমরা সবাই সম্মান করি। এই ধরনের মন্তব্য যেন ভবিষ্যতে না করা হয়।'