বৃহস্পতিবার ভোরে আসানসোলের সিবিআই (CBI) আদালতে হাজিরা দিলেন গরুপাচারের (Cattle Smuggling) আরও এক অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ (Abdul Latif)। তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আব্দুল লতিফকে খুঁজছিল সিবিআই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন, এই লতিফই ইলামবাজার পশুহাটের দেখভাল করতেন। নেপথ্যে চলত গরুপাচারের কারবার। এই সবই হত লতিফের তত্ত্বাবধানে। শক্তিগড়ে রাজু ঝা খুনেও লতিফের নাম উঠে আসে। বলা হয় সেদিন লতিফকেও ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল। এরপরেই লতিফকে খুঁজতে আরও বেশি তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআই। কিন্তু তার আগেই লতিফের আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টের কাছে মক্কেলের গ্রেফতারি এড়াতে আবেদন রাখেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট আগামী ৪ মে পর্যন্ত লতিফের গ্রেফতারিতে অন্তবর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়।
এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার একেবারে কাক ভোরেই লতিফ তাঁর আইনজীবীকে নিয়ে আসানসোলের সিবিআই আদালতে হাজির হন। প্রথমে কেউ টের পায়নি। পরে লতিফ আসার খবর পেতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় আদালত চত্বরে। এদিন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে লতিফের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী শেখর কুণ্ডু। সিবিআইয়ের হয়ে উপস্থিত ছিলেন সরকারি আইনজীবী রাকেশ কুমার। কেস ডায়েরি নিয়ে সেখানে হাজির ছিলেন তদন্তকারী অফিসাররাও।
সওয়াল-জবাবের পর বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী লতিফকে ১৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন। আগামী ৬ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি তিনদিনে একবার সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করতে হবে লতিফকে। সিবিআইয়ের কাছে তাঁর পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও সিবিআইকে কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আব্দুল লতিফকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিবিআইকে সমস্ত মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় লতিফের আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন।
অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা ও প্রয়াত স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তির(property) তথ্য(information) সিবিআইয়ের(CBI) হাতে রয়েছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বেনামে কত সম্পত্তি রয়েছে, তার হদিশ পেতে মরিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর এই সব বেনামি সম্পত্তির খোঁজে এবার বীরভূমের অন্যতম গরু ব্যবসার(cattle smuggling) সঙ্গে যুক্ত আবদুল লতিফকে হাতে পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এই সকল বেনামি সম্পত্তির হদিশ দিতে পারেন এই আবদুল লতিফ। এমনই মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের দাবি, যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গরু পাচার(cow traficking) থেকে আসা লাভের টাকার যে ভাগ অনুব্রত মণ্ডলের জন্য বরাদ্দ থাকত, তা অনেক সময় নিজের হাতে নিতেন না অনুব্রত মণ্ডল। আবদুল লতিফ মারফত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই টাকা লগ্নি হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এমনকি অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে জেরা করেও এই সমস্ত বিনিয়োগের কথা জানা গেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাই বেনামে কোথায় কত বিনিয়োগ হয়েছে, জানতে এই আবদুল লতিফকে হাতে পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে দেওয়া গরু পাচার মামলায় দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে আবদুল লতিফের নাম রয়েছে। তাতে গরু পাচার ও লাভের টাকা কিভাবে আবদুল মারফত প্রভাবশালীদের কাছে গিয়েছে, তা উল্লেখ রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। তদন্তকারী সংস্থার আরও দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ মেনেই আবদুল লতিফ অনুব্রতর হয়ে সরাসরি বিনিয়োগ করেছেন। তাই জেরা পর্বে অনুব্রত মণ্ডল যখন পুরোপুরি চুপ, তখন বেনামি সম্পত্তির হদিশ পেতে আবদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শ্রেয় বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। চার্জশিটে নাম থাকলেও এখনও পর্যন্ত আবদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠতে পারেনি সিবিআই। তাই এই মুহূর্তে আবদুলের বয়ান হয়ে উঠতে পারে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থার ট্রাম্প কার্ড।
কিন্তু কে এই আবদুল লতিফ? সূত্রের খবর, ইলামবাজারের বেলোয়া গ্রামে আদি বাড়ি এই লতিফের। পারিবারিক সূত্র ধরেই গরু ব্যবসার সঙ্গে যোগ আবদুলের। পরবর্তীতে বীরভূম জেলার ইলামবাজার সহ বিভিন্ন স্থানের পশুহাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে আসে এই আবদুল লতিফের হাতে। প্রথমে এনামুল হকের এক কর্মী হয়ে বীরভূম জেলাকে গরু পাচারের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করা ও পরবর্তীতে নিজেই এনামুলের অন্যতম পার্টনার হয়ে ওঠেন তিনি। চার্জশিটে নাম থাকলেও এখনও সিবিআই-এর হাতে অধরা এই লতিফ শুধু গরুর ব্যবসা নয়, এলাকায় একাধিক মার্বেল ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত বলে জানা গেছে। এই ব্যবসাগুলিতে তো গরু পাচারের থেকে আসা লাভের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করছে সিবিআই।
কিভাবে যোগ অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে? সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের সূত্র ধরেই যোগাযোগ হয় অনুব্রত ও আবদুলের। এমনকি সায়গল হোসেন মারফত অনুব্রতর নির্দেশ পৌঁছে যেত এই আবদুল লতিফের কাছে, দাবি গোয়েন্দাদের। এনামুল হক ও আবদুল লতিফ দুজনেই বীরভূমকে গরু পাচারের সেফ প্যাসেজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুব্রত মণ্ডলের কাছে পৌঁছে দিতেন নগদ টাকা সেই তথ্য হাতে রয়েছে তদন্তকারীদের।